TechTech GuideTechnology

প্রসেসর কেনার আগে যেসব বিষয় ভেবে দেখা উচিৎ

প্রসেসর কেনার আগে যা জানা উচিত?

একটি কম্পিউটারের সবথেকে ইম্পরট্যান্ট পার্টটি হচ্ছে র সিপিইউ আর প্রসেসর। কারণ, কম্পিউটারের প্রসেসররই মূলত যাবতীয় সবধরনের ক্যালকুলেশন হয়ে থাকে। আপনি যখন যে কাজেই আপনার ডেক্সটপ ব্যবহার করুন না কেন, সবসময়ের জন্য আপনার কাজটি এক্সিকিউট করার প্রধান দায়িত্ব থাকে আপনার প্রসেসরের ওপরে। তাই যেকোনো ল্যাপটপ কেনার আগে কিংবা ডেক্সটপ বিল্ড করার সময় আপনাকে খুব ভেবেচিন্তে প্রসেসর বেছে নিতে হবে।

কারণ, কোন প্রসেসরটি আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে, তা নির্ভর করে আপনি কি ধরনের ডেক্সটপ ইউজার এবং আপনি ডেক্সটপে বা ল্যাপটপে কি ধরনের কাজ সবথেকে বেশি করে থাকেন। যেমন- আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ডেক্সটপের প্রসেসর একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ডেক্সটপের প্রসেসরের থেকে আলাদা হওয়া উচিৎ। যাইহোক, আর ভুমিকা না করে সরাসরি মেইন টপিকে আসা যাক। আজকে আলোচনা করতে চলেছি, ডেক্সটপ বিল্ড করার সময় বা ল্যাপটপ কেনার সময় প্রসেসর পছন্দ করার ক্ষেত্রে আপনার কি কি বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ, যাতে ভবিষ্যতে ভুল প্রসেসর নিয়ে আপনালে অনুশোচনা করতে না হয়।

প্রথমে দেখে নেওয়া যাক, প্রসেসরের কোন কোন কম্পোনেন্ট এবং কনফিগারেশন সম্পর্কে আপনার জানা উচিৎ, যখন আপনি একটি নতুন প্রসেসর কিনতে চাইছেন। মূলত প্রসেসর কেনার ক্ষেত্রে প্রসেসরের ৫ টি ফ্যাক্টর আপনাকে প্রথমে ভেবে দেখতে হবে।

কোর কাউন্ট

প্রসেসর কেনার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে আপনাকে দেখে নিতে হবে যে এই প্রোসেসরটিতে কতগুলো কোর আছে। এর অর্থ হচ্ছে, এই প্রসেসরটি একসাথে একইসময়ে কতগুলো কাজ করতে পারে। প্রত্যেকটি প্রোসেসিং কোর মূলত একটি করে টাস্ক হ্যান্ডেল করতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, আপনার প্রসেসরে যত বেশি কোর থাকবে, আপনার প্রসেসরটি একইসাথে তত বেশি টাস্ক হ্যান্ডেল করতে পারবে। অধিকাংশ প্রোসেসরেই আপনি এখন সর্বনিম্ন ৪ টি কোর দেখতে পাবেন, তবে সেগুলো খুব বেসিক কাজ করার জন্য উপযুক্ত।

আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উচিৎ হবে ৬ থেকে ১২ কোরের একটি প্রসেসর ব্যবহার করা, তবে তা নির্ভর করে আপনি গেমিং এর পাশাপাশি একইসাথে আরও কি কি কাজ করতে চান তার ওপরে। আর আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন এবং আপনার ডেক্সটপটিকে ওয়ার্কস্টেশন হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার উচিৎ হবে ১৬ থেকে ৬৪ কোরের একটি প্রসেসর বেছে নেওয়া। আপনি যদি ডেস্কটপে অনেক হেভি কাজ করেন যেমন ইলাস্ট্রেশন, ৪কে ভিডিও এডিটিং, রেন্ডারিং কিংবা থ্রিডি মডেলিং, সেক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হবে যতোটা সম্ভব হাই কোর কাউন্টের প্রসেসর নেওয়া।

