ওয়েবসাইট

ফেক ওয়েবসাইট বা স্ক‍্যাম ওয়েবসাইট কিভাবে চিনবেন?

ফেক ওয়েবসাইট বা স্ক‍্যাম ওয়েবসাইট কিভাবে চিনবেন?

আমরা ইন্টারনেটে আমাদের অধিকাংশ সময়ই কাটাই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। যদি সোশ্যাল মিডিয়া লাভার হই, তাহলে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম। যদি ভিডিও লাভার হই তাহলে ইউটিউব, আর যদি ব্লগিং করতে বা পড়তে ভালোবাসি, তাহলে বিভিন্ন ব্লগে। আর শপিং করতে ভালবাসলে বিভিন্ন অনলাইন স্টোরে। কিন্তু এই সব কাজই আমরা প্রধানত করি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। আপনি এখন যে লেখাটি পড়ছেন, সেটিও কিন্তু একটি ওয়েবসাইট। টেকনোলজি এবং ইন্টারনেটের বিস্তারের সাথে সাথে বেড়েছে অনেক নতুন নতুন ওয়েবসাইট এবং ওয়েব সার্ভিসের সংখ্যা। কিন্তু একইসাথে ফেক ওয়েবসাইট এবং স্ক‍্যাম ওয়েব সাইটের সংখ্যাও বেড়েছে, যাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র আপনার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং আপনাকে প্রতারিত করা।

আপনি যখন আপনার ইন্টারনেট সার্ফিং এর প্রায় প্রত্যেকটি সেকেন্ডে কোনো না কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, আপনার জন্য কোনটি ফেক/স্ক‍্যাম ওয়েবসাইট এবং কোনটি লেজিট ওয়েবসাইট তা বোঝার ক্ষমতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন এবং যদি তুলনমূলকভাবে অনলাইন শপিং বেশি করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য ফেক এবং রিয়াল ওয়েবসাইট বোঝা খুবই দরকারী।কারণ, আপনি যদি না জেনেই যদি কোনো ফেক বা স্ক‍্যাম ওয়েবসাইটে কাজ করেন বা কোনো ফেক অনলাইন শপ থেকে কিছু কেনেন তাহলে আপনি প্রতারিত হবেন। শুধুমাত্র টাকা হারানো নয়, আপনি আরো বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই, আজকে আলোচনা করবো, কি কি উপায়ে বা কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখলে আপনি ফেক বা স্ক্যাম ওয়েবসাইট সহজেই চিনতে পারবেন।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ডোমেইন নেম চেক করুন

ফেক ওয়েবসাইট চেনার প্রাথমিক এবং সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে সাইটটির ডোমেইন নেম চেক করা। কোনো কোম্পানি বা কোনো অর্গানাইজেশন যদি তাদের নিজেদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ব্যাবহার করে, তাহলে তারা অবশ্যই সাইটটি নিজেদের কোম্পানির নামে করবে। অর্থাৎ কোম্পানি বা অর্গানাইজেশনের ব্র্যান্ডিং যা হবে, সাইটটির নামও তাই হবে। কিন্তু আপনি যদি দেখেন যে, কোনো ওয়েবসাইট কোনো একটি কোম্পানি বা অর্গানাইজেশনের যে নাম, তা ব্যাবহার না করে অন্য কোনো সন্দেহজনক নাম ব্যাবহার করছে বা অরিজিনাল নামটি ব্যাবহার না করে কিছুটা পরিবর্তিত নাম ব্যাবহার করছে, তাহলে আপনি মোটামুটি শিওর হতে পারেন যে সাইটটি ফেক বা স্ক‍্যাম।

বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করা যাক। একটি বড় কোম্পানির নাম চিন্তা করুন। ধরুন, Paypal। এদের ব্র্যান্ড নেম যখন Paypal, তাই এদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটটির ডোমেইন নেম অবশ্যই www.paypal.com এমন ধরনের হওয়া উচিত, যেহেতু এটাই তাদের একমাত্র ব্র্যান্ড নেম। কিন্তু আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন যার ডোমেইন নেম www.paypalfree.com, তাহলে আপনি শিওর হতে পারেন যে এটি একটি ফেক বা স্ক‍্যাম ওয়েবসাইট। কারণ, অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হলে সাইটটির ডোমেইন নেম কখনোই শুধু Paypal ছাড়া অন্যকিছু হওয়ার কথা নয়।

WhoIs চেক করুন

আপনি যে সাইটটি ভিজিট করবেন, তা ফেক কিনা এটা জানার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে সাইটটির মালিক কে, সাইটটির ডোমেইন কে কিনেছে, সাইটটির ডোমেইন কোন প্রোভাইডার এর কাছ থেকে কেনা হয়েছে, ডোমেইনটি কবে এবং কার নামে রেজি্ট্রেশন করা হয়েছে এসব ইনফরমেশন চেক করা। এগুলো ভালোভাবে খেয়াল করলেই আপনার জন্য বোঝা সহজ হবে যে কোনটি ফেক ওয়েবসাইট এবং কোনটি রিয়াল।

