Technology

ব্রেইন প্রিন্ট কি? কম্পিউটার আনলক করা যাবে মস্তিস্ক ব্যবহার করে?

ব্রেইন প্রিন্ট কিভাবে কাজ করে?

এই জগতে কোন কিছুই সম্পূর্ণ সিকিউর নয়। যেকোনো তালা ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব, লোহার সিন্দুক খুলে ফেলা সম্ভব, আর অনলাইন পাসওয়ার্ড অনুমান করা সম্ভব (সেটাতে যতোই সময় লাগুক না কেন)। তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের মূল্যবান জিনিষ গুলোকে রক্ষা করবো? একটি মাধ্যম রয়েছে, তাহলো বায়োমেট্রিক্স—ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিস স্ক্যান, ফেস স্ক্যান এবং বর্তমানে আমাদের সামনে আসতে চলেছে ব্রেইন প্রিন্ট টেকনোলজি যেটাকে ইমোশনাল আইডি ও বলা হচ্ছে। মানুষের শরীরের কোন এক অংশকে কাজে লাগিয়ে এবং তার প্যাটার্ন ব্যবহার করে সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি করতে সেটা ব্রেক করা কঠিন হয়ে যায়। আলাদা বায়োমেট্রিক্স টেকনোলজি গুলোর মতো এমন কোন সিস্টেম যদি থাকে যেটা ব্রেইন প্রিন্ট চিনতে পারে, তো সেটা ব্যবহার করে কম্পিউটার আনলক বা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইজ আনলক করা সম্ভব হবে। বলতে পারেন, এই ইমোশনাল আইডি সম্পূর্ণ পাসওয়ার্ড আকারে কাজ করবে যেটা ক্র্যাক করা অনেক মুশকিলের হবে। তো চলুন, এই প্রযুক্তির সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…


ব্রেইন প্রিন্ট

মানুষের ব্রেইন সবচাইতে জটিল অঙ্গ, যেটার সম্পূর্ণ রহস্য এখনো খুঁজে বেড় করা সম্ভব হয় নি। আমরা আমাদের ব্রেইনকে যতোদ্রুত বুঝতে শিখবো; আর্টিফিশিয়াল নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, মাইন্ড আপলোডিং ইত্যাদি প্রযুক্তি গুলো ততোদ্রুত আমাদের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে। সৃষ্টি কর্তার কুদরৎ বলুন আর আমাদের ব্রেইনের ব্যস্তবতা বলুন, প্রত্যেকের ব্রেইন কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে (যদিও গঠন সম্পূর্ণ একই হয়, তবে নিউরনের সংখ্যা কমবেশি থাকে)। যদি আপনাকে একটি ফটো দেখানো হয়, আপনার ব্রেইন সেটা দেখার পরে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আমার ব্রেইন আরেক ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমাদের প্রত্যেকের ব্রেইন আলাদা আলাদা নজরে কোন জিনিষকে দেখে, এ জন্যই আমাদের মাঝে আলাদা আলাদা প্রতিভাবান ব্যক্তি বিরাজ করে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিশ স্ক্যানিং এ যেমন আঙ্গুলের এবং চোখের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত করে রাখা হয় আর পরবর্তী প্রত্যেকবারে সিস্টেম অ্যাক্সেস করার জন্য তথ্য গুলোকে মিলিয়ে দেখা হয়। ঠিক তেমনি ব্রেইন প্রিন্ট টেকনোলজিতে মস্তিষ্কের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ক্যাপচার করার চেষ্টা করা হয়, মস্তিষ্কের তরঙ্গ অনুসারে। যার ব্রেইন প্রিন্ট নেওয়া হয়, তার মাথায় এক ধরনের ডিভাইজ লাগিয়ে দেওয়া হয় যেটা মস্তিস্ক থেকে আসা ব্রেইনওয়েভ ক্যাপচার করে। তার সামনে কিছু বিশেষ শব্দ বা ছবি দেখানো হয় এবং ঐ গুলোর প্রতি তার ব্রেইন রেসপন্স মনিটর করে রাখা হয়। আমি আগেই বলেছি, প্রত্যেকের ব্রেইন আলাদা আলাদা ভাবে কোন বিষয়কে উপলব্ধি করে তো প্রকৃতি ক্রমেই এক্ষেত্রে সবার মস্তিস্ক থেকে আসা ব্রেইনওয়েভ প্যাটার্ন আলাদা আলাদা হবে। এই ব্রেইনওয়েভ প্যাটার্ন গুলোকে সংরক্ষিত করে রাখা হয়, এবং একত্রে ইউনিক ইমোশন গুলোও সংরক্ষিত থাকে।

