ফেসবুকের প্রাইভেসি স্ক্যান্ডাল এবং ডাটা মাইনিং প্র্যাকটিসের ব্যাপারে জানেনা এমন ইন্টারনেট ইউজার বর্তমানে খুব কমই আছেন। ফেসবুকই সম্ভবত সিলিকন ভ্যালির অন্যতম কোম্পানি, যাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য বার অবৈধভাবে ইউজার ডাটা কালেক্ট করার এবং ব্যাবহার করার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারনে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতাকেও ব্যাক্তিগতভাবে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ফেসবুকের এই প্রাইভেসি স্ক্যান্ডাল এবং ডাটা মাইনিং প্র্যাকটিসের আরেকটি হচ্ছে শ্যাডো প্রোফাইল, যার ব্যাপারে অধিকাংশ ইন্টারনেট ইউজাররাই জানেন না। যদি আপনিও এই প্রথম এই টার্মটি শুনে থাকেন, তাহলে চলুন জানা যাক,
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
শ্যাডো প্রোফাইল কি?
শ্যাডো প্রোফাইল জিনিসটি আসলে ফেসবুকের উদ্ভাবন করা নতুন কোনো কিছু নয়। শ্যাডো প্রোফাইল বলতে মুলত যা বোঝানো হয় তা হচ্ছে, কোনো সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইটে আপনার নিজের কোনো অ্যাকাউন্ট বা প্রোফাইল না থাকলেও আপনার ব্যাপারে কিছু ইনফরমেশন তারা কালেক্ট করে এবং তাদের ডাটাবেসে স্টোর করে রাখে। ডাটা কালেকশনের এই প্র্যাকটিসটিকেই বলা হয় শ্যাডো প্রোফাইল।
তবে হ্যা, এটা সব ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া করে না। যেসব সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন সার্ভিস বা ই-কমার্স ইন্ডাসট্রি ফেসবুক, গুগল বা অ্যামাজনের মতো জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রতিদিন কোটি কোটি ইউজারের ডাটা নিয়ে কাজ করে, তাদের অনেকেই শ্যাডো প্রোফাইল মেথড ব্যাবহার করে ইউজার ডাটা কালেক্ট করার জন্য। ব্যাপারটা এমন নয় যে ফেসবুক একাই শ্যাডো প্রোফাইল তৈরি করছে। হয়তো গুগল, অ্যামাজন, উবার এর মতো কোম্পানিরাও এই ধরনের ডাটা কালেকশন মেথড ব্যাবহার করছে, তবে তা প্রমানিত নয়। এখন হয়তো আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন,
কেন শ্যাডো প্রোফাইল?
ফেসবুক শ্যাডো প্রোফাইল কেন তৈরী করে এবং এই শ্যাডো প্রোফাইলের ডাটা ফেসবুক কি কাজে ব্যাবহার করে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলে এর উত্তর নির্ভর করবে আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন তার ওপরে। উদাহরনস্বরূপ, আপনি যদি ফেসবুকের কোন এমপ্লয়ীকে জিজ্ঞেস করেন যে ফেসবুক কেন এই কাজটি করে থাকে, তাহলে তারা হয়তো উত্তর দেবে যে, People You May Know অ্যালগরিদমের জন্য শ্যাডো প্রোফাইলের দরকার হয়। শ্যাডো প্রোফাইলের কারণেই আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরী করার পরে ফেসবুক অটোমেটিক্যালি আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলের ব্যাপারে জানতে পারে এবং আপনাকে আপনার সম্ভাব্য ফ্রেন্ডদের অনলাইন প্রোফাইল দেখাতে পারে। তবে এর ইউজেস এখানেই শেষ নয়।
সব লজিক বাদ দিয়ে, কেনই বা কোনো কোম্পানি বা ফেসবুক এমন কারো শ্যাডো ইউজার প্রোফাইল তৈরি করবে যে অ্যাকচুয়ালি তাদের কোনো ইউজারই নয়? শুনতে হাস্যকর শোনালেও ফেসবুকের কাছে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে। আমরা সবাই Data is the new oil এই টার্মটি শুনেছি। সত্যি কথা বলতে, বর্তমান সময়ে টেক কোম্পানিগুলোর কাছে ইউজার ডাটার থেকে বেশি মূল্যবান আর তেমন কিছুই নেই। তাই ফেসবুক যদি আগে থেকেই তাদের ফিউচার কাস্টোমারদের ব্যাপারে কিছু এস্টিমেটেড ডাটা স্টোর করে রাখতে পারে, তাহলে সেটা ইন-ফিউচার তাদের বিজনেসের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
হ্যা, আমি এখানে ইউজারদেরকে কাস্টোমার বলছি, কারণ আমরা নিজেরা নিজেদেরকে ফেসবুক ইউজার বললেও ফেসবুকের কাছে আমরা দিনশেষে একেকজন কাস্টোমারের থেকে কম কিছুই না। আমরা আছি বলেই ফেসবুক তাদের অ্যাড পার্টনারদের কাছ থেকে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারছে। তাই যদি বিজনেস পার্সপেক্টিভ থেকে ভেবে দেখেন, তাহলে একজন সম্ভাবনাময় কাস্টোমারের ব্যাপারে ইনফরমেশন আগে থেকে জেনে রাখা এই মুহুর্তে কোম্পানিকে কোনো ইন্সট্যান্ট প্রোফিট না দিলেও ভবিষ্যতে দিতেও পারে। কারণ, আবারো, যে কোম্পানির কাছে যত বেশি কাস্টোমার ডাটা আছে, সেই কোম্পানি ততটাই সাকসেসফুল। তাহলে এবার জানা যাক,
কিভাবে তৈরী করা হয় শ্যাডো প্রোফাইল?