এটা চেক করার জন্য WhoIs ব্যাবহার করতে পারেন। এটিও আরেকটি ওয়েবসাইট। এখানে মূলত আপনি সার্চবারে যেকোনো ওয়েবসাইটের লিংক পেস্ট করে ওই সাইটের মালিক এবং সাইটটির  ডোমেইন সম্পর্কে ইনফরমেশন জানতে পারবেন। যদি ইনফরমেশন চেক করে দেখেন যে, সাইটটির অনেক ধরনের ইনফরমেশন সেখানে পাওয়া যাচ্ছে এবং সাইটটির ডোমেইন কোনো ভালো ডোমেইন প্রোভাইডারের কাছ থেকে কেনা হয়েছে এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, সাইটটির ডোমেইনের মালিকের নাম সহ কন্টাক্ট নাম্বার ও অ্যাড্রেস পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে ধরে নিতেই পারেন যে সাইটটি রিয়াল। কিন্তু যদি এখানে চেক করে সাইটটি সম্পর্কে এবং সাইটের মালিক সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য না পান বা যদি কোনো সন্দেহজনক তথ্য পান, তাহলে খুব সম্ভবত যে ওয়েবসাইটটি চেক করলেন, সেটি ফেক বা স্ক‍্যাম।

কন্টাক্ট ইনফরমেশন চেক করুন

এটা ফেক ওয়েবসাইট চিহ্নিত করার সবথেকে কার্যকরী উপায়। আপনি প্রায় অধিকাংশ সাইটেই পেজের কোনো একটা অংশে দেখবেন যে লেখা থাকে, Contact Us বা এমন ধরনের কিছু, যেখানে ক্লিক করে আপনি ওয়েবসাইটটির মালিক বা সাইটটি পরিচালক যারা আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করার উপায় জানতে পারবেন। সেখানে তাদের কন্টাক্ট অ্যাড্রেস থাকতে পারে, তাদের ফোন নাম্বার থাকতে পারে অথবা এমন কোনোকিছু লেখা থাকতে পারে যার সাহায্যে আপনি সহজেই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং আপনার সমস্যা বা মতামত জানতে পারেন বা কোনো কমপ্লেইন করতে পারেন।

কিন্তু, একটি ফেক বা স্ক‍্যাম ওয়েবসাইটের মালিক অবশ্যই চাইবে না যে আপনি তাদের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার পরে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রতারিত হন বা না হন, তারা এমনিতেই কখনোই চাইবে না যে কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করুক। কেন চাইবে না সেটা অবশ্যই আপনি ধারণা করতে পারছেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, কোনো ওয়েবসাইটের কোথাও যদি তাদের সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায় দেখতে পান বা তাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে তার কোনো ইনস্ট্রাকশন না পান, তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে এটি ফেক।

লগইন এবং পেমেন্ট পেজ চেক করুন

কোনো রিয়াল ওয়েবসাইট সবসময়ই তাদের ভিজিটর এবং অ্যাকাউন্টধারীদের সকল সেনসিটিভ ইনফরমেশনস গোপন রাখার চেষ্টা করে। আপনি যদি কোনো রিয়াল এবং ট্রাস্টেড ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করতে যান বা কোনো পেমেন্ট করতে যান, তাহলে সাধারণত সবসময়ই দেখবেন যে লগইন এবং পেমেন্ট পেজটি সিকিওর। অর্থাৎ, লগইন এবং পেমেন্ট পেজটির ইউ আর এল এর আগে HTTPS – এসএসএল থাকবে। অর্থাৎ, ওই পেজে ইন্টার করা আপনার সকল ইনফরমেশন সেফ।

কিন্তু কোনো সাইটে লগইন করার সময়  কোনো পেমেন্ট করার সময় যদি দেখেন যে ওই পেজটির ইউ আর এল এর আগে HTTPS নেই, তার অর্থ ওই পেজে ইন্টার করা আপনার ইনফরমেশনগুলো সেফ নয়। এমন যদি দেখেন, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন যে সাইটটি ফেক বা স্ক‍্যাম হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

সাইটটির রিভিউ চেক করুন

কোনো নতুন ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করার আগে বা কোনো নতুন অনলাইন স্টোর থেকে কিছু কেনার আগে বা কোনো সাইটে কোনো ধরনের পেমেন্ট করার আগে বা কোন নতুন সাইটে যেকোনো ধরনের কাজ করার আগে ওই সাইটটির ইউজার রিভিউ চেক করুন। আপনি সাইটটির নাম লিখে বা ডোমেইন লিখে গুগলের একটু ঘাটাঘাটি করলেই সাইটটির অনেক ইউজার রিভিউ পেয়ে যাবেন। যে সাইটটির রিভিউ চেক করবেন, ওই সাইটটির ডোমেইন এবং তার পাশে Review শব্দটি লিখে গুগলে সার্চ করলেই সার্চ রেজাল্টের বিভিন্ন লিংকে ওই ওয়েবসাইটটির সম্পর্কে অসংখ্য ইউজার রিভিউ পাবেন। এসব লিংক এবং ফোরামে গিয়ে দেখুন যে সাইটটি সম্পর্কে অন্যান্য ইউজাররা কি বলছে। চেক করুন যে এই সাইটটি থেকে আগে কেউ প্রতারিত হয়েছে কিনা। সাইটটি যদি ফেক হয় এবং আগেও স্ক‍্যাম করে থাকে, তাহলে এসব ইউজার রিভিউ থেকেই আপনি জানতে পারবেন। যদি অনেকগুলো ইউজার রিভিউ দেখার পরে সাইটটি সম্পর্কে পজিটিভ রিভিউ পান, তাহলে সাইটটি ব্যাবহার করুন বা সাইটটিতে পেমেন্ট করুন। কিন্তু যদি নেগেটিভ রিভিউ পান, তাহলে শিওর হতে পারেন যে সাইটটি ফেক বা স্ক‍্যাম।


তো এগুলোই ছিল কয়েকটি সহজ উপায় যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি ফেক এবং রিয়াল ওয়েবসাইটের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন এবং ফেক সাইটগুলো সহজেই আইডেন্টিফাই করতে পারবেন।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো প্রশ্ন  মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button