Technology

ইউপিএস | কতোটা প্রয়োজনীয়? সত্যিই এটি কম্পিউটারকে রক্ষা করে?

কেন ইউপিএস প্রয়োজনীয়?

আজকের বেশির ভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কাছে কমন ইলেক্ট্রিসিটি প্রবলেম গুলো জানা থাকার কথা। আপনি যতো উন্নত দেশেই বসবাস করুণ না কেন, ইলেক্ট্রিসিটি প্রবলেম সেখানে থাকবেই। আমি শুধু লোড শেডিং নিয়ে কথা বলছি না, আচানক বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ধপ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা তো ঘটেই সাথে, বিদ্যুৎ ভোল্টেজ আপ-ডাউন, হঠাৎ ওভার ভোল্টেজ, লো ভোল্টেজ, এমনকি বজ্রপাতের ফলেও আপনার কম্পিউটারের বিরাট সমস্যা হয়ে যেতে পারে। সৌভাগ্যবসত, আনইনটারাপ্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই (Uninterruptible Power Supply) বা সংক্ষেপে ইউপিএস (UPS) — একসাথে ব্যাটারি ব্যাকাপ এবং বিদ্যুতের কমন প্রবলেম গুলো থেকে আপনার কম্পিউটার এবং আলাদা ইলেকট্রনিক ডিভাইজ গুলোকে রক্ষা করে থাকে।

এখন এখানে ইউপিএস কিনতে হবে বা ইউপিএস ব্যবহার করবো, এই বললেই কিন্তু কথা শেষ নয়। অবশ্যই ইউপিএস কেনার সময় অনেক টার্ম রয়েছে। সাথে যদি আপনি বিদ্যুতের কমন প্রবলেম গুলো না বোঝেন সেগুলোও বোঝার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তারপরেই আপনি পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন, কেন ইউপিএস এতোটা জরুরী! এই আর্টিকেলে সম্পূর্ণ বিষয় গুলোকে স্পষ্টভাবে বর্ণিত করেছি।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ইউপিএস

ইউপিএস বা কম্পিউটার ব্যাটারি ব্যাকআপ ডিভাইজ গুলোকে আপনারা কমবেশি সকলেই নিশ্চয় দেখেছেন। এই ডিভাইজ নানান আকারের হতে পারে, প্রয়োজন এবং ক্যাপাসিটি অনুসারে এটি আকারে ছোট আবার বড় হতে পারে। বিশেষ করে, প্রথমে ব্যাটারি ব্যাকআপ ডিভাইজ ওয়াল সকেটের সাথে সরাসরি কানেক্টেড থাকে, এর পরে ঐ ডিভাইজের আউটপুট সকেটে কম্পিউটার বা আলাদা ডিভাইজ গুলো অ্যাটাচ করানো থাকে। সকল ব্যাটারি ব্যাকআপ ডিভাইজ গুলো অনেক ভারি, সাথে এদের ভেতরে ব্যাটারি লাগানো থাকে। অবশ্যই এই ব্যাটারি গুলো রিচার্জেবল এবং রিপ্লেসেবল। আপনি হয়তো ৫-৬ বছর আগে কোন ইউপিএস কিনেছেন, ব্যাট কেবল এসে ব্যাটারি প্রবলেম শুরু করে দিয়েছে, আপনি আরামে ব্যাটারি পেয়ে যাবেন এবং পরিবর্তন করে নিতে পাড়বেন। ইউপিএসে সাধারণত একটি বা একাধিক ব্যাটারি লাগানো থাকে, ফলে ওয়াল সকেট থেকে ক্যাবল খুলে নিলেও বা বিদ্যুৎ চলে গেলেও আপনার কম্পিউটার সর্বদা পাওয়ার পেতে থাকে।

আপনি ব্যাটারি ব্যাকআপ ডিভাইজটির পেছনে কতো টাকা বাজেট রেখেছেন, সে অনুসারে আপনার ডিভাইজটি উন্নত হয়ে থাকবে। সাধারণত এই ইউনিট’টিকে অফ বা অন করার জন্য একটি ম্যানুয়াল পাওয়ার সুইচ থাকে। তবে কিছু উন্নত মডেলে স্বয়ংক্রিয় অন/অফ হওয়ার স্মার্ট ব্যবস্থা রয়েছে। সাথে ঐ দামী মডেল গুলোতে এলসিডি ডিসপ্লে লাগানো থাকে, যেখানে পাওয়ার ইনফরমেশন প্রদর্শিত করানো হয়।

