আমি জানি, এমন কোন মোজিলা ফায়ারফক্স আর ক্রোম ব্যবহারকারী নেই, যারা তাদের “ব্রাউজার কম্পিউটার থেকে অত্যন্তবেশি র্যাম খেয়ে নিচ্ছে” — এ ব্যাপারে অভিযোগ করে না। মডার্ন ওয়েব ব্রাউজার গুলো দিনের পর দিন আরো অনেক বেশি র্যাম হাংরি হয়ে উঠছে। গত মাসে রিলিজ করা ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম ব্রাউজারের কথাই চিন্তা করুণ, তারা তাদের প্রধান ফিচারে বলেছে, “এই ব্রাউজার ক্রোম থেকে কম র্যাম কনজিউম করবে।” মানে চিন্তা করে দেখুন, ব্রাউজারদের র্যাম খাওয়া নিয়ে কতোটা সাড়া পরে রয়েছে যে, ব্রাউজার নির্মাতারা তাদের প্রধান ফিচারের মধ্যে কম র্যাম কনজিউম করবে এরকম ফিচার ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আসলে বিষয়টি দেখতে একটু অদ্ভুতই লাগার কথা, একটি মাত্র প্রোগ্রাম যেটা কিনা এতোবেশি র্যাম কনজিউম করছে। চিন্তা করে দেখুন, ক্রোমে ১০-১২ টা ট্যাব ওপেন করে রাখলে এবং কিছু এক্সটেনশন ইন্সটল থাকলে সেটা মুটামুটি ২ জিবির উপর র্যাম কনজিউম করে নেয়। অথচ ২জিবি র্যাম কাজে লাগিয়ে ফটোশপ ব্যবহার করা যেতে পারে আরামে, সেখানে কিনা একটা ব্রাউজার এই রিসোর্স গ্রহন করছে।
তবে, বেশি র্যাম কনজিউম করা কিন্তু কোন খারাপ ব্যাপার না, আসলে আপনাকে স্মুথ ওয়েব ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার লক্ষেই ব্রাউজার গুলো একটু বেশি র্যাম হাংরি হয়। হ্যাঁ, জানি, আগের লাইনের বিপরীতে এখন অনেকেই অনেক কথা বলতে শুরু করবেন, কিন্তু তার আগে আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন, আমি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি, “বেশি র্যাম কনজিউম করা আসলে আমাদের ভালোর কারণেই!”
কেন ওয়েব ব্রাউজার অনেক র্যাম খেয়ে নেয়?
হ্যাঁ, আমি সম্পূর্ণ মেনে নিচ্ছি, ক্রোম আর ফায়ারফক্স সবচাইতে বেশি র্যাম কনজিউম করে। আমি যখন আপনাদের জন্য টেক আর্টিকেল লিখতে সোর্স রিসার্চ করি, আমাকে অনেক সময় ১৫-২০টা পর্যন্ত ট্যাব খুলে রাখতে হয়। সে মুহূর্তে কখনো কখনো তো ৪ জিবির উপর পর্যন্ত র্যাম ক্রোম একাই গিলে ফেলে। এখন অনেকের কম্পিউটারের সর্বমোট র্যামই মাত্র ৪ জিবি, তো সেক্ষেত্রে তো এটা সমস্যার ব্যাপার। কিন্তু ব্রাউজার’রা কেন এতো র্যাম গিলে, তার পেছনে কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
এটা মানতেই হবে, ইন্টারনেট শুরুর দিকের ওয়েব আর আজকের ওয়েব সম্পূর্ণই আলাদা, এখানে আমি “রাত-দিন তফাৎ” এই উদাহরণ দিলেও ভুল হবে। আগের ওয়েবসাইট গুলোর ইন্টারফেস আর আজকের ওয়েবসাইট গুলোর ইন্টারফেসে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে শুধু মাত্র সাদামাটা এইচটিএমএল ওয়েব পেজ দেখতে পাওয়া যেতো, খুব মুশকিল করে দুই একটা সাইটে গিফ এনিমেশন দেখতে পাওয়া যেতো। ব্যাট আজকের কথা কল্পনা করুণ, ওয়েব সাইট গুলোতে শতশত টাইপের অ্যাডভান্স স্ক্রিপ্ট রয়েছে, ফ্ল্যাশ রয়েছে, ভিডিও