Smartphone News

যেসব কারণে আপনার স্মার্টফোনে এসডি কার্ড ব্যাবহার করা উচিৎ নয়

যেসব কারণে আপনার স্মার্টফোনে এসডি কার্ড ব্যাবহার করা উচিৎ নয়

যদিও এখন অধিকাংশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোনই মিনিমাম ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের সাথে রিলিজ হয়, তবুও ২০২১ সালে এসে এখনো আমাদের দেশের অনেক স্মার্টফোন ইউজাররাই ফোনে এক্সট্রা স্পেসের জন্য এক্সটারনাল মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহার করেন। অনেকের এক্সট্রা স্টোরেজ খুব বেশি দরকার না হলেও জাস্ট আগেরকার অভ্যাস বজায় রাখতেও ফোনের হাইব্রিড স্লটে একটা মাইক্রো এসডি কার্ড ঢুকিয়ে রাখেন। আবার যারা মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহার করেন, তারা ফোনের ইন্সটল করা অ্যাপসগুলো এসডি কার্ডে মুভ করে রাখেন, কারণ, হোয়াই নট?

কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোনে এসডি কার্ড ব্যাবহার না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও অনেকেই এই কথাটা মেনে নেবেন না, তবে বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনে এসডি কার্ড ব্যাবহার করলে কি কি সমস্যায় পড়তে হতে পারে, তেমন কয়েকটি সমস্যার দিকে লক্ষ্য করলে হয়তো আপনার ধারণা চেঞ্জও হতে পারে। তাই আজকে স্মার্টফোনে মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহার করার কয়েকটি সাইড-ইফেক্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক, যার কারণে এখন স্মার্টফোনে এসডি কার্ড না ব্যাবহার করাটাই ভালো।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

স্পিড প্রবলেম

এটা আমাদের সবারই জানা যে, ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজের থেকে অবশ্যই ফোনে ইনসার্ট করা যেকোনো মাইক্রো এসডি কার্ডের ফাইল ট্রান্সফার স্পিড বা যেকোনো ধরনের রিড-রাইট স্পিড অনেকটাই স্লো হবে। ৫-৬ বছর আগে ফোনে এসডি কার্ড ব্যাবহার করে ফোনের সব ইন্সটল করা অ্যাপস এসডি কার্ডে মুভ করে রাখলেও কোনো স্পিড ইস্যু লক্ষ্য করা যেতো না, যেহেতু ৫-৭ বছর আগে অ্যান্ড্রয়েড ওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডের কোনো অ্যাপসই এখনকার মত রিসোর্স হাংরি ছিলো না। তাই এসডি কার্ড থেকে কোনো অ্যাপ রান করলে এসডি কার্ড যে স্পিডে ডাটা রিড এবং রাইট করতে পারতো, তা ওই অ্যাপের জন্য যথেষ্টই ছিলো। এইজন্যই আমরা কোনোধরনের ল্যাগ বা স্টাটারিং লক্ষ্য করতাম না।

কিন্তু বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রায় সব অ্যাপই আগের তুলনায় অনেক বেশি রিসোর্স হাংরি। তাই এখন মাইক্রো এসডি কার্ডে আপনার ইন্সটল করা অ্যাপসগুলোকে মুভ করলে অ্যাপটি ব্যাবহার করার সময় আপনি সাধারণের তুলনায় বেশি ল্যাগ এবং স্লো পারফরমেন্স পাবেন। হয়তো ছোট ছোট অ্যাপের ক্ষেত্রে তা খুব বেশি লক্ষ্য করার মতো হবে না, তবে ভারী কোনো অ্যাপ ব্যাবহার করার সময় বা ভারী কোনো গেম খেলার সময় আপনি বেশ ভালো পরিমান ল্যাগ এবং পারফরমেন্স ইস্যু দেখতে পাবেন।

