Technology

আপনার হার্ডড্রাইভ এর হারানো স্পেস গুলো যায় কোথায়?

কেনো হার্ডড্রাইভ সবসময় ছোট হয়?

বন্ধুরা আমি আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আমি জানি এই পোস্টটি যারা পড়ছেন, আপনাদের সকলের মনে এই প্রশ্ন একবার হলেও এসেছিলো! আপনি দোকানে গেলেন হার্ডড্রাইভ কিনতে, হার্ডড্রাইভ এর গায়ে সুন্দর করে লেবেলিং করা আছে 1TB বা 500GB। কিন্তু হার্ডড্রাইভ টি যখন কম্পিউটার এ প্রবেশ করালেন তখন কি দেখলেন? আপনার 1TB হার্ডড্রাইভ টি হয়ে গেলো ৯৩১ গিগাবাইটস। শুধু এটাই না, প্রত্যেকটা সময় প্যাকেটের গায়ের লেবেলিং আর প্রাপ্ত স্পেস এক হয় না। অনেকে বলে যে আসলে সিস্টেম কিছু জায়গা রিজার্ভ করে রাখে। আবার অনেকে বলে যে প্রস্তুতকারি কোম্পানিরা মিথ্যা প্রচার করেন। আসলে এই কথা গুলো কি ১০০% ঠিক? চলুন এর উত্তর বের করার চেষ্টা করি।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

কেনো হার্ডড্রাইভ সবসময় ছোট হয়?

 

আপনি যখন হার্ডড্রাইভ কেনেন তখন লখ্য করে দেখেছেন যে তারা তাদের লেবেলিং এ হার্ডড্রাইভ এর সাইজ গিগাবাইট এবং টেরাবাইট এ প্রকাশ করে থাকেন। যেমন ১ টেরাবাইট অথবা ৫০০ গিগাবাইটস। এখন নিয়ম অনুসারে ১ টেরাবাইট = ১০০০ গিগাবাইটস এবং ১ গিগাবাইট = ১০০০ মেগাবাইটস। আসলে উইন্ডোজ যে পদ্ধতি তে হার্ডড্রাইভ স্পেস পরিমাপ করে তা হলো মেবিবাইট এবং গেবিবাইট। কি আশ্চর্য হলেন তাই না? অনেকে তো এই নাম জন্মের পরে একবার ও শোনেন নাই।

আমরা জানি গিগাবাইট কে প্রকাশ করা হয় বড় হাতের “GB” এবং  মেগাবাইট কে প্রকাশ করা হয় বড় হাতের “MB” দিয়ে। কিন্তু মেবিবাইট এবং গেবিবাইট এর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। মেবিবাইট কে প্রকাশ করা হয় বড় হাতের “M” ছোটো হাতের “i” এবং বড় হাতের “B” দ্বারা। Mebibytes = MiB। আর গেবিবাইট কে প্রকাশ করা হয় বড় হাতের “G” ছোটো হাতের “i” এবং বড় হাতের “B” দ্বারা। Gibibytes = GiB। আসলে উইন্ডোজ পরিমাপ করে মেবিবাইট এবং গেবিবাইট এর পরিমান কিন্তু প্রদর্শন করে গিগাবাইট এবং মেগাবাইট হিসেবে। আসলে এই বিষয়ের পেছনে অনেক হেচকি আছে।

চলুন প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করি! আগেই যা বললাম উইন্ডোজ আসলে [গেবিবাইট GiB] কে প্রকাশ করে [গিগাবাইট GB] হিসাবে এবং [মেবিবাইট MiB] কে প্রকাশ করে [মেগাবাইট MB] হিসেবে। তাহলে কি বুঝলেন? ১ টেরাবাইট হার্ডড্রাইভ ৯৩১ গিগাবাইটস হয় ক্যামনে? আসলে এটি সত্যি নয়! আসলে ১ টেরাবাইট [TB] = ৯৩১ গেবিবাইটস [GiB], ৯৩১ গিগাবাইটস [GB] না। কেনোনা, গেবিবাইট [GiB] গিগাবাইট [GB] এর তুলনায় বড়।

আপনি যদি আপনার ১ টেরাবাইট [TB] হার্ডড্রাইভ টি Linux এ প্রবেশ করান তাহলে দেখতে পাবেন এটি ১০০০ গিগাবাইটস [GB] প্রকাশ করছে। কেনোনা আগেই বলেছি যে, ১ টেরাবাইট = ১০০০ গিগাবাইটস। অনেকে মনে করেন যে ১ গিগাবাইট [GB] = ১০২৪ মেগাবাইটস [MB]। আসলে, ১ গেবিবাইট [GiB] = ১০২৪ মেবিবাইটস [MiB]। ১ গেবিবাইট [GiB] ১ গিগাবাইট [GB] এর চেয়ে ১.০৭৪ গুন বড়। অর্থাৎ, ১ গেবিবাইট [GiB] = ১.০৭৪ গিগাবাইট [GB]।