রয়েছে আর ওয়েব নির্ভর অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যাও এখন কম নেই। আপনি ব্রাউজারে জিমেইল খুলে রেখেছেন, মানে আপনি জিমেইলের ওয়েব অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ওয়েব অ্যাপ গুলো শুধু ব্রাউজারের ভরসায় চলে না, অনেক ওয়েব অ্যাপ চলতে সরাসরি আপনার কম্পিউটারের রিসোর্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে।
তো এরকম অ্যাডভান্স ওয়েবকে হ্যান্ডেল করার জন্য অবশ্যই ওয়েব ব্রাউজার গুলোকেও অনেক অ্যাডভান্স হতে হয়। আপনি উইন্ডোজ এক্সপির ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার দিয়ে ওয়্যারবিডি ওপেন করে দেখবেন, আজব ধরণের ইন্টারফেস হয়তো শো করবে, অনেক আইকন হয়তো সাপোর্টই করবে না। এই বেশি র্যাম খেয়েই ক্রোম বা মোজিলা আপনাকে মাখনের মতো ওয়েব ব্রাউজিং করার এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে। তাছাড়া মডার্ন ব্রাউজার গুলো একসাথে একাধিক প্রসেস তৈরি করে, মানে ব্রাউজারের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ বিভিন্ন প্রসেসে বন্টন হয়ে যায়, এর ফলে কোন একটি ট্যাব বা কোন এক্সটেনশন ক্র্যাশ করলে সম্পূর্ণ ব্রাউজার ক্র্যাশ করে না, তবে এর জন্য বেশি র্যাম ডিম্যান্ডিং হয়ে যায়। চিন্তা করে দেখুন কাজ করতে করতে হঠাৎ অন্য কোন ট্যাবের জন্য কাজের ট্যাবটি ক্লোজ হয়ে গেলে কতোবড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে অনলাইন পেমেন্ট পেজ যদি এমন সময় ক্র্যাশ করে যখন আপনি পেমেন্ট বাটন চেপে দিয়েছেন, তো আপনার টাকাই উধাও হয়ে যেতে পারে।
আজকের মডার্ন ব্রাউজার গুলো এক্সটেনশন সাপোর্ট করে, আর যেটা অনেক রিচ একটি ফিচার। বিভিন্ন এক্সটেনশন ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার ব্রাউজারে একাধিক ফিচার যুক্ত করা সম্ভব হয়, যেমন আপনার ফোনে অ্যাপ ব্যবহার করে অনেক নতুন ফাংশন পেয়ে যান। ঠিক ওয়েব ব্রাউজারেও অগুনতি ফাংশন যুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এই এক্সটেনশন গুলো রান হওয়ার জন্য তো আলাদা র্যামের প্রয়োজন হয়। এটা আপনাকে মানতেই হবে, আপনার ব্রাউজার আপনার জন্য এখন অনেক কিছু করে। যদি আমার কথা বলি, তো কম্পিউটার অন করা থেকে শুরু করে অফ করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময় কেবল ওয়েব ব্রাউজারের মধ্যেই কেটে যায়, আমি জানি অনেকেই এরকম রয়েছেন। বর্তমানে তো অফিস, এক্সেল, এমনকি ফটো এডিটও কেবল ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করেই করা সম্ভব, কোন আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার করার দরকার পরে না। সত্যি কথা বলতে, বর্তমানে ওয়েব ব্রাউজারের মধ্যেই সম্পূর্ণ কম্পিউটিং চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাহলে আপনিই বলুন, এটি কি আর কোন সাধারণ টুল হয়েই আছে? তাহলে কেন র্যাম খরচ করবে না?
