Technology

সিগন্যাল কি? কেন সবাই সিগন্যালে মুভ করছে?

সিগন্যাল নাকি টেলিগ্রাম?

পেছনের কয়েকদিন থেকে বেশ বিজি ছিলাম, বেশ কিছু আপকামিং প্রজেক্ট নিয়ে। এরই ফাঁকে হোয়াটসঅ্যাপের কপালে যে শনি নাচছিল সেটা খুব একটা টেরই পাই নি। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা ছেড়েছি সেই ২০১৭ সালে, তাই হোয়াটসঅ্যাপের কি হচ্ছে সেটা নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা থাকে না বেশিরভাগ সময়। তবে ফেসবুকে আসতেই দেখি হোয়াটসঅ্যাপ এর কাহিনী দিয়ে সবাই পেজ ভরিয়ে ফেলেছে! চলছে হোয়াটসঅ্যাপ আর সিগন্যাল ম্যাসেঞ্জার এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডী টক্কর।

যারা এখনো গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন আর এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না, তাদের জন্য ব্যাপারটা একটু খোলাসা করছি। ঘটনা ঘটে যখন আমাদের মার্ক মামা হোয়াটসঅ্যাপের জন্য প্রাইভেসি পলিসি পরিবর্তন করে, মানে ফেসবুকের জিনিসের যে আবার প্রাইভেসি বলেও জিনিস থাকতে পারে, এটাই তো বড় ব্যাপার! যাকগে, নতুন প্রাইভেসি পলিসি অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপ আপনার ডাটা গুলো কিভাবে ফেসবুকের সাথে শেয়ার করবে এই ব্যাপারে বলা আছে। “হ্যাঁ, তো কি ভেবেছিলেন? মার্ক মামা এতো কোটি কোটি টাকা খরচ করে হোয়াটঅ্যাপ কিনলো, সার্ভিস মেইন্টেইন করছে, সব এমনি এমনি নাকি?”

যাকগে, এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি তাদের এই সার্ভিসটি ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে তাদের নতুন (এয়ার কোটস) প্রাইভেসি পলিসি একসেপ্ট করতে হবে। না হলে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এর পর থেকে আপনি আর তাদের সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি আছে এই নতুন প্রাইভেসি পলিসিতে? মানুষ হঠাৎ করে এতো খেপলো কেন?—সত্যি বলতে আমি তেমন কিছু খুজে পাইনি যেটাতে আপনাকে হোয়াটঅ্যাপ ছেড়ে দৌড়ে পালাতেই হবে। তারা নতুন প্রাইভেসিতে যা যা আপডেট এনেছে আমরা হুবহু তেমন বা ঐ আশেপাশের প্রাইভেসি পলিসি ফেসবুক আর গুগল এর সাথে অনেক আগে থেকেই এগ্রি করে আসছি। স্টিল তারা আপনার ব্যাক্তিগত ম্যাসেজ পড়তে পারবে না সেগুলো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনে সুরক্ষিতই থাকবে। “না, মার্ক মামার তো খেয়ে কাজ নেই, হেড কোয়াটারে বসে বসে আপনার দুষ্ট চ্যাট হিস্টোরি পড়ে সময় নস্ট করবে।”

তাহলে সমস্যাটা কই? ওয়েল, নতুন পলিসি আপডেটে তারা বেশ কিছু নতুন ডাটা কানেকশন পলিসি চালু করবে। যেমন- আপনার হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংস, আপনি কতক্ষণ অনলাইন থাকছেন, আপনার আলাদা অ্যাক্টিভিটি গুলো, কিছু ডায়াগনস্টিক ডাটা, আপনার ফোনের সিগন্যাল বারে কয়টা দাগ আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু জিনিস তারা ফেসবুকের আলাদা সার্ভিসেস গুলোর সাথে শেয়ার করবে।

