১০টি স্টক মালের ব্যবসা যেগুলো সহজেই শুরু করা যাবে
সেরা ১০ টি স্টক মালের ব্যবসা গুলোর তালিকা
সেরা স্টক মালের ব্যবসা গুলো – আমরা সবাই জানি ও মানি যে ব্যবসা হল একটি স্বাধীন প্রফেশন, এখানে ব্যবসায়ীর লাভ-ক্ষতি সমস্তটাই বর্তায় তার নিজের উপর। ব্যবসায় লাভের ভাগিদারও সে, আবার ক্ষতির ভাগিদারও সে নিজেই।
তাই, আজকে আমরা আলোচনা করবো এমন একধরণের ব্যবসার সম্পর্কে, যেখানে লাভ-ক্ষতির ঝুঁকি সমানভাবে বর্তমান,
কিন্তু লাভ করতে পারলে আপনিই বাদশা।
এমনকি, এই ব্যবসা করা সবার পক্ষেই সম্ভব আর খুব সাধারণ বুদ্ধি লাগিয়েই এই ব্যবসা থেকে ভালো আমদানি করা যায়।
তাই, আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের বিষয় হল সেরা ১০টি স্টক মালের ব্যবসা যেগুলো জেকেও সহজেই শুরু করতে পারবেন।
সেরা ১০ টি স্টক মালের ব্যবসা গুলোর তালিকা
ব্যবসার শুরুতেই কেউ বিশাল মুনাফা করতে না পারলেও, এই ধরণের ব্যবসাতে লাভ করার রাস্তাটা অনেকটাই সহজ।
আসুন, আমরা জেনে নিই বেশ কতগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ ও লাভজনক স্টক মালের সাথে জড়িত ব্যবসা গুলোর সম্পর্কে।
১. ধান:
ভারত পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়তম সর্বোচ্চ ধান উৎপাদনকারী দেশ, যেখানে ফিনান্সিয়াল ইয়ার ২০২০-২১ সালে প্রায় ১২কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে।
ভারতের প্রধান শস্য হিসেবে ধানের চাহিদা সারা দেশেই ব্যাপকভাবে আছে। তাই, প্রধান খাদ্য হিসেবেও আমাদের দেশবাসীর মধ্যে ধানের চাহিদা প্রায় সারা বছর ধরেই থাকে।
তাই, আপনি যদি ধান তোলার সময়ে সস্তায় ধানের বস্তা মজুত করে রাখেন, তবে মূল্যবৃদ্ধির সময় কিংবা সিজন চলে যাওয়ার পরও, মার্কেটে ধানের চাহিদা বাড়লে, আপনি আপনার মজুত করা চাল, চড়া দামে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।
তবে, অধিক মুনাফার লোভে যদি সময় থাকতে থাকতে ধান না বিক্রি করেন, তবে পরে মার্কেটে ধানের দাম পড়ে গেলে, আপনার ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।
আর, সস্তায় ধান পেতে গেলে সরাসরি চাষিভাইদের থেকেই তা কেনা ভালো। এতে, আপনার প্রফিট মার্জিন অনেকটাই বেশি রাখতে পারবেন।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন, যেহেতু ধানের মতো শস্য সহজেই পচনশীল, তাই উপযুক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলে তবেই বেশি পরিমাণে তা কিনবেন, নাহলে শস্য বিক্রি না করতে পারলেও, আপনার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে পারে।
২. আলু:
বাংলা তথা ভারতের প্রায় অনেক রাজ্যেই আলু একটা জনপ্রিয় সবজি।
এটা খরিফ বা রবি শস্য হলেও, ভারতে সারা বছর আলুর চাষ সবসময় সম্ভব হয় না। মূলত, আমরা শীতকালেই বাজাতে নতুন আলু উঠতে দেখি।