ফাইল খুঁজে পাওয়ার ঝামেলা

যদিও আপনি চাইলে আপনার ইনসার্ট করা এসডি কার্ডটি আপনার ফোনের ফাইল সিস্টেম অনুযায়ী ফরম্যাট করে নিয়ে সেটিকে ফোনের অ্যডপ্টেড ইন্টারনাল স্টোরেজ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন, কিন্তু তার মানে এই না যে আপনার ফোন ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল দুটি ডিস্ককেই একটি সিংগেল ড্রাইভ হিসেবে দেখবে বা মার্জ করবে। ফোনের কাছে সবসময়ই দুটি ডিস্ক দুটি আলাদা আলাদা স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে থাকবে।

এর ফলে আপনার এসডি কার্ডের ফোল্ডার স্ট্রাকচার অনুযায়ী আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো খুজে পেতে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। যেমন- আপনাকে হয়তো এমন সিচুয়েশনে পড়তে হতে পারে যখন আপনার ফোনের সকল ফাইল ফোনের ইন্টারনাল ড্রাইভ এবং এসডি কার্ডে এলোমেলোভাবে রয়েছে এবং কোন টাইপের ফাইল কোথায় থাকার কথা সেটাও আপনি সঠিকভাবে জানেন না। আপনার এসডি কার্ডে আপনার ফটো এবং আপনার অফলাইন মিউজিক থাকতে পারে, আবার আপনার ডকুমেন্টস এবং ক্রোম ডাউনলোডস থাকতে পারে আপনার ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ। এমন অবস্থায় আপনার দরকারের সময় আপনার ফাইল খুঁজে পেতেই কয়েক মিনিট সময় লেগে যাবে। কারণ, উইন্ডোজের মতো ফাইল ম্যানেজমেন্ট আপনি কখনোই অ্যান্ড্রয়েডে পাবেন না। তবে যাদের ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ খুবই কম, তাদের কাছে এক্সট্রা স্টোরেজের জন্য ফাইল খুঁজে পাওয়ার এই সমস্যাটা তেমন বড় কোন ইস্যু নাও হতে পারে।

এসডি কার্ড ফেইল করা

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এসডি কার্ডের রিড-রাইট সাইকেল বা লাইফস্প্যান আনলিমিটেড নয়। প্রত্যেকটি এসডি কার্ডের রিড-রাইট সাইকেলই লিমিটেড। আপনি যতবারই এসডি কার্ড থেকে ডাটা অ্যাকসেস করেন বা ডাটা ইনপুট করেন, এসডি কার্ডের লাইফস্প্যান কমতে থাকে। সাধারনত এসডি কার্ডের লাইফস্প্যান কেমন হবে তা নির্ভর করে এসডি কার্ডের কোয়ালিটির ওপরে। যেমন- কমদামী চাইনিজ নামহীম এসডি কার্ডগুলোর তুলনায় Sandisk এর বা Transcend এর এসডি কার্ডের লাইফস্প্যান বেশি থাকবে।

তাই আপনি যে এসডি কার্ডটি স্মার্টফোনে ব্যাবহার করবেন, তা যদি ভালো কোয়ালিটির বা ভালো ব্র‍্যান্ডের না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কখনোই এসডি কার্ডটির লাইফস্প্যানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন না। এমনও হতে পারে যে, আগামী ১ দিনের মধ্যেই আপনার এসডি কার্ডটি ক্র‍্যাশ করেছে। আর তাই এমন এসডি কার্ডে কোনো জরুরি ফাইল বা ডকুমেন্ট বা এমন কোনোকিছু যদি আপনি ব্যাকআপ ছাড়া রাখেন, তাহলে যেকোনো সময় নিমেষের মধ্যেই এসব ফাইল হারিয়ে গেলে আপনার কিছুই করার থাকবে না। যদিও এটা অনেকের কাছেই তেমন বড় কোনো ইস্যু না, তবে যারা ফোনে এসডি কার্ডে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস স্টোর করেন, তাদের জন্য একটা বড় সমস্যা হতে পারে।

