টেলিগ্রাম কি ? এই অ্যাপ এর সুবিধা, ইতিহাস এবং মুখ্য বৈশিষ্ট্য
কিভাবে টেলিগ্রাম ব্যবহার করা যায় ?
এই টেলিগ্রাম হল এক ধরণের অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ।
যেটি অনেকটা ফেসবুক মেসেঞ্জার বা হোয়াটস্যাপের মতো কাজ করে থাকে।
অর্থাৎ, মোবাইল ডেটা, হটস্পট বা ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে তবেই আপনি এই অ্যাপটির সাহায্যে কাউকে বার্তা পাঠাতে পারবেন, তবে অবশ্যই সে ব্যক্তির ও আপনার একটা করে টেলিগ্রাম প্রোফাইল থাকতে হবে৷
এটি একটি ক্লাউড-ভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ।
আর, এই অ্যাপের দাবি হল যে, এটি নিরাপত্তা ও হাই-স্পিড মেসেজিং পারফর্মান্স দেওয়ার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই জনপ্রিয় ক্রস-প্ল্যাটফর্ম মেসেজিং অ্যাপটি এর বর্ধিত গোপনীয়তা ও এনক্রিপশন বৈশিষ্ট্যের জন্যে মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও, এটি বিশাল বড় গ্রুপ চ্যাট বৈশিষ্ট্যগুলোও সমর্থন করে।
ফেসবুক মেসেঞ্জার আর হোয়াটস্যাপ-এই দুটি অ্যাপ একই কোম্পানির মালিকানাধীন হলেও, টেলিগ্রামের সাথে অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কোনোরকম যোগসূত্র নেই।
যা অনেক মানুষেরই কাছেই এর পরিষেবাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এই অ্যাপটির সংস্করণ প্রতিটি জনপ্রিয় মাল্টিপ্ল্যাটফর্মের সাথেই কাজ করে, যেমন- অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ম্যাক, উইন্ডোজ, ও লিনাক্স।
এমনকি, অ্যাপ ব্যবহার না করেও আপনি ওয়েব ব্রাউজার থেকেও এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন।
টেলিগ্রামের মুখ্য বৈশিষ্ট্য:
এই টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপটির বেশ কতগুলো প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে; সেগুলো হল-
১. এই বিনামূল্য অ্যাপটি অতি দ্রুত বার্তা দেওয়া-নেওয়া করতে সক্ষম ও ব্যবহার করা সহজ ও নিরাপদ।
২. আপনি আপনার সমস্ত ডিভাইসে একই সময়ে টেলিগ্রাম ব্যবহার করতে সক্ষম।
৩. আপনার বার্তাগুলো আপনার যে কোনো ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটে কোনো ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত সিঙ্ক হয়ে যায়।
৪. এখানে বর্ধিত এনক্রিপশন ও গোপনীয়তাসহ ক্রস-প্ল্যাটফর্ম মেসেজিং পরিষেবার প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে।
৫. এর বার্তার উপর সাধারণত ক্লায়েন্ট-টু-সার্ভার এনক্রিপশন দেওয়া থাকে।
তবে, গোপন চ্যাট বার্তাগুলোর গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে জরুরি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন করা হয়ে থাকে।
৬. এই মেসেজিং অ্যাপটি গ্রুপ চ্যাট ও সেলফ-ডেস্ট্রাকটিং মেসেজগুলোও সমর্থন করে।
৭. আপনার ডিভাইসে এই অ্যাপটি ১০০ MB-এর থেকেও কম জায়গা নেয়।
তাই, আপনি আপনার ফোন মেমরি থেকে কিছু ডিলিট না করেই আপনার সমস্ত মিডিয়া এর ক্লাউড স্টোরেজে রেখে দিতে পারেন।
৮. টেলিগ্রামের মাল্টি-ডেটা সেন্টার স্ট্রাকচার ও এনক্রিপশন অনেক দ্রুত ও নিরাপদ।
৯. এটির প্রাইভেট মেসেজিং পরিষেবাটি চিরকাল বিনামূল্যই থাকবে।
যাতে, কোনো সাবস্ক্রিপশন ফি ও বিজ্ঞাপন ছাড়াই আপনি এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
টেলিগ্রামের ইতিহাস:
টেলিগ্রাম অ্যাপ সম্পর্কে বলে গেলে বলা যায় যে, এটি প্রথম শুরু হয় ২০১৩ সালে।
নিকোলাই ও পাভেল দূরভ নামের দুই রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভাই এই মেসেজিং অ্যাপটির প্রতিষ্ঠা করেন।
পাভেল টেলিগ্রামকে আর্থিক ও আদর্শিকভাবে সমর্থন করেন; আর নিকোলাই এর প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে নজর রাখেন।
টেলিগ্রামকে তৈরী করতে নিকোলাই একটি অনন্য কাস্টম ডেটা প্রোটোকল তৈরি করেছেন।
যে কারণে, এই অ্যাপটি একাধিক ডেটা-সেন্টারের সাথে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে।
এর ফলে, টেলিগ্রাম একটি যথেষ্ট উন্মুক্ত, সুরক্ষিত ও অপ্টিমাইজড অ্যাপ হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে, সারা বিশ্বের প্রায় ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সক্রিয়ভাবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করছে।