আর, আলুর চাষ মোটামুটি শুরু হয় জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আর নাহলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে, বাকি সময়গুলোতে আলুর চাষ ভারতের জলবায়ুতে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
কিন্তু, এইদিকে বাংলার জনগণদের মধ্যে আলুর চাহিদা সারা বছর জুড়েই থাকে।
তাই, বুঝতেই পারছেন, আলুর সিজেন চলাকালীন যদি আলুর বস্তা ভরে গুদামজাত করতে পারেন, তাহলে অফ-সিজেনগুলোতে কিংবা অতি বন্যা বা ক্ষরা পরিস্থিতিতে খুব সহজে আর বহু টাকার প্রফিট রেখে আপনি আলু বিক্রি করতে পারবেন।
তবে, আলু খুব তাড়াতাড়িই পচে যেতে পারে, তাই কোল্ড-স্টোরেজ, গুদাম ঘর থাকলে বা তার সমতুল্য কোনো ব্যবস্থা থাকলে, তবেই বেশি করে আলু স্টক করবেন। নাহলে, অল্প পরিমাণে কিনে, খুব কম সময়ের মধ্যে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।
আর যেহেতু, আলুর পচে যাওয়ার ঘটনা মাঝে-সাঝেই দেখা যায়, তাই অনেকক্ষেত্রেই অন্যান্য ব্যবসায়ীরা তাদের স্টকে থাকা আলুর দাম আকাশছোঁয়া মূল্যে বিক্রি করে সেই দিক থেকে মুনাফা লোটার চেষ্টা করে।
তাই, এই স্টক মাল ব্যবসায় লাভ বরাবরই বেশি দেখা যায়।
৩. আদা ও মশলা:
খাদ্যরসিক বাঙালিরাই জানে রান্নায় আদা বা মশলা থাকাটা কতটা জরুরি। করোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ও নানান রাজনৈতিক কারণে মশলা, ড্রাই ফ্রুইটস ও অন্যান্য খাদ্যবস্তুর দাম চরমে পৌঁছলেও বিক্রির ক্ষেত্রে কিন্তু সেরকম মন্দা দেখা যায়নি।
আর ভারত পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়তম দেশ, যেখানে সবথেকে বেশি আদার চাষ করা হয়।
তবে, গরম মশলার ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা অন্যান্য দেশের উপর নির্ভর করেও থাকে।
তাই, স্টক মাল হিসেবে আদা, হিং, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, জয়িত্রী, কেশর, জায়ফল প্রভৃতি বেশ লাভদায়ী পণ্য।
বাজারে আমরা নানা কারণে এইসব মশলাপাতির দাম উঠতে বা পড়তে দেখেই থাকি।
আর যেহেতু এই সব পণ্যের সেল্ফ লাইফ বা স্থায়িত্বকাল অনেকটা বেশি; তাই, আপনি সহজেই এইগুলো স্টকে রাখতে পারবেন। আর, বাজারে এর দাম চড়লে আপনার পছন্দমত মূল্যে বিক্রিও করতে পারবেন।
তবে, এই সব পণ্য কেনাও অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, তবে প্রফিট মার্জিন যথেষ্ট ভালো আসে।
৪. গম:
ধানের পর ভারতের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য হল গম। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে প্রায় ৪২৮ লক্ষ টন গমের চাষ হয়েছিল। আর ভাতের পর সারা বছর ধরে বাঙালিরা সবথেকে বেশি পরিমাণে রুটি, পরোটাই খেয়ে থাকে।
এই কারণেই, সাধারণ মানুষের কাছে গমের চাহিদা বছরভরই থাকে। তাই, গমকে স্টক মালের ব্যবসার জন্যে নির্বাচন করাও খুব ভালো সিদ্ধান্ত।
ভারতে মূলত শীতকালে গমের চাষ হয়ে থাকে। আর, বছরে মাত্র একবার গমের চাষ করা সম্ভব হয় এই দেশে।
তাই, চাষের সময় যদি আপনি পরিমাণমতো গম মজুত করতে পারেন, তাহলে সারা বছর ধরে আপনি অফ-সিজন গুলোতেও বেশ মোটা টাকাতেই গম বিক্রি করতে পারেন।
