আর্টিকেল

হ্যাশট্যাগ কি এবং এর ইতিহাস

পৃথিবীর সর্বপ্রথম হ্যাশট্যাগ কি ?

হ্যাশট্যাগ কি (Hashtag meaning in Bengali), আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো।

আজকাল ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার এইসব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এই সোশ্যাল মিডিয়া বা ভার্চুয়াল জগতে প্রতিদিন ঘটে চলেছে ছোট-বড় অসংখ্য ইভেন্ট বা ঘটনা।

যেই ঘটনা গুলো এই ভার্চুয়াল জগতে আজীবন স্টোরড বা সঞ্চিত হয়ে থাকছে।

আজকে এই ঘটনা ভাইরাল তো পরশু ওই ঘটনা ট্রেন্ডিং।

আর, এই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের মধ্যেই অতি পরিচিত একটি শব্দ বা টার্মিনোলোজি হল এই ‘হ্যাশট্যাগ’ বা Hashtag.

আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, আদৌ কি এই হ্যাশট্যাগ ? এর মানেই বা কি আর এটি কোথা থেকেই বা এলো, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।

তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, হ্যাশট্যাগ কি ?

হ্যাশট্যাগ মানে কি – (Hashtag meaning in Bengali)

এমনিতে, হ্যাশট্যাগ (Hashtag) কি জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন আদতে এই হ্যাশট্যাগ জিনিসটা কেমন দেখতে ?

আসলে এই ‘#’ চিহ্নটির দ্বারা যুক্ত স্পেস ছাড়া বা অব্যবধানযুক্ত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যখন আমরা একসাথে টাইপ করি বা কোনো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে লিখি তখন সেই শব্দগুলো হ্যাশট্যাগে রূপান্তরিত হয়।

কোনো শব্দগুচ্ছ বা শব্দের শুরুর আগে হ্যাশট্যাগ বা ‘#’ চিহ্নটি যুক্ত করা হয়, আর হ্যাশট্যাগের সাহায্যে কোনো স্পেস বা ফাঁক ছাড়া যখন কোনো শব্দ টাইপ করা হয় তখন ওই শব্দ বা শব্দবন্ধনী নীল রঙে পরিণত হয়ে একটা ওয়েবলিংকে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

এই হ্যাশট্যাগ আসলে কিন্তু হল মেটাডাটা ট্যাগের একটা ধরণ।

এর সাহায্যে যখন হ্যাশট্যাগের দ্বারা তৈরী হওয়া ওয়েবলিংককে আমরা ক্লিক করি বা আলতো চাপ দিই, তখন বিশেষ শব্দগুলো যতগুলো স্থানে ব্যবহার হয়েছে তা একটি আলাদা ওয়েবপেজে খুলে যায়।

যার ফলে আপনি চটজলদি আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো সম্পর্কে খুঁজে পেতে, আপনার টাইপ করা শব্দগুচ্ছের সাথে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে আপনি সেই বিষয় সম্পর্কিত লেখা বা তথ্য গুলো সহজেই পেয়ে যেতে পারবেন।

আশা করছি, হ্যাশট্যাগ কাকে বলে বা হ্যাশট্যাগ এর মানে আপনারা বুঝতেই পেরেছেন।

হ্যাশট্যাগের চিহ্ন বা সিম্বল:

যাকে আমরা হ্যাশট্যাগের চিহ্ন হিসেবে দেখছি, সেটার নাম আসলেই কিন্তু হ্যাশট্যাগ নয়।

এই ‘#’ চিহ্নটির টেকনিক্যাল নাম হল ‘অক্টোথর্প’।

পরবর্তীকালে, এই চিহ্নটিকে ইন্টারনেট দুনিয়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় ট্যাগ বা tag তৈরী জন্যে।

তারপর থেকেই এই চিহ্নটি হ্যাশট্যাগ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়েছে।

এই চিহ্নটি অবশ্য বহু আগে থেকেই পাউন্ডের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত ছিল।

হ্যাশট্যাগের আবিষ্কারক কে ?

ক্রিস্টোফার রিভস মেসিনা প্রথম হ্যাশট্যাগের ধারণাটি সর্বসমক্ষে আনেন।

তিনি একজন মার্কিন ব্লগার, বক্তা ও প্রোডাক্ট কনসালটেন্ট।

২০০৭ সালের একটি টুইটে, মেসিনা হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে টুইটারে বার্তা, ট্রেন্ড এবং ইভেন্টগুলোকে ভার্টিকাল ও এসোসিয়েশনাল গ্রুপিং করার বা একত্র করার প্রস্তাব করেছিলেন।

এই ধরণের মেটাডেটা ট্যাগ ব্যবহার করার উদ্দেশ্য ছিল ইউসার-জেনারেটেড বা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ট্যাগগুলো তৈরী করতে দেওয়া, যাতে অন্যান্য ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই একটি নির্দিষ্ট থিম বা বিষয়বস্তুর সাথে জুড়ে থাকা ট্যাগের সাহায্যে সেই বিষয়ের তথ্য বা বার্তাগুলো তাড়াতাড়ি খুঁজে পায়।

