বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল একবার বলেছিলেন, “স্বভাবের দিক থেকে সব মানুষই হল সামাজিক প্রাণী।”
তাঁর মতে, কোনো মানুষ যদি অসামাজিক হয়, তাহলে সে না হয় কোনো অপ্রীতিকর দুর্ঘটনার কারণে অসামাজিক হয়েছে, না হলে সে পশু বা অতিমানবিক পর্যায়ভুক্ত প্রাণী।
এরিস্টটলের মত অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে আগে আসে সমাজকে গুরুত্ব।
অর্থাৎ, এই পৃথিবীর কোনো মানুষই সমাজের উর্ধে নয়।
মানুষকে বসবাস করতে হলে কোনো না কোনো সমাজের আশ্রয়েই জীবনধারণ করতে হয়।
মানব জাতি যেহেতু সঙ্গবদ্ধ জীব ও জীবনধারণ করতে গেলে মানুষকে একে ওপরের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়, সেহেতু মানুষকে দলবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়।
এখন প্রশ্ন হল, সমাজ কি বা সমাজ কাকে বলে ?
সমাজ কি বা সমাজ কাকে বলে ?
সাধারণভাবে বলতে গেলে, একদল মানুষ যখন অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ও বেঁচে থাকার জন্যে সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো চরিতার্থ করতে যখন একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে, তখনই তা সমাজের রূপ নেই।
অর্থাৎ, স্বার্থগত কারণে একে ওপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা জনগোষ্ঠীকে সমাজ বলা হয়ে থাকে।
সমাজবিদ্যায় সমাজের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সমাজ হল একই ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতির ও কথপোকথনের মানুষের জনসমষ্টি।
একটি সমাজে দুই না ততোধিক একই ভাষাভাষী, ও চিন্তাধারার মানুষের থাকা একান্ত আবশ্যক এবং এরা একে ওপরের পরিচিত হওয়া বাঞ্চনীয়।
প্রতিটি জনগোষ্ঠীভুক্ত সমাজের মানুষেরা দেশ, ভৌগোলিক দূরত্ব আর ভাষার ব্যবহার অনুযায়ী একটি অন্যটির থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের কোনো ধরা-বাঁধা সংজ্ঞা হয় না।
সমাজ বিজ্ঞানী মাকাইভার ও পেজের মতে, সমাজ হল এক বিমূর্ত সত্তা।
আমরা জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে চোখে দেখতে পেলেও, সমাজ বা সমাজের গঠনকে চোখে দেখতে পাই না।
আমার কেবলমাত্র সমাজের বাহ্যিক দিকগুলোকেই প্রতক্ষ্য করতে পারি।
এছাড়া, সমাজবিজ্ঞানী, ট্যালকট পার্সন্স বলেছেন যে সমাজ একটি এমন এক শব্দ, যা মানুষ ও তার সহকর্মীদের সম্পর্কের জটিলতাকে ব্যাখ্যা করে।
সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি ?