আর, গমের সবথেকে বড় সুবিধা হল, এই শস্যকে যদি আপনি সঠিকভাবে রাখতে পারেন, তবে একবছর অবধি এই ফসল দিব্যি থাকে।
তাই সেক্ষেত্রে আপনার লস হওয়ার চান্স প্রায় থাকে না বললেই চলে।
৫. সিগারেট:
সিগারেট আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকারক হলেও, পকেটের জন্যে কিন্তু মোটেও ক্ষতিকারক নয়।
তবে, এই ব্যবসা কিন্তু ক্ষনিকের ব্যবসা, তাই একবারে, কম সময়ে, অনেকটা টাকা পেতে এই স্টক মালের জুড়ি মেলা ভার।
সিগারেটের স্টক জমানোর সবথেকে ভালো সময় হল আর্থিক বাজেট পেশ হওয়ার আগের দিনগুলো।
কারণ, প্রতিবার বাজেট পাশের পর দেখা যায় সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
যেহেতু এই ব্যবসাটি সবসময় করা যায় না, তাই আপনার টার্গেট থাকবে, বাজেটের পর আপনার সংগ্রহে থাকা সিগারেটগুলো বেশ অনেকটা প্রফিট মার্জিনে সাথে সাথে বিক্রি করে দেওয়া।
৬. বাদাম:
স্টক মালের ব্যবসা করতে চাইলে বাদামের মতো ভালো পণ্য আর কিছু হতে পারে না।
আমাদের দেশে মহারাষ্ট্র, আসাম, কাশ্মীর, থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গাতে নানা ধরণের বাদামের চাষ হয়।
আর সব থেকে ভালো বিষয় হল বাদাম সঠিকভাবে সংগ্রহ করলে বছরের পর বছর ভালোভাবে গুদামজাত রাখা যায়।
আর, যত দিন যাচ্ছে এই বাদামের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সারা বছরে খুব সীমিত সময়ের জন্যেই বাদামগুলো চাষ করা সম্ভব হয়।
তাই, বছরের একসময় এই বাদাম সংগ্রহ করে রাখতে পারলে, অনেকদিন পরেও আপনি তা ভালো মূল্যের বিনিময়ে বাজারে ছাড়তে পারবেন।
আর, বাদামের বিক্রি সবথেকে বেশি হয় শীতের সময়। তাই এই সময়ে আপনি আপনার প্রয়োজনমতো মুনাফা আরামসে পেয়ে যেতে পারবেন।
৭. পেঁয়াজ:
ঠিক আলুর মতোই প্রতিটা বাঙালির ঘরে পেঁয়াজ একটা বহুল চাহিদাযুক্ত সবজি।
করোনাকালে আমরা পেঁয়াজ নিয়ে অনেক কালোবাজারির শিকার হয়েছিলাম। আর এই সুযোগে বহু মানুষের পকেট পেঁয়াজ বিক্রির টাকায় গরমও হয়ে উঠেছিল। তাই স্টক মাল হিসেবে পেঁয়াজের গুরুত্ব বুঝতেই পারছেন।
তবে, পেঁয়াজ কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই পচে যায়। তাই, আপনার গুদামে যাতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা থাকে, সেটা অবশ্যই দেখে নেবেন।
আর এখানেও চেষ্টা করবেন, যাতে সরাসরি চাষীদের থেকেই পেঁয়াজ কেনা যায়। এতে করে আপনি বিক্রির সময় আপনার মুনাফার মার্জিনটা বেশি রাখতে পারেন।
৮. সর্ষে:
আমাদের ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যের মতো বাংলাতেও অনেক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সর্ষের চাষ হয়। আর ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রায় সমস্ত রাজ্যেই সর্ষের বর্ষব্যাপী চাহিদা থাকে।
তবে, সর্ষে বাংলাতে গরমকালে ও শীতকালের শেষে বেশি চাষ করতে দেখা যায়।
