ইন্টারনেট

৫টি অজানা ইন্টারনেট রহস্য!

যেগুলোর কোন ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত মেলেনি

আমাদের যদি কোনো কিছু জানার দরকার পরে তবে প্রথমেই আমরা তা ইন্টারনেটে সার্চ করি। কেননা ইন্টারনেট আমাদেরকে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফল দান করে। এই ইন্টারনেটেও এমন কিছু বিষয় রয়েছে যার উত্তর কারো কাছে নেই। ইন্টারনেট খুবই বিশাল এবং রহস্যময় বিষয়ও বটে। বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ এই বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রয়েছে। আর এই বিশাল নেটওয়ার্কে লুকিয়ে রয়েছে নানা রহস্য। আজ আমি ইন্টারনেটের ৫ টি রহস্যময় বিষয় সম্পর্কে আপনাদের জানাব।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Cicada 3301

সিকাডা ৩৩০১ হলো একটি ইন্টারনেট পাজেল, যা সর্বপ্রথম ২০১২ সালে দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকে টানা কয়েকবছর পর্যন্ত সিকাডা ৩৩০১ এর উপস্হিতি লক্ষ্য করা যায়। এদের মূল উদ্দেশ্য কিছু বুদ্ধিমান মানুষকে খোঁজা যারা এদের রহস্যপূর্ণ একেকটি পাজেল সমাধান করতে পারবে। তবে ৩৩০১ কি কাজের জন্য এই পাজেলটি দিয়ে বুদ্ধি মান মানুষদের খুঁজে বের করছে তা তারা কখনও বলে নি। এই পাজেলে বিভিন্ন ছবি, প্রাচীন কালের পা্ন্ডুলিপি, ক্রিপ্টোগ্রাফি এর মত লুকায়িত জিনিস পাওয়া যায়, যা ধাপে ধাপে সমাধান করতে হয়। একেকটি পাজেল সমাধান করার মধ্য দিয়ে এখানে পরবর্তী পাজেল এর ক্লু পাওয়া যায়। কয়েকবছর হল এই পাজেলটি ইন্টারনেটে রয়েছে তাই স্বাভাবিক বহু মানুষ এই পাজলটি ট্রাই করেছে, তবে এমন কেউ সামনে উঠে আসেনি যেকিনা সম্পূর্ণ পাজেলটিকে সমাধান করতে পেরেছে। যারা দাবি করেছে পরে দেখা গিয়েছে তারা আসলে সমাধান করতে পারেনি, ভুয়া। মূলত যারা বাস্তবে যারা সমাধান করতে পেরেছিল তারা কখনও সামনে আসেনি।

ধারনা করা হয়, সিকাডা ৩৩০১ হলো বড় কোন সিক্রেট এজেন্সির কর্মি বাছাই করার প্রক্রিয়া ; তারা এমন কাউকে তাদের দলে যুক্ত করতে চায় যারা কিনা রহস্যঘেরা কঠিন এই পাজেলটিকে সলভ করতে পারবে। আর হয়ত সে কারনে পাজেলটি সম্পূর্ণ ভাবে সলভ করতে পারা কাউকে কখনও সামনে আসতে দেখা যায়নি। আর এই কথা আমার বা অন্য কোন ধারনাকারীর না, বরং স্বয়ং সিকাডা ৩৩০১ পাজেল এর ভেতর নানা স্হানে বলে, আমরা সেসব মানুষকে খুঁজছি যারা এসব সমাধান করার মত বুদ্ধি রাখে। এই সিকাডা ৩৩০১ এর আসল সত্য কেউ উৎঘাটন করতে পারে নি। আর এই কারনে এটি এখনও ইন্টানেটের অন্যতম একটি রহস্যময় বিষয়। হয়ত তারাই এই সিকাডা ৩৩০১ এর আসল রহস্য জানে যারা কিনা সম্পূর্ণ পাজেলটি সমাধান করেছে, তবে এটাই রহস্য তারা কখনও সামনে আসেনি।

