প্রোগ্রামার এর চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অসাধারণ পারিশ্রমিকের পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ সব সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রোগ্রামারগণ। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রোগ্রামিংকে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এই পোস্টে জানবেন প্রোগ্রামিং কিভাবে শিখবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্রোগ্রামিং কি?
প্রোগ্রামিং শেখার আগে প্রোগ্রামিং কি সে সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রোগ্রামিং হলো মূলত কম্পিউটারকে জানানো কিভাবে কোনো কাজ করতে হয়। মজার ব্যাপার হলো কম্পিউটার কিন্তু নিজ থেকে ভাবতে পারেনা, শুধুমাত্র প্রদত্ত কমান্ড অনুসরণ করে কম্পিউটার কাজ করতে পারে। অর্থাৎ ঠিক যেভাবে কম্পিউটারকে বলা হবে, সেভাবে কম্পিউটার কাজ করবে। কম্পিউটার বাইনারি ভাষা বুঝে ও চাইলে বাইনারিতে কোড লেখা যেতে পারে। তবে বাইনারিতে কোড লেখা অনেক কঠিন, তা প্রচুর সময় নিবে।
কম্পিউটার ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি সহজ করে দেয় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দ্বারা খুব সহজে যেভাবে আমরা বুঝি ও পরে কম্পিউটার যেভাবে বুঝতে পারে সেভাবে প্রোগ্রাম বা নির্দেশাবলী লেখা যায়।
প্রোগ্রামিং কেনো শিখবেন?
বর্তমানে প্রোগ্রামিং একটি উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা, যার ফলে প্রোগ্রামিং করে বড় অংকের অর্থও আয় করা যায়। প্রোগ্রামিং একবার শেখা হয়ে গেলে এই স্কিল ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি অনেক অসাধারণ কাজ করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রোগ্রামিং বেশ ডিমান্ডিং একটি স্কিল।
এসবের পাশাপাশি কম্পিউটারের অনেক কাজ বেশ দ্রুত করা যায় প্রোগ্রামিং জানলে। প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে এই অসাধারণ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। প্রোগ্রামিং জানলে কোনো সমস্যার সমাধান নিজে তৈরী করতে পারবেন। কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য অ্যাপ খুঁজতে অ্যাপ স্টোরে ঘুরতে হবেনা। আপনার সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারবেন আপনার দক্ষতা ব্যবহার করে। অর্থাৎ আর্থিক ও ব্যক্তিগত, উভয় ক্ষেত্রে সুযোগসুবিধা পাবেন প্রোগ্রামিং জানলে। এই দক্ষতা দিয়ে নিজের প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও চালু করতে পারবেন।প্রোগ্রামার যে ধরনের কাজ করেন
বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও অ্যাপের জন্য কোড লিখে থাকেন একজন প্রোগ্রামার। শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও আসলে কিন্তু এই কাজের বিস্তৃতি অনেক বিশাল। কোডিং বা প্রোগ্রামিং শেখা এই কারণে অনেকের কাছে বেশ কঠিন একটি বিষয় মনে হতে পারে।
ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে স্ট্রিমিং অ্যাপ, দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামারগণ তৈরী করে থাকেন। প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোগ্রামারের প্রয়োজন রয়েছে, অর্থাৎ একজন প্রোগ্রামার হিসেবে আপনার কাজের কোনো অভাব হবেনা। একজন প্রোগ্রামার যেসব কাজ করে থাকেন সেগুলোর উদাহরণ হলোঃ
- নতুন সফটওয়্যার এর জন্য কোড লেখা ও টেস্ট করা
- ইতিমধ্যে থাকা প্রোগ্রাম আপডেট করা
- প্রোগ্রামে থাকা সমস্যার সমাধান করা
- সফটওয়্যারের সিকিউরিটি পরীক্ষা করা
- ইতিমধ্যে থাকা সফটওয়্যার মেইনটেইন করা
কিভাবে প্রোগ্রামিং শিখবেন?
