প্রযুক্তি কাকে বলে । আধুনিক প্রযুক্তি কি । প্রযুক্তির সুবিধা এবং প্রকারভেদ
প্রযুক্তি কাকে বলে
টেকনোলজি প্রযুক্তি হল আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
আমাদের সমাজে প্রযুক্তি হল বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিভিন্ন প্রয়োগ।
যে প্রয়োগের সাহায্যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে আরও দ্রুত, সহজ ও মসৃণ করে তোলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
সাধারণভাবে, আমরা ব্যবসা, শিল্প, যোগাযোগ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার দেখে থাকি।
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা সবিস্তারে আলোচনা করবো টেকনোলজি বা প্রযুক্তি কি, আধুনিক প্রযুক্তি, এর প্রকারভেদ, ও এর সুবিধাগুলো সম্পর্কে।
প্রযুক্তি কাকে বলে ? (What is technology)
“টেকনোলজি (Technology)” শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ “টেকনে” (যা শিল্প ও নৈপুণ্যের সাথে সম্পর্কিত) ও “লগিয়া” (যা অধ্যয়নের সাথে যুক্ত) শব্দটি থেকে।
এই দুটি শব্দের সংমিশ্রণেই তৈরী হয়েছে “টেকনোলজিয়া” শব্দটির, যার অর্থ হল পদ্ধতিগত চিকিৎসা।
বিগত দুই শতাব্দীতে প্রযুক্তি শব্দটির ব্যবহার চরমভাবে বদলেছে।
প্রযুক্তি হল এক ধরণের উপায়- যার সাহায্যে আমরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করে থাকি।
প্রযুক্তি, সরাসরি মেশিন (যেমন- কম্পিউটার), কৌশল ও প্রক্রিয়ার (যেমন- আমরা যেভাবে কম্পিউটার চিপ বানাই) বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।
আমরা বর্তমানে মনে করতেই পারি যে, সমস্ত প্রযুক্তিগুলো কেবলমাত্রই ইলেকট্রনিক- তবে, এখনও পর্যন্ত এটাই হল সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি।
কিন্তু, আদিম সভ্যতার প্রেক্ষাপটে, আদিম মানুষদের ব্যবহৃত পাথর বা লোহার হাতুড়ি এমনকি চাকাও ছিল প্রাথমিক মানব প্রযুক্তির দুটো জ্বলন্ত উদাহরণ।
১৯৪০-এর দশকের মধ্যে প্রযুক্তি বা টেকনোলজি কেবলমাত্র শিল্প অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার পরিবর্তে, এটি যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, অস্ত্র, যোগাযোগ ও পরিবহন যন্ত্রগুলোকেও নিজের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
সেইসাথে নিজেদের দক্ষতাগুলোকে বৃদ্ধি করে মানুষ, প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার ও প্রসার ঘটিয়েছে।
আসলে, প্রযুক্তিকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, মানব জীবনের উন্নতির লক্ষ্যে ব্যবহার করা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান হিসেবে, যা তাদের জীবনযাত্রাকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর ও বাস্তবসম্মত করে তোলে।
আশা করছি, প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায় বা প্রযুক্তি মানে কি ? বিষয়টা কিছুটা হলেও বুঝতেই পেরেছেন।
আধুনিক প্রযুক্তি কি ? (Modern technology)
প্রযুক্তি বরাবরই উন্নতির পথে এগিয়ে চলে আর এটা সবসময়েই প্রগতিশীল।
এক্ষেত্রে, আধুনিক প্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এইভাবে যে,
আধুনিক প্রযুক্তি হল পুরোনো প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির সংযোজন।
এ মূলত, মডার্ন টেকনোলজি সর্বতোভাবেই গতিময় ও সমাজে মানব সভ্যতার দক্ষতা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা তারসমেত টেলিফোনের কথা কল্পনাও করতে পারিনা।
আমাদের এখনকার লেটেস্ট বা সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি হল মোবাইল ফোন।
যেটা আমরা সারা পৃথিবী-রাজ্যই নিজেদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে পারি ও যেকোনো স্থানে বা সময়ে বসে বিনা বাধার যার সাথে খুশি যোগাযোগ করতে পারি।
তাই, স্মার্টফোন হল এই জমানায় আধুনিক প্রযুক্তির সবথেকে নিখুঁত উদাহরণ।
অর্থাৎ, আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের মুখোমুখি যোগাযোগকে নিশ্চিত করে।
এর সাহায্যে আমরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম, এমনকি আমরা যে ধরণের পরিষেবা পেতে চাইছি, সেগুলো আমরা আরও সহজে অ্যাক্সেস কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