শুনতে খুব কঠিন মনে হলেও আসলে কিন্তু শ্যাডো প্রোফাইল তৈরী করা ফেসবুক বা গুগলের মতো কোম্পানির কাছে খুবই সহজ। এর কারণ হচ্ছে, এদের কাছে অলরেডি এমন কোটি কোটি ইউজার আছে, যারা নিজেরাই জেনে বা না জেনে তাদেরকে শ্যাডো প্রোফাইল তৈরী করতে সাহায্য করছে। কিভাবে? আচ্ছা ধরুন আপনি একজন সাধারণ ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ইউজার, কিন্তু আপনি ফেসবুক বা ফেসবুকের অধীনে থাকা কোনো সার্ভিসই ব্যবহার করেন না। তবে আপনার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে যারা ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। তাদের কন্টাক্ট লিস্টে আপনার ফোন নাম্বার, আপনার নাম তো অবশ্যই সেভ করা আছে। আবার অনেকসময় দেখা যায় আপনার ঠিকানা, আপনার ইমেইল এড্রেস এগুলোও সেভ করা আছে। আর তারা ফেসবুক ব্যবহার করে তাই এটা ধরেই নিতে পারেন যে তারা ফেসবুক অ্যাপকে তাদের কন্টাক্ট লিস্ট অ্যাক্সেস করার পারমিশন দিয়ে রেখেছে। কারণ, কেন নয়?
এবার ভেবে দেখুন ফেসবুক কর্পোরেশনের কাছে আপনার ব্যাপারে ইনফরমেশন কালেক্ট করা কতটা সহজ। আপনার বন্ধুবান্ধবের কন্টাক্ট লিস্ট থেকেই তারা আপনার নাম, আপনার ফোন নাম্বার তো পাচ্ছেই, একইসাদা ভাগ্যবান হলে আপনার ঠিকানা এবং আপনার ইমেইল এড্রেসও জানতে পারছে। এবার আপনি যদি ফেসবুকের ইউজার নাও হন, ভবিষ্যতের জন্য তারা আপনার ইনফরমেশনগুলো তাদের ডাটাবেসে স্টোর করে রাখতে পারবে। কারন, যেমনটা আগে বলেছি, Data is the new oil। তাছাড়া ফেসবুকের কাছে আপনার ইনফরমেশন কালেক্ট করার শুধুমাত্র একটাই উপায় আছে এমনটা নয়। এটা শুধু সবথেকে সহজ এবং স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ওয়ে। এছাড়া আরও হাজার রকম উপায়ে ফেসবুক আপনার শ্যাডো প্রোফাইল তৈরী করতে পারে, যদি তারা চায়।
আমাদের কি করার আছে?
এর সহজ উত্তর হচ্ছে, কিছুই না। সত্যি কথা বলতে, আপনি বা আমি আমরা এতটাই আন-ইম্পরট্যান্ট পারসন যে, আমাদের ডাটা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেসবুক স্টোর করলেও তাতে আমাদের কখনোই কিছু যাবে আসবে না। আমরা কখনো জানতেই পারবো না যে ফেসবুক আমাদের শ্যাডো প্রোফাইল কেন এবং কিভাবে ব্যবহার করছে। তাই এগুলোর ব্যাপারে না ভাবাই ভালো, যদি আপনি খুবই প্রাইভেসি কনসার্নড লোক না হয়ে থাকেন। তবে যদি কোন সাবধানতা আপনি অবলম্বন করতে চান, তাহলে জাস্ট ফেসবুক অ্যাপ বা মেসেঞ্জার বা ফেসবুকের অধীনে থাকা কোন অ্যাপ, যেমন ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপকে আপনার কন্টাক্ট বুকের অ্যাক্সেস দেবেন না। যদিও, এইটুকু করে আপনি ফেসবুকের মতো জায়ান্ট টেক কোম্পানিকে ডাটা মাইনিং করা থেকে আটকাতে পারবেন না, তবে কোন অ্যাপকে কন্টাক্ট বুকের অ্যাক্সেস না দেওয়া একটা ভালো অভ্যাস।