আমরা যখন ক্যামেরা বা ফটোগ্রাফী এর কথা কখনও চিন্তা করি, তখন আমাদের মাথায় কিন্তু প্রথমে একটা যন্ত্রের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে, আর সেটি হল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। তবে বাস্তবতা হলেও সত্য আমাদের অনেকেরই এই দামী প্রোফেশনাল ক্যামেরাটি কেনার সাধ্য নেই। আমাদেরকে একারনে আমাদের স্মার্টফোনটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার থাকতে হয়, আর ঠিক এই কারনে আমরা স্মার্টফোনটি কেনার সময় একটু ভালো ক্যামেরার ফোন পছন্দ করে থাকি। তো বন্ধুরা, আজ নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন, আজ জানব আপনার স্মার্টফোন ক্যামেরা এবং ডিসসএলআর ক্যামেরার পার্থক্য সম্পর্কে, জানব আসলে কোনটি ভালো।
আমরা যদি আইফোন ৭ এর ক্যামেরার দিকে তাকাই,সেখানে দেখব একটি ১২ মেগাপিক্সেল এর রিয়ার ক্যামেরা যেটি কিনা ৪কে ভিডিও শুট করতে পারে,অন্যদিকে কেবল দামী ও হাই-এন্ড ডিএসএলআর দিয়েই কেবল ৪কে ভিডিও শুট করা যায় । আর এ কারনের আগেকার পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরাগুলো আর কেউ কেনে না। এভাবে অনেকসময় আমরা দেখছি হাই-এন্ড স্মার্টফোনগুলো ডিএসএলআর ক্যামেরা গুলোকে টেক্কা দিতে শুরু করেছে। আমরা যদি শাওমি এ১ এর পোর্টেইট মোডে তোলা ছবি দেখি- তবে প্রথমে এটি ডিএসএলআরে না স্মার্টফোনে তোলা তা আলাদা করতে পারব না। একইভাবে এলজি এর ভি৩০ ও রেড উইপন যে ক্যামেরার তুলনা করলেও ফলাফল অনেকটা একই পাওয়া যায়।
আমরা একটা ছবি উদাহরন হিসেবে দেখাচ্ছি, এটা একটি ফোন দিয়ে তোলা এবং আরেকটি তোলা একটি প্রোফেশনাল ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে। প্রথম দেখাতে চোখে কিছু না পড়লেও, একটু খেয়াল করলে দেখবেন যেন, এখানে স্মার্টফোনের তুলনায় ডিএসএলআর ক্যামেরার কালার রেঞ্জ আরও বেশি, অন্যদিকে স্মার্টফোনে তা মিছিং। একই সাথে আমরা যদি কথা বলি রেজুলেশন এর তবে, স্মার্টফোনটি (আইফোন ৫) একই দৃশ্য ক্যাপচার করেছে এর সর্বোচ্চ দিয়ে ৩২৬৪*২৪৪৮ রেজুলেশনে,আর ডিএসএলআর ক্যামেরা তা ক্যাপচার করেছে ৫১৮৪*৩৪৫৬ রেজুলেশনে। তো পার্থক্যটা একটু বুঝতে পারছি নিশ্চয়ই।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৮ এর সাথে যদি তুলনা করা হয়, তবে আমরা দেখতে পাই ম্যাক্রো শট এর ক্ষেত্রে এটি ডিএসএলআর (ক্যানোন ৭৭ডি) এর থেকে ভালো পারফর্ম করছে।
উপরের ছবির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এখানে স্মার্টফোন (এস৮) এর ক্যামেরা এবং ডিএসএলআর (৭৭ডি) ক্যামেরা প্রায় একই দারুন একটি ছবি দিয়েছে। তবে জুম-ইন করলে এস৮ এর ক্যামেরার ক্যাপচার করা ডিটেইলস এর চাইতে, ডিএসএলআর এর ক্যাপচার করা ডিটেইলস এর পরিমান অনেক বেশি।
ডিএসএলআর কিছু সুবিধা