এখন এই শেয়ার করার কারন তো বুঝতেই পারছেন… ফেসবুক টাকা ইনকাম ফোকাস করা একটি কোম্পানি। তারা কোন জিনিসই কিন্তু ফ্রীতে করবে না। যদি আপনাকে ফ্রীতে কিছু করতে দেয় সেটা অনেকটা বিড়ির এজেন্টদের মতো। যদিও আমি বিড়ি চুষি না, কিন্তু শুনেছি বিড়ির সেলস এজেন্টরা নাকি নানান ফ্রী স্যাম্পল দিয়ে যায় প্রথম প্রথম, তারপরে যেই আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে, এখন কিনে খা বেটা আর কতো ফ্রী টানাবো? তো ফেসবুকের ব্যাপারটাও সেইম।

তারা আপনার ব্যাবহারের অভ্যাস ট্র্যাক করতে চায়, আপনাকে নানানভাবে আরো বেটার জানতে চায়, যাতে আরো বেটার অ্যাডস প্লেসমেন্ট করতে সুবিধা হয়, যাতে আরো কোটি কোটি ডলার পকেটে ধুকানো যেতে পারে। এখন আগেই যেটা বললাম, এমন ট্র্যাকিং গুগল আর ফেসবুক বা আলাদা কোম্পানি গুলো আমাদের অনেক আগ থেকেই করে আসছে, হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপারটা নতুন। এখন এর মানে এটা নয় আপনার সকল ম্যাসেজ তারা পড়তে পারবে বা ভিডিও কল আর ভয়েজ চ্যাট তারা শুনে ফেলবে। কিন্তু তারপরেও অনেক ইউজারের মতে নতুন পলিসিতে অনেক পার্সোনাল ডাটা ট্র্যাকিং এর ব্যাপার উঠে এসেছে, আর সেটা ইউজারগন মোটেও পছন্দ করছেন না।

তাই হোয়াটঅ্যাপ থেকে ইউজারগন আলাদা আলাদা ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম গুলোর দিকে ধাবিত হতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা অ্যাপটি হচ্ছে সিগন্যাল ম্যাসেঞ্জার। ইতিমধ্যে ইলোন মাস্ক মামা সিগন্যাল ম্যাসেঞ্জারের বেশ সুনাম করেছেন, এমনকি সেখানে আরো বেশি বেশি টাকা ডোনেট করবে বলেও জানিয়েছেন, আর যান কোথায়? পাবলিক খেয়ে না খেয়ে কম্বল ক্যাথা গুছিয়ে সিগন্যালের দিকে দৌড়…


সিগন্যাল কি?

এখন এই হট্টগোলের মাঝে হয়তো অনেকেই সিগন্যাল ম্যাসেঞ্জারের মতো জীবনের প্রথম শুনছেন। সিগন্যাল হোয়াটসঅ্যাপেরই একটি রিপ্লেসমেন্ট কিন্তু বিশেষ করে প্রাইভেসি ফোকাস করা, মানে তাদের ট্যাগ লাইনই হচ্ছে প্রাইভেসি, বুঝলেন? — হ্যাঁ, আর তাইলে কি লাগে? এই সময় এমন একটা ট্যাগ লাইনই তো যথেষ্ট। এখন আর কিছুই জানার দরকার নেই চিন্তা করে বহু পাবলিক অলরেডি সিগন্যালে চলে এসেছেন।

মূলত এই ব্যাপার গুলো নিয়েই একটু আলোচনা করবো। সিগন্যাল কতোটা উপযোগী, হোয়াটসঅ্যাপের জন্য কতোটা গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট, এখানে কি আছে কি নেই এরই কিছু ওভারভিউ তুলে ধরবো। [ভবিষ্যৎ থেকে লেখা লাইন 😛 ]— আর পরিশেষে নয় হোয়াটসঅ্যাপ আর নয় সিগন্যাল বরং টেলিগ্রামের একটু গুনোগান গেয়ে আর্টিকেলের সমাপ্তি টানবো!

তো সিগন্যাল আর কিছুই নয় বরং বলতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, আই ম্যাসেজেস, বা এসএমএস এরই মোস্ট সিকিউরড ভার্সন। ইতিমধ্যে তো জেনেই গেছেন ইউজাররা হোয়াটসঅ্যাপ ত্যাগ করে সিগন্যালে চলে আসতে শুরুই করে দিয়েছে। কিন্তু কেন? মানে সিগন্যাল ই কেন?