প্রোগ্রামিং কিন্তু বেশ মজার একটি বিষয়। নিজের ক্রিয়েটিভিটি উন্মুক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যারিয়ারের অপশন প্রদান করে এই দক্ষতা। আপনি যদি প্রোগ্রামিং শিখতে চান, তাহলে নিম্নে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো ধাপে ধাপে গ্রহণ করুন।
প্রোগ্রামিং শেখার প্রথম ধাপ হলো নির্দিষ্ট একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ সিলেক্ট করা। প্রোগ্রামিং এর মূলে রয়েছে এই প্রোগ্রামিং এর ভাষা। কম্পিউটার বুঝতে পারবে এমন কমান্ড তৈরী করা হলো প্রোগ্রামিং এর মূল উদ্দেশ্য। অনেক ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ রয়েছে, যেখান থেকে আপনার পছন্দের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নির্বাচন করুন। কোনো ল্যাংগুয়েজ যদি আপনার পছন্দ না হয়, তবে তা ছেড়ে পরে নতুন ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারেন, এতে কোনো সমস্যা নেই।
শুরুতে C, C++. C# ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখার চেষ্টা করুন। অনেক জনপ্রিয় কম্পিউটার সফটওয়্যার ও গেম এসব ভাষা ব্যবহার করে তৈরী হয়ে থাকে। C ও C++ নতুনদের জন্য হলেও এগুলা শেখা তেমন সহজ নয়। তবে এই দুইটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারলে অনেকটা প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ হয়ে যাবে, কেননা অন্যান্য অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ মূলত এসব ল্যাংগুয়েজ এর বিভিন্ন আদল মাত্র। C ও C++ বেশ জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, তবে C# (সি শার্প) ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
উল্লেখিত ভাষা বা ভাষাগুলো শেখার পর জাভা ও জাভাস্ক্রিপ্ট শিখতে পারেন। ওয়েব প্লাগিন তৈরীতে জাভাস্ক্রিপ্ট ও মোবাইল অ্যাপ তৈরীতে জাভা ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই দুইটি ভাষার চাহিদা অনেক বেশি, তাই এই দুইটি ভাষা শিখতে পারলে কাজে আসতে পারে। তবে একই ধরনের নাম দেখে এই দুইটিকে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাববেন না, জাভাস্ক্রিপ্ট ও জাভা সম্পূর্ণ দুইটি আলাদা ভাষা
উল্লেখিত ভাষাগুলো শেখার পর পাইথন (Python) শিখতে পারেন। অনেকে সবার শুরুতে পাইথন শেখার মাধ্যমে প্রোগ্রামিং শেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উল্লেখিত অন্য ভাষাগুলোর চেয়ে পাইথন শেখা অপেক্ষাকৃত সহজ। যারা মাত্র শুরু করছেন, তাদের শেখার জন্য এই জনপ্রিয় ভাষা ভালো হতে পারে। যেকোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারবেন ইউটিউব, বিভিন্ন ব্লগ এবং অনলাইন কোর্সের ওয়েবসাইটগুলোতে।
এছাড়া PHP শিখতে পারেন, যা মূলত একটি ওয়েব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। জনপ্রিয়তার কারণে এই ভাষা সম্পর্কিত টিউটরিয়াল ইন্টারনেটে বেশ সহজলভ্য।
তবে আপনার প্রোগ্রামিং এর দক্ষতা শুধুমাত্র উল্লেখিত ভাষাগুলো মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি চাইলে উল্লেখিত ভাষাগুলোর বাইরেও বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে আপনার দক্ষতাকে চরম লেভেলে নিয়ে যেতে পারে। যত বেশি জানবেন, প্রোগ্রামিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার বিষয়টি তত সহজ হবে।
তবে উল্লেখিত সকল ল্যাংগুয়েজ না শিখে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ভাষা শিখেও কাজ করা সম্ভব। যেমনঃ আপনি শুধু ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডেভলাপ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে PHP ও জাভাস্ক্রিপ্ট জানলে অনেক এগিয়ে থাকবেন। আবার ওয়েব অ্যাপ বানাতে চাইলে জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে উল্লেখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধাপে ধাপে শিখতে পারলে প্রোগ্রামিং ভালোভাবে সম্পূর্ণভাবে শেখা যাবে। পরবর্তী সেকশনে এই সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পেয়ে যাবেন। একটি বিখ্যাত ফ্রি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্স হচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএস৫০।
কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ কোথায় কাজে লাগে?
চলুন খুব দ্রুত জেনে নেওয়া যাক কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ কোন কোন ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- সুইফট – আইওএস অ্যাপ ডেভলপমেন্ট
- জাভা, কোটলিন – অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- জাভাস্ক্রিপ্ট, এইচটিএমএল, সিএসএস, পিএইচপি – ওয়েব ডেভলপমেন্ট
- পাইথন, আর, ম্যাটল্যাব – ডাটা, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইন্স রিসার্চ
- সি++, সি# – গেম ডেভলপমেন্ট
উল্লেখিত সেকশনে আমরা শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং ও এর ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে সহহ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার লক্ষ্যের সাথে উক্ত ল্যাংগুয়েজ সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা বিবেচনা করে দেখুন। একটি বিখ্যাত ফ্রি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্স হচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএস৫০।