চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গুরুত্ব কি কি রয়েছে
চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি যুগান্তকারী অবদান
ধোঁয়াশাময়, কুসংস্কারযুক্ত সমাজ পেরিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের জীবনে হয়ে উঠেছে এক গুরুত্ত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও মেডিক্যাল ফিল্ডের এই ব্যাপক প্রসার ও উন্নতি ছিল কল্পনাতীত।
কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে, নানান শিল্পজগৎ, কর্মজগতের পাশাপাশি চিকৎিসার ক্ষেত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। মেডিকেল সায়েন্স থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে চিকিৎসার গুণগত মান।
মানুষের শরীর বড়ই জটিল এবং দিনদিন মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে চলেছে, নানা জানা-অজানা, জটিল রোগ-ব্যাধি।
তাই, মানুষের দ্রুত চিকিৎসা এবং আরোগ্যলাভের জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের।
আর সেই প্রয়োজন থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিসাধনে যুক্ত করা হয় তথ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে।
আজকের এই আর্টিকেলে আসুন আমরা জেনে নিই, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গুরুত্ব
কোনোরকম কোনো কারণ ছাড়া এই পৃথিবীতে কোনো ঘটনা যেমন ঘটেনা; ঠিক তেমনই, চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির ব্যবহারেরও নানান গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকতে বাধ্য, সেই দিকগুলো হল –
১. দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়
অনেক বছর ধরে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের মূল লক্ষ্যই হল দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়। হয়তো, সারা বিশ্বে যে যে ক্ষেত্রগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার সবথেকে বেশি হয়, তার মধ্যে মেডিকেল ফিল্ডে টেকনোলজির ব্যবহার মাত্রাতিরিক্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এর ফলে, বহু মানুষ নিজেদের জীবন ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়াও, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই উন্নতির জন্যেই মানুষের জীবনযাত্রার মান বহুগুণে উন্নত হয়েছে। মানুষের গড়-আয়ু বৃদ্ধিতেও প্রযুক্তির অবদান অনেক বেশি।
২. তথ্য প্রযুক্তি যোগদান
তথ্য প্রযুক্তির যোগদানে, এই চিকিৎসা ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সুবিধা হয়েছে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে। সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন এবং তাদের সমস্ত তথ্য ইন্টারনেট মাধ্যম এবং সার্ভার দ্বারা জমা হয়ে থাকছে অনলাইন মাধ্যমে।
এর ফলে, স্বাস্থ্যকর্মীরা খুব সহজেই রুগীদের তথ্য সারাজীবনের জন্যে জমা করতে পারছেন।
এছাড়াও, তারা খুব সহজেই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেইসব রুগীদের রেকর্ড ব্যবহার এবং সম্পাদন (correction) করতে পারছেন।
এই প্রযুক্তির সবথেকে বড় অবদান হল, এই অনলাইন ডাটা সার্ভিসের জন্যে রুগীদের ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনাও অনেক কমে গেছে। আর, এই প্রযুক্তিগত পরিষেবায় পেশেন্টদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি খুব সহজ উদাহরণ হল, ভারতে যে কোভিডের যে টিকাকরণ চলছে, তার সার্টিফিকেট পেতে হলে, সাধারণ মানুষকে একটি ওয়েব পোর্টালের থেকে সেগুলো ডাউনলোড করতে হচ্ছে। ফলে, তাদেরকে লাইন দিয়ে টিকাকেন্দ্র থেকে সেই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হচ্ছে না।
আর এই সমস্ত কিছুই সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তির সাথে মেডিকেল পরিষেবার সংযোগের ফলেই।
আপনি, শুধুমাত্র, আপনার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার আর OTP-এর (one-time password) সাহায্যেই আপনার সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড করতে সক্ষম, এতে আপনার তথ্যের সুরক্ষাও যথেষ্ট রয়েছে।
৩. ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড
ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীরা খুব সহজেই প্রত্যেকটি রুগীর ওষুধ এবং সেবার (treatment) সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পেয়ে যান।
