Technologyইন্টারনেট

নেট নিউট্রালিটি কি? ওপেন ইন্টারনেট আজ ধ্বংসের পথে!

নেট নিউট্রালিটির প্রয়োজনীয়তা

শব্দটি শুনতে আজব মনে হলেও, এটাই আমাদের ইন্টারনেটের ব্যস্তবতা। ইন্টারনেট বা নেট নিউট্রালিটি এর বাংলা হচ্ছে “ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা”—যার মানে হচ্ছে; এমন একটি ইন্টারনেট যেখানে কোন ওয়েব কন্টেন্ট অ্যাক্সেস করতে কোন বাঁধা বিপত্তি থাকবে না। কিছু ডাউনলোড করতে কোন বাঁধা থাকবে না, কিছু আপলোড করতে কোন বাঁধা থাকবে না, এবং যোগাযোগ মাধ্যম যেমন, ইমেইল, চ্যাট, ভিওআইপি কল ইত্যাদিতে বাঁধা থাকবে না। এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস কখনো ব্লক হবে না, কোন সাইট স্লো লোডিং আবার কোন সাইট ফাস্ট লোড নেবে, এমনটা হওয়া চলবে না। নেট নিউট্রালিটির প্রধান অর্থ হচ্ছে, ইন্টারনেটকে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সকল দিক থেকে নিরপক্ষ রাখতে হবে। নিঃসন্দেহে খুব ভালো কথা, তাই না? কিন্তু ইন্টারনেট আবার কার পক্ষ হয়ে গেলো? আর নেট নিউট্রালিটির প্রয়োজনীয়তায় বা কি, কেনোনা কে এর বিপক্ষে? এই আর্টিকেল থেকে সবকিছু শুদ্ধ বাংলায় জেনে নেওয়া যাক…


নেট নিউট্রালিটি

 

উপরের সূচনা প্যারাগ্রাফ থেকেই নিশ্চয় নেট নিউট্রালিটি শব্দের অর্থ এর দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে বুঝে গেছেন। প্রথমে আলোচনা করে নেওয়া যাক উন্মুক্ত ওয়েব সম্পর্কে। একজন সাধারণ ইউজারের কাছে উন্মুক্ত ওয়েব মানেটা কি?—যখন আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েব কানেক্ট করবেন (ইন্টারনেট আর ওয়েব কিন্তু এক জিনিষ নয়!) আপনার অবশ্যই ওয়েবে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস থাকতে হবে; যেমন- আপনি যেকোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবেন, যেকোনো ভিডিও প্লে করতে পারবেন, যেকোনো ফাইল ডাউনলোড করার সুবিধা পাবেন, এবং আপনার যেকোনো মেইল পড়তে পারবেন। আপনি যেকোনো ইন্টারনেট যোগাযোগ সিস্টেম ব্যবহার করে যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারবেন, এতে কোন সরকার বা কোন সার্ভিস প্রভাইডার আপনাকে বাঁধা প্রদান করতে পারবে না। আর এটাই হচ্ছে উন্মুক্ত ওয়েব বা একে উন্মুক্ত ইন্টারনেট ও বলতে পারেন।