ক্লক স্পিড

হাই কোর কাউন্টের প্রসেসর নিলে আপনাকে প্রসেসরের আরেকটি ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করতে হবে, আর তা হচ্ছে ক্লক স্পিড। আপনি যদি ৬৪ কোরের একটি সিপিইউ ব্যবহার করেন, এটির কোরগুলো একটি ১৬ কোরের সিপিইউ এর থেকে আরও স্লো মুভ করবে। অধিকাংশ ডেক্সটপ ইউজাররা ছোট ছোট টাস্কগুলো আরও দ্রুত করে ফেলতে পারবেন, যদি সিপিইউ এর ক্লক স্পিড ফাস্ট হয়। আপনি খেয়াল করবেন, এএমডি এর হাই এন্ড সিপিইউ Threadripper 3990X এর ক্লক স্পিড, মার্কেটের হাইয়েস্ট যে প্রোসেসর ক্লক স্পিড এই মুহূর্তে আছে, তার ধারেকাছেও যায়না। এর কারণ হচ্ছে, Threadripper 3990X এর কোর কাউন্ট অনেক বেশি।

আপনি যত বেশি কোর কাউন্ট চাইবেন, আপনার প্রসেসরের ক্লক স্পিড ততই কমতে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, Threadripper 3990X এর ৬৪ টি কোরের সবগুলোকে ২.৪ গিগাহার্জ ক্লক স্পিডে রান করতে পারে, যেখানে Intel Corei9 10900K প্রোসেসরটি এর ১০ টি কোরকে ৩.৭ গিগাহার্জ ক্লক স্পিডে রান করতে পারে। তাই আপনি যদি ডেক্সটপে অনেক বেশি ছোট ছোট টাস্ক একসাথে করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো কম কোর কাউন্ট কিন্তু হাই ক্লক স্পিডের প্রসেসর নিতে চাইবেন। তবে হেভি ওয়ার্ডলোডের জন্য আপনাকে ক্লক স্পিড স্যাক্রিফাইস করে হাই কোর কাউন্টের প্রসেসরই নিতে হবে। আপনাকে মূলত আপনার ইউজেসের ওপরে বেজ করে কোর কাউন্ট এবং ক্লক স্পিডের মধ্যে একটি সুইট স্পট বের করে নিতে হবে।

থার্মাল ডিজাইন পাওয়ার

মূলত TDP হচ্ছে  আপনার প্রসেসরটি আপনার কম্পিউটার থেকে ঠিক কত পরিমান পাওয়ার ড্র করবে এবং ঠিক কি পরিমান হিট প্রোডিউস করবে তার একটি কাউন্ট। সাধারনত, আপনার প্রসেসরের কোর কাউন্ট এবং ক্লক স্পিড যত কম হবে, আপনার প্রসেসরটি তত কম পাওয়ার ড্র করবে এবং কম হিট প্রোডিউস করবে। আর বেশি কোর এবং ক্লক স্পিড হলে ঠিক এর বিপরীত হবে। উদাহরণ দিতে হলে, একটি লো পাওয়ারের ল্যাপটপ প্রসেসর হয়তো 15 Watt TDP থাকবে, যা একটি লো পাওয়ারড ল্যাপটপের জন্য স্বাভাবিক। কারণ, ল্যাপটপগুলো সাধারনত বেশিরভাগ সময় ব্যাটারি পাওয়ারে রান করে।

অন্যদিকে আপনি যদি Threadripper 3990X প্রসেসরের দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে এটির TDP 280 Watt, যা ল্যাপটপের তুলনায় প্রায় ২০ গুন বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা খারাপ কিছু না, কারণ এই প্রসেসরটি অবশ্যই একটি হাই এন্ড ওয়ার্কস্টেশনেই ব্যবহার করা হবে যেখানে অবশ্যই 280 Watt এর বেশি পাওয়ার সাপ্লাই করা হবে। এক্ষেত্রেও আপনাকে প্রসেসরের ক্লক স্পিড এবং কোর কাউন্টের ওপরে বেজ করে TDP এর একটি সুইট স্পট বের করে নিতে হবে। কারণ আপনি অবশ্যই চাইবেন না যে আপনি লাইট ইউজের জন্য যে ডিভাইসটি ব্যবহার করছেন সেটিতে হাই ক্লক স্পিডের একটি প্রসেসর সেট করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেশি হিট জেনারেট করুন।

