Googleইন্টারনেট

কেন কেউ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার পছন্দ করে না?

কেন অবশেষে এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে?

বর্তমানে এখনও মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজার ব্যবহার করে এরকম মানুষের সংখ্যা  হয়ত ১০০ ভাগের মধ্যে ১ ভাগ বা বলতে গেলে তারও কম। বিগত ৩-৪ বছর আগে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে  ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে টিকে থাকার জন্য অনেক পাহাড়-পর্বত পাড়ি দিতে হয়েছে; তবে তুমুল প্রতিযোগিতা শেষ পর্যন্ত তাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। শেষের দিকে ৩-৪ বছর ব্রাউজারটি আমাদের মন জয় করতে পারেনি, মানতেই হবে আমরা একে উইন্ডোজের একটি খারাপ ফিচার হিসেবে তুলনা করেছি ; যার কারনে আমাদের মত সিংহভাগ উইন্ডোজ ইউজার ক্রোম,ফায়ারফক্স এর মতন অল্টারনেটিভ ওয়েব ব্রাউজার পেয়ে সেগুলো ব্যবহারে বেশি অভ্যস্ত হয়েছে। অবশেষে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর প্রতি যে ব্যাবহারকারীদের একদম আগ্রহ নেই তা লক্ষ্য করে মাইক্রোসফট অবশেষে উইন্ডোজ ১০ লঞ্চ এর সময় IE তথা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারের প্রোজেক্ট বন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা করে।

তবে প্রথম যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ইন্টারনেট ব্রাউজারটি বর্তমানে এসে কেনো সকল ব্যবহারকারীর   এত অপছন্দের কারন হল ? এই প্রশ্নটি সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারীর মনে। আসলে কি ব্রাউজারটি এতটাই অযোগ্য বা ভয়ানক ছিল যে মানুষ একযোগে এটিকে ত্যাগ করতে শুরু করেছিল? হয়ত যারা ব্যাবহার করেছি তারা এর কারন জানি। ৯৫-৯৬ এর দশকে যে ব্রাউজারটি আধুনিক ইন্টারনেটের অগ্রগতিতে অগ্রজমান ভূমিকা পালন করেছিল ; আজ সেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম পেজে উপহাস এবং মিম(meme) এর পাত্র।

এই আর্টিকেলে আলোচনা করব, কোন কোন কারনে মানুষ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে বর্জন করেছিল ; যার ফলে মাইক্রোসফটকে এই প্রবীন ওয়েব ব্রাউজারকে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। এখানে আমি কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি যেসকল বিষয় আসলে আধুনিক ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর ডিজলাইক এর কারন হয়েছিল।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ব্রাউজারটি ছিল খুবই স্লো

সর্বপরি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সম্পর্কে সকলের যেই অভিযোগটি তুমুল ছিল তা হল, ব্রাউজারটি খুবই স্লো। যেকোন ওয়েবপেজ লোড করতে তুলনামূলক একটু বেশি সেকেন্ডস বা বেশি সময় নিত। আর IE এর এই ধীরতা বহু ব্যবহারকারীর জন্য একদম অসস্থিপূর্ন হয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় দেখা যেত ওয়েবপেজগুলো ঠিকঠাকভাবে লোডও নিচ্ছে না ; এমনকি ক্র্যাশও করছে!

অনেক ব্যবহারকারীর অভিযোগ ছিলো যে ব্রাউজারটি অন্যসব ব্রাউজার থেকে একই জিনিস লোড করতে আরো বেশি সময় নিচ্ছে। এমনকি যদি আপনি কখনও যদি কোন কিছু স্লো এক্সপেরিয়েন্স না করেন তবে আপনি ভাগ্যবান। ব্যাপারটি এরকম ইন্টারনেট কানেকশন স্লো হলে অনেকসময় মেনে নেয়া যায়; তবে ব্রাউজার এর জন্যই যদি ইন্টারনেট ব্রাউজিং স্লো হয়, তা মেনে নেয়া যায় না।

ওয়েবপেজ সঠিকভাবে লোড হতো না

আপনিও যদি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করে থাকেন ; তবে কতগুলো বিষয় হয়ত এক্সপেরিয়েন্স করে থাকবেন। ষেমন: ওয়েবপেজের নানা এরিয়া একটু বিকৃত বা ব্রোকেন হয়ে থাকা, ছবি এবং আইকন ঠিকঠাকভাবে লোড না হয়ে ব্রোকেন অবস্থায় থাকা সহ ইত্যাদি সমস্যা। এগুলো ছিল IE এর খুবই কমন বা সাধারন সমস্যা আর IE এর সকল ইউজাররাই এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার তথা IE এর গঠমগত ভুল এর কারনেই ওয়েবপেজ সঠিকভাবে লোড না হওয়া ছিল এর সমস্যাগুলির একটি। তাও তখনকার বহু ওয়েব ডেভেলপার IE তে তাদের ওয়েবপেজ ঠিক দেখাতে ওয়েব পেজগুলো আরও ডেভেলপ করে বহু সময় পানিতে ঢেলেছে।

