কেউ গুরুত্ব না দিলে কি করা উচিত: আমরা প্রায়ই সকলকে বলতে শুনি, “আপনি একা নন”, “নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন” কিংবা “সহায়তার জন্যে যোগাযোগ করুন”, ও আরও কত কি।
কিন্তু, এতো কিছু আশ্বাসজনক কথা শোনার পরেও, আপনাদের জীবনেও কি এই একই রকমের একাকীত্বের অনুভূতি হচ্ছে ?
আপনারও কি মনে হয় যে, আপনি আপনার প্রাপ্য গুরুত্ব থেকে বঞ্চিত ?
দুর্ভাগ্যবশত, আপনার মতো এরকম অনেক মানুষই আছেন, যারা মনে করেন যে, তাদের জীবনের গুরুত্ব দেওয়ার মতো কোনো মানুষই নেই; কিংবা, তাদেরকে বিশ্বাস বা সমর্থন করার মতো কোনো স্বজন-বান্ধবও নেই।
আর, এই একই রকমভাবে আপনি অসহায় ও একাকিত্ব বোধ করলে, তখন আপনার কি করণীয় ?
কিংবা, আপনাকে কেউ যদি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাহলে আপনি কি কি করতে পারেন।
এই বিষয় সম্পর্কে আমরা বেশ কিছু বাস্তবসম্মত উপায়ের ব্যাপারে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।
যাতে, আপনার আর কখনোই না মনে হয় যে, আপনার কেউ নেই।
Post Contents
কেউ গুরুত্ব না দিলে কি করা উচিত – (করণীয় কি)
চলুন, তাহলে দেরি না করে আমরা জানি, কেউ গুরুত্ব না দিলেও, কিভাবে আমরা নিজেরাই ভালো থাকতে পারি –
১. নিজের যত্ন নিন:
নিজের যত্ন নেওয়াও কিন্তু গুরুত্বহীনতা বোধ থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারে।
যখন, আপনি নিজের প্রতি যত্নবান হন, তখন আপনার মনের মধ্যে নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস তৈরী হতে থাকে।
ব্যায়াম বা শরীরচর্চার পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভাস হল নিজের প্রতি জন্য নেওয়ার প্রথম মানদণ্ড।
এছাড়াও, আপনার মানসিকতার উন্নতির জন্য ধ্যান, যোগা, কিংবা হাঁটার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো তৈরী করুন।
আপনি যা যা করতে ভালবাসেন, যেমন – গান শোনা, বাগান পরিচর্যা করা, সাইক্লিং করা কিংবা আরও অন্যান্য কার্যকলাপ করতে পারেন।
এই নানান কার্যকলাপের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন।
আর, মনে মনে বলুন যে, আপনার মতো সুখী মানুষ আর ক’জন আছে!
২. বুক ক্লাবের সাথে যুক্ত হোন:
বই পড়ার নেশা কিন্তু মানুষের মনকে সমস্ত রকমের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
তাই, আপনার যদি বই পড়তে ভালোলাগে, কিংবা নাও লাগে, তাহলেও আপনি বিভিন্ন বুক ক্লাবের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন।
এই ধরণের ক্লাবগুলোতে নানান ধরণের গঠনমূলক আলোচনা হয়, যা থেকে আপনার মনের গুরুত্বহীনতা বা একাকিত্ব ভাবটা মুছে যেতে পারে।
যদিও, বুক ক্লাবে যোগদান করলে সাথে-সাথেই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়।
বরং, বই পড়া ও নানান সদস্যের সাথে কথা বলা আপনাকে মানুষের সাথে এক অনন্য উপায়ে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে।
৩. নিজের ভয়ের মুখোমুখি হোন:
গবেষণা বলে যে, একাকীত্ব বা গুরুত্বহীনতায় ভোগা হল এক ধরণের বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি।
অর্থাৎ, মেনে নেওয়া শক্ত হলেও, এটা আমাদের বোঝা উচিত যে, আমার যতই নিজেদেরকে বোঝাই যে, কেউ আমাদের কথা ভাবে না – আসলে, এটা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে সত্যি নয়।
আসলে, বেশিরভাগ সময়েই আমরা এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না, যে আমরা একা নই।
যে কারণে, আমরা অন্যদের সাথে মিশে উঠতে পারিনা কিংবা আমাদের দুঃসময়ে তাদের থেকে সাহায্যের চাওয়ার জন্য যেতে ভয় পাই।
কিংবা, গুরুত্ব না পাওয়ার ভয়ে আমরা নতুন বন্ধু বা সম্পর্ক তৈরী করতেও ভয় প্রাই।
কিন্তু, এই ভয় থেকেই আমাদের বেরিয়ে এসে, সহজভাবে আমাদের অন্য লোকেদের সাথে কথা বলে, নিজেকেই এই একাকীত্ব বোধ থেকে মুক্তি পেতে হবে।
৪. সাপোর্ট গ্রূপের সাথে যোগ দিন:
আপনি যদি নিজের মানসিক অবস্থা নিয়ে মুক্তভাবে আলোচনা করতে চান, তবে অবশ্যই কোনো সাপোর্ট গ্রূপ খুঁজতে পারেন।
এই গ্রূপগুলোতে আপনারই মতো নানান সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন মানুষ আসে।