এইসব রেকর্ডে রুগীদের মেডিকেল হিস্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকায়, রোগ নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা ডাক্তারদের কাছে অনেক সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।
এই ইলেট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ডে রুগীদের ওষুধের সময়, রিমাইন্ডার, এবং কন্সালটেশনের নানা অপসন (option) থাকে।
এর সাহায্যে খুব সহজেই স্বাস্থকর্মীরা রোগীদের পরিষেবা দিতে পারেন। যাতে, তারা সর্বতোভাবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
৪. বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য রেকর্ডের লাভ
এই ইলেট্রনিক হেলথ রেকর্ড বা বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য রেকর্ডের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে উঠেছে পরিপাটি এবং সম্পূর্ণরূপে অভ্রান্ত। আগে, পেশেন্টদের তথ্য লেখা হতো কাগজে-কলমে। আর ডিজিটাল মাধ্যম এবং তথ্য প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির ফলে বাদ পড়েছে পুরোনো কাগজের নথি লেখার ব্যবস্থা।
এই সমস্ত কাগজের নথিগুলো ছিল ব্যয়সাপেক্ষ, এবং এর হিসেব রাখা এবং গুছিয়ে রাখাও ছিল যথেষ্ট কঠিন কাজ।
তাই, প্রযুক্তির সাথে মেডিকেল জগতের মেলবন্ধনে এই সমস্ত রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়ে উঠেছে অনেক বেশি সহজ।
এছাড়াও, এই সমস্ত কাজের জন্যে নিযুক্ত করা হয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মেডিকেল কোডিং বিষেশজ্ঞ এবং প্রশিক্ষিত নার্সদের।
এদের প্রধান কাজ হল একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ডেটাবেসে রুগীদের তথ্য আপলোড করা।
এই তথ্যভান্ডার থেকেই মেডিকেল কর্মীরা হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পনিগুলো থেকে পেশেন্টদের হয়ে তাদের প্রাপ্য অর্থের আর্জি জানিয়ে রেকর্ড পাঠায়।
প্রতিটি রোগী তার নিজস্ব তথ্য একটি মাত্র ক্লিকের মাধ্যমেই ডেটাবেস থেকে পেয়ে যেতে পারেন।
ডাক্তাররা প্রয়োজন অনুসারে সেইসব তথ্য পরিবর্তন করে রোগীদের কাছে এই e-record-এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন।
৫. রোগীর তথ্য রেকর্ডে থেকে যায়
এই ডাটাবেস গুলোতে রোগীর এলার্জি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ও নানা খুঁটিনাটি তথ্য রেকর্ডে থেকে যায়।
যেকোনো মেডিকেল সংস্থা থেকে যেকোনো ডাক্তার তার রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রির খবর পেয়ে থাকেন।
এর ফলে, খুব জটিল অসুখের রোগীর শুশ্রুষায় এই ডাটাবেসগুলোর তথ্য খুবই কাজে লাগে স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের।
৬. EHR বা electronic health records
EHR বা electronic health records-এর ফলে যারা ক্লিনিকাল গবেষকরা রয়েছেন, তারা এইসব ডাটাবেস থেকে তথ্য গ্রহণ করে কোনো রোগ বা মহামারীর চিকিৎসা বা টিকার খোঁজ করেন।
খুব সম্প্রতি সারা বিশ্বের করোনা আক্রান্ত মানুষের পরিসংখ্যান গণনার এবং উপসর্গগুলো লক্ষ্য করেই এই মহামারির টিকা আবিষ্কার করলেন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহল।
এই ডাটাবেস গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা অনেক কম সময়ে কোনো রোগের কারণ এবং তার সম্ভাব্য চিকিৎসা বের করে ফেলতে পারছেন।
এমনকি, এই সাধারণ ডেটাবেস সারা পৃথিবীর মানুষ নানা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন। যেমন, গুগল খুললেই আপনি কোভিড সংক্রান্ত নিয়মাবলী এবং কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা নিয়মিত দেখতে পান।
৭. ব্যয় এবং পরিশ্রম
কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহারের ফলে তথ্য নথিভুক্ত করা কম ব্যয় এবং পরিশ্রম সাপেক্ষ।
এছাড়াও, কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করে তথ্য নথিভুক্ত করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে।
ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য নথিভুক্ত হওয়ার ফলে কর্মীরা যেকোনো জায়গা থেকে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন।
অর্থাৎ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে তথ্য প্রযুক্তির যোগদান রয়েছে, তার ফলবশতঃ বেড়ে গিয়েছে চিকিৎসার গতি।
অনলাইন রেকর্ড রাখার ফলে খুব সহজেই ডাক্তাররা রোগীদের সুবিধা-অসুবিধা, শারীরিক স্থিতি এবং রোগের বিশ্লেষণ করতে পারছেন। এর ফলে, সামগ্রিকভাবে লাভবান হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা এবং অসুস্থ মানুষরা।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি যুগান্তকারী অবদান
