মাল্টিমিডিয়া কি ? মাল্টিমিডিয়ার বৈশিষ্ট্য এবং উপাদান গুলো কি
মাল্টিমিডিয়ার বৈশিষ্ট গুলো কি কি ?
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ স্পষ্ট করে পড়ার পর আপনারা মাল্টিমিডিয়া কাকে বলে বা মাল্টিমিডিয়া বলতে কি বুঝায় সবটা ভালো করে বুঝে নিতে পারবেন।
Multimedia শব্দের মধ্যে দুটো আলাদা আলাদা শব্দের মিশ্রণ রয়েছে। সেগুলো হলো, “Multi” এবং “Media“.
এখানে multi শব্দের অর্থ হলো একের অধিক মানে একাধিক এবং media শব্দের অর্থ হলো মাধ্যম।
তাই আমরা বলতে পারি যে, মাল্টিমিডিয়া (multimedia) এমন এক প্রকারের প্রযুক্তি (technology) যার দ্বারা তথ্য (information) গুলোকে এক জায়গার থেকে আরেকটি জায়গাতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রেরণ করাটা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
আবার এভাবেও বলা যেতে পারে যে,
মাল্টিমিডিয়া হলো একটি যোগাযোগের মাধ্যম যেখানে বিভিন্ন ধরণের বিষয়বস্তু (different content forms) গুলো যেমন, text, audio, images, animations বা video ইত্যাদি গুলোকে একত্রিত বা একসাথে করে (combines) একক ইন্টারেক্টিভ উপস্থাপনার সৃষ্টি করা হয়।
চলুন, multimedia কি বা মাল্টিমিডিয়া বলতে কি বুঝায়, বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত ভাবে নিচে চর্চা করে জেনেনেই।
মাল্টিমিডিয়া কি ? (Multimedia meaning in Bengali)
নাম শুনেই আমরা বুঝতে পারছি যে, মাল্টিমিডিয়া হলো মিডিয়ার বিভিন্ন রূপ বা গঠন এর এক ধরনের ইন্টিগ্রেশন বা মিশ্রণ।
এখানে, টেক্সট, গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও, ইত্যাদি বিভিন্ন বস্তু গুলো রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপে, ধরুন আপনি নিজের অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রে একটি প্রেসেন্টেশন তৈরি করলেন যেখানে video এবং audio দুটোই শামিল রয়েছে।
এক্ষেত্রে, আপনার তৈরি করা প্রেসেন্টেশন টিকে বলা হবে একটি “multimedia presentation”.
ঠিক এভাবেই একটি educational software যেখানে animations, sound, text ইত্যাদি থাকছে, এক্ষেত্রে এই ধরণের সফটওয়্যার গুলোকে বলা হবে “multimedia software”.
এছাড়া, CDs এবং DVDs গুলোকে বলা হয় “multimedia formats”, কারণ এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়ার উপাদান গুলোকে বা ডাটা (data) গুলোকে স্টোর (store) করা যেতে পারে।
প্রযুক্তির এতটা বেশি উন্নয়ন এবং ব্যবহারের ফলে আজ মাল্টিমিডিয়া (multimedia) একটি অনেক সাধারণ শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটার বিষয়ে প্রত্যেকেই জানেন।
বর্তমান সময়ে তো আমরা যেকোনো জায়গাতেই মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার দেখতে পাই, কারণ এর ব্যবহার করাটা অনেক সোজা এবং সরল একটি প্রক্রিয়া।
তবে আগেকার সময়ে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এতটা সোজা এবং সরল ছিলোনা।
তাহলে আপনি কি বুঝলেন ? মাল্টিমিডিয়া আসলে কি ?
সোজা ভাষায় যদি বুঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে মাল্টিমিডিয়া মানে হলো (Multimedia meaning in Bangla), এটা এক ধরণের computer information বা digital information যেগুলোকে audio, video এবং animation ইত্যাদি উপাদান গুলোর মাধ্যমে প্রতিরুপ (represent) করা হয়।
তবে এদের সাথে, প্রয়োজন হিসেবে বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া (traditional media) গুলো যেমন, text, graphics drawings, images ইত্যাদির ব্যবহার অবশই হয়ে থাকে।
তাহলে আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, মাল্টিমিডিয়া মানে কি।
মাল্টিমিডিয়ার বৈশিষ্ট গুলো কি কি ?