উপরের আমরা স্মার্টফোনের সাথে ডিএসএলআর এর যে পার্থক্যগুলো দেখলাম তা ১৫এমএম কিট লেন্স, তথা ডিএসএলআর এর একদম এন্ট্রি লেভেলের লেন্স দিয়ে তোলা। আর ডিএসএলআর এর মত প্রোফেশনাল ক্যামেরার সবচেয়ে সুবিধা হল এখানে বিভিন্ন সাইজের ও মানের লেন্স ব্যবহার করার সুবিধা থাকে। একটি হাইএন্ড ডিএসএলআর লেন্স ক্যামেরা দ্বারা ক্যাপচার করা শটের মান শতগুনে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এখানে ডিএসএলআর এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃশ্যের জন্য নানারকম লেন্স এর দেখা পাওয়া যায়। সাথে অবশ্যই ডিএসএলআর এ বৃহৎ সেন্সর লাগানো থাকে, বড় সেন্সর মানে বেশি লাইট ক্যাপচার করার ক্ষমতা, আর জন্যই ডিএসএলআর থেকে উঠানো ফটোতে বেশি ডিটেইল দেখতে পাওয়া যায়। ডিজিটাল ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে, এই আর্টিকেল থেকে আরো বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে স্মার্টফোনের জন্যও ছোট ছোট পোর্টেবল লেন্স পাওয়া গেলেও, বাস্তবিক অর্থে তা প্রোফেশনাল মানের জন্য না। স্মার্টফোনের ক্যামেরাগুলোতে ম্যানুয়াল মোডে অনেক অপশন থাকলেও, তা ডিএসএলআর এর ফাংশনালিটি এর ধারে কাছে যায় না। আর এই কারনে স্মার্টফোন থেকে একটি ডিসেন্ট মানের ছবি পাওয়া যায়, আর ডিএসএলআর থেকে পাওয়া যায় সুপেরিওর মানের ছবি।
আপনার জন্য কোনটা ভালো
আপনি যদি যা ক্যাপচার করবেন, তার ওপর সম্পূর্ণ কন্ট্রোল চান, যেকোনো মূল্যে যেকোনো ভাবে সেই দৃশ্যপট এর এক একটি ডিটেইলস ফ্রেমবন্দী করতে চান – তবে আপনি একটি ডিএসএলআর কিনতে পারেন। তবে প্রশ্ন যখন আসে ডিএসএলআর ওজন বেশি এবং বহন করার ঝামেলা আছে, তবে আমার পরামর্শ মতে একটি হাই-এন্ড স্মার্টফোনই আপনার জন্য হবে সেরা।
আপনি চলার পথে, তথা অন-দা-গো কোন ছবি চট করে তুলে ফেলতে পারেন একটি তুলনামূলক ভালো স্মার্টফোন ক্যামেরা দিয়ে। যেখানে ডিএসএলআর চালু করতে, ফাংশন সেট করে একটু সময় যায়ই। আপনি ভালো মানের ক্যামেরার জন্য ওয়ানপ্লাস ৫ থেকে শুরু করে গ্যালাক্সি ৮ এর মত স্মার্টফোন পছন্দ করতে পারেন একটি ভালো ক্যামেরার জন্য। কথা যদি আসে প্রোফেশনালিটির ক্ষেত্রে তবে বর্তমান সময়ে আপনি ডিএসএলআরই কিনতে পারেন, এতে ফুটেজ ও শট এর ওপর আপনার টোটাল কন্ট্রোল থাকবে। তবে হ্যা এমম দিন দূরে নেই যেদিন স্মার্টফোনও হয়ত ডিএসএলআর এর ওপর চলে যাবে।
আপনার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে আমি ইউটিউব চ্যানেল খুলব বা অন্যান্য প্রোফেশনাল কাজ করব আমার কি কেনা উচিত। যদি আপনি ইভেন্ট ক্যাপাচারিং, রেকর্ডিং এর মত কাজে নামতে চান তবে ডিএসএলআর কিনুন। আর ইউটিউব এর ক্ষেত্রে জরুরী নয় যে, আপনাকে ডিএসএলআরই কিনতে হবে। বহু বড় বড় ইউটিউবার এখনও মোবাইল দিয়ে শুট করে এবং তাদের মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার।
পরিশেষে
তবে এই কথা মানতে হবে পুরাতন পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার চাইতে স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলো অনেক উন্নত। স্মার্টফোন ও ডিএসএলআর কোনটি আপনার জন্য ভালো, সেটা নির্ভর করবে ক্যামেরা দিয়ে আপনার কাজ কি তার ওপর। কিন্তু প্রশ্ন যদি হয় কোন ক্যামেরা সবচেয়ে ভালো? ডিএসএলআর না স্মার্টফোন ক্যামেরা, তবে উত্তর দুটিই নিজের নিজের জায়গা থেকে ভালো। এই আর্টিকেলে আমরা এই দুটির ছোট একটি পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনার মনে হয়ত আরও অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে,নিচে কমেন্টে জানান। বেশি বেশি করে শেয়ার করুন বন্ধুদের মাঝে।