Smartphone News

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন : আপনি কেন আপডেট পাচ্ছেন না?

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন কি?

২০০৭ সাল গুগল এবং এর পার্টনার কোম্পানিগুলো একটি ওপেন মোবাইল প্লাটফর্ম তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিল। এমন একটি প্লাটফর্ম যা যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে, স্মার্টফোন তৈরি করার ক্ষেত্রে। এইভাবে গুগল প্রতিষ্ঠিত করল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম।ডেভেপার ও ম্যানুফ্যাকচারারগণ পেললো একটি ওপেন ফ্রি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম প্লাটফর্ম।

আজ ১০ বছর পর প্রায় ৫৯% শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড হল অন্যতম প্রভাবশালী মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম।অথচ এই জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমটি যে কলঙ্ক এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে সেটা হল অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন।আর এই ফ্রাগমেন্টেশনকে অ্যান্ড্রয়েডের অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন এর কারণে অ্যাপলিকেশন ডেভেলপারদের ব্যবহারকারী বাছাই এর ক্ষেত্রে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে।তাছাড়াও ব্যবহারকারীরা অ্যান্ড্রয়েডের নিত্যনতুনন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন কি?

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন এর কারনেই হয়ত, আপনি আজও অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ চালিত স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন; যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ১১ ভার্সন আসতে চলেছে। আসলে ফ্রাগমেন্টেশনকে এককভাবে সংজ্ঞা দেয়া যায় না। এখানে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং আপডেট, এর ইউআই বা ইন্টারফেস আপডেট, সফটওয়্যার সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট, স্কিন আপডেট এসব বিষয় ফ্রাগমেন্টেশন এর সাথে জড়িত।

ফ্রাগমেন্টেশন এর ভুক্তভোগীর উদাহরন হয়ত আপনি নিজেই, আপনার হাতে থাকা দেশীয় ব্র্যান্ডের কোন চাইনিজ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের কথাই ধরা যেতে পারে; আপনি হয়ত ২ বছর আগে ফোন কিনেছেন, অথচ আজ পর্যন্ত একটি অ্যান্ড্রয়েড আপডেটও আসেনি। এভাবে আপনি মূলত ফ্রাগমেন্টেশন এর স্বীকার।

ফ্রাগমেন্টেশনের অসুবিধা

অনেকে সাধারন ইউজার, তাদের চোখে হয়ত এই অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন এর অসুবিধা পড়ছে না। তবে আপনি একজন সচেতন ইউজার, অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ ফিচারের স্বাদ গ্রহন করতে চান, কিন্ন্তু কাঙ্খিত আপডেট পাচ্ছেন না, আপনি ফ্রাগমেন্টেশন এর স্বীকার। অন্যদিকে যারা অ্যান্ড্রয়েড গেমস ও অ্যাপস ডেভেলপার তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এখানে একটি অ্যাপলিকেশন বা গেমস ডেভেলেপ করার ক্ষেত্রে, ফ্রাগমেন্টেশন এর ফলে অডিয়েন্স টার্গেট করতে তাদের ব্যাপক দ্বিদায় ভুগতে হয়।

হয়ত তারা ললিপপ এবং এর উপরের অ্যান্ড্রয়েড ওএস এর ওপর ভিত্তি করে অ্যাপস বানাল, তবে সেক্ষেত্রে যারা এখনও জেলিবিন বা কিটক্যাট ব্যবহার করছে, তারা অ্যান্ড্রয়েডে থাকা সত্তেও সেই অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করতে পারল না। আবার পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড সংস্করন এর সিকিউরিটি আপডেট দীর্ঘদিন হালনাগাদ না হওয়ার কারনে, কোন একটি নিরাপত্তা ফাক দিয়ে আপনার ডাটা কালো হাতে পড়ে যাওয়ার বা চুরির সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়।

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম মার্কেটে সবচেয়ে বড় দুই প্রতিযোগী হলঃ অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস। আর কেবল এই ফ্রাগমেন্টেশন না থাকার কারনে আইওএস প্রথম থেকে অ্যান্ড্রয়েডের থেকে এগিয়ে রয়েছে। আর তাই বহু সংখ্যক মানুষ এখনও আইওএস চালিত আইফোন এর নেশা কোনভাবেই কেটে উঠতে পাচ্ছে না।

অ্যাপেল এর আইওএস

অ্যাপেল তাদের প্রত্যকেটি মডেলের আইফোনের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার এর ব্যাপারে যত্নশীল।এখানে অ্যাপেল তাদের প্রত্যােকটি ফোনে তাদের লেটেস্ট আইওএস আপডেট এবং যাবতীয় অন্যান্য ইউআই এবং সফটওয়্যার সিকিউরিটি প্যাচ নিয়মিত ভাবে প্রদান করে। এমনকি একারনেই তিন বছর পুরোনো আইফোন ৮ এও আজ ২০২০ সালে ঠিক আগের মত স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায়।

এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৮০% শতাংশ আইফোনই লেটেস্ট আইওএস আপডেটে চলে। ঠিক অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রক গুগল। এখানে আইফোনের সাথে তুলনা করতে গেলে কেবল গুগল এর পিক্সেল বা নেক্সাস সিরিজের তুলনা করা যায়। তবে বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই তাদের সকল অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে এসব আপডেট দিতে আগ্রহী নয়। হয়ত আইওএস এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েডের স্মার্টফোন সংখ্যা অনেক বেশি, একারনে হয়ত অনেক কোম্পানি এত আপডেট দিতে পারে না।