ফাঁকা র্যাম কোন কাজেরই না
এবার আলোচনা করি আরেক দৃষ্টি কোন থেকে। অনেকে মনে করেন, মোবাইলে বা কম্পিউটারে র্যাম ফাঁকা থাকা ভালো এতে কম্পিউটার ফাস্ট থাকে! সিরিয়াসলি? কে বলেছে আপনাকে? যদি র্যাম ফাঁকাই রাখবেন তো পিসিতে ৮জিবি র্যাম, ফোনে ৪জিবি র্যাম কোম্পানি কেন লাগিয়ে দিয়েছে আর আপনিও কেন কিনেছেন? র্যাম কিভাবে কাজ করে বা কম্পিউটার মেমোরি বৃত্তান্ত আর্টিকেল গুলো পড়তে বুঝতে পারবেন র্যামের উদ্দেশ্য কি। আসলে র্যাম আপনার সিস্টেমের অত্যন্ত দ্রুতগামী একটি মেমোরি, যেটি প্রয়োজনীয় এবং বারবার অ্যাক্সেস হওয়া ডাটা গুলো প্রসেসরের কাছে পাঠিয়ে দেয় কম্পিউটিং করার জন্য, র্যাম যতোবেশি হয় ততোবেশি টেম্প ডাটা এটি ধারণ করতে পারে হার্ড ড্রাইভকে আলাদা রিকোয়েস্ট না করে। যদি কাজের জন্য ৮জিবি র্যামের মধ্যে ৭জিবি র্যামও পূর্ণ হয়ে যায় সেটা কোন চিন্তার কারণ নয়। এতে কখনোই আপনার পিসি স্লো হবে না।
র্যাম যদি ফাঁকা থাকে, যদি কোন কাজে না লাগে তো সেটা থাকা আর না থাকা একই ব্যাপার, র্যামের ফাঁকা থাকা অংশ আপনার পিসির গতি বাড়িয়ে দেবে না। তো যদি আপনার সিস্টেমে পর্যাপ্ত র্যাম থাকে, আর সেটা যদি ব্রাউজার বা অন্যান্য প্রোগ্রাম অনেক ব্যবহারও করে, সেটা অবশ্যই খারাপ কিছু নয়। তবে হ্যাঁ, আপনার পিসির র্যাম যদি অনেক কম হয়ে থাকে, বেশিরভাগ সময় র্যাম ফুল হয়ে যাচ্ছে এবং আলাদা প্রসেস গুলো চলতে পাড়ছে না, র্যাম হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করে ক্যাশ ফাইল জমা করছে, সেক্ষেত্রে সেটা খারাপ ব্যাপার, এতে আপনার পিসির পারফর্মেন্স সত্যিই অনেক খারাপ হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে পিসিতে আরো র্যাম যুক্ত করতে হবে, নতুবা ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। “ওয়েব ব্রাউজার বেশি র্যাম খেয়ে নিচ্ছে” — এই বলে কখনোই দোষারোপ করা যাবে না।
আমার ল্যাপটপটি পুরাতন মডেলের আর সেখানে মাত্র ৪জিবি র্যাম রয়েছে, আমি যখন ক্রোম দিয়ে অনেক ট্যাব খুলে রাখি একই সময়ে এটি আলাদা প্রোগ্রাম গুলোকে রান করতে পারে না, আমাকে আলাদা প্রোগ্রাম যেমন ফটোশপ সেসময় ক্লোজ করে দিতে হয়, এটা আমার ল্যাপটপের র্যামের ঘাটতি, আমি ব্রাউজারকে দোষ দিতে পারি না। আমার ডেক্সটপ পিসিতে ১৬জিবি র্যাম রয়েছে, ক্রোম সেখানেও ৪জিবি খেয়ে রাখে, কিন্তু আমি সাথে আলাদা কাজ গুলোও আরামে সম্পূর্ণ করতে পারি, যদি ক্রোম নিজে থেকেই কম মেমোরি নিতো, তো ১৬ জিবি র্যামের পিসিতেও ক্রোম স্লো কাজ করতো। আমি আসলে এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে, বেশি র্যাম কনজিউম করা খারাপ কিছু নয়।
কম্পিউটার স্লো হয়ে যাচ্ছে?
