মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে ? জেনেনিন মোবাইল আবিষ্কারের ইতিহাস
মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস
মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন কে, এই বিষয়ে জেনে রাখাটা প্রত্যেকের পক্ষ্যে জরুরি। কেননা, আজকের সময়ে মোবাইল আমাদের জীবনের এক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাগ বা অংশ।
বর্তমানের আধুনিক সময়ে আমরা মোবাইল ফোন ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারাটা কিন্তু সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
এখন পর্যন্ত যত গুলো জিনিস আবিষ্কার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মোবাইল এর আবিষ্কার সব থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং উপযোগী আবিষ্কার বললে আমি ভুল হবোনা।
মোবাইল এর মাধ্যমে আজ বিশ্বজুড়ে যেকোনো জায়গার থেকে যেকোনো জায়গাতে বসে থাকা লোকেদের সাথে যোগাযোগ করাটা সভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটি মোবাইল ফোন, সাধারণ জীবনযাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, উন্নয়ন ইত্যাদি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই প্রচুর কাজে এসে থাকে।
এছাড়া, একটি মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাপন প্রণালী অনেকটাই সোজা এবং সহজ করে তুলেছে।
কেননা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে আজকাল এর মোবাইল গুলোকে কেবল voice calling এর জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছেনা।
এখনের আধুনিক মোবাইল গুলোতে আমরা voice calling এর সাথে সাথে, video calling, MAP, জিপিএস (GPS), ইন্টারনেট এর ব্যবহার, online streaming, online payment wallet, video editing ইত্যাদি প্রচুর ধরণের কাজ গুলো করতে পারছি।
সকাল থেকে শুরু করে ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত আমরা আমাদের মোবাইল ফোন এর ব্যবহার কিছু না কিছু কাজের জন্য করেই থাকি।
আমাদের সাথে প্রায় ২৪ ঘন্টা একসাথে থাকা এই মোবাইল এর বিষয়ে অধিক জানার ইচ্ছে অনেকেরি করে থাকে।
তাই, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মোবাইল আবিষ্কার করেন কে এবং মোবাইল এর ইতিহাস এর সাথে জড়িত বিভিন্ন তথ্য গুলোর বিষয়ে জানিয়ে দিতে চলেছি।
মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে । মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন কে ?
মোবাইল এর আবিষ্কার ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল তারিখে মার্টিন কুপার (MARTIN COOPER) দ্বারা করা হয়েছিল।
মার্টিন সেই সময় মটোরোলা (Motorola) কোম্পানিতে একজন গবেষক হিসেবে কাজ করছিলেন।
এখন আপনি কি জানেন, মার্টিন তার মোবাইল ফোন দিয়ে প্রথম কল (call) কাকে করেছিলেন ?
“Dr. Joel S. Engel” নামের একজন ব্যক্তি ছিলেন যে নাকি মার্টিন এর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, এবং তাকে মার্টিন মোবাইল দিয়ে প্রথম বারের জন্য কল (call) করেছিলেন।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, মার্টিন কুপার দ্বারা তৈরি করা এই মোবাইল ফোন এর নাম, “Motorola DynaTAC” রাখা হয়েছিল।
বিশ্বের এই প্রথম মোবাইল ফোনটি এখনের মোবাইল গুলোর মতো আকারে তেমন ছোট ছিলোনা। প্রায় একটি ইটের সমান ছিল এই প্রথম মোবাইলের আকার।
এখন যদি আপনারা এই মোবাইল কতটা লম্বা এবং ওজনে কতটা ভারী ছিল সেটা জেনেনিতে চাইছেন, তাহলে সেটাও আমি বলে দিচ্ছি।
মটোরোলার এই মোবাইলটি লম্বাতে ছিল ৯ ইঞ্চি লম্বা এবং যদি মোবাইলের ওজনের কথা বলা হয়, তাহলে ওজন ছিল ১.১ কিলোগ্রামের (kg).
- এই ফোনটি কাজ করতো সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির মাধ্যমে।
- মোবাইলটি একবার full charge করার পর সেটা দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলা সম্ভব ছিল।
- কিন্তু, মোবাইলটি full charge করার জন্য প্রায় ১০ ঘন্টার সময় লাগতো।
যিহেতু এটা বিশ্বের সব থেকে প্রথম মোবাইল ফোন ছিল, তাই এই ফোন এর খরচ অনেকটাই বেশি ছিল।
তাই, প্রায় প্রচুর সময় ধরে ফোন এর মধ্যে থাকা ত্রুটিগুলি খুজার কাজ করা হলো এবং কিভাবে ফোন এর উৎপাদনের খরচ কমানো যাবে সেই বিষয়ে কাজ করা হলো।
এর পাশাপাশি সেল নেটওয়ার্ক (cellular network) টি আরো অধিক শক্তিশালী কিভাবে করা যাবে, সেই বিষয়ে কাজ করা হলো।
এর পর, ১৯৮৩ সালে এই মোবাইলটি বাজারে উপলব্ধ করানো হলো যাতে জনসাধারণের এই ফোন কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
আর সেই মোবাইলের নাম ছিল, “Motorola DynaTAC 8OOOX“.