সিগন্যাল স্পেশাল…

মডার্ন ম্যাসেজিং অ্যাপ এবং সার্ভিসেস গুলো ফিচার থেকে শুরু করে ইউআই ডিজাইন পর্যন্ত, সবকিছুতেই সিগন্যাল সেরা। সিগন্যাল সকল মোবাইল প্ল্যাটফর্মে রান করতে পারবেন সাথে এদের উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক সবকিছুর জন্যই ডেস্কটপ ক্ল্যায়েন্ট সফটওয়্যার রয়েছে। সবচাইতে বড় ব্যাপারটি হচ্ছে এটি ওপেন সোর্স একটি প্রজেক্ট আর সম্পূর্ণই ফ্রী! — আপনার শুধু দরকার একটি মোবাইল নাম্বার, Then You Are Ready To Go!

এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন থেকে শুরু করে, পার্সোনাল ম্যানেজিং, গ্রুপ ম্যাসেজিং, ফটো শেয়ারিং, ফাইল শেয়ারিং, ভয়েজ কলিং, এমনকি ভিডিও কলিং ফিচারও যুক্ত রয়েছে এই সিগন্যাল নামক অ্যাপটিতে। সিগন্যাল কোন বড় টেক কোম্পানির খেলনার পুতুল নয়, ফেসবুকের মতো এই অ্যাপের টাকা ইনকাম করারও কোন উদ্দেশ্য নেই। এটা সম্পূর্ণ নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন দ্বারা পরিচালিত। মানে বুঝতেই পারছেন এরা ডোনেশনের উপরে নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপন দেখানো বা টাকা ইনকাম করার লক্ষ্যে সিগন্যাল এর জন্মই হয় নি।

হ্যাঁ, কিছু ডাটা সিগন্যালও স্টোর করে কিন্তু সেটা আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য নয়। তাছাড়া এদের ট্র্যাকিং হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তো হাজারো গুনে কম আর বেশি মেনে নেওয়ার মতো। তাছাড়া মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের ক্লায়েন্ট অ্যাপ্লিকেশন এবং সার্ভার অ্যাপ্লিকেশন সম্পূর্ণ ওপেন সোর্স, আপনার কাছে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে আপনি নিজেই চেক করতে পারবেন সিগন্যাল মেসেঞ্জার কি কি জিনিস ট্র্যাক করছে আর কি কি করছে না। এদের সব সোর্স কোড গুলো আপনি গিটহাব থেকে দেখে নিতে পারবেন।

সিগন্যাল নাকি টেলিগ্রাম?

হোয়াটসঅ্যাপের এই হরিলুটে সবচাইতে প্রথম লাভের গুড় সিগন্যাল ম্যাসেঞ্জারই খাচ্ছে। তবে দ্বিতীয়তেই রয়েছে টেলিগ্রাম। এই আর্টিকেলটি লেখার সময় টেলিগ্রাম পেছনের মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ২৫ মিলিয়ন নতুন ইউজার যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সবমিলিয়ে প্ল্যাটফর্মটিতে এখন ৫০০ মিলিয়নেরও অধিক ইউজার রয়েছে।

দেখুন, আমরা প্রত্যেকদিন কিন্তু ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন করি না, এটা অনেকটা নিজের পুরাতন নাম্বার ব্যবহার করার মতোই ব্যাপার। তবে যেহেতু অনেকে হোয়াটসঅ্যাপ ত্যাগ করা শুরু করেই দিয়েছে তাই সিগন্যাল এ যাওয়ার সাথে টেলিগ্রাম সম্পর্কে না জানা একটু বোকামু হবে বলেই মনে করছি।

ঠিক আছে, খুব বেশি লম্বা করবো না, সিগন্যাল না টেলিগ্রাম, এটা নির্ভর করবে আপনার পছন্দের উপরে। আপনি যদি মারাত্মকভাবে প্রাইভেসি কন্সার্ন হয়ে থাকেন, তো কোন কথায় বলবো না, যান চলে যান সিগন্যালে। কিন্তু আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের পাওয়ারফুল কোন অল্টার্নেটিভ খোঁজেন, তো ইয়েস, হোয়াই নট টেলিগ্রাম? (টেলিগ্রামের কিছু বিশেষত্ব এখানে…)

