আমরা বিনোদন’কে কতোটা পছন্দ করি এটার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। টেকনোলজির বদৌলতে বিনোদন নেওয়ার অভিজ্ঞতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু থিয়েটার নয় বরং হোম এন্টারটেইনমেন্টেও চলে এসেছে ৩ডি “থ্রি ডাইমেন্সন” টেকনোলজি। আর সংখ্যা শুধু ৩ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়, ৪ডি, ৫ডি, ৬ডি পর্যন্ত টার্ম গুলো শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু পিকচারের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে ৩ডি’র উপর আর কোনই ডি থাকার কথা নয়, তাহলে ৪ডি, ৫ডি, ৬ডি সিনেমা গুলো আসলে কি? এই আর্টিকেল থেকে সমস্ত উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবো।
২ডি সিনেমা
২ডি হচ্ছে জাস্ট রেগুলার সিনেমা টেক। এখানে তেমন কিছু নেই, টিভি জন্মের পর থেকে বা প্রথম থিয়েটার যুগ থেকেই ২ডি সিনেমা দেখে আসছি আমরা। এখানে ইমেজকে কোন একটি ফ্ল্যাট স্ক্রীন বা পর্দার উপর দেখতে পাওয়া যায় এবং সম্পূর্ণ রেগুলার ভিউ পাওয়া যায়। ২ডি ইমেজে দুইটি ডাইমেন্সন থাকে (প্রস্থxউচ্চতা); মানে টিভি, প্রোজেক্টর, থিয়েটার, ভিডিও স্ক্রীন ইত্যাদি সবকিছুই এর একই প্রকারের ইমেজ তৈরি করে। ২ডি সিনেমাতে যদি কোন বিস্ফোরণ দেখানো হয়, সেখানে জাস্ট দেখতে পাবেন বিস্ফোরণ ঘটলো, কিন্তু এখানে কোন রিয়াল ফিলিং পাবেন না। তবে অনেকের মতে, ৩ডি সিনেমাকে গ্লাস ছাড়া দেখাকেই ২ডি সিনেমা বলে! ২ডি একেবারেই বেসিক, তাই এই নিয়ে আলোচনা করার খুব বেশি কিছু নেই।
৩ডি সিনেমা
এবার কথা বলি অসাধারণ টেক ৩ডি নিয়ে, এখানে শুধু ইমেজ নয়, ইমেজের ভেতরে দেখানো অবজেক্ট গুলোর দূরত্ব এবং গভীরতাও অনুভব করা সম্ভব। হ্যাঁ, আমরা খালি চোখে পৃথিবী’কে যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত, প্রত্যেক বস্তুর দূরত্ব, গভীরতা অনুভব করতে অভ্যস্ত, ৩ডি টেক অনেকটা সেই রকমেরই ভার্চুয়াল ফিল প্রদান করে। যার ফলে মুভি’কে আরোবেশি ব্যস্তব সম্পন্ন মনে হয়। আমাদের চোখ একটির থেকে আরেকটি সামান্য একটু দূরে অবস্থিত হয়, আর সেটা সামান্য একটু আলাদা আলাদা পজিশনে কোন অবজেক্ট’কে দেখতে পায়, এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক ৩ডি ইমেজ তৈরি করে। দুইটি ২ডি ইমেজকে চোখ ক্যাপচার করে, একটি ইমেজ কিছুটা দুরের হয় আর আরেকটি ইমেজ কিছুটা কাছের হয়, এভাবেই দুইটি ইমেজকে ব্রেইন প্রসেস করে বস্তুর গভীরতা নির্ণয় করে।
৩ডি টেলিভিশন বা ৩ডি থিয়েটারে ঠিক একই রুল কাজে লাগিয়ে ৩ডি সিনেমা দেখানো হয়। যদিও অনেক আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩ডি টিভি গুলোকে তৈরি করা হয়, তবে বেশিরভাগ সময় ৩ডি ইমেজ দেখানোর জন্য ৩ডি গ্লাস পরিধান করার প্রয়োজন পরে। এটি একটি বিশেষ ধরণের গ্লাস, যার একটি লেন্স লাল রঙের হয়ে থাকে এবং আরেকটি লেন্স স্যায়ান কালারের হয়ে থাকে। লাল লেন্সটি রঙ ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, এটি শুধু লাল রঙকেই চোখে আসতে দেয়, আর স্যায়ান লেন্সটি ব্লু এবং গ্রিন কালারকে ক্যাচ করে। অর্থাৎ আপনার এক চোখ আরেক চোখ হতে ভিন্ন ইমেজ দেখতে পায়, কেনোনা দুই চোখে আলাদা কালার গুলো কেবল ক্যাপচার করানো হয়। আবার স্ক্রীনে দেখানো ইমেজেও আলাদা আলাদা রঙের আলাদা আলাদা লেয়ার থাকে, যেটা বিশেষ করে কেবল কোন এক চোখই দেখতে পায়। এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক এই আলাদা ইমেজ এবং আলাদা রঙ গুলোকে একসাথে প্রসেস করে আর ইমেজের মধ্যে গভীরতা অনুভব করা যায়, ৩ডি ইমেজকে অনেকটা মস্তিষ্ক ট্রিক, মানে আমাদের মস্তিষ্ক আর চোখ কোন জিনিষকে কিভাবে দেখে, তার উপর নির্ভর করে বানানো হয়েছে।