এখন যদি কথা বলি ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় নিয়ে, তো সেটা নির্ভর করে ব্যাকআপ ইউনিট’টির পাওয়ারের উপর। আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুসারে ইউপিএসের পাওয়ার নির্বাচন করতে হবে। ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট গুলো সাধারণত ওয়াট এবং কতোক্ষণ ব্যাকআপ দিতে সক্ষম এই দুইভাবেই রেটিং করা থাকে। আপনার যদি ডিভাইজ বেশি হয়, সেক্ষেত্রে একাধিক ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট প্রয়োজনীয় হতে পারে। তবে আমি রেকমেন্ড করবো, ৫০০ ওয়াটের নিচে ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট কিনবেন না। আজকের মডার্ন পিসি গুলো ৫০০ ওয়াটের নিচে চলবে না। এখানে আপনার মনিটর আছে আবার সম্পূর্ণ পিসি রয়েছে। আজকের টোটাল কম্পিউটিং সিস্টেম গুলো ১৫০০ ওয়াট পর্যন্ত রেটিং করা থাকে। তাই যতো বেশি ওয়াট নিতে পারেন ততোই বেশি ব্যাকআপ পাওয়া সম্ভব হবে।

ইউপিএস টাইপ

সাধারণত দুই টাইপের ইউপিএস বা ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট দেখতে পাওয়া যায়, একটি অন-লাইন ইউপিএস (On-Line UPS) এবং আরেকটি স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস (Standby UPS)। দুই টাইপের আনইনটারাপ্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই প্রায় একই হয়ে থাকে, কিন্তু স্ট্যান্ডবাই টাইপ অন-লাইন টাইপের মতো এতো ফাস্ট রেসপন্স করতে পারে না। স্ট্যান্ডবাই ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট বিদ্যুৎকে ব্যাটারি হয়ে কম্পিউটারে প্রদান করে না, এটি জাস্ট বিদ্যুৎকে নিয়ন্ত্রন করে সরাসরি কম্পিউটারে বা আলাদা ডিভাইজে ফিড করে। যখন এটি বুঝতে পারে পাওয়ার কাট হয়েছে বা কোন সমস্যা হয়েছে, তখন এটি ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ কম্পিউটারে সরবরাহ করতে আরম্ভ করে, আর যেটাতে মুটামুটি ১০-১২ মিলিসেকেন্ড সময় লেগে যায়। কিন্তু আজকের কম্পিউটিং সিস্টেম কেবল ২ মিলিসেকেন্ড কারেন্ট সমস্যায় রেস্পন্স করে এবং সিস্টেম রিস্টার্ট নিয়ে নিতে পারে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে যদি আপনার কম্পিউটার রিস্টার্ট হয়ে যায়, তো অবশ্যই বুঝবেন এই একটি স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস।

 

অন-লাইন আনইনটারাপ্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই অপরদিকে সর্বদা বিদ্যুৎকে ব্যাটারি দিয়েই কম্পিউটার বা আলাদা ডিভাইজে সরবরাহ করে। এতে মেইন বিদ্যুৎ চলে যাক আর থাক সর্বদা বিদ্যুৎ ব্যাটারি হয়েই আপনার সিস্টেমে যাবে। সুতরাং পাওয়ার কাটে এক্ষেত্রে ১ মিলি সেকেন্ডেরও দেরি দেখতে পাওয়া যায় না। আপনি ল্যাপটপ ব্যাটারিকে অন-লাইন ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট সিস্টেমের সাথে তুলনা করতে পারেন। আপনি ওয়ালে যখন ক্যাবল লাগিয়ে রাখেন, ক্যাবল থেকে ব্যাটারি চার্জ হয় এবং ব্যাটারি থেকে ল্যাপটপ পাওয়ার পায়, ওয়াল থেকে ক্যাবল আন-প্ল্যাগ করার পরেও এক মিলি সেকেন্ডের জন্যও সিস্টেম টের পায় না, কেনোনা এটি সর্বদা ব্যাটারি থেকে জুস গ্রহন করছে।