ব্র্যান্ড

ডেক্সটপ প্রসেসরের ব্র্যান্ড পছন্দ করার ক্ষেত্রে আপনার এখন খুব বেশি অপশন নেই। আপনাকে একটি ইন্টেল এর সিপিইউ নিতে হবে অথবা একটি এএমডি এর সিপিইউ নিতে হবে। এর বাইরে আর কোন অপশন নেই। কয়েক বছর আগে অধিকাংশ ডেক্সটপ ইউজাররা কখনোই এএমডি সিপিইউ নিতে চাইতেন না। সত্যি কথা বলতে এখন এই মুহূর্তে ইন্টেলের পরিবর্তে এএমডি সিপিইউ ব্যবহার করতে না চাওয়ার খুব বেশি লজিকাল রিজন নেই। দুই ধরনের প্রসেসরই হেভি ওয়ার্কলোড খুব ভালভাবেই হ্যান্ডেল করতে পারে।

তবে অনেকেই জানেন যে, বর্তমানে এএমডি এর প্রসেসরগুলোর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এফিশিয়েন্সি ইন্টেলের থেকে অনেকটাই বেটার। তবে আপনি কোন ব্র্যান্ডের প্রসেসর নেবেন এবং কোন প্রসেসরটি নেবেন, তা আবারও নির্ভর করে আপনি আপনার ডিভাইসে কি ধরনের কাজ করার প্ল্যান করছেন তার ওপরে। এই পোস্টের পরের সেকশনে আপনি ইউজ কেসের ওপরে ডিপেন্ড করে কয়েকটি প্রসেসর সাজেশন পাবেন।

ওভারক্লকিং

প্রসেসরের ক্ষেত্রে আরেকটি ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর হচ্ছে ওভারক্লকিং। তবে প্রসেসর অভয়ারক্লক করার ক্ষেত্রে খুবই কেয়ারফুল থাকতে হয় কারণ, আপনি যদি ভালোভাবে না জানেন যে আপনি কি করছেন, তাহলে আপনি আপনার প্রসেসরটি নষ্ট করেও ফেলতে পারেন। তবে অনেকসময় অনেক ইউজ কেসের জন্য আপনার প্রসেসর ওভারক্লক করার দরকার পড়তে পারে। ওভারক্লক করা বলতে মূলত বোঝায়, আপনার প্রসেসসরকে দরকারের তুলনায় বেশি পাওয়ার দিয়ে  এর বিনিময়ে ডিফল্টের থেকে আরও বেশি ক্লক স্পিড চাওয়া।

তবে সব প্রসেসরকে আপনি ওভারক্লক করতে পারবেন না। আপনার যদি প্রসেসর ওভারক্লক করার প্ল্যান থাকে, আপনার ওভারক্লকিং কম্পিটেবল প্রসেসর বেছে নিতে হবে। ইন্টেলের যেসব প্রসেসরের মডেল নাম্বারের শেষে K লেটারটি দেখতে পাবেন, সেগুলোই শুধুমাত্র ওভারক্লকেবল। আর এএমডি এর ক্ষেত্রে যেসব প্রসেসরের মডেল নাম্বারের শেষে X লেটারটি দেখতে পাবেন, শুধুমাত্র সেগুলোই ওভারক্লকেবল।


মূলত প্রসেসর কেনার আগে এই ৫ টি ব্যাপার মাথায় রাখলেই আপনার জন্য প্রসেসর বেছে নেওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। এবার একটু ছোট করে আলোচনা করা যাক, আপনি কোন ধরনের কাজ করলে আপনার জন্য এক্স্যাক্টলি কোন প্রসেসর পারফেক্ট হবে। তবে এটা দিনশেষে অবশ্যই নির্ভর করে আপনার বাজেটের ওপরে। আপনি অবশ্যই ৫০ হাজার টাকার বাজেট নিয়ে ২ লাখ টাকার বেস্ট প্রসেসর কিনতে পারবেন না।

তবে প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে আপনার কাছে বেস্ট অপশন কি কি আছে তা জানা থাকলে আশা করি এরপরে আপনার বাজেট অনুযায়ী কিছুটা ডাউনগ্রেডেড প্রসেসর মডেল বেছে নিতে তেমন কোন অসুবিধা হবেনা। তবে আমি মনে করি যে, বাজেট ইস্যুর কারণে নিচের এই সাজেশনগুলো রিয়াল ওয়ার্ল্ডে অধিকাংশ কাস্টোমারের জন্য খুব একটা কার্যকর হবেনা।

