ComputerTechnology

কেন শুধু কম্পিউটার রিবুট করার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব?

কেন রিবুটিং অনেক কিছু ফিক্স করে ফেলে?

আপনার কম্পিউটারের যেকোনো সমস্যা হয়েছে, ধরুন আপনি কোন এক্সপার্ট বড় ভাইকে ফোন করে বললেন আপনার সমস্যার কথা, আপনাকে নিশ্চয় আগে জিজ্ঞেস করবে “তুমি কি কম্পিউটার রিবুট করে দেখেছিলে?” — অবশ্যই আজকের দিনে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার বা যেকোনো মডার্ন কম্পিউটিং ডিভাইজের ক্ষেত্রে এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার কম্পিউটারে হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে, আপনি কাওকে ফিক্স করতে বলার আগে হয়তো নিজে থেকে রিবুট (কম্পিউটার রিস্টার্ট) করে নেবেন। ফোন হাং হয়ে গেছে বা স্লো কাজ করছে, জাস্ট একটা রিবুট করলেই ঠিক হয়ে যাবে। টিভি’র মেন্যু কাজ করছে না, রিবুট করার পরে কাজ করতে আরম্ভ করবে। আর এটা টেকনিক্যালিও সত্য যে ডিভাইজ জাস্ট রিবুট করা বা সেটিং রিস্টোর করার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু কিভাবে সমস্যা গুলো ফিক্স হয়ে যায়? — আরে, এই নিয়ে আলোচনা করার জন্যই তো আর্টিকেলটি লিখছি! — তো পড়তে থাকুন…


কেন রিবুটিং অনেক কিছু ফিক্স করে ফেলে?

ওকে! এখন নিশ্চয় আপনার মনে একটিই প্রশ্ন, এটি কিভাবে এতো সমস্যার সমাধান করতে পারে? — এই উত্তরটি খুড়ে বেড় করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে চিন্তা করে দেখতে হবে, মানে আমি আপনাকে আপনার কম্পিউটারের সাথে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যেতে বলছি। আমরা প্রতিনিয়ত কম্পিউটার ব্যবহার করি, অনেকে কয়েক ঘণ্টা আবার অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই কম্পিউটার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক টাইপের টাস্ক সম্পূর্ণ করে থাকি। আমাদের অনেক প্রোগ্রাম ওপেন করতে হয়, অনেক প্রোগ্রাম ক্লোজ করতে হয়, কিছু প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে হতে পারে আবার কিছু প্রোগ্রাম আনইন্সটল করতে হয়। এভাবে না জানি কোন কাজ করিয়ে নিতে হয় আপনার কম্পিউটার দ্বারা।

এখন আপনি যেভাবে হয়তো চিন্তা করেন, আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম সেভাবে কাজ করেনা। আপনি হয়তো ভাবছেন, কোন প্রোগ্রাম ক্লোজ করে দিলে ব্যাস সেটা ক্লোজ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক প্রোগ্রাম ক্লোজ করার পরেও এর কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস তখনোও চলতে থাকে। এই প্রসেস গুলো আপনি সহজেই হয়তো দেখতে পারেন না, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন এভাবে আপনি কতো প্রোগ্রাম ওপেন ক্লোজ করতে থাকেন, সেক্ষেত্রে কতো গুলো অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চালু হয়ে থাকতে পারে। এই ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস গুলো সিস্টেম থেকে রিসোর্স নষ্ট করে বিশেষ করে র‍্যাম। তাই ব্যবহার করার সাথে সাথে আপনার কম্পিউটারের স্পীড স্লো হতে আরম্ভ করে দেয়। শুধু স্লোই নয়, আরো অনেক টাইপের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

 

তাহলে কম্পিউটার রিবুট বা রিস্টার্ট করার সময় কি হয়? —যখন আপনি কম্পিউটার রিস্টার্ট করেন, আপনার কম্পিউটার সকল প্রসেস গুলোকে কিল করে দেয়। এবার কম্পিউটার রান করার সময় শুধু প্রয়োজনীয় প্রসেস গুলোকে রান করায়, আর বাকী অপ্রয়োজনীয় প্রসেস গুলো কিল হয়ে যায়, এতে কম্পিউটার রিফ্রেশ হয়ে যায়, অনেক রিসোর্স ফাঁকা হয়, কম্পিউটার দ্রুত কাজ করতে আরম্ভ করে।