প্রথমে, কোম্পনিটি রাশিয়ার অধীনে থাকলেও; পরবর্তীতে, এর সিইও পাভেল দূরভ ২০১৭ সালে এই কোম্পানিটিকে আরবে নিয়ে যান ও তিনি ২০২১ সালে ফরাসি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
টেলিগ্রামের সুবিধা:
এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারের বেশ কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে, যা নিচের পয়েন্টগুলোতে আলোচনা করা হল –
১. যেখানে হোয়াটস্যাপ মাত্র ২৫৬ জনের গ্রুপ তৈরী করতে সাপোর্ট করে; সেখানে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ২০০,০০০ জন মানুষের বড় গ্রুপ তৈরী করতে পারে।
২. এর সেলফ-ডেস্ট্রয়িং মেসেজ ও প্রাইভেট চ্যাট অপসন আপনাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাসহ চ্যাট করার সুবিধা দেয়।
৩. উইন্ডোস, লিনাক্স, এন্ড্রোইড কিংবা আইএসও, এই অ্যাপটি নানান ধরণের প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ।
অন্যদিকে, আপনি একই সময়ে মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ; এমনকি, ওয়েব ব্রাউসার থেকেও এটিকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
৪. হোয়াটস্যাপ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বার্ষিক ফি চার্জ করলেও, টেলিগ্রাম কিন্তু সারা পৃথিবীতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিষেবা দেয়।
৫. স্লো ইন্টারনেট থাকলেও, এখানে বার্তা ও যেকোনো বড় ফাইল পাঠানো খুবই সহজ ও দ্রুত সম্ভবপর হয়।
৬. গোপনীয়তায় বজায় রাখা এই অ্যাপের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
এখানে প্রেরক ও গ্রাহক তরফের ব্যবহারকারীরা কোনোরকম ক্লু না রেখেই নিজেদের মেসেজ সম্পূর্ণভাবে ডিলিট করে দিতে পারবেন।
৭. টেলিগ্রাম ১.৫ GB সাইজ পর্যন্ত ফাইল ট্রান্সফার করতে সক্ষম, যেখানে হোয়াটস্যাপ মাত্র ১৬ MB পর্যন্ত ফাইল দেওয়া-নেওয়া করতে পারে।
৮. এখানে আপনার পাঠানো ও গ্রহণ করা সমস্ত ফাইল ও তথ্য ক্লাউড স্টোরেজে সেভ হয়।
মানে, এটি আপনার মোবাইল ফোনের মেমোরিতে কোনোরকমের তথ্য স্টোর করে না।
৯. এই অ্যাপটি মূলত ওপেন সোর্স।
তাই, ডেভেলপাররা স্বাধীনভাবে এটিকে উন্নত করে, নতুন ফাংশন ও বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে পারে; তাই এটি প্রতিনিয়তই আপডেট হতে থাকে।
টেলিগ্রাম চ্যানেল কি ?
অসংখ্যক দর্শকদের কাছে আপনার সর্বজনীন বার্তা সম্প্রচার করার জন্যই মূলত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো এই অ্যাপে আনা হয়েছে।
ঠিক হোয়াটস্যাপ ব্রডকাস্ট গ্রুপ-এর মতো আপনি টেলিগ্রাম চ্যানেল ব্যবহার করে, একই বার্তা একসাথে প্রচুর সংখ্যক লোককে পাঠাতে পারবেন।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে সীমাহীন পরিমাণে গ্রাহকদের যুক্ত করা যায়; আর কেবলমাত্র অ্যাডমিনদেরই এই চ্যানেলে পোস্ট করার অধিকার থাকে।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোর ক্ষেত্রে বার্তাগুলোর পাশে চ্যানেলের নাম এবং ফটো দেখায়।
কিভাবে টেলিগ্রাম ব্যবহার করা যায় ?
যেকোনো মেসেজিং অ্যাপের মতোই আপনাকে টেলিগ্রাম ব্যবহার করার জন্যে প্রথমে এটিকে আপনার ডিভাইসে ইনস্টল করতে হবে।
আপনি এটিকে গুগলের প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন।
এর লোগোটিতে নীল রঙের উপর সাদা রঙের পেপার প্লেন বা কাগজের বিমানের ছবি আঁকা থাকে।
ডাউনলোড হয়ে গেলে এর ওয়েলকাম স্ক্রীনটিকে আপনাকে ফ্লিপ করতে হবে।
এরপর, টেলিগ্রামে আপনার ফোন নম্বর দিয়ে, আপনার নাম, সংশ্লিষ্ট তথ্য যুক্ত করে ও একটি ছবি দিয়ে প্রোফাইল তৈরী করতে হবে।
পরবর্তী ধাপে, যেসব বন্ধুরা টেলিগ্রামে রয়েছে, তাদের আপনার মোবাইলে সেভ করা নম্বর ব্যবহার করে খুঁজে বের করে, আপনার পছন্দমতো চ্যাট শুরু করতে হবে।
এখানে ভিডিও ও অডিও কলিং-এর সুবিধাও রয়েছে।
স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও কম্পিউটারে এটিকে ব্যবহার করা যায়।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা বুঝলেন তো, টেলিগ্রাম অ্যাপ কি এবং এর সুবিধা গুলোর বিষয়ে ?
আমাদের আজকে টেলিগ্রাম নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
এই Telegram apps এর সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন, সে সম্পর্কে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!
আপানারা টেলিগ্রাম অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন এখানে – Download Telegram App