সাধারন ইউজার

আপনি যদি একজন ক্যাজুয়াল ডেক্সটপ ইউজার হয়ে থাকেন, যার প্রধান কাজ হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ফিং করা, ওয়ার্ড ডকুমেন্ট, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, ভিডিও কন্টেন্ট দেখা কিংবা মাঝে মাঝে লাইট গেমস খেলা, তাহলে আপনার জন্য Intel Corei5 10400 অথবা AMD Ryzen 5 3600 যেকোনো একটি প্রসেসর যথেষ্ট হবে। এই দুটি প্রসেসরেই ৬ টি কোর এবং 65 Watt TDP আছে। তাই এটির সাথে আপনি চাইলে জাস্ট বিল্ট ইন কুলারটাই চলবে, যেহেতু এটি খুব বেশি হিট জেনারেট করবে না। তবে এখানে মনে রাখবেন, Corei5 10400 তে ইন্টাগ্রেটেড জিপিইউ আছে তবে Ryzen 5 3600 এ কোন ইন্টাগ্রেটেড জিপিইউ নেই। তাই এএমডি নিতে চাইলে আপনাকে একটি আলাদা জিপিইউ কিনে নিতে হবে।

গেমার

গেমারদের জন্য প্রসেসর সাজেস্ট করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। প্রথমত হার্ডকোর গেমাররা হয়তো প্রসেসরের ক্ষেত্রে আগে থেকেই অনেক বেশি অভিজ্ঞ, এবং তাদের কোন সাজেশনের দরকার হয়না। তাছাড়া গেমিং বলতে অনেক কিছুই বোঝায়, আপনি মাইনক্রাফট খেলতে পারেন যা এমনকি একটি র‍্যাশবেরিপাই সেটাপেও রান করবে। আবার আপনি ক্রাইসিসও খেলতে পারেন যা অধিকাংশ হাই এন্ড সিস্টেমেও ভালো পার্ফরম করে না। তবে আপনি যদি এমন প্রোসেসর চান, যা এখনকার সবধরনের সিঙ্গেল প্লেয়ার এবং মাল্টিপ্লেয়ার গেম ভালোভাবে রান করতে পারবে, তাহলে আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে Intel Corei7 10700K অথবা AMD Ryzen 7 5800X।

দুটি প্রসেসরই ওভারক্লকেবল এবং দুটিরই সিঙ্গেল থ্রেড এবং মাল্টি থ্রেড পারফরমেন্স খুবই ভালো। তবে গেমিং এর জন্য ভাল প্রসেসরের সাথে আরও দরকার হবে ভাল জিপিইউ। তাই এক্ষেত্রে গেমিং পারফর্মের জন্য আপনার অবশ্যই দরকার হবে একটি আলাদা ডেডিকেটেড জিপিইউ, যা আপনি আপনার বাজেটের ওপরে বেজ করে কিনে নিতে পারবেন। গেমিং এর ক্ষেত্রে আপনি আপনার সেটাপের পেছনে যত বেশি টাকা খরচ করবেন আপনি তত ভালো গেমিং পারফরমেন্স পাবেন।

ডেভেলপার বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর

এই ক্যাটাগরির ইউজারদের হাই পারফরমেন্স সেটাপের পাশাপাশি TDP এর দিকেও লক্ষ্য রাখার দরকার পড়ে। প্রোফেশনাল অ্যাপলিকেশনগুলোর ক্ষেত্রে এএমডি এর থেকে বেটার চয়েজ হতেই পারেনা। তাই আরও আগে থেকেই অধিকাংশ কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা সবসময়ের জন্য ইন্টেলের থেকে এএমডি এর প্রোসেসর বেশি পছন্দ করেন। ডেভেলপার এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য Ryzen 9 5900X অথবা 5950X খুবই ভালো চয়েজ হতে পারে। দুটি প্রোসেসরই ওভারক্লকেবল।

5900X এ আছে ১২ টি কোর এবং 5950X এ আছে ১৬ টি কোর। দুটিরই সিঙ্গেল এবং মাল্টিথ্রেডেড পারফর্মেন্স খুবই ভালো। এছাড়াও ইন্টেলের সবথেকে পাওয়ারফুল প্রোসেসরের তুলনায় এটির TDP ও কম। তাই রিয়াল ওয়ার্ল্ড পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এটি একটি ভাল চয়েজ। তবে আপনি যদি থ্রিডি মডেলিং এবং ভিডিও এডিটিং এসব গ্রাফিক্স ইন্টেনসিভ কাজ করেন, তাহলে আপনার একটি ডেডিকেটেড হাই পারফরমেন্স জিপিইউ এর দরকার হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button