গুগল ও ফোন নির্মাতা কোম্পানি

আমরা অনেকে ফ্রাগমেন্টেশনের জন্য গুগলকে দোষ দেই। গুগল কেন আপডেট দেয় না? সব গুগগের জন্য! একটা জিনিস চিন্তা করে দেখেন, গুগল এখানে অ্যান্ড্রয়েড এর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঠিকই; তবে পৃথিবীর শত শত স্মার্টফোন কোম্পানির সকল মডেলের ফোনের দায়িত্ব কিন্তু গুগলের নয়।

গুগল এখানে প্রত্যেকবার তাদের নতুন নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন রিলিজ দেয়ার সাথে সাথে তাদের পিক্সেল/ নেক্সাস স্মার্টফোনে যেমন তার আপডেট দেয়; ঠিক একইভাবে তারা সার্বজনীন সকল অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলোর ম্যানুফ্যাকচারার দের জন্য একটি উন্মুক্ত সংস্করন রিলিজ করে। এখানে কিন্তু মূলত গুগলের দায়িত্ব শেষ।

এখন গুগল এর রিলিজ করা এই লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেমটিকে মডিফিকেশন এবং হার্ডওয়্যার এর উপযোগী অপটিমাইজড করে নিজের ব্র্যান্ডের প্রত্যেকটি মডেলের জন্য উন্মুক্ত করার দায়িত্ব স্মার্টফোন তৈরিকারক কোন্পানির নিজেদের। এখন ধরুন কতিপয় একটি কোম্পানি X তাদের সকল মডেলের ফোনের জন্য অপারেটিং সিস্টেমটিকে অপটিমাইজ করতে পারল না, তাদের হয়ত এরকম লোকবল বা সক্ষমতা নেই, তখন দোষটা কি গুগলের না X কোম্পানির?

একটি কোম্পানি তাদের নিজেদের ইচ্ছামত হার্ডওয়্যার ডিজাইন করে স্মার্টফোন তৈরি করে। এখন সেকারনে সে হার্ডওয়্যার এর হিসেবে গুগলের উন্মুক্ত করা অপারেটিং সিস্টেমটিকে অপটিমাইজ করে তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ছেড়ে দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু স্মার্টফোন তৈরিকারক কোম্পানিরই, তাই নয় কি? আমরা শাওমি স্মার্টফোনের দিকে তাকালে দেখতে পাই যে, শাওমি তাদের ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাপলের নীতি অনুসরন করে, তাদের প্রত্যেকটি মডেলের স্মার্টফোনের জন্য সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম ভিত্তিক সকল আপডেট দিয়ে আসছে।

অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন এর যে বিষয়টি তা কিন্তু থাকছে না। একইভাবে বলতে পারি ; ওয়ানপ্লাস এর কথাও। এরা অ্যান্ড্রয়েড এর ফ্রাগমেন্টেশন এর ধারা কে বিলুপ্ত করার কাজটি করে যাচ্ছে।

অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন নিরুপনের উপায়

এই অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন এর সমস্যা মেটাতে হলে, নিঃসন্দেহে স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারার দেরই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে, তাছাড়া কোন উপায় নেই। এক্ষেত্রে এমনভাবে স্পেসিফিকেশন ডিজাইন করতে হবে, যেনো স্পেসিফিকেশনটি আজকের সময় যেমন মানসম্মত, ২ বছর পরও যেন মানসম্মত বা মোটামোটি তথা কাজ করার মত হয় একরম।

এতে করে একই স্মার্টফোনে ভবিষ্যতেও সফটওয়্যার আপডেট দেয়া সম্ভব হবে, ফ্রাগমেন্টেশন এর সমস্যাটা থাকবে না।দেশীয় ও লোকাল ব্র্যান্ড গুলোকে আরও যত্নশীল হতে হবে। তুলনামূলক জনপ্রিয় স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের সকল মডেলের স্মার্টফোনকে সিস্টেম সফটওয়্যার আপডেটের আওতায় আনতে হবে।

তাছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় কাস্টম রম, যেগুলোর আপডেট নিয়মিত আসে এবং আপডেট দেয়াও সহজ; যেমনঃ সাইনোজেনমোড, লাইনজেন ওএস, মিইউআই এসব প্রত্যেকটি ফোনে ব্যবহার করা যেতেই পারে। এতে করে কোন্পানি থেকে না পেলেও এসব কাস্টম রম কতৃপক্ষ থেকে ব্যবহারকারীরা আপডেট পেতে পারবে।


তো বন্ধুরা,আশা করি অ্যান্ড্রয়েড ফ্রাগমেন্টেশন কি সে বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আর আমাদের দৈনন্দিন স্মার্টফোন ব্যবহারের এক্সপেরিয়েন্সে এর কমে যাওয়া কিভাবে উন্নতি আনতে পারে, সে বিষয়েও জানতে পেরেছি।আসলে এই ফ্রাগমেন্টেশন অ্যান্ড্রয়েডের সুনাম ক্ষূন্ন করছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। নিচে মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button