আর্টিকেল

জেনেনিন জীবন বীমা কেন করবেন এর ১০ কারণ

জীবন বীমা করাটা কেন জরুরি ?

জীবন বীমা কেন করবেন ? কি লাভ হবে বা জীবন বীমা করাটা কেন জরুরি ? জেনেনিন ১০ টি কারণ বাংলাতে। 

আমাদের জীবন একেবারেই অনিশ্চিত।

তাই, আমরা কেউ কখনই জানি না, যে আমাদের জীবনে পরের মুহূর্তে, কালকে বা পরশু কি ঘটতে চলেছে আমাদের সাথে।

হয়তো, আপনি আগামীকাল কোনো লটারি পেতে পারেন বা জীবনের কোনো সুবর্ণ সুযোগও পেতে পারেন, কিংবা আপনার বহু বছরের পুরোনো কোনো চাহিদাও পূরণ হতে পারে।

আবার, কখনও কখনও পরিস্থিতি আপনার বিপরীতেও যেতে পারে, কিংবা আপনার জীবনে ঘটে যেতে পারে কোনো অযাচিত দুর্ঘটনা, যা আপনার প্রিয়জনদের সুরক্ষাকে বিঘ্নিত করতে পারে।

তাই, জীবন বীমা কেনা হল যেকোনো মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি, যা আপনার সমস্ত আর্থিক লক্ষ্য পূরণে আপনাকে সাহায্য করে থাকে।

আর, আপনি যদি বীমাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত না থাকেন, তবে এই আর্টিকেলে রইল জীবন বীমা করার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি কারণ।

যা থেকে আপনি জানতে পারবেন, যে কেন একটি ভালো জীবন বীমা পলিসিতে বিনিয়োগ করলে, আপনার সমস্ত ধরণের প্রয়োজনে তা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

জীবন বীমা কেন করবেন ? (১০ টি কারণ)

চলুন, তাহলে জেনে নেওয়া যাক, জীবন বীমা করার সেরা ১০টি কারণ সম্পর্কে –

১. আপনার মনের শান্তির জন্যে:

সত্যি কথা বলতে কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের কিছু বলতে পারে না।

কিন্তু, একটি জীবন বীমা করার অর্থ হল আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা আপনাদের জীবনের যেকোন ঘটনার জন্য তৈরী থাকতে পারেন।

এমনকি, একটা ছোট পলিসি থাকলেও আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের সুরক্ষা আছে জেনে, আপনি রাতে শান্তির ঘুম ঘুমোতে পারবেন।

২. প্রিয়জনের যত্ন নেওয়ার জন্যে:

যেকোনো জীবন বীমার এটিই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা যেকোনো মানুষকে বিবেচনায় রাখতে হয়।

আপনি চলে যাওয়ার পরেও আপনার পরিবার কিন্তু আপনার উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল থাকে।

আর, আপনি তাদের অবশ্যই হতাশ বা চিন্তিত রেখে চলে যেতে চাইবেন না।

তাই, একটি জীবন বীমা আপনার মৃত্যুর পর আপনার হারানো আয় প্রতিস্থাপন, সন্তানের শিক্ষার জন্য অর্থ প্রদান কিংবা আপনার জীবন সঙ্গীকে তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

এই কারণেই জীবন বীমাগুলো আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার প্রিয়জনদের আর্থিক দিক থেকে যত্নের ভার নিয়ে আপনাকে দায়মুক্ত করতে পারে।

৩. ট্যাক্স বা কর বাঁচাতে সাহায্য করে:

আপনি জীবন বীমার জন্যে যে প্রিমিয়াম দেন, তা আয়কর আইনের ধারা ৮০(সি)-এর অধীনে আপনার আয় করের উপর ছাড় পাওয়ার জন্যে উপযুক্ত করে তোলে।

অর্থাৎ, এই জীবন বীমা হল কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগ, যা আপনার আয়ের উপর চাপানো আয়করের পরিমাণকে কমিয়ে দিতে পারে।

যা, করদাতাদের তাদের মোট আয় থেকে প্রতি বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের অনুমতি দিয়ে থাকে।

তাছাড়াও, ধারা ১০(১০ডি)-এর অধীনে, বীমার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলে বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুতে, তার বিমাকৃত অর্থের পরিমাণ বা কোনো বোনাস বা পলিসি আয় তার মনোনীত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ করমুক্তভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে।

৪. শিক্ষার পরিকল্পনা:

আপনার সন্তানের শিক্ষার জন্য টাকা জমানোর বিভিন্ন উপায় আছে।

এমনকি, একটি জীবন বীমা পলিসিও কিন্তু সন্তানের শিক্ষার জন্যে টাকা জমানোর একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

আসলে, বীমাতে প্রদত্ত অর্থ আপনার সঞ্চয়ের একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে।

যা ভবিষ্যতে, আপনার অবর্তমানে আপনার সন্তান যদি স্কুল বা কলেজে পড়ার জন্যে এডুকেশন লোন নিয়ে, তার ধার পরিশোধ করতে চায়, তাহলে, বীমার অর্থ থেকে সে সেই শিক্ষা ঋণ শোধ করে দিতে পারে।

৫. বীমা পলিসির কাভারেজ অনেকটাই সস্তা:

অনেকেই জীবন বীমা করাতে চান না অত্যধিক খরচের ভয়ে।

কিন্তু, বীমা পলিসির কভারেজ বেশিরভাগ মানুষের জন্যই বেশ সাশ্রয়ী হয়ে দাঁড়ায়।

যদিও, টার্ম লাইফ বীমার খরচ হোল লাইফ বীমার চেয়ে অনেকটাই কম খরচের হয়ে থাকে।

এছাড়াও, আপনার বয়স যত কম থাকবে আর আপনি যত স্বাস্থ্যবান হবেন, আপনার প্রিমিয়ামের পরিমাণ কিন্তু ততই কম হবে।

আপনার যদি ধূমপানের নেশা না থাকে বা আপনার আগে থেকেই বিদ্যমান কোনো অসুস্থতা না থাকে, তাহলে আপনি সস্তাতেই বীমার কভারেজ পেয়ে যেতে পারেন।

৬. জীবন বীমা আপনার অবসরকালীন লক্ষ্যগুলোকে পূর্ণ করে:

কমবেশি সব মানুষই চান, তাদের রিটায়ারমেন্টের সঞ্চয় তাদের জীবদ্দশা অবধি থাকুক।

তাই, একটি জীবন বীমা পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি অবসর নেওয়ার পরেও, আপনার নিয়মিত মাসিক আয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন।

বার্ষিকভাবে অর্থ সঞ্চয় করা হল একটা সেরা পেনশন প্ল্যান পরিকল্পনা করার মতো।

যেখানে, একটি জীবন বীমাতে নিয়মিত কিছু টাকা রাখুন আর অবসর নেওয়ার পরেও প্রতি মাসে একটা নিয়মিত আয় পেয়ে যান।

৭. কর্মচারীদের জন্যে সুবিধা:

গ্রুপ জীবন বীমা হল এমন একটি উপায়, যেটার ব্যবস্থা কোম্পানিগুলো তাদের কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য করে থাকে।

এই বীমাগুলো আসলে কর্মচারীদের নগদীকরণের বিনিময়ে ছুটির বন্দোবস্ত ও গ্র্যাচুইটির মতো সুবিধা পেতে সহায়তা করে।

এরকম অনেক গ্রুপ কর্মচারী বীমা পরিকল্পনা রয়েছে, যা মালিক ও কর্মচারী উভয়কেই তাদের লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে।

৮. বীমা  সুরক্ষা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ:

IRDAI (বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশিকা রয়েছে যা বীমা কোম্পনিগুলো অনুসরণ করে চলতে বাধ্য থাকে।

যার ফলস্বরূপ, যেকোনো বীমা কোম্পানি সবসময়ই আপনাকে নিরাপদে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আইআরডিএআই-এর উদ্দেশ্য হল পলিসিহোল্ডার বা বীমাকৃত ব্যক্তি হিসাবে আপনার স্বার্থ রক্ষা করা আর তার পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলোর সুশৃঙ্খলভাবে বৃদ্ধির প্রচার করা।

সুতরাং, এক্ষেত্রে আপনি ও বীমা কোম্পনিগুলো উভয়ই একটি বিশ্বস্ত সম্পর্কের সূচনা করতে পারেন।

৯.  উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগের জায়গা:

বেশিরভাগ জীবন বীমা পরিকল্পনাতেই টপ-আপ প্রিমিয়াম নামের একটা সুবিধার ব্যবস্থা থাকে।

এই সুবিধার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজনমতো প্রিমিয়ামের অর্থের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

যেটা আপনাকে টপ-আপ অ্যাসিওরড বা এক্সট্রা অর্থের কাভারেজ পেতে সাহায্য করে।

অর্থাৎ, আপনার কাছে এক্সট্রা অর্থ থাকাকালীন এই সুবিধার লাভ নেওয়া সম্ভব।

১০.  ঋণের সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে:

আপনার অবর্তমানে আপনি নিশ্চয়ই চান না, যে আপনার পরিবারের সংকটের সময়ে তারা আর্থিক দায়বদ্ধতার সাথে মোকাবিলা করুক।

সেক্ষেত্রে, আপনি যদি সঠিক জীবন বীমা পলিসি নিয়ে থাকেন তবে, আপনার যেকোনো বকেয়া ঋণ, যেমন-  ব্যক্তিগত লোন, হোম লোন, গাড়ির লোন, বা ক্রেডিট কার্ডের লোনের দায়িত্ব বীমা কোম্পনি থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে।

পরিশেষে:

আপনি যতই পরিমাণ অর্থই উপার্জন করুন না কেন, ভবিষ্যতে কী হবে,তা কিন্তু কেউ বলতে পারে না।

সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর অসংখ্য লোক অকালে মারা যায় অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে।

সেক্ষেত্রে, আপনি যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হন আর যদি কোনো কারণে আপনার অকালমৃত্যু হয়, তবে তা আপনার প্রিয়জনদের জন্য মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।

তখন, আপনার পরিবারের মানুষদের সংসার খরচ, ধার-দেনা তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করতে তুলতে পারে, আর এখানেই কিন্তু একটা জীবন বীমা আপনার অবর্তমানে তাদের ভবিষ্যতের জীবনযাত্রাকে সুরক্ষিত করতে পারে।

তাই, আপনি একটি জীবন বীমা পলিসি কেনার মাধ্যমে আপনার পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারবেন।

তাছাড়াও, আপনার জীবদ্দশায় সুবিধা দেবে এমন জীবন বীমার পলিসিগুলোকেও উপেক্ষা করবেন না।

কারণ, আমাদের জীবন থাকতে থাকতে জীবনকে তো উপভোগ করারও দরকার রয়েছে।

এইসব কারণবশতই একটা সঠিক জীবন বীমা আপনার জীবনকে অনেকটাই মসৃন করে তুলতে পারে।

আমাদের আজকের ‘জীবন বীমা কেন করে রাখতে হয়‘ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি পছন্দ হলে আমাদেরকে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button