এখন “নেট নিউট্রালিটি” এমন একটি শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মাধ্যমে ধরুন গ্রামিন ফোন কোন স্পেশাল শপিং সাইট ভিজিট করার সময় লোডিং স্পীড প্রাধান্য দিতে পারবে না। সকল সাইট লোড হতে সমান স্পীড প্রদান করতে হবে। কোন ওয়েব সাইট বা কোন অনলাইন অ্যাপস এর জন্য সস্তা ইন্টারনেট ডাটা প্যাক আর বাকী অ্যাপ গুলোর জন্য বেশি দামের ডাটা প্যাক এমনটা করা যাবে না। ইন্টারনেটের সকল কন্টেন্টের জন্য একই দাম হতে হবে, কোন সার্ভিসে বেশি টাকা চার্জ করা যাবে না। যেমন প্রায় সব অপারেটর রা ফেসবুকের জন্য কম দামের ডাটা প্যাক বেড় করে রেখে। আবার সবাই ফেসবুককে ফ্রী করে দিয়েছে। ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রোজেক্ট ফ্রী ফেসবুক প্রদান করছে। এখন মানুষ যদি কোন ওয়েবসাইট ফ্রী ভিজিট করতে পারে, তাহলে অবশ্যই তো সে টুইটার টাকা দিয়ে ভিজিট করবে না, তাই না? আবার অনেক ঢাকার অনেক ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রভাইডার’রা ভিডিও সাইট ইউটিউবের জন্য আলাদা হাই-স্পীড প্রদান করে, কিন্তু যখন অন্য ভিডিও সাইট ভিমেও ভিজিট করতে যাবেন তখন কম স্পীড পাবেন। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার’রা আপনার ইন্টারনেট স্বাধীনতাকে কেড়ে নিচ্ছে, তারা চাচ্ছে আপনি ঠিক সেটাই দেখুন, যারা তারা দেখাতে চায়।

আর এই বিষয় গুলোকে বাঁধা প্রদান করে স্বচ্ছতা আনায় হচ্ছে নেট নিউট্রালিটির কাজ। কেনোনা একজন ব্যবহারকারী সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে, সে কি দেখতে চায়, সেটা কোন সার্ভিস প্রভাইডারের অধীনে হওয়া চলবে না। ইন্টারনেটকে কোন ভাবেই কন্ট্রোল করা যাবে না, সেটা সর্বদা উন্মুক্ত থাকবে—কেনোনা ব্যাস্তবিকভাবে কেউই ইন্টারনেটের মালিক নয়। আপনি হয়তো “ইন্টারনেটের মালিক কে?” এর ব্যাপারে অনেক ভিডিও বা আর্টিকেল পড়ে থাকবেন, যেখানে বড় বড় কোম্পানিদের ইন্টারনেটের মালিক বলা হয়। এটা কিন্তু একেবারেই সত্য নয়। ইন্টারনেট আপনি, আমি, সবাই মিলে তৈরি করছি। লাখো ওয়েবসাইট লাখো সার্ভারে হোস্ট করা রয়েছে, যার মালিক লাখো মানুষ। সার্ভিস প্রভাইডারদের কাছে শুধু সেই সার্ভার কম্পিউটার গুলোর কানেকশন থাকে, কিন্তু সেগুলোর মালিক তারা নয়। তাই অবশ্যই তারা সিদ্ধান্ত নেবে না, আমরা কি দেখবো আর কি দেখবো না।

নেট নিউট্রালিটির প্রয়োজনীয়তা

এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এটি কোন প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। যদি আপনি এটাকে ভেবে না দেখেন, তো অন্যকেউ আপনার ইন্টারনেট স্বাধীনতার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, আপনার অনলাইন এক্টিভিটির উপর কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবে। ইন্টারনেটের উন্নতির জন্য অবশ্যই নেট নিউট্রালিটি প্রয়োজনীয়। আজকের দিনে আকস্মিক ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে গেছে যেটা আগে ছিল না। যদি ইন্টারনেট নিরপেক্ষ না থাকে তো ইন্টারনেটে ক্রিয়েটিভিটি কমে যাবে। অর্থ প্রদান করে প্রমোশন করলে কোন ভিডিও এগিয়ে যায় কিন্তু ব্যাতিক্রম ধর্মী ক্রিয়েটিভ ভিডিও একটি অঝথা প্রমোটেড ভিডিওর পেছনে ঢাকা পড়ে, এটা কি আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়? আবার ধরুন আপনি স্ক্যাইপ ব্যবহার করে কল করতে পছন্দ করেন, বা হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করতে বেশি উপভোগ করেন আপনি, কিন্তু এটাতে আপনার মোবাইল অপারেটর বিজনেস লস হসেবে দেখছে আর আপনার জন্য স্ক্যাইপ ব্লক করে দিল, যাতে আপনি তাদের কল সার্ভিস বাধ্য হয়ে ব্যবহার করেন।

