আপনি যদি লং টাইম উইন্ডোজ ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে হয়ত আপনি উইন্ডোজ সেফ মোড টার্মটি শুনে থাকবেন। কিন্তু সেফ মোড দিয়ে আসলে কি বোঝানো হয়ে থাকে, সেফ মোডের কেনই বা দরকার হয় এবং কখন আপনি উইন্ডোজ সেফ মোড অ্যাক্টিভেট করবেন? এই বিষয়গুলো অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজাররাই জানেন না। না জানাই স্বাভাবিক, যেহেতু সচরাচর উইন্ডোজ এর এসব এক্সট্রা ফিচারস একজন অ্যাভারেজ ডেক্সটপ ইউজার হিসেবে আমাদের দরকার হয়না। তবে উইন্ডোজ সেফ মোডের ব্যাপারে জেনে রাখা ভালো, যেহেতু এটি যেকোনো সময়ই আপনার অনেক কাজে লাগতে পারে।
আপনার যদি টরেন্ট ব্যাবহার করার অভ্যাস থাকে এবং বিভিন্ন ক্র্যাক গেমস এবং সফটওয়্যার ডাউনলোড এবং ইন্সটল করার অভ্যাস থাকে, তাহলে হয়তো আপনি অনেকবার অসাবধানতাবশত গেমস কিংবা সফটওয়্যার কিংবা কোন ফাইলের সাথে এমন কোন ক্র্যাপওয়্যার ডাউনলোড করে ফেলেছেন যা আপনাকে একটু পরপর বিভিন্ন ধরনের বিরক্তিকর পপআপ অ্যাডস দিচ্ছে, আপনার ব্রাউজারের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন চেঞ্জ করে ফেলেছে এবং আরও অনেক কিছু করছে যেগুলো সাধারনত করার কথা নয়। অনেকসময় এসব ক্র্যাপ প্লাগিনস এবং সার্ভিসগুলো এতটাই ডিপলি ইন্টাগ্রেটেড হয়ে যায় উইন্ডোজের সাথে যে, এসব পপআপ এবং বিরক্তিকর কন্টেন্টগুলো একজন সাধারন ইউজারের জন্য রিমুভ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মূলত এমন সময়েই আপনার দরকার হতে পারে উইন্ডোজ সেফ মোড ফিচারটির। না, উইন্ডোজ সেফ মোড কোন অ্যান্টিভাইরাস কিংবা অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার নয়, এমনকি এটি কোন সফটওয়্যারই নয়। আপনি আপনার ল্যাপটপ বা ডেক্সটপটি বুট করার সময় বায়োস মেনুতে সাধারনত উইন্ডোজকে সেফ মোডে বুট করার জন্য অপশন পাবেন।
এমন অবস্থায় আপনি যদি বায়োস থেকে উইন্ডোজ সেফ মোডে বুট করেন, তাহলে মূলত উইন্ডোজ এমন একটা অবস্থায় বুট হবে, যেখানে উইন্ডোজ রান করার জন্য একেবারে সর্বনিম্ন যতগুলো ড্রাইভার, সার্ভিস এবং ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোসেস দরকার হয় ঠিক ততটুকুই রাখা হবে। ব্যাপারটা অনেকটা, একটা গাড়ি এমনভাবে স্টার্ট দেওয়ার মতো, যেখানে শুধুমাত্র গাড়ীর ইঞ্জিন, ব্রেক এবং স্টিয়ারিং হুইল কাজ করছে। এক্সট্রা কোন ফিচার বা এক্সট্রা কোন মডিউল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এখানে সুবিধাটা হচ্ছে, সেফ মোডে রান করলে যেহেতু উইন্ডোজ শুধুমাত্র একেবারে নিজের খুব প্রয়োজনীয় ড্রাইভার, সার্ভিস এবং ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোসেস (যেসব ছাড়া উইন্ডোজ রানই হবে না) ছাড়া আর কিছুই লোড করছে না, তাই নিশ্চিতভাবেই যেসব অ্যাপস বা সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামস আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করছিলো, সেসব কিছুই উইন্ডোজ লোড করবে না। প্রোগ্রামগুলো যদি এমনভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে যে, উইন্ডোজ বুট-আপের সাথেই রান হবে এবং ম্যালিশিয়াস অ্যাক্টিভিটি শুরু করবে, তাহলেও সেগুলো উইন্ডোজ সেফ মোডে থাকলে ওপেন হবে না।
যেহেতু আপনি স্টার্টআপে এসব প্রোগ্রাম অটোমেটিক্যালি রান হওয়া থেকে আটকাচ্ছেন, এর ফলে পরবর্তীতে প্রবলেমটি আইডেন্টিফাই করে রিমুভ করার বা কোন ব্যাবস্থা নেওয়া আরও সহজ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, উইন্ডোজ সেফ মোড আপনি আরও অনেক কাজেই ব্যাবহার করতে পারবেন। মোটামুটি উইন্ডোজে কমন প্রায় অধিকাংশ প্রবলেমই উইন্ডোজ সেফ মোডের মাধ্যমে প্রিভেন্ট করা সম্ভব। উইন্ডোজ সেফ মোডে রান করে আপনি আরও যেসব সুবিধা পেতে পারেন-