তাই সিজনে যদি চাষিদের থেকে আপনি কম দামে সর্ষে সংগ্রহ করে গুদামজাত করতে পারেন, তাহলে সারা বছরে কম-বেশি সর্ষে বিক্রি করে আপনি যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন।
এছাড়াও, সর্ষের দাম ওঠা-নাম করে। আর যেহেতু আমরা জানি, সর্ষে থেকে তৈরী হওয়া তেলের চাহিদা ভারতে ব্যাপকভাবে হয়েছে।
সেই কারণেই, কাঁচামাল হিসেবে সর্ষেও প্রায় সারা বছরই চাহিদাতে থাকে।
আর, সর্ষে গুদামজাত করলে বছরের পর বছর অল্প যত্নেই ভালো থাকে। তাই যত্নের দিক থেকে এই পণ্যটির বেশি কোনো হ্যাঁপাও নেই।
৯. ডাল:
বাঙালির ঘরে ডাল-ভাত হলেই সকলের খাওয়া হয়ে যায়। আর উদ্ভিজ প্রোটিনের ক্ষেত্রে ডালের কোনো জুড়ি নেই।
মানুষ রোজ মাছ-মাংস-ডিম না খেতে পারলেও, চেষ্টা করে অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে পেট চালানোর।
আর সেই জন্যেই এই দেশে ডালের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। তাই, মজুদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ডাল হল লাভজনক একটা পণ্য।
আমাদের দেশে ছোলা, মটর, মুগ, অড়হর, বিউলি, মুসুর ও নানান ধরণের ডাল বছরের বিভিন্ন সময় চাষ করা হয়ে থাকে।
সেক্ষেত্রে, ফসল তোলার সময় আপনি কম দামে এগুলো কিনে গুদামে রাখতে পারেন।
এরপর যখন সিজন চলে যাবে, তখন বেশি দামে এই ডালগুলো আপনার মনমতো দামে বিক্রি করতে পারবেন।
১০. পোষাক-আশাক:
আপনি দেখবেন, যখন শীতকালের শেষ হয়ে যায় তখন উলের সোয়েটার আপনি জলের দরে পেয়ে যান যেকোনো মার্কেটে।
ঠিক তেমনই, আপনি দেখবেন গরমের স্টাইলিশ জামাকাপড় শীতের শুরুর দিকে খুবই কম টাকায় পেয়ে যান।
তাই, আপনি যদি কাপড়ের স্টক ব্যবসা করতে চান, তবে অবশ্যই শীতকালে গরমের পোশাক আর গরমে শীতের পোশাক কম দামে স্টক করে নিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে, শীতকালে চড়া দামে আপনি শীতের পোশাক বিক্রি করতে পারেন, আর গরমকাল এলে তার ঠিক উল্টোটা করতে পারেন।
এছাড়াও, মোজা, জুতো ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সেই এক সূত্রই প্রযোজ্য।
উপসংহারে:
স্টক মাল বা মজুতের ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা অন্য ধরণের ব্যবসার থেকে অনেকটাই কম থাকে।
তাই, যদি আপনি নিজের প্রথম ব্যবসা শুরু করতে চলেছেন, তবে সেক্ষেত্রে এই কাঁচামালের স্টক রেখে তার সাহায্যে ব্যবসা করার আইডিয়াটি অনেকটাই বেশি গ্রহণযোগ্য।
আর, এই ব্যবসা করতে গেলে সবথেকে ভালো একটা টিপ্ হল কখনোই একধরণের পণ্য একগাদা না কিনে, তার জায়গায় নানান ধরণের পণ্য অল্প অল্প পরিমাণে কেনা ভালো। যাতে করে, একটা পণ্য থেকে লাভ না আসলেও, বাকিগুলো থেকে আপনি আপনার ক্ষতিপূরণ সহজেই করতে পারেন।
আমাদের আজকের এই স্টক মাল ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে লিখা আর্টিকেলটি এখানেই সম্পূর্ণ হল।
যদি, আর্টিকেল থেকে আপনারা এই ব্যবসা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।