কিন্তু ইন্টারনেট নিউট্রালিটির নীতি অনুসারে কোন অপারেটর এমনটা করতে পারবে না। যদি ইন্টারনেট নিউট্রালিটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে আপনি ইন্টারনেট তো ব্যবহার করবেন, কিন্তু স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলবেন। আপনার আইএসপি আপনাকে যে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে বলবে বা নিষেধ করবে, আপনাকে সেটাই করতে হবে। নেট নিউট্রালিটি নিয়ে আরো বিস্তারিত ভিডিও গুলো আপনি ভিমেও থেকে দেখে নিতে পারেন।

কারা নেট নিউট্রালিটির বিপক্ষে?

পৃথিবীর বৃহৎ কিছু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার এবং সাথে হতে পারে আপনার বর্তমান প্রভাইডারও এই ইন্টারনেট নিউট্রালিটির বিপক্ষে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার’রা মনে করে, তারা এটা ঠিক করে দেবে, তাদের সাবস্ক্রাইবার’রা ইন্টারনেটে কি দেখবে বা কি দেখবে না। তারা যেকোনো সার্ভিস বা ওয়েবসাইটের জন্য ইচ্ছা মতো আপনাকে চার্জ করতে চায় এবং তাদের মতে নেট নিউট্রালিটির অর্থ হচ্ছে তাদের মুনাফাতে লস। তাই তারা ইন্টারনেটে বাঁধা প্রদান করে আপনার অনলাইন স্বাধীনতাকে কেড়ে নিতে চায়।

আপনি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারকে বেশি টাকা প্রদান করছেন, মানে আপনাকে যেকোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার অ্যাক্সেস প্রদান করবে, আর কেউ কম টাকার প্যাকেজ ক্রয় করেছে মানে সে সীমাবদ্ধ ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করবে, তাকে স্পন্সর লিঙ্ক পাঠানো হবে। আপনি যেটা দেখতে চান না, সেটাও আপনাকে দেখতে বাধ্য করা হবে। চিন্তা করে দেখুন গুগল অ্যাডের কথা, আপনি যখন কোন কিছু সার্চ করেন আপনার সামনে স্পন্সর কনটেন্ট গুলো আগে চলে আসে। আপনি হয়তো ভালো হোটেল খোঁজার জন্য সার্চ করলেন, কিন্তু কোন খারাপ সার্ভিস দেওয়া হোটেলও সার্চ রেজাল্টে আগে দেখাবে, কেনোনা তারা গুগলকে বেশি টাকা পে করছে। এতে আপনি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেললেন, আপনার কাছে আপনার চাহিদার জিনিষ এসে পৌঁছালোই না।


যদি নেট নিউট্রালিটি না থাকে, তো ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট স্পন্সর কনটেন্ট দিয়ে ভরে যাবে। আপনি যতোই ইউনিক আইডিয়া নিয়ে কাজ করুণ না কেন, আপনার যদি যথেষ্ট টাকা না থাকে সার্ভিস প্রভাইডারদের প্রভাইড করার মতো, তো আপনি সফল হতে পারবেন না। ছোট ব্যবসা গুলো কখনোয় দাড়াতে পারবে না। আপনার সার্ভিস বেকার হওয়া শর্তেও টাকার জোরে ইন্টারনেটে সেটা ভাইরাল হয়ে যাবে।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং ইন্টারনেট স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে অবশ্যই নেট নিউট্রালিটি অত্যাবশ্যক ব্যাপার। কালের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার এই ইন্টারনেট, যেটা তথ্য ও যোগাযোগ এক্সচেঞ্জকে এতোটা সহজ করেছে, সেটার স্বাধীনতা হারাতে দেওয়া চলবে না। তো নেট নিউট্রালিটি সম্পর্কে আপনার কি ধারণা? আপনি কি মনে করেন, এটি কি থাকা দরকার? নিচে সবকিছু আমাদের কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button