আসলে, এই হ্যাশ চিহ্ন (#) হল কোনো শব্দ বা বাক্যাংশের শুরুতে ব্যবহৃত একটা চিহ্ন যা ব্যবহারীকারীদের সহজেই এক বা একাধিক শব্দ ব্যবহার করে কোনো ধরণের কোনো কোডিং ছাড়াই ওয়েবলিংক তৈরী করে দিতে পারে।

আর, পরবর্তীতে যাতে অন্যান্য ব্যবহারকারীরা সেই একই ট্যাগ বা ট্যাগের মধ্যে থাকা কীওয়ার্ড বা আগ্রহের বিষয় ব্যবহার করে কিংবা খোঁজার সময় যাতে দ্রুত সেই ট্যাগ খুঁজে পায় তার জন্যেই এই হ্যাশ চিহ্নকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম হ্যাশট্যাগ কি ?

সোশ্যাল মিডিয়া জগতের সবথেকে বড় অবদান কিন্তু এই হ্যাশট্যাগ।

এই হ্যাশট্যাগের ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা কিন্তু কোটি কোটি পোস্টের মধ্যেও আমাদের নিজেদের ট্যাগগুলোকে সহজেই খুঁজে পেতে পারছি, আর এর কৃতিত্বের প্রধান ভাগীদার হলেন মেসিনা।

তিনিই ২৩শে আগস্ট ২০০৭ সালে টুইটারে প্রথম হ্যাশট্যাগ ‘#barcamp’-টি তাঁর একটি পোস্টে ব্যবহার করেছিলেন।

এখানে তিনি জনসাধারণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “গ্রুপ করার জন্য # (পাউন্ড) ব্যবহার করার বিষয়ে আপনি কেমন অনুভব করেন।

যেমন #barcamp [msg?]”

তাই বলা যেতে পারে হ্যাশট্যাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল টুইটারের হাত ধরেই।

হ্যাশট্যাগের ইতিহাস:

মেসিনা এই হ্যাশট্যাগের ধারণাকে জনসমক্ষে আনলেও, ব্লগার স্টো বয়েড প্রথম ২০০৭ সালে তাদের ব্লগ পোস্টে এই ‘#’ চিহ্নটিকে “হ্যাশট্যাগ” বলে অভিহিত করেন৷

সেই সময়ে, যখন কৌতূহলবশত কেউ “হ্যাশট্যাগ” শব্দটি গুগলে খুঁজেছেন, তখন স্টোয়ের ব্লগের এই হ্যাশট্যাগ শব্দটিই তারা প্রথম সার্চ রেজাল্টে দেখেছিলেন৷

পরবর্তীতে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে টুইটার আনুষ্ঠানিকভাবে হ্যাশট্যাগকে তাদের সাইটে গ্রহণ করে এবং কোনো শব্দের সামনে একটি ‘#’-সহ যেকোনো শব্দগুচ্ছ হাইপারলিঙ্কড হয়ে যাবে এমন প্রস্তাব রাখে।

আর, এই পদক্ষেপটিকে আরও জোরদার করতে টুইটার তার হোমপেজে সর্বাধিক জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ দেখানো শুরু করে “ট্রেন্ডিং টপিকস” নাম দিয়ে, যা ব্যবহারকারীদের আকর্ষিত করে।

তবে,টুইটারের অনেক আগেই ১৯৮৮ সালে ইন্টারনেট রিলে চ্যাট (IRC) সর্বপ্রথম হ্যাশ চিহ্নটি সমগ্র নেটওয়ার্ক জুড়ে থাকা গ্রুপ এবং বিষয়বস্তুগুলোকে লেবেল করার জন্য ব্যবহার করেছিল।

হ্যাশ চিহ্ন লেখার ধরণ:

হ্যাশট্যাগ লেখার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, যা মেনে না চললে কোনোভাবেই আপনার লেখা শব্দ থেকে হাইপারলিংক বা ওয়েবলিংক তৈরী হবে না।

তাই, এখানে হ্যাশট্যাগ লেখার পদ্ধতিগুলো ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হল-

১. প্রথমে জানতে হবে, যে একটি হ্যাশট্যাগ হল একটি একক শব্দ।

এটি কোনো শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ, অক্ষর এবং সংখ্যার দ্বারা তৈরী যেকোনো বাক্যাংশও হতে পারে।

২. হ্যাশ চিহ্ন বা ‘#’-টি সবসময় যেসব শব্দগুলোকে আপনি লিংকে পরিণত করতে চাইছেন, সেই বাক্য শুরুর আগেই ব্যবহার করতে হবে।

আর, হ্যাশ চিহ্ন ও প্রথম অক্ষরের মধ্যে কোনো ধরণের স্পেস দেওয়া যাবে না।

৩. যদি একাধিক শব্দ ব্যবহার করা করেন তবে শব্দগুলির মধ্যে কোন ফাঁক বা স্পেস দেওয়া যাবে না।

সেক্ষেত্রে, কেবলমাত্র যে শব্দটির গায়ে ‘#’ চিহ্নটি লেগে থাকবে সেটিতেই লিংক তৈরী হবে।

৪. হ্যাশট্যাগে কোনো স্পেস ছাড়াই সব অক্ষর এবং সংখ্যা একসাথে থাকতে হবে।

৫. আপনি আপনার হ্যাশট্যাগে যতি চিহ্ন বা চিহ্ন ব্যবহার করতে পারবেন না (যেমন, “!”, “,”,”*” ও ইত্যাদি)।

৬. আপনার ব্যবহার করা সংখ্যার সাথে অবশ্যই একটি অক্ষর ব্যবহার করতেই হবে, নাহলে হ্যাশট্যাগগুলো কেবলমাত্র সংখ্যা ব্যবহার করে তৈরী করা যায় না৷

৭. যখন আপনার শব্দগুচ্ছ একসাথে নীল রঙে পরিবর্তিত হবে, তখন বুঝবেন যে আপনার হ্যাশট্যাগটি সফলভাবে তৈরী হয়ে গেছে।

হ্যাশট্যাগের সুবিধা:

হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করার বেশ অনেকগুলি সুবিধা আছে। সেগুলো হল –

১. ব্যক্তিগত ব্যবহার হোক কিংবা ব্যবসার প্রসারের ক্ষেত্রেই হোক, হ্যাশট্যাগ যেকোনো সার্চের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।

একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আপনি একসাথে প্রচুর পোস্টের ফলাফলও নিমেষে দেখে নিতে পারেন।

আবার, এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেই আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বা সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারেন।

কিংবা, এই হ্যাশ চিহ্ন সার্চ করেই একইভাবে অন্যরাও আপনার তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারেন, যা আপনার পরিচিতি কিংবা ব্যবসা বাড়াতে খুবই সহায়তা করে।

২. যখন একজন ব্যবহারকারী হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে তার আগ্রহের পোস্ট দেখেন, তখন তারা হ্যাশট্যাগ দ্বারা খুঁজে আনা একই ধরণের অনেক কনটেন্ট পর পর দেখে থাকেন, তার ফলে জনগণের বারবার দেখার ফলে ধীরে ধীরে আপনার নানাধরণের পোস্টও ট্রেন্ডিং বা ভাইরাল হতে পারে।

৩. হ্যাশট্যাগ প্রায়সময়ই আপগ্রেড বা উন্নত হতে থাকে।

যার ফলে, এই হ্যাশট্যাগ গুলো আরও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকছে।

এর মাধ্যমে খুব দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সামনে আপনি আপনার পছন্দমতো বিষয় সম্পর্কিত তথ্য একসাথে অনেক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে পারছেন৷

৪. স্বতন্ত্র হ্যাশট্যাগগুলো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য খোঁজা সহজ করে তোলে ৷

একটি অনন্য হ্যাশট্যাগ আপনার মেসেজটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং তাদের কাছে হ্যাশট্যাগটিকে মূল্যবান বলেও মনে হতে পারে।

হ্যাশট্যাগ কেন প্রয়োজনীয় ?

আপনি নিজেই কল্পনা করুন, আজকে আমাদের পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করে কোনো না কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের ব্যক্তিগত কিংবা আরও নানান কোটি কোটি তথ্য আপলোড করছেন।

এইবার, এতো পোস্ট বা তথ্যের ভিড় থাকা সত্ত্বেও, কিভাবে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সহজে খুঁজে পেতে পারি?

এই জটিল প্রশ্নেরই সহজ উত্তর হল এই হ্যাশ চিহ্ন বা হ্যাশট্যাগের ব্যবহার।

তাই, আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বে, ব্যবহারকারীরা যাতে তথ্য ওভারলোড হওয়ার ফলে যাতে বিরক্ত না হন, সেই জন্যেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ডিজিটাল শৃঙ্খলতা বজায় রাখার মাধ্যমে, শুধুমাত্র আমরা যেসব তথ্য পেতে চাই তার উপরই ফোকাস করা সম্ভব।

আর, ঠিক এই কারণেই আমাদের মতো সাধারণ ব্যবহারকারীরা টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, গুগল+ এবং পিন্টারেস্টের মতো  সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে ব্যাপকভাবে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে থাকি।

আমাদের শেষ কথা,,

হ্যাশট্যাগ মানে কি বা হ্যাশট্যাগ বলতে কি বোঝায় (What is Hashtag in Bengali) নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

আশা করছি, লেখাটি আপনার পছন্দ হবে এবং পছন্দ হলে অবশ্যই আপনারা তা কমেন্টের মাধ্যমে জানান।

এছাড়া, আর্টিকেলটি সত্যি ভালো লেগে থাকলে, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ গুলোতে কিন্তু অবশই শেয়ার করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button