৩ডি মুভিতে আপনি যেকোনো ইমেজের মধ্যের দূরত্ব এবং গভীরতা বুঝতে পারবেন এবং সিনেমাতে যদি কোন বিস্ফোরণ ঘটে তো সেটা আপনার কাছে অনেকটা রিয়াল ফিল হবে। মনে হবে আগুনের ছটা গুলো আপনার পাশ পর্যন্ত ছুটে আসলো। পাখি পর্দার মধ্যে উড়তে উড়তে মনে হয় পর্দা থেকে বেরিয়ে আসল, ইত্যাদি অনেক ইফেক্ট ভিডিও’র সাথে যুক্ত করা থাকে। ৩ডি মুভিতে দেখা ইমেজ গুলো অনেকটা আপনার এমন মনে হবে, জেনো আপনি কোন পর্দায় দেখছেন না, আপনি হয়তো সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে দেখছেন। শুধু ইমেজ নয়, এখানে সাউন্ড কোয়ালিটিতেও ব্যস্তবতার ছোঁয়া নিয়ে আসা হয়েছে, ৩ডি মুভি থিয়েটার গুলোতে সারাউন্ড সাউন্ড টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, ছবির বামে কোন শব্দ হলে আপনার বাম পাশ থেকে, ডানে কোন বিস্ফোরণ হলে আপনার ডান পাশ থেকে শব্দ শুনতে পাওয়া যায়, ঠিক যেমনটা রিয়াল ওয়ার্ল্ডে ঘটে থাকে।
৪ডি/৫ডি/৬ডি সিনেমা
২ডি টেকনোলজিতে ২টি ডাইমেন্সনাল ইমেজ আর ৩ডি’তে তিনটি; এর মানে কিন্তু এটা নয় ৪ডি’তে ৪টি ডাইমেন্সনাল ইমেজ রয়েছে। যদিও এর নাম ৪ডি বা ৫ডি ইত্যাদি রাখা ঠিক নয়, কেনোনা ৩ডির পর থেকে টেকনিক্যালি আর কোন ডাইমেন্সনাল ইমেজ নেই। ৪ডি পিকচারে ৩ডি পিকচারকেই দেখানো হয়, কিন্তু আরো রিয়াল এক্সপেরিয়েন্সের সাথে। যেমন ধরুন ৩ডি’তে কি হয়, শুধু আপনি কোন ইমেজকে ব্যস্তব এবং মনে হয় আপনি সেটা ছুতে পারবেন, সাথে শব্দ স্যারাউন্ড ভাবে আপনার কাছে আসে বলে সিন গুলোকে আরো রিয়াল মনে হয়, কিন্তু ৪ডি’তে আপনাকে আরো জীবন্ত এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার জন্য, ধরুন আপনি সিনেমাতে দেখছেন একটি বাস চলছে অনেক খারাপ রাস্তা দিতে, তো আপনার সিটও সিনেমার সাথে সাথে কাঁপতে থাকবে, যেমনটা ঐ খারাপ রাস্তা দিয়ে আপনি ব্যস্তবে বাসে চড়ে গেলে কাঁপত। মুভিতে দেখছেন কার রেসিং হচ্ছে এবং রাস্তার বাঁকে বাঁকে কার গুলো পিছলিয়ে মোড় ঘুরছে, তো আপনার বসার সীটও একিয়ে বেকিয়ে যাবে, যাতে আপনার এমন ফিল হয়, ঐ কারের মধ্যে আপনিই রয়েছেন! বুঝলেন তো?
এবার যদি কথা বলি ৫ডি সিনেমা নিয়ে, তো এখানে আরো কিছু ইফেক্ট যুক্ত করা হয়েছে। ফিল্ম তো ৩ডি’তেই চলবে সাথে স্যারাউন্ড অডিও’ও থাকবে এবং সীট মুভিং করবে কিন্তু ৫ডি সিনেমাতে সিনেমার অভ্যন্তরীণ পরিবেশও আপনাকে ফিল করানো হবে। যেমন ধরুন সিনেমাতে দেখছেন বৃষ্টি হচ্ছে, তো থিয়েটারের সীটে বসে থেকেই আপনার গায়ে হালকা পানির ছিটা পড়বে। যদি মুভিতে দেখানো হয় বিস্ফোরণ হচ্ছে, তো আপনি সেই সময় ঐ বিস্ফোরণের গরম ভাব অনুভব করতে পারবেন। সাথে যদি ফুটেজে দেখানো হয় কোন ফুলের বাগান, তো আপনার কাছে ফুলের সুগন্ধও অনুভুত হবে! বুঝতে পারলেন তো?
আর ৬ডি, ৭ডি, ১১ডি ইত্যাদি বলে কোন টেক নেই। যদি কোন থিয়েটারে বলা হয়, কোন সিনেমা তারা ১১ডি’তে চালাচ্ছে, তো ব্যাস এগুলো মার্কেটিং টার্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। ৩ডি’র পর থেকে যতো ডি’ই আলাদা লাগানো হোক না কেন আপনি ৩ডি ইমেজই দেখতে পাবেন, কিন্তু ৪ডি এবং ৫ডি’তে ৩ডির সাথে আরো কিছু ব্যস্তব অভিজ্ঞতা যুক্ত করে দেওয়া হয়।