১। আপনি যদি না বুঝে বা অসাবধানতাবশত কোন রেজিস্ট্রি এন্ট্রি ক্রিয়েট বা ডিলিট করে থাকেন, তাহলে এই রেজিস্ট্রি এন্ট্রির ফলে তৈরি হওয়া নতুন কোন প্রবলেমকে স্টার্টআপেই প্রিভেন্ট করতে পারবেন, এর ফলে আবার রেজিস্ট্রি এন্ট্রিগুলো ডিলিট করা কিংবা রিসেট করা আরও সহজ হয়ে যাবে।
২। না বুঝে চেঞ্জ করা উইন্ডোজ এর কোন ইম্পরট্যান্ট সেটিংস, যা আপনি ট্রাবলশুট করেও ফিক্স করতে পারছেন না, এসব সেটিংসও আপনি উইন্ডোজ সেফ মোডে রান করে খুঁজে পেতে পারবেন এবং উইন্ডোজ সেফ মোডে এগুলো ফিক্স করাটা আরও সহজ হবে।
৩। অনেকসময় দেখা যায় যে থার্ড পার্টি কোন ড্রাইভার ইন্সটল করলে কিংবা অনেকসময় বাগযুক্ত কোন ভার্সনে কোন ড্রাইভার আপডেট করলে ডেক্সটপের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট সঠিকভাবে কাজ করে না অথবা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই সমস্যা উইন্ডোজ ইউজারদের প্রায়ই হয়ে থাকে। উইন্ডোজ সেফ মোডে রান করলে যেহেতু একেবারে এসেনশিয়াল ড্রাইভারগুলো ছাড়া আর কোন এক্সট্রা ড্রাইভার লোড হয় না, তাই উইন্ডোজ সেফ মোডে ড্রাইভার ইস্যু খুঁজে পাওয়া এবং ড্রাইভার ভার্সন আপগ্রেড বা ডাউনগ্রেড করা আরও সহজ হয়।
৪। সিস্টেম রিস্টোর করার ক্ষেত্রেও সেফ মোড খুবই কাজের। আপনি যদি উইন্ডোজের কোন ইম্পরট্যান্ট সেটিংস চেঞ্জ করে বা রেজিস্ট্রি এডিট করে অথবা কোন ম্যালিশিয়াস সফটওয়্যার ডাউনলোড করে আপনার উইন্ডোজের কোন ক্ষতি করেন এবং কিছুতেই কোন প্রবলেম ফিক্স করতে না পারেন, তাহলে সহজেই সিস্টেম রিস্টোর করে, কোনকিছু চেঞ্জ করার আগে আপনার উইন্ডোজ যে স্টেটে ছিলো, সেই স্টেটেই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
তবে আপনি এখন ভাবতে পারেন যে, উইন্ডোজ সেফ মোডে রান করলে যেহেতু এত সুবিধা পাওয়া যাবে, তাহলে কেন আমরা সবসময় উইন্ডোজ সেফ মোডেই রান করি না? এটাই তো উইন্ডোজ ইউজ করার বেস্ট ওয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু না, ডেক্সটপে কোন প্রবলেম হওয়ার পরে যদি সেফ মোডে আপনি সেই প্রবলেমটি ফিক্স করতে না পারেন, তাহলে সেফ মোডেই সবসময় উইন্ডোজ বুট করা কখনোই বেস্ট আইডিয়া নয়। যেহেতু সেফ মোডে উইন্ডোজ শুধুমাত্র নিজে চলতে পারার জন্য যেসব মিনিমাম ড্রাইভারস এবং সার্ভিস লোড করছে, তাই এই মোডে উইন্ডোজ রেগুলারলি ব্যাবহার করার ট্রাই করলে আপনি বিভিন্ন ধরনের আজব ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
মূলত যেসব কাজের জন্য থার্ড পার্টি ড্রাইভারের দরকার হয়, সেসব কিছুই আপনি সঠিকভাবে করতে পারবেন না। যেমন, সেফ মোডে উইন্ডোজ রান করলে খেয়াল করতে পারেন যে আপনার মনিটরটি আপনার ডেক্সটপের ন্যাটিভ সাপোর্টেড রেজুলেশনে চলছে না, কিংবা হয়তো দেখবেন যে আপনি কোন সাউন্ড শুনতে পাচ্ছেন না, যেহেতু এগুলোর জন্য অধিকাংশ সময় থার্ড পার্টি ডিসপ্লে ড্রাইভার বা সাউন্ড ড্রাইভারের দরকার পড়ে। আর উইন্ডোজ সেফ মোডে যে আপনাকে গেমিং এর কথা একেবারেই ভুলে যেতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা!
তবে, উইন্ডোজ সেফ মোডে যে আপনি সবধরনের উইন্ডোজ প্রবলেম সল্ভ করতে পারবেন এমনটা নয়। অনেকসময় উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এতটাই অলটারড হয়ে যায় যে, ফুল সিস্টেম রিস্টোর বা উইন্ডোজ রিইন্সটল করা ছাড়া সেফ মোড বা অন্য কোন মোডেই এসব প্রবলেম ফিক্স করা সম্ভব হয়না। আবার অনেকসময় অনেক ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার যেগুলো নিজেদেরকে উইন্ডোজ কার্নেলে ইন্টাগ্রেট করে নেয়, এগুলোকে কোনভাবেই উইন্ডোজ সেফ মোডে প্রিভেন্ট করা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্র আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে আপনার যতটা সম্ভব ডাটা ব্যাকআপ করে নিয়ে আপনার সম্পূর্ণ হার্ড-ড্রাইভ ফরম্যাট করা এবং উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করা।