ওয়েবসাইট

ডার্ক নেট : মানুষ কেন সেখানে ভিজিট করতে চায়? এটি সত্যিই কি অবৈধ?

কিভাবে ডার্ক নেটে প্রবেশ করা সম্ভব?

আমি পার্সোনালি দেখেছি, মানুষের ডার্ক নেট বা ডার্ক ওয়েবের উপর ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে, বছর খানেক আগে “ইন্টারনেটের লুকায়িত অধ্যায়” — নিয়ে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করেছিলাম, আর সেখানে আপনাদের রেসপন্স দেখেই বুঝে গেছি এই ব্যাপারে সকলের কতোটা আগ্রহ করেছে। আর এখন তো টিভি নিউজ, খবরের কাগজ, আর ইন্টারনেটে তো লাখোবার এই টার্ম নিয়ে আর্টিকেল দেখে থাকবেন। ইন্টারনেট সত্যিই অনেকটা কৌতূহলী জায়গা, আর যেহেতু অনেকে বলে ইন্টারনেটের এই অধ্যায় নিষিদ্ধ, তাই আমরা বেশি করেই এটি ভিজিট করার আগ্রহ পোষণ করি। সত্যি বলতে এই ব্যাপারে আমার নিজের আগ্রহও কিন্তু কম নয়, আর সেই আগ্রহ থেকে বেশ কিছু অনুসন্ধান চালিয়েছি, যেখানে বেড় করে এনেছি কিছু প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর!

তো, ডার্ক নেট কি সত্যিই হ্যাকারদের জন্য স্বর্গরাজ্য? আপনি সত্যিই কি সেখানে যা ইচ্ছা তা করতে পারেন, নাকি এনএসএ বা এফবিআই সেখানেও আপনার কার্যকলাপের উপর নজর রেখে বসে রয়েছে? এটি কি সত্যিই অবৈধ? কেন অনেক মানুষ এই নিষিদ্ধ ঠিকানায় ভিজিট করতে চায়? — আপনি যদি সত্যিকারের প্রযুক্তি প্রেমি হয়ে থাকেন, নিশ্চয় এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর সোনার খনি খুঁজে পাওয়ার চেয়ে কম কোন ব্যাপার নয়। এই আর্টিকেলে আমি সম্পূর্ণ বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে কভার করার চেষ্টা করেছি।

ডার্ক নেট

ডার্ক নেট বা ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে যেটি ভালো বোঝা দরকার তা হলো, “ইনভিজিবল ওয়েব” — জানেনই তো, ইন্টারনেটের দুইটি অংশ রয়েছে, এটি সার্ফেস ওয়েব বা ভিজিবল ওয়েব এবং আরেকটি এই ইনভিজিবল ওয়েব। আপনি হয়তো জেনে হয়রান হয়ে যাবেন, ইন্টারনেটের এক বিশাল পরিমান ডাটা আসলে সার্চ ইঞ্জিন গুলো দেখতেই পায় না। এমনকি সে অংশে আপনি সাধারণ ইউআরএল বা ডট কম ডোমেইন লিখে প্রবেশ করতেও পারবেন না। যদি কথা বলি, ইন্টারনেটের এই লুকায়িত ডাটা গুলো কতোটা বিশাল, তো উত্তর হবে ভিজিবল ওয়েবের চেয়ে হাজার গুন বিশাল। যাই হোক, এই ব্যাপারে, এই আর্টিকেলে অনেকটাই জ্ঞান শেয়ার করেছি পূর্বে, এখন ফেরত আসা যাক মূল বিষয়ের উপর। তাহলে এক কথায় দাঁড়ালো, ইন্টারনেটের যে অংশে আমাদের সরাসরি কোন অ্যাক্সেস নেই এবং সার্চ ইঞ্জিন গুলোও সেসকল ডাটাকে ইনডেক্স করতে পারে না, একে ইনভিজিবল ওয়েব বলে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডার্ক ওয়েবের সাথে ইনভিজিবল ওয়েবের সম্পর্ক কতোটুকু। দেখুন, ইনভিজিবল ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের সেই সম্পূর্ণ অঞ্চল যেখানে সহজে বা কোন ভাবেই প্রবেশ করা যায় না, আর ডার্ক ওয়েবও লুকিয়ে থাকে, তাই আসলে ডার্ক নেট হচ্ছে এই ইনভিজিবল ওয়েবেরই একটি ছোট অংশ। যদিও দুইটি জিনিষ প্রায় একই, কিন্তু তারপরেও এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আপনি কোন ডাটা গুগল ড্রাইভের মধ্যে রেখেছেন, তো অবশ্যই কোন সার্চ ইঞ্জিন সেটাকে ইনডেক্স করতে পাড়বে না, বা কেউ লিঙ্ক দিয়ে সেটা অ্যাক্সেসও করতে পাড়বে না, যতোক্ষণ সেটার অনুমতি কারো কাছে থাকবে। তো এখানে আপনার ডাটাটি ইনভিজিবল ওয়েবের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এবার মনে করুণ, আপনি এমন একটি সাইট বিল্ড করেছেন যেখানে ঢুকতে স্পেশাল অ্যাড্রেস এবং স্পেশাল ওয়েব ব্রাউজার প্রয়োজনীয় হয় এবং সেখানে আপনি কিছু অবৈধ কাজ চালাচ্ছেন, তো সেটা ইনভিজিবল ওয়েবের মধ্যে হলেও আসলে ডার্ক নেটের সেকশনে চলে যায়।