একটি multimedia system এর মূলত নিচে দেওয়া কয়েকটি মুখ্য বৈশিষ্ট রয়েছে।
১. Multimedia system গুলো অবশই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত (computer controlled) হয়ে থাকে।
২. মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম বা এর উপাদান গুলো একত্রিত হয়ে থাকে।
৩. মাল্টিমিডিয়ার দ্বারা যেই তথ্য (information) গুলো পরিচালনা করা হয় সেগুলো যাতে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব (represent) করা হয়।
৪. মাল্টিমিডিয়া ডাটা গুলো বিভিন্ন ধরণের media formats গুলোর মাধ্যমে গঠিত হতে পারে। যেমন, JPEG, MPEG, AVI, MID, WAV, DOC, GIF,PNG ইত্যাদি।
৫. যদি multimedia applications এর কথা বলা হয় তাহলে এক্ষেত্রে input এবং output অবিচ্ছিন্ন এবং দ্রুত হতে হবে।
৬. মাল্টিমিডিয়া এপ্লিকেশন গুলো ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের software tools গুলো যেমন, programming languages, graphics software’s, multimedia editing software’s ইত্যাদির প্রয়োজন।
মাল্টিমিডিয়ার উপাদান কয়টি ও কি কি – (মাল্টিমিডিয়ার প্রকার)
এমনিতে মাল্টিমিডিয়ার বিভিন্ন ধরণ, উপাদান বা প্রকার থাকতে পারে।
তবে নিচে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল উপাদান এবং প্রকার গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে চলেছি।
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ কনটেন্ট গুলো যেগুলো আমরা নিয়মিত দেখে বা ব্যবহার করে থাকি, সেগুলো মূলত একটি বা একাধিক মাল্টিমিডিয়ার প্রকারেরই প্রোডাক্ট।
১. Text
বর্তমান সময়ে, মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে টেক্সট (text) অত্যাধিক পরিমানে ব্যবহার একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকার।
মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে টেক্সট (text) গুলোকে বিভিন্ন অন্যান্য উপাদান গুলোর সাথে একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
যেমন, photographs বা video presentations ইত্যাদির সাথে।
বর্তমান সময়েও টেক্সট (text) হলো তথ্য প্রেরণের একটি মুখ্য বা প্রাথমিক উপায়।
২. Audio files
অডিও ফাইল গুলো হলো কিছু শব্দ সংগ্রহ (collection of sound) যেগুলোকে অন্যান্য মাল্টিমিডিয়ার প্রকার গুলোর সাথে মিশিয়ে বা যোগ করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অডিও ফাইল গুলোকে যেকোনো text, images, photographs ইত্যাদির মধ্যে musical backgrounds হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া, ক্যামেরার মধ্যে থাকা অডিও রেকর্ডার (audio recorder) এর মাধ্যমে যেকোনো ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার সময় সেখানে audio / sound / voice যোগ করা সম্ভব।
৩. Video Presentations
ভিডিওর মধ্যে চলন্ত ছবি (moving pictures) এবং মূলত ছবি এবং সাউন্ড গুলোকে একত্রিত বা একসাথে করে একটি দারুন এবং আকর্ষণীয় মাল্টিমিডিয়ার অনুভব ও অভিজ্ঞতার তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।
অবশই, ভিডিওর মধ্যেও টেক্সট যোগ করা সম্ভব, এবং অনেকেই মূলত ক্যাপশন হিসেবে ভিডিও গুলোতে টেক্সট এর ব্যবহার করে থাকেন।
তাই, বলা যেতেই পারে যে video material গুলোতে দুটোর থেকেও অধিক আলাদা আলাদা মিডিয়ার প্রকার গুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
video presentation এবং material হলো একটি অত্যাবশ্যক মাল্টিমিডিয়ার ধরন বা প্রকার।
৪. Images and Photographs
Images, photographs এবং visual representations গুলো হলো মিডিয়ার প্রাচীনতম রূপগুলির মধ্যে একটি।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে, images গুলোকে প্রথম বারের জন্য টেক্সট এর সাথে একসাথে সংযুক্ত করে বা মিশিয়ে books এবং newspapers হিসেবে প্রিন্ট করা হয়।
আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী visual element গুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমানে Icons বা small photographs এবং pictures গুলোকে টেক্সট এবং অন্যান্য মিডিয়ার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে।
৫. Animation, GIFs
সোজা এবং স্পষ্ট ভাবে বললে, still images এবং video এর মধ্যের জায়গাটি নিয়ে থাকে animation.