মাইক্রোসফট এর অনেক বড় ব্যর্থতা ছিল তারা IE এর এরূপ নানারকম সমস্যা আপডেটের মাধ্যমে পুরোপুরি কখনই সমাধান করতে পারেনি। আমরা অন্যান্য ব্রাউজার যেমন ক্রোম, ফায়ারফক্সে দেখব আগের ভার্সনে কোনো সমস্যা থাকলে, পরবর্তী আপডেটে তা ফিক্স এর পাশাপাশি নতুন কোনো ফিচার যুক্ত করে দিয়েছে। তবে IE তে এরকম কোনো ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। মূলত এটা মাইক্রোসফট এর ভুল ছিল তারা গ্রাহকদের ওয়েব চাহিদা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে তাদের ব্রাউজারে ইম্প্লিমেন্ট করতে পারে নি।

অন্যান্য ব্রাউজারের তুলনায় ফিচারস কম ছিল

যদিও মাইক্রোসফট তাদের IE ব্রাউজারে বেশ কিছু টুলস এবং ফিচার আপনাকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল ; তবে তার বাইরে IE তে অতিরিক্ত কোনো ফিচার ব্যবহার করার সুযোগ ছিলনা। ২০০১ সালে IE6 রিলিজ হলে এতে আলাদা কোনো এক্সটেনশন বা ওয়েব অ্যাপ ব্যবহারের কোনো সুযোগই ছিলনা। বিপরীতে আমরা আজকের ক্রোম এবং ফায়ারফক্স এর দিকে তাকালে দেখতে পারব যে, এখানে সহস্রাধিক এক্সটেনশন বা ওয়েবঅ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আর যা কিনা ব্রাউজিং এর মাধ্যমে আমাদের ওয়েব এক্সপেরিয়েন্স একদম পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।

অানইনস্টল ও অন্য ব্রাউজারে সুইচ করা ছিল কষ্টসাধ্য

সফটওয়্যার খারাপ বুঝলাম, তবে কম্পিউটার যদি বারবার বাধ্য করে সেই খারাপ সফটওয়্যারটিকেই ব্যবহার করতে তাহলে কেমন লাগে বলুন! উইন্ডোজ কম্পিউটারে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর ব্যাপারটি ছিল এরকম। বাধ্য অনেকক্ষেত্রে এটিকে ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করতে হত। মাইক্রোসফট সাধারনত উইন্ডোজের সাথেই এই ব্রাউজারকে বিল্টইন করে দিত, সে কারনে একে আনইনস্টল করাও সহজ কোন কাজ ছিলনা।অনেকক্ষেত্রে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কে আনইনস্টল করা হত একেবারে অসম্ভব। আর যার ফলে অনেক উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর কাছে উইন্ডোজের একমাত্র খারাপ ফিচার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল এই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার।

নানানরকম বাগের পাশাপাশি এতে ছিল সিকিউরিটি রিস্ক

ব্রাউজারটির আরেক বড় সমস্যাটি ছিল এর সিকিউরিটি সম্পর্কিত। ব্রাউজারটির ছোট বড় নানারকম বাগ ছিল। আর এই বাগকে হ্যাকাররা নানাকাজে খুব ভালভাবেই ব্যাবহার করতে পারত। আর সেকারনেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিকিউরিটি নিয়ে ছিল অনেক প্রশ্ন।


পরিশেষে

যদিও মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার উপরোক্ত আলোচিত নানারকম সমস্যা থাকার কারনে আর বাজারে টিকে থাকতে পারেনি ; তবুও আমাদের এই ব্রাউজারের অবদান ভুলে গেলে চলবে না। কেননা প্রথমদিককার অনেক ইন্টারনেট ভিশনারিরা এই ব্রাউজারটিকে ব্যবহার করেই নানা স্বপ্ন দেখেছেন ; আধুনিক ইন্টারনেটের রূপ কল্পনা করেছেন। আজকের আধুনিক ইন্টারনেট তৈরির পেছনে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর অনেক ভূমিকা রয়েছে। ১৯৯৬ সালের ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৩’ তে ১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম Cascading Style Sheets বা CSS ইনক্লুড করে।

যদিও মাইক্রোসফট ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে’ তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, মাইক্রোসফট এডজ ব্রাউজার তৈরি করেছে ; তবুও তারা এখানে অন্যান্য প্রতিযোগী ব্রাউজারের মত এখানও পুরোপুরিভাবে সকল ফিচার দিতে পায়নি। এমনকি মাইক্রোসফট এর নিজস্ব একটি সেমিনারে তাদের এডজ ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় তা হ্যাং হয়ে যাওয়ার মতও ঘটনা ঘটেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button