Internet Black Hole

বন্ধুরা, আপনারা তো সবাই মহাকাশের ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে কমবেশি জানেনই ; তবে আপনি কি কখনও ইন্টারনেটের ব্ল্যাক হোল এর নাম শুনেছেন? হ্যাঁ ইন্টারনেটেও ব্ল্যাক হোল রয়েছে আর একে বলা হচ্ছে ইন্টারনেটের ব্ল্যাক হোল। আপনি ইন্টারনেটে যেখানে সেখানে এই ব্ল্যাক হোলের স্বীকার হতে পারেন। তবে নিশ্চয়ই এই ব্ল্যাক হোল আপনাকে টেনে নেবে না, তবে আপনার স্মার্টফোন,কম্পিউটার ইত্যাদি ডিভাইস থেকে আসা যাওয়া করা ডাটা নিজের ভেতর টেনে নিতে পারে।

সময়টা ১৯৯১, যখন ইন্টারনেট এতটা উন্নত না ; তবে কোনোরকম ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমেইল ব্যবহার করা যেত। তখন নাসা তাদের স্পেস স্যাটেল উত্তোলন নিয়ে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত ছিল, এসময় নাসা সদর দপ্তর থেকে নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের নিকট ইন্টারনেট মারফত নতুন একটি প্ল্যান ইমেইল করে পাঠানো হয়। তবে উত্তোলন এর দিন দেখা যায় যে, বিজ্ঞানীরা এই প্ল্যান বিষয়ে কিছুই জানেনই না। পরে জানা যায় যে, তাদের কাছে ফাইনাল ইমেইল টা যায়ইনি। তবে তখন টেকনিক্যাল ফল্ট মনেকরে তারা এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় নি। তবে ২০০২ সালে তারা আবার এরকম একটি ইনফরমেশন গায়েব এর স্বীকার হয়। তারপর অ্যামরিপ্রাইজ ফাইন্যান্সিয়াল নামক একটি কোম্পানির ৩ লক্ষ গ্রাহকের ডাটা সার্ভার থেকে গায়েব হয়ে যায়। তারপর ব্যাপারটি নিয়ে বড় বড় মহলের টনক নড়ে, এ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় যে কে বা কারা অথবা কোথায় এই ডাটাগুলো যাচ্ছে তা সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছে না। ধারনা করা হয় যে, রহস্যময় কোনো দল তথা হ্যাকার গ্রুপ কোনো এক গোপণ স্হান থেকে এসব ডাটা গায়েব করছে। যাই হোক, যেহেতু ইন্টারনেট ব্ল্যাক হোল এর আসল তথ্য কেউ জানে না, তাই এটা আজও ইন্টারনেটের অন্যতম অজানা রহস্য।

Mariana’s Web

ডীপ ওয়েব তারপরে ডার্ক ওয়েব এর কথা তো কমবেশি সবাই শুনেছেন ; এবং এ বিষয়ে যথেষ্ঠ জানেনও অনেকে। তবে যদি বলা হয় এই ডার্ক ওয়েব এর চাইতেও গভীর আরেকটি ওয়েব রয়েছে? হ্যাঁ ডার্ক ওয়েব এর চাইতেও আরেকটি ওয়েব রয়েছে, যেটি কিনা এর চাইতেও ভয়ানক এবং ঢোকা আরও কঠিন। এর নাম হল মারিয়ানা’স ওয়েব। ইন্টারনেটের আনসলভড তথা বড় বড় অজানা রহস্যের মধ্যে এটি একটি। বলা হয় যে, মানুষ যতটা খারাপ চিন্তা করতে পারে, তার চেয়েও খারাপ কিছু এই মারিয়ানা’স ওয়েবে পাওয়া যায়।