এই ধরণের ফাইল গুলো ছোট এবং সহজেই ট্রান্সফার করা সম্ভব।
Animation গুলোকে বর্তমানে প্রচুর পছন্দ করা হয় এবং এটা মাল্টিমিডিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা প্রকার।
মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার – Uses of multimedia
বর্তমানের এই আধুনিক সময়ে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা বা ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকেই মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বিভিন্ন কারণে প্রত্যেক দিন করছেন। তবে, মাল্টিমিডিয়ার প্রত্যেকটি ব্যবহারের বিষয়ে একসাথে বলা সম্ভব না যদিও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার গুলোর বিষয়ে নিচে বলে দিচ্ছি।
১. ব্যবসা (business)
ব্যবসার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার বিভিন্ন এপ্লিকেশন গুলো রয়েছে যেমন, presentation, training, marketing, advertising, product demos, networked communication ইত্যাদি।
একটি multimedia presentations এর মাধ্যমে শ্রোতাদের (audience) যেকোনো ধারণার বিষয়ে অনেক সহজে এবং স্পষ্ট ভাবে বুঝানো সম্ভব।
পণ্যের বিষয়ে গ্রাহকদের জানানোই হোক বা পণ্য বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে করা মার্কেটিং, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একটি multimedia presentation কার্যকর ও দক্ষ।
২. Education
পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কিন্তু মাল্টিমিডিয়া এপ্লিকেশন গুলোর ভূমিকা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষাদান এবং অধ্যয়ন এর প্রক্রিয়াটিকে একটি উন্নত, আধুনিক, সহজ এবং কার্যকর প্রক্রিয়াতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
জটিল প্রক্রিয়া বা টপিক গুলোকে সহজেই বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আধুনিক শিক্ষকরা games, puzzles, animations, এবং graphics ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকেন, যার মাধ্যমে ছাত্ররা যেকোনো জটিল টপিক অনেক সহজেই এবং কার্যকর ভাবে বুঝে নিতে পারছেন।
৩. Entertainment
মনোরঞ্জন এর ক্ষেত্রে কিন্তু মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার প্রচুর পরিমানে করা হয়, আমার হিসেবে তো এক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার সর্বাধিক পরিমানে হয়ে থাকে।
মনোরঞ্জন এর ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন, movies, short films, 2D animations, 3D animations এবং VFX ইত্যাদির তৈরি করার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার প্রচুর হয়ে থাকে।
যখন মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে multimedia ব্যবহারের কথা বলাই হচ্ছে, তাহলে গেমিং (Gaming) এর উল্লেখ কিন্তু অবশই করতে হবে।
আধুনিক মাল্টিমিডিয়া গুলো গেম গুলোতে ব্যবহার করা হয় যেগুলো খেলার জন্য প্রয়োজন heavy graphics, sound, এবং videos এর যাতে আপনি সঠিক ভাবে গেমিং এর মজা নিতে পারেন।
৪. অন্যান্য জায়গা গুলোতে এর ব্যবহার
ওপরে উল্লেখিত জায়গা গুলোর বাইরেও মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার অন্যান্য অনেক জায়গাতেই হয়ে থাকে।
যেমন,
- সাংবাদিকতা (Journalism).
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (Science and Technology).
- Fashion Industry.
- গবেষণা ও উন্নয়ন (research & development).
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আমাদের এই মাল্টিমিডিয়া কি (What is Multimedia in Bangla) নিয়ে লিখা আর্টিকেল আপনাদের কেমন লাগলো ?
আশা করছি, মাল্টিমিডিয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য গুলো আপনারা ভালো করে বুঝতেই পেরেছেন।
আজকের আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই সোশ্যাল মিডিয়া পেজ গুলোতে শেয়ার করতে ভুলবেননা।