সমাজের সংজ্ঞাকে ব্যাখ্যা করলে, এর কতগুলো স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
সেগুলো হল-
১. সমাজ প্রকৃতপক্ষে মানুষের সমন্বয়েই গঠিত হয়।
২. প্রতিটি মানুষের উপর সমাজ একান্তভাবে নির্ভরশীল।
৩. সমাজের প্রতিটা স্তর একটি অপরটির উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।
৪. সমাজে শ্রম বিভাজন এবং দায়িত্ব বিভাজনের মাধ্যমেই লক্ষ্য সম্পাদিত করা হয়।
৫. সমাজে একতা ও সহযোগিতার অনুভূতি আছে। এটি কমবেশি একটি স্থায়ী সমিতি।
৬. সমাজ চির-প্রগতিশীল ও সমাজ একটি নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মমাফিক চলতে থাকা গঠন।
৭. সামাজিক ঐক্য সাধনের মাধ্যমে ও সমবেত উদ্যোগের দ্বারাই গোষ্ঠীর ইচ্ছা ও স্বার্থপূরণ বাস্তবায়িত হয়।
৮. সমাজের সদস্যরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভাব পোষণ করে থাকে ও সাধারণ স্বার্থ ভাগ করে নেয়ার প্রবণতা রাখে।
৯. এই সমাজ বহু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিয়ে গঠিত। সাদৃশ্য যেমন, প্রয়োজন, আদর্শ মান ও কার্যক্রম আর বৈসাদৃশ্য যেমন, মনোভাব, চেহারা, প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব সবকিছুই সমাজের অঙ্গ হিসেবে পরিচিত।
মানুষদের মধ্যে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য রয়েছে বলেই সভ্যতার পরিবর্তনশীলতা রয়েছে।
তা নাহলে সমাজ ও সংস্কৃতি সমস্তটাই এক জায়গাতে থমকে থাকতো।
১০. সমাজের ধারণ বিমূর্ত, কারণ সামাজিক সম্পর্কগুলোর অস্তিত কল্পনাতে অনুভব করা গেলেও তা চোখে দেখা বা ছুঁয়ে দেখা সম্ভবপর নয়।
১১. পারস্পরিক সচেতনতা, ক্রমাগত পারস্পরিক সচেতনতা, এবং সদস্যদের সাথে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমেই সমাজ পরিচালিত হয়ে থাকে।
১২. সহযোগিতা ও দ্বন্দ উভয়ই সমাজকে প্রভাবিত করে থাকে। মানুষদের মধ্যে সহযোগিতা ও দ্বন্দ আছে বলেই সমাজের পরিচালনার ক্ষেত্রে গতি রয়েছে।
কোনো একজন মানুষ সহযোগিতা ছাড়া এক সমাজের পরিচালনায় অপারোগ।
অন্যদিকে, দ্বন্দ্ব যদি সমাজে উপস্থিতি না থাকে, তাহলে মার্কসের আধুনিক দ্বন্দ্বের তত্ত্ব অনুসারে, সমাজ অচল হয়ে পড়বে আর মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।
সমাজের উপাদানগুলো কি কি?
সহজ অর্থে বলতে গেলে, সমাজের প্রধানতম উপাদান হল মানুষ।
আসলে, মানুষ জাতিকে ক্রেন্দ্র করেই তার সমাজ গড়ে উঠতে সক্ষম হয়ে হয়েছে।
একটি একটি মানুষের দলকে নিয়ে তৈরী হয় এক একটি পরিবার।
আর এই পরিবারও হল সমাজেরই এক বিশেষ অঙ্গ। ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের সমষ্টিতেই তৈরী হয়ে থাকে এক একটি সমাজ।
সমাজের সুষ্ঠূ পরিচালনার জন্যেই মানবজাতি নির্মান করেছে নানা ধরণের প্রতিষ্ঠানের।
যেমন- বাড়ি-ঘর, বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মচর্চার স্থান ও প্রভৃতি।
এছাড়াও, সমাজবিদ্যা অনুসারে তাত্ত্বিকভাবে সমাজের বেশ কয়েকটি উপাদান রয়েছে,
সেগুলো হল-
১. সাদৃশ্যতা বা অনুরূপতা (Likeness)
কোনো সামাজিক গোষ্ঠীর একত্রিত সহাবস্থানের ক্ষেত্রে likeness বা অনুরূপতার অবদান অন্যতম।
এককথায় বলতে গেলে, কোনো জনগোষ্ঠীর সাধারণ বংশ, উপজাতীয় সখ্যতা, পারিবারিক সুবিধা বা সামঞ্জস্যতার কারণেই তারা একই সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
অনুরূপতার অর্থই হল পারস্পরিক সাদৃশ্যতা। আর এই সাদৃশ্যতা থেকেই তৈরী হয় একটি সমাজ।
