আর্টিকেল

ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি থেকে আমাদের নিরাপত্তার প্রত্যাশা কতোটুকু?

ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি থেকে আমাদের নিরাপত্তার প্রত্যাশা কতোটুকু?

বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের অত্যাধিক অগ্রগতিতে আমরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। এমনদিন দূরে নয় যে আমরা হাত থেকে শুরু করে ঘরের সকল জিনিসপত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে। হ্যাঁ উদাহরন হিসেবে বলতে পারি, বর্তমানে পাওয়া যায় – স্মার্ট পাওয়ার স্ট্রিপ, স্মার্ট লক, স্মার্ট এলইডি লাইট ইত্যাদি কথা। আমরা সবাই এখন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এর মত প্রযুক্তির সাথে জড়িত, আর আমরা সবসময় এই ব্যবহার্য প্রযুক্তি ডিভাইসগুলির নিরাপত্তার প্রতি যত্নশীল থাকি। আর হয়ত সেকারনেই স্মার্টফোনে, ল্যাপটপে,কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি ; হ্যাকার থেকে বাচার জন্য ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচার জন্য অনেক পদ্ধতি গ্রহন করি।

কিন্তু আসছে বছরগুলিতে আমরা যখন প্রযুক্তির সাগরে ভাসব, তখন আমাদের জীবন বা আমাদের থাকার জায়গা কি সুরক্ষিত থাকবে? কেননা আমরা জানি বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি কোনোভাবেও শতভাগ সুরক্ষিত নয়, বিশ্বের বড় বড় সার্ভারও হ্যাকারদের কবলে পড়ে, সেখানে ভবিষ্যতের ইন্টারনেটময় এক প্রযুক্তি আমাদের কতটা সুরক্ষা দিবে, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়!

স্মার্টহোম ডিভাইস

বর্তমান সময়ে নিরাপত্তা জনিত নজরদারীর কাজে ব্যবহৃত স্মার্ট আইপি ক্যামেরার ব্যবহার সর্বত্র। মানুষ তাদের বাসা,অফিসে নিরাপত্তা জনিত তদারকির কারনে এই আইপি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে, এবং দূর থেকে বাসা,অফিস,দোকানের উপর নজর রাখে। তবে এই আইপি ক্যামেরা যতটা না উপকারী, ঠিক ততটাই ভয়ানক হতে পারে, যখন একজন হ্যাকার এই আইপি ক্যামেরার এক্সেস কোনোভাবে নিয়ে, গোপনে গোপনে ক্যামেরা দিয়ে ধারন করা দৃশ্যের উপর নজর রাখে। ইন্টারনেটে আপনি একটু ঘাটাঘাটি করতে থাকলেই, বহু দেশের নানা স্হানের হ্যাক হয়ে যাওয়া আইপি ক্যামেরার এক্সেস পেয়ে যেতে পারেন, এতে করে সেসব ক্যামেরা দ্বারা ধারন করা লাইভ ফুটেজ আপনি ঘরে বসে দেখতে পারেন।

  • আইপি ক্যামেরা কি?শাওমি পোর্টেবল আইপি ক্যামেরা রিভিউ!

