ধরুন আপনি কোনো সুপার শপে গিয়েছেন, বাজার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ; তো কেনা শেষে আপনি চেকআউট পয়েন্টে গেলেন এবং একজন ক্যাশ অপারেটর আপনার ঝুড়ি বা ট্রলিতে রাখা একএকটি প্রোডাক্ট নিয়ে তার সাথে লাগানো UPC (Universal Product Code) বার কোডটি একটি বারকোড রিডার দিয়ে স্ক্যান করল এবং আপনাকে একটা বিল বানিয়ে দিল। তো বন্ধুরা,সচারচর কিন্তু আমরা সুপারশপে কিন্তু কোন প্রোডাক্ট কেনার পর এভাবেই চেক আউট করি, অনেক সময় সুপার শপ গুলিতে বা অন্য কোথাও এ কারনে বিশাল লম্বা লাইন লেগে থাকে, চেক আউট করতে করতে এখানে আমাদের সবার অনেক সময় অপচয় হয়ে যায়। তবে ভেবে দেখুন এখানে যদি আরেকটি সিস্টেম হত – যেমন ধরুন,আপনি কোন প্রোডাক্ট কিনলেন তবে তারপর আর চেকআউটই করা লাগন না, সুপারশপ গুলি আপনি কি প্রোডাক্টটি নিলেন তা বুঝতে পেরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিল? কেমন হয় তাহলে? আর এরকম কি সম্ভব? অবশ্যই RFID ট্যাগ ব্যবহার করে খুব সহজেই এরকম করা সম্ভব।
রেডিও ফ্রিকুয়েন্সী আইডিন্টিফিকেশন বা RFID। এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। RFID কে একটা স্মার্ট বারকোডও বলা যেতে পারে, যেটি কিনা একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং নিজের ভেতর ডাটা সংরক্ষন ও প্রেরন করতে পারে। আমরা যে ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করি, বর্তমান সময়ে এতেও RFID এর ব্যবহার প্রচুর।
বারকোড ও RFID ট্যাগ
বর্তমানে আপনি একটি একটি রিটেইল দোকান থেকে যা কিছু কেনেন, তাতেই একটি UPC বারকোড প্রিন্টেড অবস্হায় থাকে। আর এই বারকোড তৈরিকারক ও রেটেইলারদের সেই পন্যের ডাটা জানার ও ট্র্যাক করার জন্য কাজে আসে। এখানে প্রোডাক্ট এর দাম সহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ন তথ্য এম্বেড করা থাকে। বলা যায় মানুষের যেমম ফিংগার প্রিন্ট, তেমনই কোনো প্রোডাক্ট এর সিকিউরিটি পরিচয় হল UPC বারকোড।
যেখানে বারকোড হল কেবল রিড-অনলি তথা কেবল পড়া যায় এমন প্রযুক্তি, আর একে কেবল একবারই রাইট করা যায়, ঠিক সেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বারকোড এর আপগ্রেড হিসেবে এসেছে RFID ট্যাগ প্রযুক্তি – আর এতে ডাটা রিড ও রাইট এবং সাথে সাথে একটি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগও স্হাপন করার সুবিধাও রয়েছে। RFID তপ রেডিও ফ্রিকুয়েন্সী এর মাধ্যমে কানেকশন তথা ইন্টারেক্ট করা হয়।
বর্তমানে একটি সাধারন RFID সিস্টেম চালানোর জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজন। এগুলো হলঃ
- ট্যাগ
- রিডার।
RFID ট্যাগ
RFID ট্যাগে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার এম্বেডেড অবস্হায় থাকে। আর কম্পোনেন্ট হিসেবে দুটি জিনিস থাকে, এগুলো হলঃ ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট যেগুলোতে ডাটা সংগ্রহ এবং প্রোসেসিং করা হয়। আর একটি এনটিনা যার মাধ্যমে সিংনাল রিসিভ এবং ট্রান্সমিট করা হয়।
এইসব ট্যাগ আবার তিনরকমের হতে পারে,এগুলো হলঃ
- প্যাসিভ
- একটিভ
- ব্যাটারি-এসিসটিভ প্যাসিভ
প্যাসিভ ট্যাগঃ এটি বলতে গেলে তৈরি করতে খুবই সস্তা এবং এতে কোনো ব্যাটারি থাকে না। এটি রিডার থেলে বের হওয়া রেডিও এনার্জিকে কাজে লাগায়।