তো এখানে বোঝায় চাচ্ছে, দুই টাইপের ইউপিএসই আপনাকে সেম ব্যাটারি ব্যাকআপ দেবে, কিন্তু যদি আপনার ব্যাকআপ ইউনিট’টি স্ট্যান্ডবাই টাইপের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে যদি সেটা অত্যন্ত ফাস্ট রেসপন্স না করতে করে, তো আপনার কম্পিউটার শাট ডাউন হওয়া থেকে বাঁচবে না, যেখানে অন-লাইন টাইপে পাওয়ার কাট সিস্টেম বুঝতেই পারবে না।

তাহলে নিশ্চয় আপনার অন-লাইন টাইপ ব্যাকআপ ইউনিট কেনায় বেস্ট হবে, কিন্তু বলে রাখছি স্ট্যান্ডবাই টাইপ থেকে অন-লাইন টাইপের দাম বেশি হবে।

বিভিন্ন টাইপের বৈদ্যুতিক সমস্যা

আপনি হয়তো এই পয়েন্টে এসে চিন্তা করবেন, “বিভিন্ন টাইপের বৈদ্যুতিক সমস্যা বোঝার কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?”

হ্যাঁ, একটু তো আলোচনা করতেই হবে, এতে আপনি সহজেই বুঝতে পাড়বেন আপনার ইউপিএস’টিতে কোন কোন টাইপের প্রটেক্টর রয়েছে এবং এগুলোর কাজ কি, মানে আপনাকে কোন কোন বৈদ্যুতিক সমস্যা থেকে প্রোটেকশন দেবে!

পাওয়ার কাট প্রোটেকশন তো অবশ্যই রয়েছে, অর্থাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে আপনার ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট কম্পিউটারে পাওয়ার সাপ্লাই করা শুরু করবে। আগের প্যারাগ্রাফ থেকে তো জানলেনই কোন টাইপের ইউনিট আপনার জন্য বেস্ট হবে। যাই হোক, পাওয়ার কাট প্রোটেকশন বা ব্ল্যাকআউট প্রোটেকশন দ্বারা অবশ্যই আপনার ব্যাকআপ ইউনিট’টি রেটিং থাকতে হবে। এরপরে আসে ব্রাউনআউট প্রোটেকশন, যদি আপনার বাড়িতে একসাথে অনেক টাইপের এবং অনেক গুলো ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইজ কানেক্টেড থাকে সেক্ষেত্রে সার্কিটে পাওয়ার লস হতে পারে, ফলে পাওয়ার কাট না হয়েও পাওয়ার চলে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকেও ব্যাকআপ ইউনিট আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে, তবে অবশ্যই ব্রাউনআউট প্রোটেকশন রেটিং থাকতে হবে।

তাছাড়া অবশ্যই ওভার ভোল্টেজ প্রোটেকশন, পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ প্রোটেকশন, এবং হঠাৎ হাই ভোল্টেজ প্রোটেকশন দ্বারা আপনার ইউপিএসটি রেটিং করা থাকতে হবে। অনেক সময় বিদ্যুৎতের ভোল্টেজ অনেক লো থাকে, কিন্তু যখন ভোল্টেজ ফেরত আসে সেই মুহূর্তে হঠাৎ হাই ভোল্টেজ ধাক্কা দেয়, এতে আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বিশেষ ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। বজ্রপাতের কারণেও হাই ভোল্টেজের সৃষ্টি হতে পারে, আবার আপনার বাড়ির ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার প্রচণ্ড ভোল্টেজ বাড়িয়ে দিতে পারে, যেটা কম্পিউটারের বিশেষ ক্ষতি করতে পারে। অবশ্যই ইউপিএস’এ নয়েজ, স্প্যাইক, এবং পাওয়ার সার্জ প্রোটেকশন থাকতে হবে।

কেন ইউপিএস প্রয়োজনীয়?