এখন অংক করে সমাধান করার চেষ্টা করি

 

যদি ১ গেবিবাইট [GiB] ১ গিগাবাইট [GB] এর চেয়ে ১.০৭৪ গুন বড় হয় এবং ১ টেরাবাইট = ১০০০ গিগাবাইটস হয় তাহলে, ১০০০ কে ১.০৭৪ দিয়ে ভাগ করলে পরিমান আসে ৯৩১।

১০০০ গিগাবাইটস [GB] / ১.০৭৪ [GB/১GiB] = ৯৩১ গেবিবাইটস [GiB]। তো দেখলেন তো ৯৩১ গেবিবাইটস [GiB] কে উইন্ডোজ ৯৩১ গিগাবাইটস [GB] হিসেবে প্রদর্শন করে। আসলে, হার্ডড্রাইভ প্রস্তুতকারি কোম্পানিরা মিথ্যা বলেন না। তারা আসল GB ই উল্লেখ করে থাকেন কিন্তু উইন্ডোজ ভুল পরিমাপ করে। আপনি যদি Linux ব্যবহার করেন তাহলে আসল ত্রুটিটা ধরতে পারবেন।

গিগাবাইট এবং মেগাবাইট নিয়ে কিছু ভুল ধারনা

আগেই বলেছি অনেকে মনে করেন যে ১ গিগাবাইট [GB] = ১০২৪ মেগাবাইটস [MB]। আসলে, ১ গেবিবাইট [GiB] = ১০২৪ মেবিবাইটস [MiB]। আসলে এই ভুল পরিমাপটি র‍্যাম [RAM] এর ক্ষেত্রে ও লক্ষ করা যায়। র‍্যাম [RAM] এর গায়ে বা বক্সে লেবেলিং করা থাকে 4 GB তারপর তা উইন্ডোজ পিসি তে লাগানোর পর প্রদর্শন করে 4096 MB। যেখানে কিনা প্রদর্শন করার কথা 4000 MB। উইন্ডোজ আসলে এবার ও মেবিবাইটস [MiB] কে মেগাবাইটস [MB] হিসেবে প্রকাশ করছে।

 

তারা সম্ভবত এটা করে কেনোনা অনেক মানুষ মেবিবাইট এবং গেবিবাইট নাম এর সাথে পরিচিত না। যেমন আমিই মেগাবাইট ও গিগাবাইট এ অভ্যস্ত। তবে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আচ্ছা ঠিক আছে তবে উইন্ডোজ কেন এই মেবিবাইট এবং গেবিবাইট এর ইউনিট মেগাবাইট ও গিগাবাইট এ প্রকাশ করছে? আসলে এর উত্তর অনেক সহজ। আসলে গিগা হলো Prefix মানে বিলিয়ন। গিগা- = বিলিয়ন = ১০^৯ । এবং সেই হিসেবে মেগা হলো মিলিয়ন। মেগা- = মিলিয়ন = ১০^৬। তাহলে গিগা হলো বিলিয়ন বাইটস এবং মেগা হচ্ছে মিলিয়ন বাইটস। কিন্তু মেবিবাইট এবং গেবিবাইট এর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। কারন মেবিবাইট এবং গেবিবাইট বাইনারি গুণিতক। মানে মেবিবাইট = ২^২০ বাইটস এবং গেবিবাইট = ২^৩০ বাইটস। তাহলে এখন মেবিবাইট এর ক্ষেত্রে ২ কে ২০ এবং গেবিবাইট এর ক্ষেত্রে ২ কে ৩০ বার এর নিজের সাথে গুন করলে সুন্দর রাউন্ড ফিগার আর থাকে না। যেমন তা বিলিয়ন বাইটস এবং মিলিয়ন বাইটস এর ক্ষেত্রে হয়। যাই হোক এই প্রব্লেম শুধু উইন্ডোজ এর সাথে। আপনি যদি ম্যাক বা লিনাক্স ব্যবহার করেন তো বুঝতে কোনো সমস্যাই হবে না।

শেষ কথা

পোস্টটি দেখতে একটু ঘিজিমিজি লাগলেও মূল বিষয়টি কিন্তু অতি সহজ এবং আশা করছি অনেক সহজ ভাষায় আপনাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যদি গাণিতিক বিষয় গুলো না বুঝতে পারেন, তবে ঠাণ্ডা মাথায় ধিরেধিরে কয়েকবার পড়ুন। আশা করি তাতে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর হাঁ, পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করুন, কেনোনা এই সমস্যাটি আমাদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কোন প্রকারের প্রশ্নে অবশ্যই কমেন্ট করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button