এখন এই বিষয়টি কিন্তু শুধু উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজের ক্ষেত্রেই এমন হয়। সেটা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ট্যাবলেট, আইপ্যাড, আর আইফোনই হোক না কেন। ডিভাইজ জাস্ট রিবুট করে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। আবার ফোন অনেক সময় কল পারফর্ম করতে পারে না, জাস্ট একটা রুবুট করে নিলেই আরামে কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়। তবে মনে করবেন না, এটি কোন সমস্যা, যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজ দীর্ঘ সময় পারফর্ম করার ক্ষেত্রে এরকম হতে পারে। যদি রিস্টার্ট না কাজ করে, জাস্ট রিস্টোর ফ্যাক্টরি সেটিং অ্যাপ্লাই করার মাধ্যমে আরো অনেক কিছু ফিক্স করা সম্ভব হয়। এতে আপনার ফোন বা যেকোনো ডিভাইজ ফ্যাক্টরি থেকে আসার সময় যে মুডে ছিল সেখানে ফিরে যায়, যেকোনো ভুল সেটিং রিসেট হয়ে যায় এবং আবার পারফেক্ট ভাবে কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়।

তবে এখানে আরেকটি বিষয়, জানি আপনি এটি কমেন্টে জিজ্ঞেস করতেন! — হ্যাঁ, কম্পিউটার রিবুটবা রিস্টার্ট করা অথবা কম্পিউটার ম্যানুয়ালি অফ করে আবার অন করা একই জিনিষ। তবে অনেক সময় কিছু সমস্যা ম্যানুয়াল অফ/অন করার মাধ্যমে ফিক্স হয় না। যেমন আমার উইন্ডোজ ১০ গ্রুভ মিউজিক প্লেয়ার মাঝে মাঝে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আমি পিসি অফ/অন করি ব্যাট সমাধান হয় না, কিন্তু পিসি রিস্টার্ট করলেই এর সমাধান হয়ে যায়। তো যদি ম্যানুয়াল অফ/অন কাজ না করে, জাস্ট রিস্টার্ট করে নিন। তবে রিসেট কিন্তু আলাদা টার্ম! এর মানে মোবাইল ডিভাইজ যেমন রিস্টোর ফ্যাক্টরি করা হয়, উইন্ডোজ রিসেট করলে সম্পূর্ণ শুরুর দিকে আপনার সিস্টেম ফিরে যাবে। এতে সকল সফটওয়্যার প্রোগ্রাম গুলো রিমুভ হয়ে যাবে এবং সেটিং ডিফল্ট হিসেবে সেট হয়ে যাবে।

রিবুটে কিছু কমন প্রবলেম ফিক্স

 

উইন্ডোজ স্লো হয়ে গেছে; — আগেই বললাম দীর্ঘ সময় ধরে উইন্ডোজ চলার ফলে অনেক প্রসেস ব্যাকগ্রাউন্ডে তৈরি হয়, টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করে হয়তো দেখতে পাবেন ৯৯% সিপিইউ ব্যবহার হওয়া শুরু করেছে, এতে অবশ্যই আপনার কম্পিউটার অনেক স্লো হয়ে যাবে কাজ করতেই চাইবে না। যদিও টাস্ক ম্যানেজার থেকে অপ্রয়োজনীয় সিপিইউ কিলার টাস্ক গুলোকে কিল করে কম্পিউটার একটি ফাস্ট করতে পারবেন। কিন্তু অনেক সময় সিস্টেম প্রসেসই অনেক সিপিইউ ইউজ করতে আরম্ভ করে দেয়, বিশেষ করে যখন কম্পিউটারে র‍্যাম সংকট দেখা দেয় “Compressed Memory” নামের একটি প্রসেস ১০০% ডিস্ক বা সিপিইউ ব্যবহার করতে শুরু দেয়, যেটা কম্পিউটারকে আলট্রা স্লো করে দেয়, আর সিস্টেম প্রসেস হওয়ার জন্য আপনি একে কিলও করতে পারবেন না। তো এই অবস্থায়, জাস্ট কারেন্ট কাজ গুলোকে সেভ করে নিন এবং কম্পিউটার রিবুট মেরে দিন! অন হওয়ার পরে ১০০% আপনার কম্পিউটার ঠিক হয়ে যাবে।

