Google

গুগল ব্লগার : নতুন ব্লগারদের জন্য ফ্রি প্ল্যাটফর্ম | আপনার যা জানা প্রয়োজনীয়!

ব্লগারের বিশেষ সুবিধা

ব্লগিং অনেক কারণে হতে পারে, হতে পারে আপনার নেশা, হতে পারে আপনার ভালো মানের একটি পেশা। যারা নতুন ব্লগার বা ব্লগিং শুরু করবেন বলে মনস্থির করছেন অনেকেরই প্রথম প্রশ্ন থাকে কিভাবে শুরু করবেন। গুগল ব্লগার তাদের জন্য ভালো একটি অপশন হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে এবং ব্লগিং কমিউনিটি গুলোতে গুগল ব্লগার নিয়ে আলোচনা হয়। তাই ভাবলাম ব্লগার নিয়ে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করে সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো আলোচনা করা যাক…

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

গুগল ব্লগার

দেখুন প্রথমে ব্লগিং শুরু করাটায় একটি বড় কথা, যেখানে আপনি ব্লগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। বর্তমানে ব্লগ শুরু করার জন্য অনেক টুল রয়েছে, আপনি চাইলে সহজেই একটি রেডিমেড ব্লগ/ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু যদি কথা বলি ফ্রি অপশন নিয়ে সেক্ষেত্রে ফ্রি গুগল ব্লগার সর্বদা বেস্ট একটি অপশন হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। গুগল ব্লগার একটি গুগলের ফ্রি ব্লগ পাবলিশিং টুল। অনেক নতুন ব্লগার এবং আমার নিজেরও শুরুর দিকটা গুগলের ব্লগারের হাত ধরেই শুরু হয়েছিলো।

যদিও আমি যে ব্লগার ব্যবহার করেছি সেটা এক অন্য রকম জিনিষ ছিল, কিন্তু বর্তমানে ব্লগারে অনেক উন্নতি এবং পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আপনি বর্তমানে আরো সহজে কোন প্রকারের বাজেট খরচ না করে নিজের একটি চকচকে ব্লগ বানিয়ে ফেলতে পারবেন গুগল ব্লগার ব্যবহার করে। ব্লগারের মেইন ফোকাস হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ ফ্রি, আপনার এক টাকাও হোস্টিং খরচ বহন করতে হবে না, সাথে ফ্রি ভিজিটর কাউন্টার পেয়ে যাবেন, সাথে আপনি চাইলে এই গুগল ব্লগার থেকে অর্থ ও উপার্জন করতে পারবেন।

ব্লগার দিয়ে শুরু

একটি ব্লগ লেখা হতে পারে নিজের জীবন নিয়ে, লেখা হতে পারে আপনার কাজ নিয়ে, লেখা হতে পারে আরো হাজারো টপিকের উপরে। সুখবর হচ্ছে আপনি ব্লগারে অনেক টাইপেরই ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারবেন। ব্লগার ব্যবহার করাও অনেক সহজ, আপনার বেসিক ইন্টারনেট জ্ঞান থাকলেই আপনি সহজেই ব্লগার ব্যবহার করে ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। যদিও বর্তমান বাজারে আরো অনেক ফিচার সমৃদ্ধ ব্লগিং টুল রয়েছে, তবে ব্লগার একেবারেই সিম্পল সলিউশন হতে পারে।

যখন আমি প্রথম ব্লগ/ওয়েবসাইট তৈরি কথা চিন্তা করেছিলাম, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না কিভাবে আমার ওয়েবসাইট/ব্লগটি তৈরি করবো। ডোমেইন হোস্টিং সম্পর্কে মোটেও কোন আইডিয়া ছিল না, আর ওয়েবপেজ ও ডিজাইন করতে জানতাম না। বর্তমানে আপনি গুগল করে নিজের ভাষায় অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কয়েক বছর আগেও এগুলো খুঁজে পাওয়া যেতো না। তো ঠিক একেবারে নতুনদের জন্য অবশ্যই গুগল ব্লগার একটি লোভনীয় অপশন।

আপনি অবশ্যই আপনার প্রথম ব্লগ সাইটটি ব্লগারে তৈরি করতে পারেন। তবে যদি টাকা খরচ করার সামর্থ্য থাকে এবং একটু হলেও ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করার ধারণা থাকে, সেক্ষেত্রে আমি ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস ব্যবহার করে ব্লগ তৈরি করতে রেকমেন্ড করবো। ব্লগার Vs. ওয়ার্ডপ্রেস এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তবে আবারো বলছি, একেবারেই নতুন হলে অবশ্যই ব্লগারে শুরু করা বেটার হবে।