আসুন, এবার আমরা জানি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি যুগান্তকারী অবদান সম্পর্কে,
১. 3D Printing Technology বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তি
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে মানুষের শরীরের হাড় এবং কিছু কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের খারাপ হয়ে যাওয়া অঙ্গ বা হাড়ের জায়গায় ওই কৃত্রিমভাবে তৈরী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা চলছে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অস্ত্ৰোপচারকারীরা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভে সক্ষম হচ্ছেন।
যেহেতু, এটি একটি ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরী করতে সক্ষম, তাই ডাক্তাররা নানাপ্রকার অনুসন্ধানের মাধ্যমে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সমাধান বের করতে পারছেন।
বর্তমানে, এই 3D Printing যন্ত্রের মাধ্যমে prosthetic অঙ্গ তৈরী করা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
মানুষের শরীরের হাত এবং পায়ের অনুকরণে তৈরী কৃত্রিম অঙ্গগুলো সারা বিশ্বের অনেক মানুষ স্বচ্ছন্দভাবে ব্যবহার করছেন।
এই বিশেষ প্রিন্টারগুলো ব্যবহার করে প্রতিটি মানুষের হাত বা পায়ের মাপ সঠিকভাবে নিয়ে তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে খুব সহজেই পরিবর্তন করা সক্ষম হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই প্রস্থেটিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দাম অনেক কমেও আসছে।
২. কৃত্রিম অঙ্গ
অনেকটা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তির অনুকরণে চিকিৎসা প্রযুক্তি বিজ্ঞান একটি নতুন ধরণের প্রিন্টিং-এর ধারণা সৃষ্টি করেছে। সেটি হল বায়ো-প্রিন্টিং।
আগুনে পুড়ে যাওয়া রুগীর ক্ষেত্রে নতুন মানুষের ত্বক তৈরী করতে ডাক্তাররা সফল হয়েছেন।
আর এই সফলতার ফলেই, তারা একে একে তৈরী করতে পারছেন কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয়, ও রক্তনালী।
এই অঙ্গগুলো মানুষের শরীরের নিজস্ব বা বিকল হয়ে আসা যন্ত্রগুলোকে আসতে আসতে সরিয়ে দিয়ে মানুষকে দান করবে একটি রোগমুক্ত শরীর।
যদি কৃত্রিম এই অঙ্গগুলো শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা প্রত্যাখ্যাত না হয়, তবে তা লক্ষ লক্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবে এই বায়ো-প্রিন্টিং টেকনোলজি।
৩. রোবোটিক অস্ত্রোপচার (robotic surgery)
এই প্রযুক্তি অনুসারে, মানুষের উপর অস্ত্রোপচারের জন্যে রোবটের সাহায্য নেওয়া হবে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে, অপারেশনের সময় মানুষের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, কোনো জটিল অপারেশনের সময় ডাক্তাররা যাতে মনোযোগ দিয়ে সেই জটিলতা কাটিয়ে সফল অস্ত্রোপচার করতে পারেন, তার জন্যেই এই রোবোটিক সার্জারিকে আরও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও, যেকোনো ধরণের মেশিনই মানুষের চেয়ে বেশি নির্ভুল তথ্য দিতে সক্ষম।
তাই, অপারেশন চলাকালীন যাতে ডাক্তাররা অপারেশন-সংক্রান্ত সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সময়মতো পান, তার জন্যও এই রোবোটিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি হয়ে পড়ছে।
এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্যই হল অপারেশনের সময় সার্জেনদের সম্পূর্ণরূপে সহায়তা করা।
৪. ওয়্যারলেস ব্রেন সেন্সরস (wireless brain sensors)
ওয়্যারলেস ব্রেন সেন্সরগুলো মূলত বিয়োজ্য (biodegradable) প্লাস্টিকের তৈরী।
এই সেন্সরগুলো নিজে থেকেই বিয়োজিত (biodegrade) হয়ে শরীরের সাথে মিশে যায় এবং যার ফলে আলাদা করে অপারেশনের দরকার হয় না।
ডাক্তাররা এই সেন্সরগুলো ব্যবহার করেন রোগীদের মাথার মধ্যে থাকা তাপমাত্রা এবং চাপ মাপার জন্যে।
৫. ব্যক্তির চাহিদানুসারে ওষুধের ব্যবস্থা
মেডিকেল প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতি প্রতিটি রোগীর ওষুধের চাহিদা ও মাত্রাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষের জিনের (gene) পর্যালোচনা করে, কোন মানুষের রোগ উপশমে কি ধরণের ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন তা সমস্তটাই জেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তার ফলে, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগকেও মানুষের শরীর থেকে নষ্ট করা যাচ্ছে শুধু এই জিনগত (genetic structure) ত্রুটিগুলো ওষুধের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়ে।