মারিয়ানা’স ওয়েবে ঢুকতে যথেষ্ঠ শক্তিসালী কম্পিউটার দরকার পরে। বাসায় বসে অনেক সময় পেইড ভার্চুয়াল মেশিন দিয়ে মারিয়ানা’স ওয়েব অনেক কষ্টে অ্যাক্সেস করা যায়। আরও বলা হয় যে, মারিয়ানা’স ওয়েব এর কোনো তথ্য বাহিরে ফাস করা হলে তাকে হিটম্যান দিয়ে খুন করা হয়। অনেক বড় বড় হ্যাকারও মারিয়ানা’স ওয়েব থেকে অনেক দূরে থাকে। পল ওয়াকার, মাইকেল জ্যাকসন এর মত কিংবদন্তীর মৃত্যুর আসল রহস্য নাকি মারিয়ানা’স ওয়েবে লুকায়িত রয়েছে। যাই হোক, এই মারিয়ানা ওয়েব এর নামকরন করা হয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে গভীরতম স্হান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে। আমরা চেষ্টা করব কখনও এই মারিয়ানাস ওয়েবে না ঢুকতে।

Plague Mask Doctor Video

২০১৫ সালে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয় এবং এই ভিডিওতে দেখা যায় যে, একটি মানুষ কালো ডাক্তারের পোষাক পড়ে মুখে একটি Plague Mask পড়ে আছে। তারপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে অদ্ভুদ কিছু ইশারা এবং অঙ্গ ভঙ্গিমা করছে, যার কোনো মানে বা অর্থ বোঝা যাচ্ছে না। ভিডিওটি সেই বছর জনি নামক একজন ব্লগার এর ইমেইলে এসেছিল। তারপর তিনি সেই ভিডিওটি তার ব্লগে পোস্ট করেন, এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে কালো পোষাকে আচ্ছাদিত মানুষটির হাতে একটি Led লাইট ব্লিঙ্ক করতে দেখা যায়, এর মানে কি তাও বোঝা যায়নি। ভিডিওটির মাঝে একটি বাইনারি কোড পাওয়া যায়, আর একমাত্র এই বাইনারি কোডটিকেই ডিকোড করা সম্ভব হয়। তবে আশ্চর্যেরর বিষয় এই কোডটিকে ডিকোড করে বাইনারি কোডটির অর্থ দাড়ায় মৃত্যু।

Bitcoin

বর্তমান সময়ে বিটকয়েন আমাদের কাছে বহুল পরিচিত একটি নাম। বিটকয়েন আপনি কাগজে প্রিন্ট বা কয়েনে খোদাই করা অবস্হায় পাবেন না। এটি হলো একটি ডিজিটাল ইন্টারনেট কারেন্সি। অন্যসব কারেন্সির মত লেনদেন এর জন্য এটিও অনেক জনপ্রিয়। তবে আসল রহস্য হলো বহুল ব্যবহৃত এই কারেন্সির প্রবর্তক ব্যাক্তি বা কোম্পানি আসলে কে তা আজও অজানা। প্রবর্তকবিহীন একটি কারেন্সি একসময় যার একটির মূল্য ছিল কয়েক সেন্ট, এখন তার একটির মূল্য হয়েছে হাজার ডলার, যা সত্যিই আশ্চর্যের একটি বিষয়।

তবে সাতোশী নাকামোটো বিটকয়েন এর আসল প্রযুক্তি ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যাখা দিয়ে প্রথম একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন। তার আগে বিটকয়েনের ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কেউ কিছু এভাবে উন্মোচন করেনি। তাই ধারনা করা হয় যে, বিটকয়েন তৈরির পেছনে সাতোশী নাকামোটোর হাত রয়েছে। আর ঠিক এভাবে রহস্যের জালে আচ্ছাদিত বিটকয়েন ইন্টারনেটের অন্যতম একটি অজানা রহস্য।

ইন্টারনেট দিনদিন যত সমৃদ্ধ হচ্ছে,তেমনিভাবে উঠে আসছে এরকম নানারকম তথ্য। এই ছিল ইন্টারনেটের ৫টি অজানা রহস্য দিয়ে আজকের আর্টিকেল। আশা করি আর্টিকেলটি থেকে কিছু জানতে পেরেছেন এবং আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আপনার কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই নিচে জানান। নিয়মিত থাকুন ওয়্যারবিডিের সাথে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button