- 1983 সালে উপলব্ধ হওয়া এই মটোরোলা DynaTAC 8OOOX মোবাইলের দাম রাখা হয়েছিল ৩৯৯৫ ডলার। (প্রায় ২,৯৫,০০০/-).
- এই মোবাইলের ব্যাটারী প্রায় ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিয়ে থাকতো।
- কিন্তু, একবার ফুল চার্জ দেওয়ার পর ৩০ মিনিট কথা বলা সম্ভব ছিল।
- এছাড়া, এই ফোন এর মধ্যে ৩০ জনের contact save করে রাখার option দেওয়া হয়েছিল।
মোবাইল ফোন এর ইতিহাস । History of mobile phone in Bangla
চলুন, এখন আমরা মোবাইল ফোন এর ইতিহাস নিয়ে কিছুটা তথ্য জেনেনেই।
১৯২৬: Deutsche Reichsbahn (German National Railway) এর প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের প্রথম সফল মোবাইল টেলিফোনি পরিষেবা দেওয়া হয়েছিল।
১৯৪৬: Chicago নামের জায়গা থেকে car radiotelephone এর দ্বারা সর্ব প্রথম call করা হয়েছিল।
১৯৫৬: Sweden নামের জায়গাতে ব্যক্তিগত যানবাহন এর জন্য প্রথম স্বয়ংক্রিয় মোবাইল ফোন সিস্টেম (first automated mobile phone system) নিয়ে আসা হলো। এই device আলাদা করে গাড়িতে install করতে হতো।
১৯৬৯: The Nordic Mobile Telephone (NMT) Group প্রতিষ্ঠিত করা হলো। একটি মোবাইল ফোন সিস্টেম বিকশিত করা ছিল এর উদ্দেশ্য।
১৯৭৩: Dr Martin Cooper যিনি ছিলেন Motorola communications এর general manager, তিনি প্রথম পাবলিক মোবাইল ফোন কল করেছিল। যেই ডিভাইস এর মাধ্যমে তিনি কল করেছিলেন সেটার ওজন ছিল 1.1Kg.
১৯৮৭: GSM standard এর Technical specifications গুলো approved করা হলো।
১৯৯২: UK তে বিশ্বের প্রথম SMS message পাঠানো হয়। Neil Papworth নামের ২২ বছরের একজন telecom developer ছিলেন যাকে Vodafone এর জন্য একটি messaging service বিকশিত করতে বলা হয়েছিল। Text message টি ছিল “Merry Christmas” এবং পাঠানো হয়েছিল Richard Jarvis নামের ব্যক্তিকে যিনি Vodafone এর একজন director ছিলেন।
১৯৯৬/৯৭: UK তে এই সময় পর্যন্ত প্রায় 16% পরিবার নিজেদের কাছে ফোন রেখেছিলেন এবং ফোন ব্যবহার করতেন। প্রায় এক দশক পর এই সংখ্যা 80% হয়ে দাঁড়ালো।
১৯৯৮: মোবাইল ফোনে বিক্রি হওয়া প্রথম ডাউনলোডযোগ্য কনটেন্টটি ছিল ফিনল্যান্ডের রেডিওলিনজা দ্বারা চালু করা রিংটোন।
১৯৯৯: এই সময় জাপানের শিগেটাকা কুরিতা আবিষ্কার করেছিলেন “ইমোজিস”.
ওপরে আমরা সময় বা বছর হিসেবে মোবাইল ফোন এর ইতিহাস এর বিষয়ে জেনেনিতে পেরেছি।
চলুন এবার নিচে মোবাইল এর ইতিহাস এর সাথে জড়িত কিছু অন্যান্য তথ্য গুলো জেনেনেই।
মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস
AT&T কোম্পানি দ্বারা তাদের কিছু গ্রাহকদের radio telephones ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
সেগুলো ছিল walkie-talkie transceivers এর মতো সেবা যেগুলোর মাধ্যমে প্রচুর সীমিত পরিমানে কল (call) করা সম্ভব ছিল। এছাড়া, সুযোগ অনেকটাই কম থাকার কারণে তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিগত কল রাখাটা তেমন সম্ভব ছিলোনা।
ফোন গুলো ছিল প্রচুর ভারী এবং আকারে অনেকটা বড়, যার জন্যে ফোন নিজের পকেটে (pocket) রাখাটা কোনো ভাবেই সম্ভব ছিলোনা।
একটি সেলুলার নেটওয়ার্ক বিকাশ করার ক্ষেত্রে Federal Communications Commission (FCC) থেকে AT&T দ্বারা অনুমতি নেওয়া হলো আর এক্ষত্রে মটোরোলার মার্টিন কুপার ১৯৭৩ সালে একটি নির্বোধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
কুপার এর team এর দ্বারা cell phone টিকে design করা হলো এবং তৈরি করা ফোন টিকে Motorola DynaTAC নাম দেওয়া হয়।
স্মার্টফোন কে আবিষ্কার করেন ?