ফায়ারফক্স আর ক্রোম অত্যাধিক মেমোরি ব্যবহার করলে; — যদিও ফায়ারফক্স আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে, কিন্তু ক্রোম ব্রাউজার তো জনমের মতো মেমোরি কিল করে। আপনি যদি আমার মতো ব্লগার হয়ে থাকেন বা স্টুডেন্ড হয়ে থাকেন, যাকে প্রচুর অনলাইন রিসার্স করতে হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের অগুনতি ট্যাব ওপেন রাখার দরকার পরে। আর ওয়েব ব্রাউজার গুলোতে যতো গুলো ট্যাব অপেন করবেন মেমোরি ততোবেশি কিল করতে আরম্ভ করবে। আবার যদি ব্রাউজারে আলাদা এক্সটেনশন ব্যবহার করেন, সেগুলো আলাদা প্রসেস তৈরি করে কম্পিউটার থেকে রিসোর্স গ্রহন করবে এবং কম্পিউটার স্লো করে দেবে। জাস্ট ব্রাউজার ক্লোজ করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ সময় ব্যবহার করার পরে জাস্ট কম্পিউটার রিবুট করে নিলে ব্রাউজার গুলো ফ্রেস ভাবে ওপেন হবে এবং স্পীডের সাথে কাজ করতেপারবেন।

ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ প্রবলেম; — ২০০৮ সাল থেকে কম্পিউটার ব্যবহার করছি, আর প্রায় ১০ বছরে অনেক আজব সব কম্পিউটার প্রবলেম ঘটতে দেখেছি। অনেক সময় দেখি ল্যাপটপ ওয়াইফাই আর কাজ করে না, কোন নেটওয়ার্ক কানেক্ট করে না। আবার ব্লুটুথও একই আচরণ করে। সাধারণভাবে জাস্ট রিবুট করে নিলে সকল সমস্যা ফট করে গায়েব হয়ে যায়। এতে হার্ডওয়্যার ড্রাইভার ফ্রেস রিলোড হয়, কম্পিউটার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

সবসময় শুধু রিবুটই কিন্তু সলিউশন নয়

হ্যাঁ, আপনার কম্পিউটারে টেম্পোরারি কোন সমস্যা হচ্ছে বা ড্রাইভার আপডেট করেছেন, সফটওয়্যার ইন্সটল বা আনইন্সটল করেছেন, আপডেট অ্যাপ্লাই করেছেন — সেক্ষেত্রে রিবুট প্রয়োজনীয় হবে। সাধারণ সমস্যা গুলো অবশ্যই রিবুট করার মাধ্যমে ফিক্স করা সম্ভব। কিন্তু হতে পারে আপনার কম্পিউটারের সিস্টেম সমস্যা হয়ে গেছে বা নির্দিষ্ট কোন হার্ডওয়্যার ফেইল করেছে, সেক্ষেত্রে কিন্তু রিবুট করে এই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। হতে পারে আপনার কম্পিউটার স্লো কাজ করছে, কেনোনা হার্ডওয়্যার কম্পিউটার প্রসেস গুলোকে হ্যান্ডেল করতে পাড়ছে না, অবশ্যই সেই সময়ে হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে।


তো এক কথায় বলতে, কম্পিউটার রিবুট করার মাধ্যমে কারেন্ট যতো প্রকারের সফটওয়্যার সমস্যা কম্পিউটার থেকে রিমুভ হয়ে যায় এবং সকল সফটওয়্যার গুলো ফ্রেস ভাবে রান হয়, এজন্য কম্পিউটার ফাস্ট কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়। অবশ্যই আপনার কম্পিউটারে আলাদা সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু তারপরেও জাস্ট রিবুট করে দেখা প্রয়োজনীয়, এতে হতে পারে আপনাকে হার্ট ফেইল হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে! হ্যাঁ, বরাবরের মতোই যেকোনো প্রশ্নে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুণ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button