ম্যাকইভার বলেছেন যে আত্মতা, ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্কের গভীরতা নির্ভর করে পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে।
আর এই বোঝাপড়া তৈরী করতে গেলে অনুরূপটা একান্তই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান সমাজের যে কোনো জনগোষ্ঠীর কাছে।
গোষ্ঠীর অনুভূতিগুলোকে দৃঢ়ভাবে উদ্দীপিত করতে ও সেই গোষ্ঠীর স্ত্রী, পুরুষ ও শিশুদের একত্রিত করতে অনুরূপটা বেশ একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
পারস্পরিকতা তৈরী করতে অনুরূপটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
২. বৈসাদৃশ্যতা বা পার্থক্য (Differences)
অনরূপতার মতো উপাদান সমাজের ক্ষেত্রে সবসময় যথেষ্ট নয়।
সামাজিক সংগঠনের জন্যে অনুরূপতার পাশাপাশি বৈচিত্রতাও একান্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। সমাজ যেহেতু অনেকগুলো পরিবার নিয়ে গঠিত, সেহেতু প্রতটা পরিবারের মহিলা ও পুরুষের আলাদা জৈবিক বৈচিত্রও বিদ্যমান রয়েছে।
অন্যদিকে, সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো বিভক্ত হয় শ্রম বিভাজনের মাধ্যমে। আর অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে মানুষের জীবিকা ও কর্মকান্ডের উপর।
প্রতিটি মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, ব্যবহার, প্রতিভা, সবকিছুই একে অপরের থেকে আলাদা। তাদের প্রত্যেকের চিন্তাভাবনা, ভাবাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেকসময়ই আলাদা হয়ে থাকে।
আর, তাদের এই ভিন্নমত পোষণের জন্যেই সমাজ সবসময় চির গতিশীল থাকে।
প্রতিটা মানুষ তাদের স্বার্থ, সামর্থ্য, যোগ্যতা এবং প্রবণতার ভিত্তিতে সমাজের সংগঠন আরও মজবুত করে তোলে। তবে, প্রতিটা মানুষের পৃথক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কখনই দ্বন্দ্বের উদ্ভব করে না।
একটা সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কিছু বৈসাদৃশ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে।
প্রতিটা মানুষ একই রকম হলে তাদের সামাজিক সম্পর্ক অত্যন্তই সীমিত হয়ে যেত। তাদের মধ্যে পারস্পরিকতা ও আদান-প্রদান অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যেত।
বৈসাদৃশ্য অনুপস্থিতি মানুষের জীবনে একঘেয়েমি ও আগ্রহহীনতা তৈরী করতে পারে। আমরা কখনোই এমন একটি সমাজের কথা ভাবতে পারিনা, যেখানে সকলেই প্রাপ্তবয়স্ক, বা সকলেই যুবক কিংবা সকলেই বৃদ্ধ।
সমাজ বিশৃঙ্খলতার মুখোমুখি হলে, তবেই সমাজের পার্থ্যকের অবদান উপলব্ধি করা সম্ভব।
৩. পারস্পরিক সচেতনতা (The Reciprocal Awareness)
অনুরূপতা বা সাদৃশ্যতা পারস্পারিকতার সৃষ্টি করে। যারা নিজেদের পারস্পরিক সাদৃশ্যতা সম্পর্কে অবগত, তারা খুব সহজেই অন্যদের সাথে নিজেদের বৈসাদৃশ্যতা খুঁজে বার করতে সক্ষম।
সাদৃশ্যতা ও বৈসাদৃশ্যতা এই দুই উপাদানই সরাসরিভাবে সমাজের উন্নতির সাথে সংযুক্ত।
এই পারস্পরিক সচেতনতাই জনগোষ্ঠীর মধ্যেকার সাদৃশ্যতা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। প্রায় সমস্ত সামাজিক কার্যকলাপই পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।
এই পারস্পরিক সচেতনতা একটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মানসিক সম্পর্ককে গভীর করে তোলে। যা তাদের মধ্যে ঐক্যসাধন করতে সাহায্য করে।
৪. বৈসাদৃশ্যতা, যা সাদৃশ্যতার অধীন (Differences, subordinate to the likeness)