ডার্ক ওয়েব মূলত ডীপ ওয়েবের একটি ছোট অংশ যেখানে নানান প্রকারের অবৈধ কাজকর্ম চালানো হয়। অবৈধ ড্রাগ কেনাবেচা, অবৈধ হাতিয়ার কেনাবেচা, কাউকে খুন করার জন্য হিটম্যান ভাড়া করা, এমনকি নির্দিষ্ট কাজের জন্য এখানে সাইবার ক্রিমিন্যাল বা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার ভাড়াতে কাজ করে। তো যদি কথা নিয়ে আসি বৈধতা বা অবৈধতার, সেক্ষেত্রে ইভিজিবল ওয়েব বা ডীপ ওয়েব অবশ্যই বৈধ, যদি সেখানের খারাপ দিকের কথা বাদ দেওয়া হয়, তো নিজের প্রাইভেসি রক্ষার জন্য বেস্ট প্লেস এই ডীপ ওয়েব। কিন্তু ডার্ক ওয়েব সম্পূর্ণই অবৈধ! তবে সেখানে ভিজিট করাও কি অবৈধ? চলুন নিচের প্যারাগ্রাফ থেকে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

কিভাবে ডার্ক নেটে প্রবেশ করা সম্ভব?

এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, মানে এতোটুকু নিশ্চয় জানেন, গুগল সার্চ বা যেকোনো সার্ফেস ওয়েবের সার্চ ইঞ্জিন ডার্ক ওয়েবে আপনাকে প্রবেশ করাতে পাড়বে না। তো ভুল করে ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়ার কোনই সুযোগ নেই, যতোক্ষণ পর্যন্ত আমি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা নিজে থেকে না করবেন। ডার্ক ওয়েব সাধারণত স্পেশাল প্রোটোকল ব্যবহার করে অ্যাক্সেস করতে হয়, যেখানে ডীপ ওয়েব অনেক সময় খানিকটা সার্ফেস ওয়েবের মতোই কিন্তু সেখানে প্রবেশে অনুমতি (ইউজারনেম/পাসওয়ার্ড) প্রয়োজনীয় হতে পারে। ট্র্যাডিশন্যাল ইউআরএল টাইপ করে আর সাধারণ ব্রাউজার থেকে ডার্ক নেট অ্যাক্সেস করা যায় না, আপনাকে এই অঞ্চল অ্যাক্সেস করতে অবশ্যই একটি স্পেশাল ওয়েব ব্রাউজার ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে হয়, আর অনেকেই সেটার নামও জানেন, “দ্যা অনিয়ন রাউটার” যেটাকে টর ব্রাউজার বলা হয়।

টর ব্রাউজার মূলত দুইটি কাজ করে থাকেঃ প্রথমত আপনাকে বা যেকোনো ইউজারকে ডীপ ওয়েবের সাবসেট নেটওয়ার্ক ডার্ক ওয়েবের সাথে কানেক্টেড করিয়ে দেয় এবং দ্বিতীয়ত আপনার কানেকশনকে দুনিয়ার বিভিন্ন সার্ভারের সাথে ক্রোস কানেক্টেড করায় এবং প্রত্যেক অংশে এনক্রিপশন ম্যাথড ব্যবহার করে ডাটাকে এনক্রিপটেড করিয়ে মূল সার্ভারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রসেসের ফলে আপনার আইডি লুকিয়ে যাবে, আর এটাই ডার্কনেটের প্রধান চাবিকাঠী।

তবে কিছু জিনিষ মাথায় রাখা ভালোঃ প্রথমত, আপনি টর ব্রাউজার ডাউনলোড করেছেন ডার্ক ওয়েব ভিজিট করার জন্য, এর মানে এটা নয় আপনি কোন কিছু অবৈধ করার পরিকল্পনা করছেন, এই ব্রাউজার সম্পূর্ণ বৈধ, এটি ডাউনলোড করলে বা ইন্সটল করার মাধ্যমে পুলিশ আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে না। অনেক মানুষ টর নেটওয়ার্কে ভিপিএন এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে নিজের প্রাইভেসি রক্ষা করে। আর এই ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টুল। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আপনি টর ব্যবহার করছেন, এটি কোনই নিশ্চয়তা প্রদান করে না আপনাকে ট্রেস করা যাবে না। যদিও এই টুল ব্যবহার করার ফলে আপনাকে ট্রেস করা অনেক কঠিন কাজে পরিনত হয়ে যাবে, কিন্তু সেটা ইম্পসিবল কিছু নয়। সাথে ভালো করে জেনে রাখুন, এই টুল ডাউনলোড করা বা ব্যবহার করা অবশ্যই অবৈধ নয়, অনেকে বলে টর ব্যবহার করায় অবৈধ, না এটি ঠিক নয়। আপনি অবশ্যই কৌতূহলের বসে এটি ডাউনলোড করতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু ঠিক তখন থেকে এটি অবৈধ হওয়া শুরু হবে, যখন আপনি ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়বেন এবং অবৈধ কোন অ্যাক্টিভিটি করবেন। এর আগ পর্যন্ত, এটি সম্পূর্ণ বৈধ টুল। আশা করি, পরিষ্কার করে বুঝাতে পেড়েছি।

কে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে এবং কেন?

