আর্টিকেল

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস গুলো এতো গরম হয়ে যায় কেন?

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কেন গরম হয়?

আপনি যদি টেকনোলজি এবং মডার্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করেন বা প্রযুক্তির দুনিয়ায় মোটামোটি খোঁজখবর রাখেন, তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন যে ডেস্কটপ বা পিসি বা স্মার্টফোন বা প্রায় সব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের অন্যতম বড় একটি সমস্যা হচ্ছে গরম হয়ে যাওয়া। লো এন্ড সিস্টেম বা পিসির কথা তো বাদই দিলাম, আপনার পিসি যদি অনেক হাই কনফিগ হয়,  তাহলেও আপনি অবশ্যই এই গরম হয়ে যাওয়ার প্রবলেমে অনেকবার পড়বেন এবং আপনার সিস্টেম হাই এন্ড হলে সেটি লো এন্ডের তুলনায় আরো বেশি গরম হবে।

যারা পিসিতে হাই এন্ড গেম খেলেন তাদের কাছে এই সমস্যাটি আরো গুরুতর।আপনার পিসির কুলিং সিস্টেম যদি ভালো না হয়, তবে পিসিতে কোনো সিপিইউ/জিপিইউ ইন্টেন্সিভ কাজ করার সময় আপনার পিসিটি ওভেনের মতো গরম হয়ে যাওয়াটাও অবাক হওয়ার কিছু না। আপনি হয়তো ভালোভাবেই জানেন যে কিভাবে পিসি, স্মার্টফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইসগুলো কিভাবে ঠান্ডা রাখতে হয় এবং কিভাবে পিসির জন্য ভালো কুলিং সিস্টেমের ব্যাবস্থা করতে হয়, কিন্তু হয়তো কখনো ভেবে দেখেন নি যে কেনই বা পিসি,স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো এতো গরম হয়ে যাচ্ছে যে সেগুলোকে ঠান্ডা রাখার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে? আজকে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো আমরা।


ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কেন গরম হয়?

এই সাধারণ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে সবার প্রথমে বিশ্বজগতের একটি মৌলিক নিয়ম বা Law জানতে হবে যেটি হচ্ছে থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র। এই সূত্র অনুযায়ী, যখনই এই বিশ্বজগতে কোনো ধরণের শক্তি ব্যবহৃত হয়, তখন ওই শক্তির একটি ছোট অংশ ওয়েস্ট এনার্জি হয়ে যায় যা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই ওয়েস্ট এনার্জি হচ্ছে সেইটুকু শক্তি যেটি ব্যবহার করা হয়না বা ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। কারণ, আপনি যদি পদার্থবিজ্ঞান পড়ে থাকেন তাহলে জানেন, কোনো যন্ত্রেরই কার্যক্ষমতা ১০০% হয়না। অর্থাৎ, কোনো যন্ত্রই যতটুকু এনার্জি বা যতটুকু বিদ্যুৎ শক্তি টেনে নেয়, তার সবটুকু শক্তি ব্যবহার করতে পারেনা। অবশিষ্ট যে শক্তিটি থাকে সেটাই ওয়েস্ট এনার্জিতে পরিণত হয়।

এই ওয়েস্ট এনার্জিই তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আর এই বিষয়টি শুধুমাত্র ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের জন্যই প্রযোজ্য না। যেহেতু এটি বিশ্বজগতের একটি মৌলিক সূত্র, তাই এটি মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে টেলিভিশন, মোটরসাইকেল, গাড়ি এবং এমনকি লাইট বাল্ব ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যেটি কোনোধরণের এনার্জি ইউজ করে।

স্মার্টফোন, পিসি বা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আরো গভীরে যেতে হলে বলতে হয় মাদারবোর্ডের ব্যাপারে। আমরা অনেকেই জানি, প্রত্যেকটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোর অবশ্যই একটি মাদারবোর্ড থাকে যার মধ্যে অনেক ইলেক্ট্রনিক সার্কিট থাকে। আর এই সার্কিটগুলোর মধ্যে থাকে অনেক ধরণের ট্রানজিস্টর। এই ট্রানজিস্টরগুলোর কাজ হচ্ছে পাওয়ার সাপ্লাই বা ইলেকট্রিক ফ্লোকে কন্ট্রোল করা বা লিমিট করা যাতে আপনার মাদারবোর্ডে থাকা সব কম্পোনেন্টস ঠিক যতটুকু এনার্জি দরকার ঠিক ততটুকু এনার্জিই পায়।