এছাড়াও, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের ক্ষেত্রেও ওষুধের মাধ্যমে ওই রোগের দুর্বল জিনগুলোকে ধ্বংস করে জয়েন্টের হাড়ের ক্ষতির সম্ভাবনাকে আটকানো হয়।
৬. জিন-সংশোধনী প্রযুক্তি (CRISPR-Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeats)
বিজ্ঞানের সবথেকে বড় অবদান এই জিন-সংশোধনী চিকিৎসা। এতে, মানুষের DNA-তে যেসব সূত্রগুলো HIV, ক্যান্সার বা অন্যান্য ক্ষতিকারক রোগ বহন করছে, সেগুলোকে কেটে বাদ দিয়ে মানুষকে এই রোগ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
এই জিন সংশোধনী প্রক্রিয়া ব্যবহার করে পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে রোগ থেকে মুক্ত করার এক ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
৭. ভার্চুয়াল রিয়ালিটি
কোনো সাধারণ মানুষের উপর অস্ত্রোপচার না করেই, এই ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সাহায্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা অপারেশন করা শিখতে পারছেন।
এছাড়াও, এই ভার্চুয়াল বাস্তবতা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া, চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে ছাত্রছাত্রীদের অনেকটাই সুবিধা হয়। তারা বাস্তব-নির্ভর শিক্ষালাভ করতে পারেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
তথ্য প্রযুক্তির এক অন্যতম শাখা হিসাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিও (Information and communication technology) চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা এবং গুরুত্ব
চলুন, এবার আমরা জেনেনেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা এবং গুরুত্ব গুলো কি।
১. স্বাস্থ্য-পর্যবেক্ষণকারী পরিধানযোগ্য যন্ত্র (health wearable devices)
ওই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে নানান স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত এপ্লিকেশন তৈরী করা হচ্ছে। যাতে মানুষ নিজের রক্তচাপ, হার্ট রেট, অক্সজেন লেভেল এবং নানা রকমের খুঁটিনাটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য নিজেই পেয়ে যেতে পারেন।
এছাড়াও, স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ এবং ফিটবিট আবিষ্কারের ফলে মানুষ নিজেই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজর রাখতে পারছেন।
অর্থাৎ, এখানেও রয়েছে টেকনোলজির অসীম অবদান।
২. টেলি-কন্সালটেশন
আপনি আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমেই ভিডিও কলের সাহায্যে আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জরুরি পরামর্শ নিতে পারছেন, এবং তাতেও কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে টেকনোলজি।
এছাড়াও, কিছুদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে নানা এপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে ঘরে বসে ডাক্তার কন্সালটেশন নেওয়া। তাই, বলাই যায়, আজ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে সর্বেসর্বা।
চিকিৎসার এই জগতে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন আবিষ্কার হয়ে চলছে, ন্যানো টেকনোলজির অবদানে এসেছে পিল-ক্যামেরা, এবং এখন উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (auto-intelligence) রোবটের মাধ্যমে নানা জায়গায় চলছে রুগীদের সেবা প্রদান।
আবার, এই টেকনোলজির অবদানে, রোগীদের দ্রুত আরোগ্যতা দেখা গেলেও, তাদের তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে থেকে যাচ্ছে ঝুঁকি।
তাই, বিজ্ঞানের ব্যবহার নিয়ে এই আদি-অনন্তকালের যে দো-টানা চলছে, তা বাদ দিলেও বলা যায়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। যার ব্যবহার মানব সভ্যতাকে এনে দিতে পারে আজীবন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জিয়নকাঠি।
আজকের এই প্রযুক্তি-নির্ভর চিকিৎসা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আশা করি, আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আর পছন্দ হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্টের মাধ্যমে।