দেখুন ব্যাটারি ব্যাকআপ ইউনিট থাকার হাজারো উপকারিতা রয়েচে,এবং বিশ্বাস করুণ আপনার সাধের কম্পিউটারটিকে অনেক বিষয় থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। কম্পিউটারে অনাকাঙ্ক্ষিত শাট-ডাউন হওয়ার ফলে বিশেষ করে হার্ড ড্রাইভ এবং র‍্যাম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। হঠাৎ শাট-ডাউনের ফলে হার্ড ড্রাইভে ব্যাড সেক্টর তৈরি হতে পারে। আবার আপনার অপারেটিং সিস্টেম সম্পূর্ণ করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে, ফলে হতে পারে আপনার কম্পিউটার আর বুট’ই নেবে না।

 

আপনার আনসেভড থাকা ফাইল বা প্রজেক্ট, ধরুন আপনি কোন প্রোজেক্টের উপর ২-৩ ঘণ্টা ধরে কাজ করছিলেন, আর হঠাৎ পাওয়ার কাট হওয়ার মাধ্যমে আপনার সকল কাজ পানিতে চলে যেতে পারে, যদিও এখন অনেক মডার্ন সফটওয়্যার অটোমেটিক প্রজেক্ট ড্রাফ্‌ট করে রাখে। তো বুঝতেই পাড়ছেন, ওয়াল সকেটে ডাইরেক্ট কম্পিউটার চালানো কতোটা রিস্কি ব্যাপার, কেনোনা পাওয়ার ড্রপ আর পাওয়ার কাট প্রবলেমের সাথে জড়িত রয়েছে অনেক কম্পিউটার প্রবলেম। হাই ভোল্টেজ আর বিজলী তো আপনার সম্পূর্ণ কম্পিউটারটিই ধ্বংস করে ফেলতে পারে। শুধু কম্পিউটার নয়, আপনার মনিটর, ওয়াইফাই রাউটারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই বাজেট থাকলে একটি ভালো মানের ইউপিএসে ইনভেস্ট করা বৃথা হবে না!

হোমে শুধু যে কম্পিউটারের জন্য ইউপিএস প্রয়োজনীয় তা কিন্তু নয়, আপনি মিডিয়া সার্ভার, নেটওয়ার্ক অ্যাট্যাচড স্টোরেজ, হোম সার্ভার এবং আরো ইলেকট্রনিক ডিভাইজ গুলোকে পাওয়ার প্রবলেম থেকে রক্ষা করতে আনইনটারাপ্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করতে পারেন।


শেষে আরেকটি ব্যাপার পরিষ্কার করতে চাই, ব্যাটারি ব্যাকআপ কিন্তু এমন কিছু নয়, যে পাওয়ার কাট হলো আর আপনি আরামে কম্পিউটার ব্যবহার করতেই আছেন, গেম খেলতেই আছেন, বা ওয়্যারবিডি পড়তেই আছেন (না এটা করতেই থাকুন 😀 ) — ইউপিএস শুধু এজন্য যাতে আপনার কম্পিউটার আচানক শাট-ডাউন না হয়ে যায় এবং আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো যাতে আপনি সেভ করে নিরাপদভাবে কম্পিউটার অফ করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, কিছু হাই ওয়াট ইউপিএস ১ ঘণ্টা পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাকআপ দিতে পারে, সেগুলোতে কম্পিউটিং কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতে পাড়বেন, যদি বেশি কম্পিউটিং করতে চান সেক্ষেত্রে কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম, কম্পিউটারের সাউন্ড মিউট, ওয়াইফাই অফ ইত্যাদি করে ব্যাকআপ টাইম বাড়াতে পারেন। আর হ্যাঁ, সবকিছুতেই যেন ইউপিএস লাগিয়ে রাখবেন না, বিশেষ করে প্রিন্টারে, কারেন্ট চলে গেলে প্রিন্টার ডকুমেন্ট’কে তার ঝুলিতে নিয়ে রেখে দেয় বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথে প্রিন্ট রিজিউম করতে পাড়বেন। যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ থেকে প্রিন্টারে লাইন দেন, সেক্ষেত্রে প্রিন্টার মোটর পুড়ে যেতে পারে, সুতরাং সাবধান!

আশা করছি ইউপিএস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সকল টপিক এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে কভার করেছি। তারপরেও যদি কিছু মিসিং থাকে অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, আর সাথে অবশ্যই যেকোনো প্রশ্ন বা মতামতে কমেন্ট করতে একদমই ভুলবেন না!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button