কারণ আপনার পিসির সেন্সিটিভ কম্পোনেন্টস যেমন আপনার প্রোসেসর যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি এনার্জি পায়, তাহলে সেটি ভালোভাবে কাজ করবে না এবং যদি অনেক বেশি এনার্জি পায়, তাহলে সেটি ড্যামেজ হয়ে যাবে। তাই পিসির প্রত্যেকটি কম্পোনেন্টস এ কতটুকু কারেন্ট যাচ্ছে তা কন্ট্রোল করা এবং লিমিট করা প্রয়োজন। আপনার স্মার্টফোন এবং আপনার টেলিভিশন এবং এই ধরণের অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিএভিসের ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটে।

এখানেই মূলত আসে ডিভাইস গরম হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি। এই যে ট্রানজিস্টরগুলো কারেন্টের ফ্লো কে লিমিট করে বা কমিয়ে দেয়, তারপরে এই বাকি যে ট্রানজিস্টেড এনার্জি অবশিষ্ট থাকে সেগুলোকে অবশ্যই কোথাও যেতে হবে। কিন্তু এই ট্রানজিস্টেড এনার্জিগুলো কারেন্টের মেইন সোর্সে ফিরে যেতে পারবে না। তাই এগুলো অবশেষে থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র মেনে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ডিভাইস থেকে বেরিয়ে যায়। এবার ভেবে দেখুন, এখনকার মডার্ন ডিভাইসগুলোতে কত অসংখ্য ট্রানজিস্টর থাকে এবং কত অসংখ্য ট্রানজিস্টর একইসাথে কাজ করতে থাকে।

আপনি যদি পিসি বা স্মার্টফোনের প্রোসেসরের কথা চিন্তা করেন, তাহলে একটি ছোট কয়েক বর্গ সেন্টিমিটার প্রোসেসরে মিলিয়নের উপরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর থাকে যেগুলো একইসাথে কোনোটি অন এবং কোনটি অফ হতে থাকে যখন আপনি পিসিতে বা স্মার্টফোনে কোনো কাজ করেন। যখন আপনি পিসিতে কোনো সিপিইউ এবং জিপিইউ ইনটেনসিভ কাজ করবেন যেমন, গেমিং, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি তখন এসব ট্রানজিস্টর সাধারণের তুলনায় আরো বেশি কাজ করে আপনার ওয়ার্কলোডের ওপরে ডিপেন্ড করে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন এসব ট্রানজিস্টর কত বেশি ট্রানজিস্টেড এনার্জি জেনারেট করবে। এবার নিশ্চই ধারণা করতে পারছেন যে কেন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো এতো বেশি গরম হয়ে যায় অনেক সময়।

এখন আপনি বলতে পারেন যে আপনি কোনো সিপিইউ বা জিপিইউ ইনটেনসিভ কাজ না করলেও কেন আপনার পিসি গরম হয়। যেমন, আপনি খেয়াল করে দেখবেন,আপনি কোনো লাইট টাস্ক যেমন ফেসবুক ব্রাউজিং, নেট সার্ফিং বা মাইক্রোসফট অফিস প্রোগ্রাম ইউজ করার মতো লাইট টাস্ক রান করলেও কেন আপনার পিসি গরম হয়। হ্যা, হেভি টাস্ক রান করার সময় যেমন গরম হয়, লাইট টাস্ক রান করলে ততো বেশি গরম হয়না, তবে হালকা একটু গরম ঠিকই হয়।

এর কারণ হচ্ছে, অনেকেই জানেন না যে আপনি যখন আপনার পিসি বা স্মার্টফোনে কোনোধরনের কাজ না করলেও শুধুমাত্র পাওয়ার অন করা থাকলেও আপনার ডিভাইসের সব কম্পোনেন্টে সবসময় কিছু না কিছু কারেন্ট ফ্লো হতেই থাকে। এটাকে বলা হয় লিকেজ। ঠিক যেমন, একটি মানুষকে জীবিত থাকতে হলেও কিছুটা ক্যালোরির দরকার হয়। এই একই বিষয়টি ডেস্কটপ/পিসি বা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও ঘটে। তাই কোনো ধরণের কুলিং সল্যুশন না রেখে কোনো ডেস্কটপ বা পিসি কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়।


তো এই ছিল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বিশেষ করে পিসি এবং স্মার্টফোন কেন গরম হয় তার একটি সহজ ছোট ব্যাখ্যা। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button