আছরের নামাজ কয় রাকাত? আছরের নামাজ পড়ার নিয়ম কি?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নামাজ। দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হয়। দৈনিক নামাজগুলোর মাঝে আছরের নামাজ তৃতীয়। এর আরবি হলো সালাতুল আসর। এটি বিকেলে আদায় করতে হয়। সাধারণত সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এর সময় থাকে। এটি মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় বিষয়। চলুন সালাতুল আসর বা আছরের নামাজ সম্পর্কে কিছু জিনিস জেনে নেই।
আছরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি?
আছরের নামাজ ৮ রাকাত। এর মাঝে ৪ রাকাত সুন্নত এবং ৪ রাকাত ফরজ। সব সালাতই ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হয়। তেমনি আছরের নামাজেরও ধারাবাহিকতা রয়েছে। যেমন–
- প্রথমে ৪ রাকাত সুন্নত আদায় করতে হয়।
- পরে ৪ রাকাত ফরজ আদায় করতে হয়।
এভাবে মোট ৮ রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ নামাজের মতোই। তবে সুন্নতের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য রয়েছে। এখনে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হয়।
আছরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। তেমনি আছরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ পড়াও অত্যাবশ্যকীয়। প্রতিটি নামাজেরই আলাদা আলাদা নিয়ত থাকে। আছরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত নিম্নে দেওয়া হলোঃ-
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
তবে শুধু আরবি নয় কেউ চায়লে নিয়ত বাংলাতেও করতে পারবে।
বাংলায় নিয়তঃ আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে আছরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার নিয়াত করছি আল্লাহু আকবার।
আছরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
আছরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো-
- প্রথমে অযু সহকারে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যান। এরপর জায়নামাজের দোয়া পড়ুন।
জায়নামাজের দোআ বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
বাংলা অর্থঃ নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহে।
- এরপর ৪ রাকাআত ফরজ নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলুন
- পরে বা হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
- এবার সানা পাঠ করুন।
সানা বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বি–হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৯)
- এবার সূরা ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে আমিন বলুন।
- ফাতিহা শেষ হলে অন্য একটি সূরা বা তিনটি ছোট আয়াত পড়ুন। যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতূল্য হয়। (আবু দাউদ: হাদিস ৬৯৫)
- এবার আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯) এবং আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
- রুকুতে নিম্নে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকু থেকে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে শুধুমাত্র ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবিরে তাহরিমা তথা “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে আপনার হাঁটু, এরপর হাত, তারপরে দুন হাতের মাঝে কপাল মাটিতে রাখুন। পেটকে রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে আলদা রাখুন। হাত–পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
- সিজদায় নিচে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- পরে সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে মাথা তুলে দু হাত রানের উপর রেখে বসুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। এ সিজদাহয়েও নিচে ৩ বার তাসবিহ পড়ুন।
- এরপর জমিনে হাত দিয়ে ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সোজাসুজি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই প্রথম রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা শেষ। এবার দ্বিতীয় রাকাত শুরু।
- দ্বিতীয় রাকাতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাতের মত সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকু এবং সিজদা করবেন।
- দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে পড়বেন। আপনার হাতগুলো তখন রানের ওপর থাকবে এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
- এরপর নিম্নের তাশাহুদ পড়বেন।
বাংলা উচ্চারণ : ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’
- এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন।
এখানেই দ্বিতীয় রাকাত শেষ হলো। এবার তৃতীয় রাকাত শুরু।
- এ রাকাতেও হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাতের মত সূরা ফাতিহা পড়বেন তবে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে না।
- এরপর আগের মতই (প্রথম রাকাআতের মতো) রুকু, সিজদা করে আল্লহু আকবার বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই তৃতীয় রাকাআত শেষ। এবার চতুর্থ রাকাত শুরু।
- চতুর্থ রাকাত তৃতীয় রাকাতের মতোই পড়ুন। এ রাকাতেও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে না।
- আগের মতোই রুকু সিজদা করে সোজা হয়ে বসে শেষ বৈঠক করবেন।
- এখানে তাশাহুদ, দূরুদ ও দুআ মাসূরা পড়ুন।
- এবার ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হবে।
- সালাম ফেরানো শেষ হয়ে গেলে মোনাজাত করতে হয়।
এভাবেই ৪ রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
দরুদ বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
দুআ মাসূরা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
আছরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়ম
- সুন্নাত নামাজও ফরজ নামাজের মতোই। তবে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। চলুন ৪ রাকাআত সুন্নত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
- প্রথমে অযু সহকারে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যান। এরপর জায়নামাজের দোয়া পড়ুন।
- এরপর ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলুন।
- পরে বা হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
- এবার সানা পাঠ করুন।
- এবার সূরা ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে আমিন বলুন।
- ফাতিহা শেষ হলে অন্য একটি সূরা বা তিনটি ছোট আয়াত পড়ুন। যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতূল্য হয়। (আবু দাউদ: হাদিস ৬৯৫)
- এবার আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯) এবং আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
- রুকুতে নিম্নে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকু থেকে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে শুধুমাত্র ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবিরে তাহরিমা তথা “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে আপনার হাঁটু, এরপর হাত, তারপরে দুন হাতের মাঝে কপাল মাটিতে রাখুন। পেটকে রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে আলদা রাখুন। হাত – পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
- সিজদায় নিচে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- পরে সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে মাথা তুলে দু হাত রানের উপর রেখে বসুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। এ সিজদাহয়েও নিচে ৩ বার তাসবিহ পড়ুন।
- এরপর জমিনে হাত দিয়ে ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সোজাসুজি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই প্রথম রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা শেষ। এবার দ্বিতীয় রাকাত শুরু।
- দ্বিতীয় রাকাতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাতের মত সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকু এবং সিজদা করবেন।
- দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে পড়বেন। আপনার হাতগুলো তখন রানের ওপর থাকবে এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
- এরপর তাশাহুদ পড়ে আল্লাহু আকবার বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন।
এখানেই দ্বিতীয় রাকাআত শেষ হলো। এবার তৃতীয় রাকাআত শুরু।
- এ রাকাআতেও হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাআতের মত সূরা ফাতিহা পড়ে সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
- এরপর আগের মতই (প্রথম রাকাআতের মতো) রুকু, সিজদা করে আল্লহু আকবার বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই তৃতীয় রাকাত সুন্নাত নামাজ শেষ। এবার চতুর্থ রাকাত শুরু।
- চতুর্থ রাকাত তৃতীয় রাকাতের মতোই পড়ুন। এ রাকাতেও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
- আগের মতোই রুকু সিজদা করে সোজা হয়ে বসে শেষ বৈঠক করবেন।
- শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দূরুদ ও দুআ মাসূরা পড়ুন।
- এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হবে।
- সালাম ফেরানো শেষ হয়ে গেলে মোনাজাত করতে হয়।
এভাবেই ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।