বর্তমানে সময়ে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপি স্মার্ট তালার প্রসার ঘটছে। হ্যা আপনি বাইরে যাওয়ার সময়, ঘরে যে তালা লাগিয়ে রেখে যান সেই তালাই। তবে প্রযুক্তির ছোয়ার এটি হয়ে গিয়েছে স্মার্ট। যেমন, এই তালায় আপনি হয়ত কোনো ফিজিক্যাল চাবি খুঁজে পাবেন না। চাবি হিসেবে আপনি ব্যবহার করবেন আপনার স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচ। চোরে এসে তালা ভাঙার চেষ্টা করলেও হয়ত আপনি আগে ফোনে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বার্তা পেয়ে যাবেন। দেখা যাচ্ছে যে,এইসব স্মার্ট লক বা তালা আমাদের তালা ব্যবহারের রীতি বদলিয়ে আমাদের আরেকটু স্মার্ট করে তুলছে ঠিকই ; তবে আমরা কিন্তু একদিক দিয়ে একটি নেটওয়ার্কেরর জ্বালে আটকে যাব। দূর থেকে আপনার বাসায় আপনার কোনো আত্মীয় গেলো, তার কাছে চাবি নেই – আপনি সেই স্মার্ট তালার অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনার আত্মীয়ের জন্য তালা খুলে দিলেন, আপনার কাছে খুবই ভালো লাগল প্রযুক্তিটি। তবে একই কাজ যদি কেন হ্যাকার আপনার বাড়ির পাশে বসে, আপনার বাড়ির নেটওয়ার্ক তথা ওয়াইফাই হ্যাক করে ফেলে তাহলে? তাহলে হয়ত আপনার বাসার সেই নেটওয়ার্কে থাকা ভবিষ্যতের নানা স্মার্টহোম ডিভাইস এর এক্সেস তার হাতে চলে আসবে। সে হয়ত আপনার স্মার্টতালাটি হ্যাক করে আপনার ঘরে ঢোকার রাস্তা পেয়ে গেল, আর এর ফলে এটা ভাবার আর বাকি থাকে না যে – ভবিষ্যতের চোরেরা তালা ভাঙা না শিখে নেটওয়ার্ক হ্যাক করা শিখবে।

আমাদের কম্পিউটার এর সাথে বা অন্যান্য জায়গায় মাল্টিপ্লাগ লাগানো থাকে, আমরা জানি নিশ্চয়ই। আমাদের সবার বাসাতেই এই মাল্টিপ্লাগ এর ব্যবহার রয়েছে। একে মাল্টিপ্লাগ না বলে পাওয়ার স্ট্রিপও বলা হয়। আমরা এখানে উদাহরন হিসেবে বলতে পারি, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত শাওমি পাওয়ার স্ট্রিপ এর কথা। এটা দেখতে অন্যসব সাধারন মাল্টিপ্লাগ বা পাওয়ার স্ট্রিপ এর মত; তবে একটা বিশেষ ফিচার হল এটা ওয়াইফাই তথা একটি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে একে নিয়ন্ত্রন করা যায়। মোবাইল অ্যাপ দিয়েই দূর থেকে এর নানা প্লাগ চালু-বন্ধ করা যায়, এমনকি ভোল্টেজ কম-বেশি পর্যন্ত করা যায়। এখন এই গুরুত্ববহ ডিভাইসটি যদি কোনভাবে নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে হ্যাক করা হয়, তবে কি অবস্হা হবে তা ভাবনাতীত।

আসলে বর্তমানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এসব স্মার্ট ডিভাইস তৈরি করছে, আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য। মানুষ যেনো একই কাজ আরও সহজে করতে পারে, সে বিষয়ে তারা নজর দিচ্ছে বেশি। এটি খুবই ভালো, তবে যে জিনিসটি তারা এড়িয়ে যাচ্ছে তা হল শতভাগ নিরাপত্তার একটা আশ্বাস। আর হয়ত এই কারনেই রিজার্ভ ব্যাংক থেকে দেশের হাজার কোটি টাকা হ্যাকাররা চুরি করে নিয়েছিল, যা এখনও ফেরত পাওয়া যায়নি। আসলে মানুষের বসবাসকে উন্নত করার জন্য এসব কিছুই এখনও একটি নেটওয়ার্ক ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে, সবকিছুই এখানে এক মুক্ত ডাটা পারাপার মাধ্যম ইন্টারনেটের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।

স্মার্টফোন

উপরে তো কিছুদিন পর সবাই ব্যবহার করবে এরকম প্রযুক্তি পন্যের কথা বললাম ; তবে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনই কতটাইবা সুরক্ষিত? এরকম প্রশ্ন থেকেই যায়। ধরুন আপনি প্লে স্টোর থেকে একটি অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড করে নিলেন, পরে দেখা যাচ্ছে সে অ্যাপটি গোপনে আপনার ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে আপনার ছবি তুলে তাদের সার্ভারে পাঠাচ্ছে, তাছাড়াও আপনি আপনার ফোনে কি কি করেন সব ডাটা ক্যাপচার করে তাদের সার্ভারে পাঠাচ্ছে, এটা সম্ভব ; আর বর্তমানে এটা হচ্ছেও। একে বলা হয় ডাটা মাইনিং। ওয়্যারবিডিে ডাটা মাইনিং এর ওপর একটা বিস্তারিত আর্টিকেল থেকে আরও ধারনা নিতে পারেন। হয়ত আজ স্মার্টফোন থেকে ডাটা মাইনিং এর জন্য আজ তথ্য চুরি করা হচ্ছে। এমনদিন দূরে কোথায়? যেদিন আমাদের অজান্তে আমাদের গোপন তথ্য এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে হ্যাকাররা এক্সেস করে তা ছড়িয়ে দেবে?