সমাজের অর্থ সাদৃশ্যতা হলেও, এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে সত্য নয়। বৈসাদৃশ্যতা কখনোই একা সমাজের গঠন করতে পারে না।
তাই, সমাজের উপাদান হিসেবে বৈসাদৃশ্য সবসময়ই সাদৃশ্যতার অধীনস্ত উপাদান। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকইভার বলেছেন, প্রাথমিক সাদৃশ্য ও প্রধান বৈসাদৃশ্যগুলো যেকোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রম বিভাজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই পার্থক্যগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে বিকশিত দ্বন্ধমূলক ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার (evolving conflicting management mechanism) ব্যবহার করা হয়। তা সত্ত্বেও, এই পার্থক্যগুলো সাদৃশ্যতার অধীনে ফেলা হয়ে থাকে।
৫. পরস্পর নির্ভরতা (Interdependence)
সমাজ পরিচালিত হয় পরস্পর নির্ভরশীলতার উপর নির্ভর করে। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটিও সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। মানুষ কখনোই এককভাবে নিজেদের বাসনা পূরণ করতে পারে না।
মানুষের পক্ষে একা বসবাস করাও অসম্ভব। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষকে অবশ্যই অন্যের উপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল থাকতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পরিবার বা সমাজের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষ দুই লিঙ্গের মানুষই একে ওপরের উপর নির্ভরশীল।
এই ক্ষেত্রে সমাজ নির্ভর করে জৈবিক পরস্পর নির্ভরতার উপর। এই দুই লিঙ্গের মানুষরা পরস্পরের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।
এছাড়াও, বর্তমানে দেশ থেকে শুরু করে মহাদেশগুলোও একে অপরের উপর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে। এমনকি, সম্প্রদায়, সামাজিক গোষ্ঠী এবং জাতিগুলিও পরস্পর উপর নির্ভর করে রয়েছে।
৬. সহযোগিতা (Cooperation)
সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতাও অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহযোগিতা ছাড়া কোনো সমাজই চলতে পারে না।
একই সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন মানুষেরা যদি একে অপরকে নিজেদের লক্ষ্যসাধনে সহযোগিতা না করে, তাহলে তাদের পক্ষে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজ গঠন কখনোই সম্ভব হবে না।
এছাড়াও, কোনো ব্যক্তিও কখনোই সুখী ও আরামপ্রদ জীবন যাপন করতে পারে না।
সহযোগিতা সমাজের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষেরা যখন তাদের সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কে অবহিত হয়, তখনই তারা পরস্পর সহযোগিতার জন্যে এগিয়ে আসে।
এছাড়াও, পি. গিসবার্ট বলেছেন যে সহযোগিতা হল সামাজিক জীবনের একদম প্রাথমিক প্রক্রিয়া, যা ছাড়া সমাজ গঠন একেবারেই অসম্ভব।
৭. দ্বন্দ্ব (Conflict)
যে কোনো সমাজেই দ্বন্দ একটি চির বিদ্যমান উপাদান। সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি দ্বন্দ্বেরও প্রয়োজন আবশ্যক।
একটি সুস্থ সমাজ গঠনের জন্যে সহযোগিতা ও দ্বন্দ, উভয় উপাদানের উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
জর্জ সিম্মলের মতে, দ্বন্দ্বমুক্ত সমাজের অস্তিত্ব কার্যত অসম্ভব।
একটি সমাজ গড়ে তুলতে গেলে, যেমন সম্প্রীতি, ও সহযোগিতার প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন বৈষম্য ও দ্বন্দের মতো উপাদানের।
সমাজের প্রয়োজন কেন ?