যদি ব্যাস্তবিক ভাবে দেখা যায় তো সম্পূর্ণ ডার্ক ওয়েব কিন্তু অবৈধ নয়। হ্যাঁ, এটি অত্যন্ত সিকিউর একটি জায়গা, এতে হোস্ট থাকা ওয়েবসাইট বা ভিজিটরগনের ডিটেইলস ট্রেস করতে পারা অনেক মুশকিলের কাজ, আর এই জন্যই এখানে অবৈধ আড্ডা খানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু যদি আরেকভাবে দেখা যায়, তো ডার্ক নেটকে এতোটাও খারাপ মনে হয় না। চিন্তা করে দেখুন ক্রিমিন্যাল নিউজ রিপোর্টারদের সম্পর্কে, যাদের নিউজ কভার করতে অনেক সময় বিভিন্ন ক্রিমিন্যালের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় এবং তাদের মধ্যে এমন কিছু ডাটা আদান প্রদান হয়, যেটার জন্য সার্ফেস ওয়েব কখনোই নিরাপদ নয়, এক্ষেত্রে ডার্ক ওয়েব তাদের জন্য অত্যন্ত সিকিউর প্লেস।

উদাহরণ স্বরূপ ধারণা নেওয়া যেতে পারে সিল্ক রোড সম্পর্কে, সিল্ক রোড ডার্ক নেটের সবচাইতে বড় মার্কেট প্লেস ছিল যেটা ২০১৩ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। এই মার্কেট প্লেসে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হতো সেটা সম্পূর্ণই আইনের বাইরে, কিন্তু এখানে দৈনন্দিন কাজের মালপত্রও বিক্রি করা হতো, যেটাতে কোনই অবৈধতা নেই। যদিও এটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে কিন্তু বন্ধের পূর্বে এতে প্রায় ১ বিলিয়নও মুল্যের বেশি মালপত্র কেনাবেচা হয়ে গিয়েছিলো। আসলে ডার্ক নেটে আপনি কি করছেন, সে অনুসারে আপনি বৈধ বা অবৈধ সেটা নির্ণীত হয়। যদি আপনি সিল্ক রোড মার্কেট থেকে বিটকয়েন দিয়ে কিছু অবৈধ জিনিষ কেনেন বা কোন অবৈধ ইমেজ বা ডকুমেন্ট অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করেন, যেটা পাবলিক হয়ে গেছে ঐ ব্যাক্তির ক্ষতি হতে পারে, অবশ্যই এখানে আপনি অবৈধ কাজ করছেন। কিন্তু যখন কোন জার্নালিস্ট আপনার সোর্সের সাথে যোগাযোগ করে বা আপনার গোপনীয়তা যেন নষ্ট না হয় সে অনুসারে যদি ডার্ক নেট ব্যবহার করেন, সেটা অবৈধ হয় না।


এটি পয়সার যেমন দুইটি পিঠ থাকে, ঠিক তেমনি ডার্ক ওয়েব আর টর নেটওয়ার্কের ভালো এবং কালো উভয় তলই রয়েছে। আপনি সেখানে বৈধ কিংবা অবৈধ সেটা নির্ভর করে আপনার ব্যাবহারের উপরে। আশা করছি এই আর্টিকেল পড়ার উদ্দেশ্য আপনার সফল হয়েছে, কেনোনা এখানে আপনি সকল বিষয় গুলোর পরিষ্কার খোলাসা করার চেষ্টা করেছি। আপনাকে জানিয়ে রাখছি, আমি খুব শীঘ্রই ইনভিজিবল ওয়েব অ্যাক্সেস করা নিয়ে এবং কিভাবে সেখান থেকে ডকুমেন্ট খুড়ে বেড় করবেন সে সম্পর্কে হয়তো সিরিজ আর্টিকেল প্রকাশ করবো। অনেক ইন্টারেস্টিং সব বিষয় থাকবে, সেগুলো জানতে ও শিখতে আপনি অনেক মজা পাবেন, যেমন- “কিভাবে অনলাইনে কাউকে স্টেপ বাই স্টেপ ভাবে খুঁজে বেড় করতে পারবেন!” — তো ওয়্যারবিডিের সাথেই থাকুন। আর যেকোনো প্রশ্নে অবশ্যই নিচে আমাকে কমেন্ট করতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button