ডাটা মাইগ্রেট করার প্রবলেম

আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের এসডি কার্ডটি খুলে আরেকটি স্মার্টফোনে ইনসার্ট করেন, আপনি কখনোই উইন্ডোজের ড্রাইভগুলোর মতো সরাসরি এসডি কার্ডের ডাটার অ্যাকসেস পাবেন না। কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ আপনি চাইলেই অন্য কোনো কম্পিউটারে ফিজিক্যালি কানেক্ট করেই কোনো প্রবলেম ছাড়াই ব্যাবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোনো স্মার্টফোনে ব্যাবহার করা এসডি কার্ড যদি অন্য কোনো স্মার্টফোনে ইনসার্ট করেন, সেক্ষেত্রে দেখতে পাবেন, ইনসার্ট করার পরেই এসডি কার্ডটি এনক্রিপ্টেড দেখানো হয়। অর্থাৎ, নতুন স্মার্টফোনে আপনি পুরোনো ফোনে ব্যাবহার করা এসডি কার্ড আবার ব্যাবহার করতে চাইলে আপনাকে আগে এসডি কার্ডটি ফরম্যাট করে নিতে হবে। আর এসডি কার্ড ফরম্যাট করলে আপনি এসডি কার্ডে থাকা আগের কোনো ডাটাই আর ফেরত পাবেন না।

নতুন ফোনে পুরনো এসডি কার্ডের ডাটা ব্যাবহার করতে চাইলে আপনাকে ফোন চেঞ্জ করার আগে এসডি কার্ডের সব ডাটার ব্যাকআপ অন্য কোনো ডিভাইসে নিয়ে রাখতে হবে। এরপরে নতুন ফোনে এসডি কার্ড ইনসার্ট করে, কার্ডটি ফরম্যাট করে এরপর আবার ব্যাকআপ করা ডাটা রিস্টোর করতে হবে, যা খুবই ঝামেলাপূর্ণ কাজ। তবে যদি আপনি এই সম্পুর্ণ প্রোসেসটিকে কোনো ঝামেলা হিসেবে না দেখেন, তাহলে সেটা আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।

খারাপ গেমিং পারফরমেন্স

আপনি যদি মোবাইল গেমার হয়ে থাকেন, অর্থাৎ প্রতিদিনই স্মার্টফোনে অনেক হেভি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমস খেলেন, তাহলে এসডি কার্ড ব্যাবহার করা বা এসডি কার্ড ব্যাবহার করে গেম রান করা আপনার জন্য একটু দুঃস্বপ্ন হতে পারে। আপনার এসডি কার্ডের রিড এবং রাইট স্পিড যদি খুবই ভালো না হয়, তাহলে আপনি গেমিং এর সময় হাজার রকমের ইস্যু লক্ষ্য করতে পারবেন। যেমন- গেমপ্লে ল্যাগ, এনিমেশন ল্যাগ, স্টাটারিং, স্লো লোডিং, আনরেস্পন্সিভ টাচ, ফোর্স ক্লোজ ইত্যাদি। এর কারণ হচ্ছে, হেভি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমসগুলো প্রতি সেকেন্ডে যে স্পিডে ডাটা রিড এবং রাইট করে, অধিকাংশ অ্যাভারেজ কোয়ালিটির এসডি কার্ডই সেই পরিমান স্পিড দিতে পারেনা। তবে যদি ভালো ব্র‍্যান্ডের এবং ভালো কোয়ালিটির এসডি কার্ড ব্যাবহার করেন, তাহলে হয়তো এই সমস্যাও আপনি নাও পড়তে পারেন। যাইহোক না কেন, স্মার্টফোনে গেমের ডাটা কখনোই এক্সটারনাল এসডি কার্ডে রাখা উচিৎ নয়, যদি আপনি গেমিং এর সময় ভালো পারফরমেন্স পেতে চান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button