তবে এখানে একটি ব্যাপার রয়েছে যেটা মাথায় রাখা জরুরী। গুগল কিন্তু এই ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের দিকে তেমন জোর দিচ্ছে না, মানে হতে পারে কয়েক বছরের মধ্যে গুগল ব্লগার হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে, মানে তাদের রেকর্ড অনুসারে বলছি আর কি। তবে চিন্তার কারণ নেই, আপনি ব্লগার থেকে যেকোনো টাইম আপনার ব্লগকে ওয়ার্ডপ্রেসে বা আলাদা সিএমএস এ মাইগ্রেট করে নিতে পারবেন।

ব্লগারে ব্লগ সেট

ব্লগারে ব্লগ সেট করা পানির মতো সহজ। অবশ্যই আপনার গুগল আইডি দিয়েই ব্লগার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। আপনাকে ব্লগের নাম সেট করতে হবে, একটি সাব-ডোমেইন পছন্দ করতে হবে, একটি ট্যামপ্লেট চয়েজ করলেই ব্যাস ব্লগ তৈরি হয়ে যাবে। একটি ব্লগার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি অনেক গুলো ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। এভাবে আপনি একটি ব্লগ থেকে আরেকটি ব্লগকে আলাদা করতে পারবেন।

ব্লগার আপনাকে একটি সাব-ডোমেইন প্রদান করবে, যেমন; Wirebdblogs.Blogspot.com — তবে আপনি চাইলে কিছু টাকা খরচ করে নিজের একটি টপ লেভেল ডোমেইন কিনে আপনার আগের ব্লগার সাইটের সাথে লিংক করে দিতে পারেন। এতে আপনার সাইটের ইম্প্রেশন ভালো দেখাবে, সাথে আপনার ব্লগ রিডারের কাছে ব্লগ নামটি মনে রাখতে সুবিধা হবে। আর অপরদিকে আপনাকে ওয়েব হোস্টিং নিয়ে কোন বাড়তি চিন্তা করতে হচ্ছে না, আপনার ব্লগ জনপ্রিয়তা লাভ করলেও ডাউন থাকার কোন ভয় থাকে না ব্লগারে।

ব্লগার ফিচার

একজন নতুন ব্লগ ক্রিয়েটর হিসেবে আপনার প্রয়োজনের সবকিছুই রয়েছে গুগল ব্লগারে। আপনি সহজেই পোস্ট তৈরি করতে পারবেন, পোস্টের কাস্টম লিংক তৈরি করতে পারবেন, পোস্টে ইমেজ যুক্ত করতে পারবেন, ভিডিও যুক্ত করতে পারবেন। তাছাড়া ব্লগারের পোস্ট এডিটর অনেক উন্নতমানের যেখানে পোস্ট পোস্ট করার পূর্বেই পোস্টটির প্রিভিউ দেখতে পারবেন।

ব্লগারের একটি মজার ফিচার হচ্ছে আপনি আপনার ব্লগারকে একটি গোপন মেইলের সাথে কনফিগার করে রাখতে পারবেন, তারপরে ই-মেইল সেন্ড করে আপনি ব্লগ পোস্ট করতে পারবেন আপনার ব্লগে। ব্লগে যেকোনো ইমেজ যুক্ত করা পানির মতো সহজ, আপনার কম্পিউটার থেকে জাস্ট ইমেজটি ড্র্যাগ করে পোস্টে ড্রপ করে দিলেই ইমেজ সেট হয়ে যাবে। তাছাড়া গুগল ফটোস থেকে ইমেজ ইউজ করতে পাবেন, বা ইউটিউব থেকে ভিডিও এম্বেড করতে পারবেন।

শুধু তাই নয়, আপনার ব্লগটি কেমন হবে তার উপর আপনি অনেক কিছুই ক্যাস্টম করে নিতে পারবেন। আপনি ফ্রি বা প্রিমিয়াম ট্যামপ্লেট ডাউনলোড করে ব্লগে আপলোড করার মাধ্যমে ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারবেন এবং গ্যাজেট ব্যবহার করে নানান প্রকারের ফাংশন সেট করতে পারবেন আপনার ব্লগে।

আপনি ট্যামপ্লেট কিনতে পারেন, নিজে তৈরি করতে পারেন, ইচ্ছা মতো ক্যাস্টম ও করতে পারেন। সব চাইতে ভালো কথা হচ্ছে বেসিক কিছু জ্ঞান থাকলেই আপনি অনেক সুন্দর করে বা বলতে পারেন নিজের মনের মতো করে গুছিতে নিতে পারবেন আপানার ব্লগের ডিজাইন। তাছাড়া আপনার যদি সিএসএস এর উপরে অ্যাডভান্স জ্ঞান থাকে, তো কথায় নেই, মারাত্মকভাবে সুন্দর লুক দেওয়া সম্ভব আপনার সাইটে।

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ডিফল্টভাবে ব্লগার সাপোর্ট করে, তাই ব্লগ পোস্ট শেয়ারিং করতে অনেক সুবিধা পেতে পারবেন। তাছাড়া কিছু স্বয়ংক্রিয় তৃতীয়পক্ষ টুলস ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ব্লগ পোস্ট ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা যেতে পারে।