সমাজ মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যেহেতু মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, তাই মানুষের জন্ম থেকে, বেড়ে ওঠা ও মৃত্যু পর্যন্ত সমস্তটাই এই সমাজকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।
এই নিয়মমাফিক চলতে থাকা সমাজের নিয়ম আমাদের প্রত্যেকের জীবনে যথেষ্ট প্রয়োজনীয়।
সমাজ থেকে আমরা সুরক্ষা এবং স্বান্তনা পেতে চাই।
মূলত সমাজ গোষ্ঠী গঠন এবং সংস্কৃতি গঠন করতে সাহায্য করে।
এই সমাজই জনসাধারণের সুবিধা বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সর্বোপরি, সমাজ মানুষকে একত্রিত করে। সমাজের মূল প্রয়োজনীয়তা গুলো হল-
১. সামাজিক সমর্থন:
সমাজের প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষদের একটি সংগঠিত গোষ্ঠীতে পরিণত করা।
যাতে, তারা ভিন্ন উপায়ে পরস্পরকে সমর্থন করতে পারে।
কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, তবেই মানুষ সমাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে থাকে।
একটি সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায়, মানুষ তাদের প্রয়োজনে সমাজ থেকে প্রাপ্ত শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা চিকিৎসা সহজেই লাভ করতে পারে।
২. সামাজিক গোষ্ঠী গঠন:
একটি সমাজ নেটওয়ার্কের মতো কাজ করে। এই নেটওয়ার্কগুলো মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।
আর এই সম্পর্কগুলোই প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ তৈরী করতে সহায়তা করে। সমাজের মাধ্যমেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সাধন করতে সক্ষম হয়।
এর ফলে, সারা বিশ্বে একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়।
সমাজ পরিবার ব্যবস্থা ও সগঠিত সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা যেকোনো সমাজ গঠনের প্রাণবিন্দু হিসেবে কাজ করে।
৩. সংস্কৃতির সংগঠন:
সংস্কৃতিও সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রতিটা সমাজের মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি মেনে চলে। যা তাদের জীবনযাপনে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
সংস্কৃতির প্রভাবে মানুষের জীবনধারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে।
সমাজের কার্যকলাপের উপর এই সংস্কৃতির প্রভাব বিশেষভাবে পড়ে থাকে। শিল্প, ভাষা, সাহিত্য ও ধর্ম মানুষের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে থাকে প্রবলভাবে।
একই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত মানুষেরা একই ধরণের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক মূল্য ও বিশ্বাসকে মেনে চলে।
৪. ব্যবস্থাপনা:
ব্যবস্থাপনা সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা, যানবাহনের ব্যবস্থ্যা করা সমাজের অন্যতম কর্তব্য।
এছাড়াও, মানুষের নানা মৌলিক চাহিদা মেটাতে সমাজ অগ্রণী ভূমিকে পালন করে।
আর, এই সমস্ত ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্যে, সমাজে মানুষ সরকার বা শাসক সংগঠনের উপর নির্ভর করে।
এই সরকারি ব্যবস্থা কোনো দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫. সাধারণ লক্ষ্য:
সমাজের প্রতিটা মানুষের একে ওপরের কল্যাণের কথা মাথায় রাখা উচিত।
যেকোনো সমাজের মূল লক্ষ্যই হল সম্মিলিতভাবে নিজের জনগোষ্ঠীর উন্নতিসাধনের পথে একত্রে এগিয়ে চলা।
সমাজের অংশ হিসেবে প্রতিটা মানুষের কর্তব্য হল সকল মানুষকে পাশে নিয়ে সাধারণ লক্ষ্য সাধনের উদ্দেশ্যে সমবেত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে আমরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানলাম, সমাজ কাকে বলে (what is society in Bengali), সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি এবং সমাজের প্রয়োজন কেন হয় এই প্রত্যেকটি বিষয়ে।
আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই পছন্দ হয়েছে।
সমাজ নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগে থাকলে তাহলে আর্টিকেলটি অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে অবশই জানাবেন।