আর, তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবার সাথে ভাগ করে নিয়ে নিজেদের মনের বোঝা হালকা করে।
এইসব গ্রুপগুলো এক বা একাধিক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রূপের সাথে যুক্ত হলে, আপনি কিন্তু আপনার এই সমস্যার সমাধানও পেয়ে যেতে পারেন।
৫. আত্ম সহানুভূতির বিকাশ ঘটান:
আত্ম-সহানুভূতির বিকাশ আপনাকে সামগ্রিকভাবে নিজের সম্পর্কে আরও ভালো অনুভব করতে সাহায্য করে।
এই আত্ম সহানুভূতির বিকাশের ফলে, আপনি অন্য মানুষের মধ্যেও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে শুরু করবেন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করুন, নিজের খুঁতগুলো নিয়েই হাসি মুখে বাঁচতে শিখুন ও নিজেকেই নিজেকে বলুন যে, আপনি একা নন।
৬. নিজেকে মূল্যহীন ভাবা বন্ধ করুন:
যারা নিজেকে মূল্যহীন বোধ করে, তারা প্রায়ই মেনে নিতে পারে না – যে কেউ তাদের ব্যাপারে ভাবতে পারে।
তাই, সবার আগে নিজেকে মূল্যহীন ভাবা বন্ধ করুন।
সবসময় মনে রাখুন যে, যে যাই-ই বলুক কিংবা আপনি আপনি নিজে যাই-ই ভেবে থাকুন না কেন. আপনি সর্বদাই গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য।
নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে মেনে নিতে শিখুন আর সেগুলোকে ভুলে যেতেও চেষ্টা করুন।
৭. রিফ্রেমিংয়ের ক্ষমতা ব্যবহার করুন:
উদ্দেশ্যই হল জীবনের সবকিছু- অর্থাৎ, আপনি কীভাবে নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা ও আবেগগুলোর অর্থ বার করবেন, সেটা আগে শিখুন।
“কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয় না”- এটা না ভেবে আপনার জীবনে যেটুকু রয়েছে, সেইটুকু নিয়েই কৃতজ্ঞ থাকার চেষ্টা করুন।
নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলোকে নিজের মন থেকে মেনে নিন ও সেগুলোকে আসতে আসতে অনুভব করা ছেড়ে দিন।
৮. পোষ্য কিংবা প্রাণীদের সাথে সময় কাটান:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাধারণভাবে পোষা প্রাণীরা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
আপনি একাকিত্ব বোধ করলে কোনো পোষ্য রাখতে পারেন।
যদি, সোশালাইজিং করতে না চান তাহলে, আপনি আপনার পোষ্যকে নিয়ে ঘুরতেও বেরোতে পারেন।
আপনার জীবনকে প্রাণীদের সান্নিধ্যে রাখুন, দেখবেন যে, এরা আপনাকে নিঃশর্ত ভালবাসা দিতে পারে- যা মানুষের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব।
৯. পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন:
আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও পরিবার যদি এরকম সময়ে আপনার পাশে না থাকে, তাহলে আপনার পুরোনো দিনের বন্ধু, যারা আপনার জীবনকে এককালে সুখময় করে তুলেছিল, তাদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন।
তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার অনুভূতিগুলো তাদের সাথে ভাগ করতে নিলেও মন অনেকটা হালকা লাগবে।
পরিশেষে:
আমরা এখন এমন বিচ্ছিন্ন সমাজে বাস করি- যেখানে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগের দূরত্ব মিটলেও- ক্রমশ বেড়ে গেছে তাদের মধ্যেকার মানসিক দূরত্ব।
ইতিমধ্যে, যাদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মতো মানসিক অবসাদের সমস্যা রয়েছে- তাদের পক্ষে একাকিত্ব বা গুরুত্বহীনতা বোধের শিকার হওয়াটা খুব সহজ হয়ে পড়ে।
তাদের মনে সহজেই জন্মাতে পারে- “কেউ আমার বিষয়ে চিন্তা করে না বা কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয় না “-এর মতো নেতিবাচক চিন্তা।
কিন্তু, এই ধরণের চিন্তাগুলো মোটেও বাস্তবে সত্যি নয়।
প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের অনুভূতির প্রকাশ সম্পূর্ণভাবেই হল আপনার মানসিক চিন্তাভাবনার ফলাফল।
এই ধরণের চিন্তা-ভাবনা থেকে একমাত্র আপনি নিজে থেকেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম।
আর, এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে দেখবেন, জীবন সত্যিই এখনও অনেকটা সুন্দর।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি শেষ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।