একটিভ ট্যাগঃ এসব ট্যাগের আবার নিজস্ব ছোট ব্যাটারি থাকে, এগুলো সেটি নিজের শক্তি নিজে উৎপন্ন করে। আর এগুলো সারাক্ষনই একটিভ থাকে।
ব্যাটারি-এসিসটিভ প্যাসিভ ট্যাগঃ এই ট্যাগগুলোতেও অনবোর্ড ব্যাটারি থাকে,তবে ট্যাগটি তখনই একটিভ হয়, যখন রিডার এর সংস্পর্ষে আসে।
এখানে এইসব ট্যাগ এর ভেতর প্যাসিভ ট্যাগটিই সবচাইতে সাশ্রয়ী এবং কার্যকর। এটি তুলনামূলক ছোট হয় আর অনেকদিন টেকসই থাকে। বর্তমানে একটি প্যাসিভ ট্যাগ এর দাম পড়ে প্রায় ১২ টাকা তবে তৈরিকারক কোম্পানিরা একে শীঘ্রই ৫ টাকায় নিয়ে আসতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। ট্যাগ এর ক্ষমতা অনুযায়ী একে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলঃ
- রিড-রাইট
- রিড অনলি
- WORM
রিড রাইট ট্যাগঃ এই ট্যাগে যত ইচ্ছা ডাটা রাইট এবং অসংখ্যবার রাইট করা যায়।
রিড অনলি ট্যাগঃ এসব ট্যাগে দ্বিতীয়বার কোনো ডাটা রাইট করা যায়, বানানোর সময় যা এড করে দেয়া হয়েছিলো সেটাই।
WORM: একে বানিজ্যিক RFID ট্যাগ বলা যায়, কেননা ম্যানুফেকচার হওয়ার পর, এতে কেবল একবার ডাটা রাইট করা যায়, কিন্তু অসংখ্যবার সেই ডাটা রিড করা যায়। WORM এর পূর্নরূপ Write once,Read many।
এসব RFID ট্যাগ এর বানিজ্যিক দাম এদের রেঞ্জ,স্টোরেজ সাইজ ও কোয়ান্টিটি এর ওপর নির্ভর করে।
RFID রিডার
এইসব রিডার দিয়ে ট্যাগ থেকে পাঠানো বা ট্রান্সমিটেড ডাটা রিড করা যায়। এর রিসিভার তথা ট্রান্সসিভার এনকোডেড রেডিও সিংনালকে পড়তে পারে। আর এর থেকে বের হওয়া একটি রেডিও সিংনাল প্রথমে প্যাসিভ ট্যাগগুলোকে জাগিয়ে তোলে।
এখানে সচরাচর তিনটি প্রধান RFID দেখা যায়। এগুলো হলঃ
- প্যাসিভ রিডারঃ এই প্যাসিভ রিডার কেবল একটিভ ট্যাগগুলো থেকে ডাটা রিসিভ করে থাকে।
- একটিভ রিডারঃ এই একটিভ রিডার আবার কেবল প্যাসিভ ট্যাগগুলো থেকে ডাটা রিসিভ করে।
- বিশেষ একটিভ রিডারঃ এই রিডার আবার একটিভ ট্যাগ ও ব্যাটারি এসিসটিভ প্যাসিভ ট্যাগ থেকে ডাটা রিসিভ করে।
RFID এর সাধারন ব্যবহার
প্রথমেই উদাহরন হিসেবে এখানে সুপারস্টোরে RFID ট্যাগের ব্যবহার উল্লেখ করেছি এবং কেনো এটি বারকোডের পরবর্তী জেনারেশন সে বিষয়ে জানিয়েছি। তাই,হয়ত RFID এর ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা আপনি পেয়েছেন। যেহেতু এই ট্যাগ যেকোন জায়গায় লাগানো যায়, সাথে সাথে প্যাসিভ ট্যাগ এর ক্ষেত্রে কোন এনার্জি ব্যায় হয় না, তাই এটিকে নানা প্রযোজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়ঃ
- গৃহপালিত প্রানীর নজর রাখতে (বেশি রেঞ্জ সহ RFID ট্যাগ)
- পন্যকে ট্যাক করতে
- সংযোগ বিহীন পেমেন্ট করতে।
- বারকোড এর বিকল্প হিসেবে
- স্বাস্হ্যবিষয়ক ডাটা সংরক্ষন করতে…. আরও নানা কাজে
বর্তমানে মানিব্যাগ এর সুরক্ষার জন্য উন্নত বিশ্বে মানি ব্যাগে RFID ট্যাগ লাগানো থাকে। ব্রিটিশ সহ নানা দেশের পাসপোর্ট এর ভেতর RFID ট্যাগ লাগানো থাকে, সিকিউরিটি হিসেবে এবং আসল পাসপোর্ট এটা বুঝাতে।
তো বন্ধুরা,RFID সম্পর্কে আশা করি আজ অনেক ধারনা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করবেন। নিচে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।