উপরের প্যারাগ্রাফ থেকে নিশ্চয় বুঝে গেছেন র্যাম ফাঁকা থেকে কোন কাজে আসে না। তবে আগেই বলেছি যদি আপনার কম্পিউটারেই র্যাম ঘাটতি থাকে, সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করে চলতে হবে। আপনি যখন যে কাজ করবেন, মানে যে কাজের প্রাধান্য যখন বেশি হবে শুধু সেটাই করতে পারেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়তো আলাদা অ্যাপলিকেশন র্যান করতে পারবেন না। অথবা ব্রাউজারে কম ট্যাব বা কম এক্সটেনশন ব্যবহার করতে পারেন। যখন ফটো এডিট করবেন, শুধু ফটো এডিটর ওপেন রাখলেন, ক্রোম ক্লোজ করে দিলেন বা কিছু ট্যাব ক্লোজ করে দিলেন। যখন ক্রোম ব্যবহার করবেন, আলাদা সফটওয়্যার গুলো ক্লোজ করে দিলেন, এতে আপনার কম্পিউটার ভালোভাবে র্যান করবে।
এখন যদি ম্যাল্টি টাস্কিং খুব দরকারি হয়, তো অবশ্যই কম্পিউটার সিস্টেম আপগ্রেড করতে হবে, আপনাকে বেশি র্যাম লাগাতে হবে। তাহলেই কম্পিউটার আর স্লো হবে না। আর নতুন র্যাম লাগানোর পূর্বে অবশ্যই এই আর্টিকেল দুইটি পড়ে নেবেনঃ “যতোবেশি র্যাম = ততো ফাস্ট পিসি?“এবং “র্যাম স্পীড নাকি র্যাম টাইমিং, কোনটি পারফর্মেন্সের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ?” সাথে এটাও মনে রাখবেন, পিসি স্লো হওয়ার জন্য কিন্তু সবসময় র্যাম দায়ী নয়, হতে পারে আপনার হার্ড ড্রাইভ স্লো বা হতে পারে আপনার প্রসেসরই স্লো, তাই কেন পিসি স্লো হচ্ছে সেটা বুঝতে এবং কোন হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুনঃ “ঠিক কোন আপগ্রেড পিসি পারফর্মেন্স সর্ব উত্তম করতে পারে?”
এই পর্যায়ে আপনার মনে ভুল ধারণা গুলো দুর করে নেওয়া ভালো, দেখুন ওয়েব ব্রাউজার মোটেও কোন সাধারণ প্রোগ্রাম নয়, একটি ওয়েব ব্রাউজারের মধ্যে বর্তমানে সম্পূর্ণ কম্পিউটিং চাহিদা মেটানো যায়। আর ব্রাউজার গুলো বেশি র্যাম নিচ্ছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করাটাও ঠিক হবে না। ২০০৯ সালে ৫১২ মেগাবাইট র্যামের পিসি ব্যবহার করেছি উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে। এখন উইন্ডোজ ১০ ৪জিবি র্যামে ভালো চলে, এতে কি কোন অভিযোগ রয়েছে? অবশ্যই নেই, কেনোনা এটা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। যতোদিন যাচ্ছে আমাদের কম্পিউটিং চাহিদা বাড়ছে র্যামের চাহিদা বাড়া সেক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন নতুন গেম রিলিজ হয়, সেটা খেলতে আগের চেয়ে বেশি র্যাম বা আরো ভালো গ্রাফিক্স কার্ড ডিম্যান্ড করে, এতে কি আমরা কোন অভিযোগ জানায়, নাকি আমরা কম্পিউটিং পাওয়ারের বিনিময়ে গ্রেট এক্সপেরিয়েন্স পেতে চাই?
আলাদা প্রোগ্রাম আর ব্রাউজার মোটেও আলাদা নয়, ওয়েব যতোবেশি কম্পিউটিং রিসোর্স হাংরি হচ্ছে, ব্রাউজার গুলোও ততোবেশি র্যাম হাংরি হচ্ছে, আর এ সমস্ত কিছুর পেছনের মূল কারণ হচ্ছে গ্রেট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স আর মডার্ন কম্পিউটিং সুবিধা উপভোগ করা। আশা করি আমার দৃষ্টি ভঙ্গি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে, আর অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানাবেন।