Technology

কোডিং কি ? কীভাবে কোডিং শেখা যায় – (বিস্তারিত তথ্য)

প্রোগ্রামিংয়ের প্রকারভেদ

প্রগতির সঙ্গে চলতে থাকা বর্তমান যুগে সব কাজই এখন প্রায় অটোমেটিক সিস্টেমে আবদ্ধ।

কোনওদিন ভেবে দেখেছেন কী করে এতো কম সময়ে মানবজাতির বিকাশ হচ্ছে দ্রুত গতিতে? শুধু মাত্র ফোনের একটা ক্লিকেই কী করে হাজির হচ্ছে আপনার পছন্দের খাবার? শুধু তাই নয়, দেশ–বিদেশ থেকে ভিডিও কলও হচ্ছে কোনও ঝামেলা ছাড়াই।

এই সব কারুকার্যের পিছনে আছে টেকনোলজি।

আর এই নতুন নতুন টেকনোলজি কাজ করতে পারে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ও কোডিং–এর মাধ্যমে।

কোডিং (coding) এর ক্যারিয়ার একটি দারুন এবং লাভজনক ক্যারিয়ার যেখানে আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে রোজকার করার সুযোগ পাবেন।

হয়তো কোনো টেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি, ফ্রীলান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন বা নিজের টেক কোম্পানি খুলতে পারবেন।

ভালো করে কোডিং শিখতে পারলে ইনকাম করার সুযোগ প্রচুর।

চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কোডিং মানে কি (what is coding in Bengali) এবং কিভাবে আপনিও কোডিং শিখতে পারবেন।

কোডিং কি – (About coding in Bangla)

কোডিং–কে আমরা অনেক সময় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বলে থাকি। সহজ কথায় বলা যায়, কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষের যোগ স্থাপনের সহজ ভাষা হল কোডিং।

 

কম্পিউটার মানুষের ভাষা বুঝতে পারে না। আমরা কম্পিউটারকে যদি কোনও কাজ করতে বলি তবে, কম্পিউটার বুঝবে শুধু মাত্র ০ ও ১, যা আমরা বাইনারি নম্বর হিসেবে জানি।

কোনও কাজ তাড়াতাড়ি ও ত্রুটি হীন করতে কোডিং–এর ভূমিকা অসীম।

যেমন – ফোনের ক্যালকুলেটরের পেছনে একটি নির্দিষ্ট কোড করা আছে যার জন্য যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা আলাদা রেজাল্ট দেখায়।

সর্বশেষ বলা যেতে পারে, আমরা কম্পিউটারে যা করি এবং দেখি তা সবকিছুই কোডিং–এর ফলাফল।

কোডিং লেখার জন্য অনেক ধরণের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে আছে।

যেমন – সি , সি ++, জাভা, পাইথন ইত্যাদি।

প্রোগ্রামিংয়ের প্রকারভেদ :

প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করি, এই ৩ ধররেন প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন আলাদা আলাদা কাজ আছে।

.  ফাংশনাল প্রোগ্রামিং

মডুলার প্রোগ্রামিং

অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং

চলুন জেনে নেওয়া যাক এদের প্রত্যেকে কীভাবে কাজ করে –

১.  ফাংশনাল প্রোগ্রামিং:

ফাংশনাল প্রোগ্রামিং হল কম্পিউটার সাইন্সের এমন একধরণের প্রক্রিয়া যেখানে কোনও সফটওয়্যার তৈরির জন্য শুধুমাত্র একটি প্যালিনড্রোম ফাংশনের ব্যবহার করা হয়।

এই প্রোগ্রামিং–এর কোনও বাহ্যিক সাইড–ইফেক্ট থাকে না।

উদাহরণ – এলএইএসপি (LISP)

২. মডুলার প্রোগ্রামিং:

এক বা একের বেশি ফাংশনের ব্যবহার করে যে প্রোগ্রামিং তৈরি করা হয় তাকে সহজ কোথায় মডুলার প্রোগ্রামিং বলে। মডুলার প্রোগ্রামিং ব্যবহার করে সাধারণত এপ্লিকেশন তৈরি করা হয়।

যদিও জেনে রাখা ভালো, সমস্ত অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং–ই মডুলার প্রোগ্রামিং হিসাবে কাজ করতে পারে।

উদাহরণ –  জাভা (Java) , সি++( C ++)

৩. অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং:

মডুলার প্রোগ্রামিং–এর আরও উন্নত এবং দ্রুত রূপ হল অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং।

বর্তমানে, এই প্রোগ্রামিং সারা বিশ্বে বিশাল ব্যাপ্তি লাভ করেছে।

অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং যেকোনও প্রোগ্রামিং–এর কাজকে অনেক সহজ ও উন্নত করে তুলেছে।

যদিও এই প্রোগ্রামিং দিয়ে কোনও এপ্লিকেশন তৈরি করেন তবে, আপনাকে ত্রুটিপূর্ণ কোড লিখতে হবে।

কারণ কোনও ত্রুটি এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে থাকলে, কোড রান করবে না অর্থাৎ কোড চলবে না।

প্রতিটি  ফাংশন, কোডের মাঝে স্পেস সব কিছু খেয়াল রাখতে হবে।

উদাহরণ -পাইথন (Python), জাভা (Java) 

কোডিং-এর প্রকারভেদ:

শুধু এপ্লিকেশন তৈরিই নয়, কোডিং করে আপনি ওয়েবসাইট তৈরি, ডিজাইন এবং কোনও এপ্লিকেশনকে বিভিন্ন ভাবে সাজাতে এবং তার রূপ পরিবর্তনও করতে পারেন।

এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোডিং ২ প্রকারের, যথা–

ওয়েব ল্যাংগুয়েজ কোডিং 

উইন্ডোজ কোডিং

ওয়েব ল্যাংগুয়েজ কোডিং:

খুব ভালো কোডিং না শিখেও আপনি ডেভলোপার হতে পারেন এবং ওয়েবসাইট, ব্লগ, ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইন করতে পারেন।

এর জন্য আপনাকে এইচটিএমএল, সি.এস.এস, জাভাস্ক্রিপ্ট ভালো করে শিখতে হবে।

ওয়েব ডিজাইনের মধ্যে আপনি শিখতে পারেন, ওয়েব কনটেন্ট, ওয়েব ক্লায়েন্ট এবং সার্ভার স্ক্রিপ্টিং এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি।

২. উইন্ডোজ কোডিং :

যখন আপনি আপনার ভিবিএ (VBA) প্রজেক্টের সঙ্গে যে কোনও কোড লেখেন, তখন তাকে উইন্ডোজ কোডিং বলা হয়।

উইন্ডোজ কোডিং–এর চাহিদা অনেক বেশি এবং অনেক সুবিধাজনক। সি++, জাভা, সি#, ডট নেট ইত্যাদি কোড লিখতে উইনডোজ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়।

সি এবং সি++ ভালো করে জানা থাকলে সি#, ভিবি ডট নেট শেখা আরও সহজ হয়ে যায়।

ওয়ার্ড, এক্সেল, গেমিং এর মত ভিন্ন সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের কোড লিখতে উইন্ডোজ কোডিং ব্যবহৃত হয়।

ভিবিএ–এর মতো অ্যাকশনস্ক্রিপ্ট লিখতেও এই কোডিং খুব উপযোগী ও দ্রুত।

কীভাবে কোডিং শেখা যায় ?

বর্তমান আধুনিক যুগে কোডিং শেখার জন্য অনেক প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাবেন। যেখানে খুব ভালো ভাবে কোডিং শেখানো হয়।

কিন্তু সবার প্রথম আপনাকে যেকোনও একটি ল্যাংগুয়েজ বেছে নিতে হবে যেখানে আপনি কোডিং করবেন।

যেমন– সি, সি++, জাভা বা অন্যান্য.

কোডিং শেখার পদ্ধতি:

১. প্রথমে যেকোনও একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হবে। যার ভেতর আপনি কোড লিখতে পারবেন।

২. লজিক তৈরি করাই কোডিং–এর মূল কাজ। যার জন্য আপনার তৈরি কোডিং আপনাকে কিছু আউটপুট দেবে।

৩. প্রতিটি আলাদা আলাদা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের আলাদা আলাদা ধরণ বা সিনটেক্স থাকে, যা সম্পূর্ণ কোডকে একটি পূর্ণ গঠন প্রদান করে।

৪. শুধু অনলাইন ক্লাস বা বই পড়ে নয়, কোডিং হল হাতেকলমে শেখার জিনিস। তাই, যে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখছেন এই এপ্লিকেশন ডাউনলোড করে, নিজে নিজে কোড প্রাকটিস করুন।

৫. যদি আপনার কোডিং করতে কোথাও ভুল হয় তবে, “error” দেখিয়ে প্রোগ্রামের ভুল দেখিয়ে দেবে আপনার এপ্লিকেশন।

ইংরেজিতে কোডিং শিখুন:

কোডিং আপনি কোনও জায়গায় ভর্তি না হয়েও শিখতে পারেন। তার জন্য নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট গুলি অনুসরণ করতে পারেন।

শুধু ইংরেজিতেই নয় বাংলাতেও কিছু YouTube চ্যানেল আছে যেখানে আপনি কোনও টাকা ছাড়াই কোডিংএ পারদর্শী হতে পারেন।

১. Programming Hero

২. Geeks for geeks

৩. W3Schools Online Tutorials

৪. Hacker rank

৫. Python tips and trick

প্রোগ্রামিং শেখা কেন প্রয়োজন ?

বর্তমানে ইনফরমেশন টেকনোলজির দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে তাই কোডিং ও প্রোগ্রামিং–এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে একজন দক্ষ প্রোগ্রামারের চাহিদাও অনেক।

ঘুম থেকে উঠেই আমরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি। এই স্মার্ট ফোনে যত ধরণের এপ্লিকেশন চলে সবকটিই কোনও না কোনও প্রোগ্রামার বানিয়েছেন।

শুধু এপ্লিকেশন নয়, আপনি নিজের জন্য ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন এবং সেখান থেকে ভালো উপার্জনও করতে পারবেন।

নিজের জন্যই শুধু নয়, আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করে, কোনও ভালো সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রিও করতে পারেন।  যেখান থেকে ঘরে বসে আপনি উপার্জন করতে পারবেন।

একটু বড় ভাবে দেখতে গেলে, নিজের সফটওয়্যার সার্ভিস কোম্পানি অথবা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিও শুরু করতে পারেন।

যদিও তা অনেক দূরের ব্যাপার কিন্তু আপনার চেষ্টা ও আধুনিকরণ এই চরম উন্নতিতে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে।

এক কথায় বলা যায়, কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে কম্পিউটারকে দিয়ে কোনও কাজ করানোর পদ্ধতিই হল কোডিং।

বর্তমানে, ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনের অ্যাপস সব কিছুর মূল কোডিং।

এখানেই শেষ নয় নাসার বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে ইসরো সব জায়গায় কোডিং ছাড়া বিজ্ঞানীরা আজকাল অচল।

বড় বড় রকেট মহাকাশে পাঠানো থেকে বিভিন্ন সুপার কার তৈরির পেছনে কোডিং ভূমিকা অপরিসীম।

মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স –এর মতো অত্যাধুনিক কাজেও সবচেয়ে বেশি প্রযোজনীয় বস্তু কোডিং।

আর এই কোডিং যারা করে তাদের প্রোগ্রামার বলা হয়।

যখন অনেকগুলো প্রোগ্রামের সমষ্টি একসঙ্গে করা হয় তখন তাকে সফটওয়্যার বলা হয়। যাদের চাহিদা বর্তমান যুগে অনেক।

বিশ্বের প্রথম কোডিং:

বিশ্বের প্রথম হাইলেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, কনরাড জুসে নামে এক ব্যক্তি জার্মান ইলেক্ট্রোমেকানিকাল কম্পিউটার Z1-এ ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের ভিতরে তৈরি করেন।

প্রথম সবচেয়ে ছোট কোডটি লেখা হয়েছিল ” hello, world”। নিচে সেই কোডটি সম্পূর্ণ লেখা হল–

main( ) {

printf(“hello, world\n”);

}

উপসংহার:

আশা করছি, কোডিং কি এবং কিভাবে কোডিং শেখা যায় নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই পছন্দ হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, কোডিং হল কম্পিউটারের ভাষা, যা আমাদের(মানুষের) সঙ্গে কম্পিউটারের বা যে কোনও মেশিনের যোগ স্থাপন করে।

যদি কোডিং নাই তৈরি হতো তবে, বিশ্বের ভাব, ভঙ্গি এবং আধুনিক যুগ আরও কয়েকশো বছর পিছিয়ে যেত।

আপনি কোডিং–এর মাধ্যমে ভালো চাকরি পেতে পারেন বা ফ্রিলান্সিং কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

আপনাদের বহু পরিচিত এবং বহু ব্যবহৃত গুগল, প্রতিনিয়ত নতুন কোনও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ওপর কাজ করছে। যার জন্য আপনি গুগল–এর তৈরি প্রোডাক্ট থেকে এত দ্রুত এবং সঠিক তথ্য পাচ্ছেন।

তাই আজই শুরু করে দিন কোডিং শেখার ক্লাস।

এই আর্টিকেলটি যদি প্রয়োজনীয় মনে হলে আপনার আত্মীয় এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button