প্রায় ২৫ বছর আগে IBM দ্বারা একটি বড় আকারের touchscreen smartphone রিলিজ করা হয় যার নাম ছিল “Simon“.
তাই, বিশ্বের সর্ব প্রথম স্মার্টফোন IBM দ্বারা ডেভেলপ করা হয়েছিল।
এই মোবাইলের বিশেষত্ব ছিল এটা একটি touchscreen mobile ছিল, এখানে email এর সুবিধা ছিল, বিভিন্ন built-in apps দেওয়া হয়েছিল যেমন calculator, sketch pad ইত্যাদি।
মাজারে কত রকমের মোবাইল উপলব্ধ রয়েছে ?
এখনের সময়ে মূলত ৩ টি আলাদা আলাদা রকমের মোবাইল ফোন বাজারে উপলব্ধ রয়েছে।
- Cell phone
- Feature phone
- Smartphone
চলুন, প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ফোন গুলোর বিষয়ে কিছুটা তথ্য নিচে জেনেনেই।
Cell phone
একেবারে প্রথম প্রথম যেই ধরণের মোবাইল ফোন উপলব্ধ হয়েছিল সেগুলো এই সেল ফোন গুলোই ছিল।
এই মোবাইল ফোনে গুলোতে advanced features এবং function বলতে তেমন বিশেষ কিছুই থাকছেনা। তবে এই ধরণের ফোন গুলো অনেক সহজেই জেকেও ব্যবহার করতে পারবেন।
এই ধরণের ফোন মূলত voice calling এবং SMS message পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
যিহেতু এই ধরণের ফোন গুলোতে extra features বলতে তেমন বিশেষ কিছুই থাকছেনা, তাই এগুলোর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।
বর্তমান সময়ে আধুনিক ফোন এর চাহিদা এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই ধরণের সাধারণ সেল ফোন গুলোর চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।
তাই, বলতে গেলে এখনের সময়ে এই cell phone গুলো খুব কম লোকেদের হাতেই দেখা যায়।
Feature phones
এমনিতে feature phone গুলো দেখতে প্রায় cell phone গুলোর মতোই হয়ে থাকে, তবে ফীচার ফোন গুলোতে স্মার্টফোন এর কিছু ফিচারস থেকে থাকে।
একটি ফীচার ফোনের মাধ্যমে সাধারণ কল এবং এসএমএস (SMS) এর বাইরেও ফটো তুলে, ভিডিও রেকর্ড করা, ইন্টারনেট এর ব্যবহার, গান চালানো ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের মাল্টিমিডিয়া অপসন গুলো দেওয়া থাকে।
এই মোবাইল ফোন গুলোর দাম সাধারণ cell phone গুলোর থেকে কিছুটা বেশি থাকে, তবে স্মার্টফোন এর তুলনায় এদের দাম কম।
Smartphone
এখন স্মার্টফোনের বিষয়ে তো আমরা প্রত্যেকেই জানি। একটি স্মার্টফোন এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফীচার এবং সুবিধা গুলো দেওয়া হয়। বলতে গেলে, স্মার্টফোন একটি মিনি কম্পিউটার যেখানে কম্পিউটারের মতোই বিভিন্ন কাজ গুলো করা যায়।
স্মার্টফোন গুলোতে সব থেকে লেটেস্ট এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ধরণের মোবাইল গুলো অনেক শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম (OS) এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
যেমন, android, iOS, Windows ইত্যাদি।
Smartphone গুলো touchscreen এর সুবিধা দিয়ে থাকে এবং এগুলোতে প্রায় প্রত্যেক উন্নত এবং আধুনিক সুবিধা গুলো রয়েছে।
যেমন, HD camera, 3G/4G connectivity, Internet, GPS, WIFI, Finger & face unlock, large HD display, Multimedia, apps এর ব্যবহার ইত্যাদি।
এই উন্নত features গুলোর কারণেই অন্যান্য মোবাইল গুলোর তুলনায় স্মার্টফোন গুলোর চাহিদা বাজারে সর্বাধিক রয়েছে।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম।
এছাড়া, মোবাইলের ইতিহাস নিয়েও আমরা আর্টিকেলে বেশ অনেক টুকু আলোচনা করেছি।
তাই, যদি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।