ব্লগারের বিশেষ সুবিধা

একে তো ব্লগার ফ্রি, আপনাকে হোস্টিং বিলের জন্য ১ পয়সা ও খরচ করতে হবেনা, দ্বিতীয়ত ব্লগার থেকেই আপনি চাইলে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আপনার ব্লগে যদি অনেক রিডার থাকে তো গুগলের মনিটাইজেশন সিস্টেম গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা উপার্জন করা যেতে পারে।

ব্লগারের সাথে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করা অনেক সহজ, অনেক দ্রুতই আপনি সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারবেন। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, আপনার ব্লগ বড় হওয়ার সাথে সাথে এর হ্যাক হবার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়, ইন্টারনেট এক বিরাট ভয়ঙ্কর জায়গা। যদি আপনার সাইট ব্লগারে তৈরি করা হয় আর আপনি যদি আপনার গুগল অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার ব্লগটি সহজে কেউ হ্যাক করতে সক্ষম হবে না।

তবে কেন প্রফেশনাল’রা ব্লগার ব্যবহার করে না?

অনেকেই তাদের প্রথম ব্লগ সাইট ব্লগারে তৈরি করে কিন্তু জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলে প্রায় সকলেই তাদের ব্লগকে প্রফেশনাল প্ল্যাটফর্ম যেমন ওয়ার্ডপ্রেসে পার করে নিয়ে চলে যায়, কিন্তু কেন? অবশ্যই ব্লগার একটি ভালো মানের টুলস, কিন্তু এটা আলাদা টুলস যেমন ওয়ার্ডপ্রেসের তুলনায় অনেক লিমিটেড। ব্লগারে আপনার সাইট আপনার হলেও যেন আপনার নয়, অনেক কিছুই থাকে গুগলের হাতে, গুগল চাইলে আপনার সাইট যেকোনো সময় ব্যান করে দিতে পারে আর ফিরিয়ে নাও দিতে পারে। তাছাড়া আপনার সাইটের উপর অ্যাডভান্স টাইপের কন্ট্রোল চাইলে আপনাকে অবশ্যই নিজের হোস্টে সাইট হোস্ট করতে হবে।

ওয়ার্ডপ্রেসের মতো সিএমএস গুলোতে আপনার ব্লগের উপর আরো অনেক কন্ট্রোল রাখা সম্ভব, ছোট ছোট অ্যাপ ইন্সটল করে ব্লগের ফাংশন বাড়ানো যেতে পারে, বেটার এসইও করা যেতে পারে, বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে আরো কন্ট্রোল আনা যেতে পারে। তাই প্রফেশনালদের জন্য ব্লগার আদর্শ নয়! কিন্তু শুরু করার সময় একটাও কারণ নেই ব্লগার ইউজ না করার!

ব্লগারের কিছু ডাউন সাইড

দেখুন, এখানে কিছু পরিস্কার কথা বলতে চাই। আপনি ব্লগিং এ একেবারেই নতুন? কিচ্ছু জানেন না? ব্লগ শুধু নিজের শখের জন্য? আয় করার তেমন ইচ্ছা নেই বা ইচ্ছা থাকলেও সেটা ফুল টাইম নয়? — হ্যাঁ, আপনি ব্লগার ইউজ করুণ।

আর যদি, ব্লগ এবং ব্লগিংকে সিরিয়াস ভাবে গ্রহন করতে চান আর সাথে ফুল টাইম ব্লগিং করে টাকা উপার্জন করতে চান, অবশ্যই আপনাকে টাকা খরচ করে হোস্টিং কিনতে হবে এবং ওয়ার্ডপ্রেস বা আলাদা সিএমএস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট/ব্লগ তৈরি করতে হবে। যেখানে আপনি আরো বেশি কাস্টমাইজেশন অপশন, এবং আরো বেশি কন্ট্রোল রাখতে পারবেন সবকিছুর উপরে।

ব্লগার একটি ভালমানের টুল হলেও একে অনেক কমতি রয়েছে। আপনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারবেন না, যতোটা সহজেই ওয়ার্ডপ্রেসে সেটা তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া ওয়ার্ডপ্রেসে যে টাইপের অ্যাডভান্স ফাংশন আনলক করা যেতে পারে, ব্লগারে সেগুলো কল্পনাও করতে পারবেন না। কোন উচ্চতর দক্ষতা না থাকার পরেও ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা প্রফেশনাল সাইট তৈরি করতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেসে সাইটের ফাংশন যুক্ত করা মানে অনেকটা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে জাস্ট একটা অ্যাপ ইন্সটল করার মতোই সহজ, যেটা ব্লগারে করতে পারবেন না।


যাই হোক, যদি সর্বোপরি কথা চিন্তা করি, অবশ্যই গুগল ব্লগার একটি অসাধারণ ব্লগিং টুল যেটা সম্পূর্ণই ফ্রি। তবে মাথায় রাখতেই হবে, এটা প্রফেশনালদের জন্য নয়!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button