এভাবে আমরা যত প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হচ্ছি, তেমনই নিরাপত্তা, প্রাইভসির ব্যাপারটা ততই সংকীর্ন হয়ে যাচ্ছে। এক অসত গোষ্ঠী নিজেদেরকে তৈরি করছে ভবিষ্যতের জন্য, হয়ত তারা আমাদেরকে প্রযুক্তির এমনই কোনো জালে ফেলে ধরাসায়ী করে ফেলবে। ঠিক যেমনটি ঘটেছে কিছুদিন আগে “ওয়ানাক্রাই র‍্যানসমওয়্যার” এর মাধ্যমে। নেটওয়ার্কের অধীনে সব কম্পিউটারের ডাটা জিম্মি করে, কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের থেকে বিপুল অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। আসলে এগুলো কেবল শুরু মাত্র , ভবিষ্যতে আমরা এগুলোর আরও নানাভাবে সম্মুখীন হতে পারি।

  • র‍্যানসমওয়্যার আপনার কম্পিউটার এর কি করতে পারে?

সুরক্ষা

স্মার্টফোনের সুরক্ষার জন্য আমরা নিজেরা যা করতে পারি, তা হল আমরা আসলে কি অ্যাপ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করব সে বিষয়ে সতর্ক হতে পারি। কোন অ্যাপ ইনস্টল করার আগে অ্যাপটি আসলে কি কি পার্মিশন চাচ্ছে, সে বিষয়ে নজর দিতে পারি। ধরুন একটি গেমস ইনস্টল করার আগে দেখলেন সেটি আপনার ক্যামেরা পার্মিশন চাচ্ছে, তবে ভাববেন এখানে কোনো সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। কেননা একটি গেমস এর ক্যামেরা এক্সেস দরকার হবে কেন? পাশাপাশি ফ্র্যাগমেন্টেশন এর কারনে আমাদের ফোনে হয়ত বহু আগের অপারেটিং সিস্টেমটিই রয়েছে, এতে করে হ্যাকাররা আগের সেই অপারেটিং সিস্টেমটির বাগ বের করে হয়ত সেটি থেকে ডাটা হ্যাকও করতে পারে। সেজন্য স্মার্টফোন কেনার আগে ভালো কোম্পানির দেখে নিতে হবে, যেন তা নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট, অপারেটিং সিস্টেম আপডেট, সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট দেয় সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

  • ফ্রাগমেন্টেশন অ্যান্ড্রয়েডের দোষ না প্রস্তুতকারী কোম্পানির?

বাসায় বিভিন্ন স্মার্টহোম ডিভাইস ব্যবহার করলে, আমাদেরকে রাউটার এর ব্যাপারে যত্নশীল ও সতর্ক হতে হবে। যতটা সম্ভব আইএসপি এর নিকট থেকে শেয়ার্ড ব্রডব্যান্ড প্যাকেজ পরিহার করে, ডেডিকেটেড আইপি সহ প্যাকেজ নিতে হবে। রাউটারে যেহেতু ওয়্যারলেস ফেডালিটি তথা ওয়াইফাই এর মাধ্যমে সবকিছু যুক্ত থাকবে, সেহেতু পারাপার হওয়া ডাটাগুলো এনক্রিপটেড করার ক্ষমতাসম্পন্ন রাউটার বাছাই করতে হবে।

আসলে প্রযুক্তি যত উন্নততর হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিও ততটাই বাড়ছে। আমরা ভবিষ্যতে এরকম বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা করব।

আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগল কমেন্টে জানাতে পারবেন, ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর ওয়্যারবিডিের সাথেই থাকুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button