স্মার্টফোনের প্রজন্ম কি শেষ হতে চলেছে? ভবিষ্যতে কি আসছে?
স্মার্টফোনের প্রজন্ম কি শেষ হতে চলেছে?
স্মার্টফোনের প্রজন্ম কি পরিপূর্ণ হয়ে গেছে? না আরো কিছু নতুন আবিষ্কার এবং নতুন প্রজন্মের ফোন আমরা দেখতে পাবো ভবিষ্যতে? আপনার মনে কি এইসব প্রশ্ন কখনো জায়গা দখল করেছে? যদি করে থাকে তো, চলুন আজ এ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আজ কথা বলবো মোবাইল ফোনের শুরুর দিক থেকে, যে কীভাবে ধিরেধিরে স্মার্টফোন আসতে শুরু করেছিলো আর আজ আমরা স্মার্টফোনে কি কি পাচ্ছি এবং সামনের দিনে কি কি থাকতে পারে তা নিয়ে। তো কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
স্মার্টফোনের প্রজন্ম ১.০
বন্ধুরা, দেখুন স্মার্টফোনের প্রজন্ম শুরু হয়েছে মোটামুটি ২০০০ সালের দিকে। এর আগের ফোন গুলোকে আমি সাধারনত স্মার্টফোন বলবো না। যাই হোক, তো ঐ সময়কার অর্থাৎ ভাবুন ২০০৩-২০০৭ এর স্মার্টফোন গুলোর কথা। ভাবুন নোকিয়া, ব্ল্যাকবেরি, উইন্ডোজ মোবাইল ইত্যাদির কথা। এবং সেই সময়কার নোকিয়া ই-সিরিজ ফোন, নোকিয়া এন-সিরিজ ফোন, সনি স্মার্টফোন ইত্যাদিতে যে প্রযুক্তি গুলো পেয়েছিলাম সেই প্রযুক্তি গুলো তখনকার সময়ের জন্য একদম ইউনিক ছিল বাকী মার্কেটের তুলনায়। যেমন ধরুন ব্ল্যাকবেরির কোয়ারটি কীপ্যাড, অথবা ধরুন মোবাইল ফোনে প্রথম টাচ স্ক্রীন ইত্যাদি। তো আমরা মোবাইল ফোনে এসব জিনিস একেবারে নতুন দেখেছিলাম। তাছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের ফোনের ডিজাইন একদম আলাদা ভাবে তৈরি করতেন। কারো মোবাইল ছিল ফ্লিপ ওয়ালা তো কারো ছিল স্লাইড আবার তো কোন কোন কোম্পানি ব্ল্যাকবেরির মতো কোয়ারটি কীপ্যাড ওয়ালা ফোন তৈরি করতো।
- কীভাবে স্মার্টফোন ব্যাটারি এর সঠিক যত্ন নেবেন তা বিস্তারিত জানুন!
তো সেই সময় যা যা দেখেছিলাম তা মোবাইল ফোন শিল্পে বলতে গেলে একদমই নতুন ছিল, অর্থাৎ আগে তা মোবাইল ফোনে কখনই ছিল না। বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিরা গবেষণা করে নতুন নতুন কিছু বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। এবং সেই সময়ে আমাদের মনে হচ্ছিলো যে আমরা একদম সঠিক ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি। যদিও বাস্তবিক ভাবে দেখতে গেলে তখনকার প্রযুক্তি ততোটাও উন্নত ছিল না। এখন যতটা দ্রুত গতিতে মোবাইল ফোনের প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে, তখন এইরুপটা ছিল না। কিন্তু যদি কথা বলা হয় মোবাইল ফোনের ডিজাইনের অথবা কিছু কিছু নতুন ফিচার যা মোবাইল ফোনের জন্য একেবারেই নতুন ছিল, তো সেই সময়টা আসলেই স্মার্টফোনের প্রজন্ম এর জন্য রোমাঞ্চকর সময় ছিল।
স্মার্টফোন প্রজন্ম ২.০
এসবের পর ২০০৭ সালে যখন প্রথমবারের মতো বাজারে আইফোন আসলো তো আমার মতে এর আগের যে স্মার্টফোন প্রজন্ম ছিল তা পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আইফোন আসার পরে স্মার্টফোন প্রবেশ করলো তার দ্বিতীয় প্রজন্মে। আইফোন স্মার্টফোনের ডিজাইনকে একটি ফ্লাট রুপ দেয়। আর তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আপনি যে কোম্পানিরই স্মার্টফোনের কথা বলুন না কেন প্রায় সব ফোনই ফ্লাট ডিজাইনে বাজারে আসে। এর মধ্যে আপনারা জানেন যে, নোকিয়া, এলজি ইত্যাদি কোম্পানি গুলো তাদের ফ্লিপ এবং স্লাইড ফোন গুলো দিয়ে মার্কেট ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সবাই ফেল হয়ে যায়। আজ থেকে ২ বা ৪ বছর আগে যদি আপনি তাকিয়ে দেখেন তবে দেখবেন যে বাজারের সকল ফোন ফ্লাট ডিজাইনে দেখা যায়, একদম আইফোনের মতো। আমি এইটা বলছি না যে সবাই আইফোন দেখে ফ্লাট ডিজাইন নকল করেছে, তবে এটা সত্য যে আইফোন এসে মোবাইল মার্কেটকে এবং মোবাইলের পুরো প্রজন্মকে ঝাঁকিয়ে দিয়েছে। মানুষ যে নজরে একটি স্মার্টফোনকে দেখত এবং একটি স্মার্টফোন থেকে যা যা আশা করা যেতো তা একদম পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এখনকার স্মার্টফোন গুলোর দিকে তাকালে অনুমান করা যায় যে, আগের ফোন গুলোতে কি কি ঘাটতি ছিল। যেমন আগের ফোন গুলোতে ভালো ক্যামেরা থাকা উচিৎ ছিল, মাল্টি টাচ থাকা উচিৎ ছিল, ভালো মানের টাচ স্ক্রীন থাকা উচিৎ ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা সে জিনিস গুলো অর্জন করে ফেলেছি। এখনকার স্মার্টফোন গুলোতে মোটামুটি এক প্রকার পরিপূর্ণতা চলে এসেছে। কিন্তু একটু যদি বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবুন তো, স্মার্টফোন জগতে একেবারে নতুন কিছু কি আর উদ্ভবন হচ্ছে? না কি শুধু এখন আমরা পুরাতন জনিস পালিশ করে ব্যবহার করছি? এখন শুধু আমরা নাম্বার এর পেছনে ছুটছি। বেশি মেগাপিক্সেল, আরো বড় স্ক্রীন সাইজ, আরো পাতলা ফোন ডিজাইন, বেশি ব্যাটারি লাইফ ইত্যাদির পেছনে ছুটছে এখনকার স্মার্টফোন প্রজন্ম। কিন্তু এতো শুধু নাম্বারের খেলা। একদম নতুন কিছু যেমন, তখনকার সময়ে মোবাইলে টাচ স্ক্রীন, কোয়ারটি কীপ্যাড, অ্যাপস ইন্সটল ইত্যাদি একেবারেই নতুন ছিল তেমন কিছু কি এখন মোটেও আবিষ্কার হচ্ছে?
আমরা শুধু প্রতিবছর নতুন নতুন নাম্বার গুনছি। ১১ সালে এই ফোনের ২ মেগাপিক্সেলস ক্যামেরা ছিল এখন ১৩ মেগাপিক্সেলস, অমুক ফোনের এতো জিবি র্যাম ছিল এখন এতো জিবি র্যাম আছে ইত্যাদি। আমার মনে হয় না গত ২-৩ বছর ধরে আমারা স্মার্টফোনের জন্য নতুন কোন প্রযুক্তি আনতে পারছি। আর এখন যদি উদাহরণ স্বরূপ কথা বলা হয় আইফোন ৬ এস এর কথা বা ৬ এস প্লাস এর কথা কিংবা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৭ এজ, এলজি জি ৫, এইচটিসির আপকামিং এম ১০ অথবা গত বছরের স্যামসাং নোট ৫ এর কথা তো এই সকল ফোন গুলো অলমোস্ট পারফেক্ট স্মার্টফোন। অলমোস্ট পারফেক্ট স্মার্টফোন বলতে, এই ফোন গুলোতে সেই সবকিছু আছে যা একটি ব্যবহারকারী স্মার্টফোন থেকে আশা করতে পারে।
এখন ভেবে দেখুন এস৭ এজ এ কি এমন নতুন আবিষ্কার করবে স্যামসাং যার ফলে সামনের বছর গ্যালাক্সি এস৮ বের হবে? হয়তো স্ক্রীন সাইজ বাড়িয়ে ৪কে করে দেবে, প্রসেসর বাড়াবে, ক্যামেরা বাড়াবে, র্যাম বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু এছাড়া নতুন কি? এতো আমরা প্রত্যেক বছরই বাড়তে দেখছি। এ আর নতুন কি? শুধু ২কে থেকে ৪কে স্ক্রীন, ৪ জিবি থেকে ৮ জিবি র্যাম, ১২ মেগাপিক্সেলস থেকে ২২ মেগাপিক্সেলস ক্যামেরা, ১.৫ গিগাহার্জ প্রসেসর থেকে ২.৫ গিগাহার্জ প্রসেসর। দেখুন একটি ফোনের প্রসেসর ১.৫ গিগাহার্জ প্রসেসর থেকে ২.৫ গিগাহার্জ বাড়ালে কি হয়? হয়তো অ্যাপস ০.১ সেকেন্ড আগে ওপেন হবে। কিন্তু এই পার্থক্য একজন সাধারন ব্যবহারকারী কখনো ভেবেই দেখবে না।
তবে হাঁ, বর্তমান স্মার্টফোন প্রজন্মে যদি নতুন কিছু দেখার থাকে তবে তা দেখেয়েছে মধ্যম বাজেটের চাইনিজ ফোন গুলো। অনেক অল্প টাকার মধ্যে একটি অল ইন ওয়ান ফোন পেয়ে যাওয়া অবশ্যই ভালো কথা। ভাই সবার জন্য ৮২০ প্রসেসর এর বা ৪ জিবি র্যাম এর দরকার নাই। আমার ফোনে যদি সব কিছু ঠিকঠাক চলে আমার চাহিদা অনুসারে তবে আমি মনে রেখে কি করবো যে আমার ফোনে কোন প্রসেসর বা কত জিবি র্যাম আছে। আপনি ভেবে দেখুন সিম্ফুনির কথা, ওয়াল্টন, ওয়ান প্লাস, সাওমি, লেনোভো ইত্যাদির কথা, এরা গত ২-৩ বছরে বাজারে কতটা পরিবর্তন এনেছে তার কথা। এই কোম্পানি গুলো অনেক কম দামের মধ্যে অনেকটা পরিপূর্ণ ফোন আপনার হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে আমি বড় বড় মোবাইল ব্র্যান্ড এর নিন্দা করছি না। আপনি হয়তো আমার বক্তব্য বুঝতে পারছেন। যাই হোক, এতো কিছুর পরেও কি নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে? একেবারে নতুন কোনো প্রযুক্তি? সবই তো দেখা প্রযুক্তি, জানা প্রযুক্তি।
তবে কি এই স্মার্টফোনের প্রজন্ম এখানেই শেষ? তবে কি এর ভবিষ্যৎ?
আমার মনে হয় বর্তমান এই স্মার্টফোন জেনারেশন আর সামনের ২-৩ বছর পর্যন্ত চলবে। এর পরে স্মার্টফোনের এই দ্বিতীয় প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রথম জেনারেশন এর পরে আইফোন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে জেনারেশন সেটি শেষ হয়ে যাবে। এবং তারপর আপনি দেখতে পাবেন স্মার্টফোন প্রজন্ম ৩.০। যেটি সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হবে এবং আশা করা যায় কিছু সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার থাকবে এতে। আর তখনই আবার নতুন করে রোমাঞ্চকর কিছু হবে। না হলে আজকের প্রযুক্তিতে একেবারে নতুন আর কি আছে?
স্মার্টফোনের প্রজন্ম ৩.০
আপনি ভেবে দেখুন গুগলের প্রজেক্ট “আরা” সম্পর্কে, নতুন এলজি জি ৫ মডিউলার ফোন সম্পর্কে। ভেবে দেখুন আপনার ফোনে রিয়াল হলোগ্রাম দেখতে পাওয়া যাবে। মনে করুন ফোনের ব্যাটারি একদম চার্জ করার দরকার ই নেই সেই সম্পর্কে। অথবা ভেবে দেখুন আপনার ফোনের স্ক্রীন এতোটাই ফ্লেক্সিবল হবে যে, আপনার ফোনকে মুরিয়ে ছোট করে ফেলা যাবে অথবা আপনার ফোন টেনে বড় করলে ট্যাবলেট হয়ে যাবে। মানে একদম কিছু ইউনিক হতে হবে তবেই শুরু হতে পারে স্মার্টফোন প্রজন্ম ৩.০। মনে করুন আপনার স্মার্টফোন এমন হবে, আপনি ফোনকে আপনার বডির সাথে টাচ করালেন আর সাথে সাথে আপনার প্রেসার, এক্সরে, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সহ আপনার পরিপূর্ণ মেডিক্যাল চেকআপ হয়ে গেলো। তো এর থেকে বড় আবিষ্কার আর কি হতে পারে, তাই না?
তো আমার মনে হয় বর্তমান স্মার্টফোনের প্রজন্ম হয়তো ইতি ২ অথবা ৩ বছরের মধ্যেই হয়ে যাবে। আর যদি না হয় তবে মধ্যম বাজেটের চাইনিজ ফোন গুলো উপরে উঠে আসবে এবং পুরো বাজার দখল করে নেবে। সেক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানি গুলোকে অবশ্যই নতুন কিছু আবিষ্কার করতেই হবে। এবছর গ্যালাক্সি এস৭ এ ১২ মেগাপিক্সেলস ক্যামেরা আছে সামনের বছর গ্যালাক্সি এস৮ এ ২২ হবে, এই ধরনের কিছু না। একেবারে নতুন, একেবারে মৌলিক কিছু করতে হবে। তবেই সুচনা ঘটবে নতুন স্মার্টফোন প্রজন্মের।
শেষ কথা
আশা করছি আজকের এই পোস্ট আপনাদের অনেক পছন্দ হয়েছে এবং আমি আশা করছি আজকের মূল বক্তব্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি। তাই কমেন্ট করে এবং পোস্ট টি শেয়ার করে আপনার ভালো লাগা আমাকে জানাতে ভুলবেন না। তাছাড়া সামনের স্মার্টফোন প্রজন্মে আপনি নতুন কি কি দেখতে চান তা আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার মনে যতো পাগল ওয়ালা খেয়াল আছে তা সব আমাদের সাথে শেয়ার করুন। কেনোনা যখনই কোন পাগল ওয়ালা খেয়াল আসবে তখনই একদম ইউনিক কিছু করা সম্ভব হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ বলা হয়, “আপনি যা ভাবতে পারবেন, সেটা আপনি করতে পারবেন”। আমি মনে করি ইলেক্ট্রনিক্স এর ক্ষেত্রে, স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে, টেলি কমোনিকেশন এর ক্ষেত্রে আপনি যা ভাবতে পারবেন তা করতেও পারবেন।