যখন সিস্টেমটি অ্যাক্সেস করার সময় আবার ব্রেইন স্ক্যান করার দরকার পড়ে বায়োমেট্রিক সিস্টেম এবার ইউজারের ব্রেইনওয়েভ প্যাটার্নের কোন একটি অংশ মেলানোর চেষ্টা করে, তবে এখানে ইমোশনও ম্যাচ করানো হয়। ধরুন আপনি সিস্টেম সেটাপ করার সময় স্বাভাবিক ইমোশন ক্যাপ করে রেখেছেন, কিন্তু এবার ধরুন আপনাকে ডাকাত আক্রমণ করে ফেলেছে, তো আপনার ইমোশন আর আগের মতো থাকবে না, আর আপনি সিন্দুক বা বাড়ির দরজা অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। এই জন্য বর্তমান ব্রেইন প্রিন্ট টেকনোলজিতে মানুষের ভয়, আনন্দ, সুখ সহ অন্যান্য অনুভূতি সংরক্ষিত করে রাখা হয়। এই সিস্টেম সম্পূর্ণ আপনার মস্তিস্ককে বুঝবে এবং অনুরুপভাবে কাজ করবে। আপনি যদি মদ্যপান করে সিস্টেম অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করেন, ডিভাইজটি সেটিও বোঝার ক্ষমতা রাখবে। আর কোন বিপদ বুঝতে পারলে, সিস্টেমটি অ্যাক্সেস করতে দেবে না।

ভবিষ্যৎ সম্ভবনা এবং ব্যবহার

উপরের বিষয় গুলোর উপর আলোকপাত করার পরে, একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় যে, ব্রেইন প্রিন্ট টেকনোলজিকে সম্পূর্ণভাবে উন্নতি করা গেলে এটি পাসওয়ার্ড, পিন, এমনকি ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজিকেও রিপ্লেস করতে পারে। গত বছর বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষক দল একটি গবেষণা চালায় এবং একটি আর্টিকেল পাবলিশ করে, যেখানে তারা ৫০ জন মানুষকে ৫০০টি ইমেজের দিকে দেখতে লাগিয়ে দেয় এবং তাদের ব্রেইনওয়েভ ক্যাপচার করে। যদিও ব্রেইন থেকে আশা সিগন্যাল গুলো অনেক জটিল ছিল কিন্তু তারপরেও তাদের কম্পিউটার সিস্টেম এবং বিশেষ সফটওয়্যার ১০০% নির্ভুল ভাবে সকল তথ্য গুলো সংরক্ষন এবং পরবর্তীতে চিনতে পেরেছিল।

বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির সহকারী মনোবিজ্ঞান প্রফেসরের মতে, এটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজি উপর সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিতে সক্ষম। ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান ডাটা যদি একবার চুরি হয়ে যায়, সেটা সিকিউরিটিতে অনেক ছেদ সৃষ্টি করতে পারে, কেনোনা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটা ফিজিক্যাল ডাটা যেটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ব্রেইন প্রিন্ট বা ইমোশনাল আইডি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ডাটা, সেটা কোন কারণে লিক হয়ে গেলেও সিস্টেম থেকে মুছে ফেলা, মডিফাই করা বা রিসেট করা সম্ভব। আবার ব্রেইন প্রিন্ট কিন্তু কোন ফিজিক্যাল জিনিষ নয়, জোর করে এনে ঠেকিয়ে দিয়ে সিকিউরিটি সিস্টেম বাইপাস করে ফেলবেন। যদি আপনার কাছে সমস্ত প্যাটার্ন থাকে, তারপরেও ইমোশন ম্যাচ করানো সম্ভব হবে না, এটা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল ব্যাপার।

এই টেকনিকের ১০০% নির্ভুলতা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কেনোনা একে হাই সিকিউর স্থান গুলোতে ব্যবহার করার কল্পনা করা হচ্ছে। আমরা কখনোই চাইবো না, নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোড কোন ভুল ব্যক্তির কাছে চলে যাক, এক্ষেত্রে ৯৭% ও গ্রহন যোগ্য নয়, অবশ্যই ১০০% নির্ভুলতা থাকতে হবে। যদি কোন ব্যাক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট চুরি হয়ে যায়, সে কখনোই আবার নতুন ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করতে পারবে না, কারণ সেটা ফিজিক্যাল (আগেই উল্লেখ্য করেছি)। কিন্তু ব্রেইন প্রিন্টকে সহজেই বাতিল করে নতুন ডাটা জুড়ে দেওয়া সম্ভব।

ব্রেইন প্রিন্ট টেকনোলজি এখনো গবেষণাগারে গবেষণারত অবস্থায় রয়েছে, এটাতে আরো কিছু উন্নতি আনা হচ্ছে। যেহেতু এই টেক এখনো ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ রেডি হয়নি, তাই এর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে পারা যায় নি, তবে যখনি আমি আরো কিছু তথ্য পাবো, এই আর্টিকেলে তা এড করতেই থাকবো। টেকনিকটির ফাইনাল রেজাল্ট হয়তো আরো চমৎকার হবে, হয়তো আরো পোর্টেবল করে তৈরি করা সম্ভব হবে, যার মাধ্যমে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এমনকি ওয়েবসাইট গুলোকেও এই টেকনিক ব্যবহার করে লগইন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে এটি একটু জটিল টেকনিক, মাথার সাথে অনেক গুলো তার লাগিয়ে রাখতে হয়, সাথে স্পেশাল সফটওয়্যার প্রয়োজনীয়।

তো, এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার কি মনে হয়? ভবিষ্যতে কি আরো কোন উন্নত টেকনিক আমরা আবিষ্কার করতে পারব? আপনার মতামত নিচে আমাদের কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button