দেখুন, এখন যা যা লিখতে চলেছি সবকিছুই আমার পার্সোনাল একেবারেই পার্সোনাল মতামত, তাই ঝগড়া লাগার চেষ্টা করবেন না। — আমি সিগন্যাল ব্যবহার না করে ব্যাক্তিগতভাবে টেলিগ্রামের উপরে একটু বেশিই টাকা খেয়েছি এই রকম! টেলিগ্রামের সবচাইতে ভালো লাগার দিক এর ক্লাউড সিঙ্ক, বছর আগের শেয়ার কোন কোন ফাইলও আমি আরামে খুজে পাই। হ্যাঁ, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারেও এটা থাকে, কিন্তু ফেসবুকের থেকে টেলিগ্রামের প্রাইভেসি অনেক বেটার। অ্যান্ড ইয়েস, টেলিগ্রাম ফাস্ট একটা জিনিস, মানে মারাত্মক ফাস্ট! এর অ্যাপ যেমন ফাস্ট তেমনই ফাস্ট এর ম্যাসেজ সেন্ড বা ডেলিভারি করার সময়। আমি হাই কোয়ালিটি ফটো শেয়ারিং করতে পারছি এমনকি সিঙ্গেল ফাইলের সাইজ ২জিবি পর্যন্ত সাপোর্ট করে, যেটা মারাত্মক একটা ফিচার!

টেলিগ্রামের স্টিকারস = লাভ, এই ব্যাপারে কোন ঝগড়া করা চলবে না। তবে হ্যাঁ, সিগন্যাল আপনার নাম্বার ছাড়া আর কিছুর স্টোর রাখে না, যেটার জন্য সিগন্যাল এর প্রাইভেসি টপ-নচ। তবে আমার কাছে সিগন্যাল জিনিসটা একটু বেশিই সিম্পল মনে হয়েছে, যদিও ইউআই পুরাই জোশ! কিন্তু তারপরেও টেলিগ্রাম থেকে ফাস্ট মনে হয়নি।

তো শেষ কথা হচ্ছে, যদি ফিচার রিচ কোন ম্যাসেজিং অ্যাপে মুভ করতে চান টেলিগ্রাম সে ক্ষেত্রে প্রথম চয়েজ হওয়া উচিৎ, হ্যাঁ এই মামলায় আমি একটু টাকা খাওয়ার মতোই কথা বলছি, Can’t Help it… আর যদি শুধু প্রাইভেসি আর প্রাইভেসি আসল ফোকাসড জিনিস হয় তো অবশ্যই সিগন্যাল ব্যবহার শুরু করুন। সিগন্যালে সবকিছুই রয়েছে টেলিগ্রাম জাস্ট একটু বেশি মাঠ প্রদান করে।


এখন এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলের সারাংশ কি দাঁড়ালো? আপনার কি এক্ষুনি হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে যেতেই হবে? সত্যি বলতে এটা এসেনশিয়াল না। আপনি স্টিল সেফ আপনার ম্যাসেজ গুলো এখনো প্রাইভেট। কিন্তু বেশ কিছু নতুন ডাটা তারা ট্র্যাক করতে শুরু করবে, যদি সেগুলো একেবারেই পছন্দ না করেন,  তো আলাদা জায়গায় মুভ করতে পারেন। তবে ইন্টারনেটে প্রাইভেসি খানিকটা হলেও কৌতুকের মতোই, এখানে সবার থেকে বেঁচে পালানো মুশকিল।

হ্যাঁ এই প্রাইভেসি পরিবর্তন এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ মিলিয়ন মিলিয়ন ইউজার হারালো বা আরো হারাবে, কিন্তু আমার মতে এখনো বেশিরভাগ ইউজারই হোয়াটঅ্যাপ ব্যবহার করবে। কেননা হঠাৎ করে প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন করা সকলের জন্য সহজ কাজ নয়। অপরদিকে শোনা যাচ্ছে হোয়াটঅ্যাপ নাকি বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করতে পারে, যদি এটা সত্যিই তাই হয়, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপের জন্য বিপদ সন্নিকটে। টেলিগ্রাম আর সিগন্যাল সব দিক থেকে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button