তাছাড়াও, এই আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছু ব্যবহার করি, তা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবেই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সম্পর্কিত।
তাই, আমরা চাইলেও কোনোভাবেই এই আধুনিক প্রযুক্তিকে এড়িয়ে যেতে পারি না।
আমাদের সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে – দ্রুততর ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী 5G নেটওয়ার্ক, সেল্ফ-ড্রাইভিং কারস, রোবটিক সার্জারি, মাইক্রো নীডল্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও আরও অন্যান্য।
প্রযুক্তির প্রকারভেদ – (Types of technology)
সহজভাবে বলতে গেলে, প্রযুক্তি হল মানুষের উদ্দেশ্য পূরণের একটা উপায়।
যেহেতু, প্রযুক্তি সহজ থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জটিলও হতে পারে, তাই এর বিভিন্ন প্রকারভেদ করা হয়েছে,
নোলজি:
তথ্য প্রযুক্তি (IT) শব্দটি কম্পিউটার সিস্টেম, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও অন্যান্য অবকাঠামোকে নির্দেশ করে।
যা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মূল ক্ষমতাকে সক্ষম করে।
এটি একটা ক্রমবর্ধমান ও ক্রমাগত বিকশিত একটা ক্ষেত্র।
যেটা ডিজিটাল আকারে ইলেকট্রনিকভাবে তথ্য গ্রহণ, সঞ্চয়, পুনরুদ্ধার, প্রক্রিয়াকরণ কিংবা প্রেরিত সমস্ত যন্ত্রপাতিকে অন্তর্ভূক্ত করে।
এর মধ্যে রয়েছে রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, কম্যুনিকেশন ডিভাইস, স্যাটেলাইট সিস্টেমের মতো আরও নানান ধরণের পরিষেবা।
বর্তমানে, বহু কোম্পানি তাদের কম্পিউটার পরিচালনা, ডেটাবেস তৈরি করা, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়িক তথ্য ব্যবস্থার দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইটি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে থাকে।
কম্পিউটার সফ্টওয়্যারের সাম্প্রতিক অগ্রগতি, কোম্পানিগুলোকে তথ্য বিশ্লেষণের ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়ে তাদের সার্বিক উন্নতিতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
বিগত এক দশকে, কারিগরি বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে চলেছেন, যাতে কম্পিউটার রিয়েল-টাইম তথ্য ব্যবহার করে আমাদের মতো স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে।
এই সময়ে AI মানুষের থেকে অনেক নিখুঁত কাজ করতে সক্ষম; যেমন- ঐতিহাসিক প্রবণতার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যত ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়া, ত্রুটি বার করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে জটিল বিশ্লেষণাত্মক কাজ করা ও ইত্যাদি।
বর্তমানে, ব্লকচেইন হল এই প্রযুক্তির সবথেকে নিরাপদ ও উন্নতমানের ডাটাবেস বা তথ্য সংরক্ষণের উপায়।
যা যেকোনো ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ককে সেরা তথ্যের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি দিতে সক্ষম।
এছাড়াও, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-কে এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের পরবর্তী প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য বিবর্তন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
২. জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি:
জৈবপ্রযুক্তি হল এক ধরণের ব্যাপক বিস্তৃত পরিসর।
এই প্রযুক্তিকে জীবন্ত প্রাণী বা তাদের অংশগুলো থেকে সমাজের জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে কাজে লাগানো হয়ে থাকে।
বায়োটেকনোলজি সমাজের উপকারের জন্যে ডায়াগনস্টিক, কৃষি, পরিবেশগত ও ফার্মাসিউটিক্যালের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে প্রাণীদের জীবন্ত কোষ ও সেলুলার উপকরণ ব্যবহার করে থাকে।
এমনকি, এই বিদ্যা প্রাণীদের জেনেটিক ডেটা পরিবর্তন করতেও ব্যবহার করা হয়।
যাতে, মানুষের রোগগুলোকে মডেল করে অধ্যয়ন সম্ভব হয়।
উদাহরণস্বরূপ, থেরাপিউটিকস, ওষুধ, পুষ্টির যৌগ, পরিবেশ-বান্ধব রাসায়নিক উপকরণ, জৈব জ্বালানী ও অভিনব কার্যকরী উপাদানগুলো জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টিও করা যায়।
জিন এডিটিং, বায়োপ্লাস্টিক, বায়োএনার্জি প্রভৃতি হল এই প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার।
৩. পারমাণবিক প্রযুক্তি বা নিউক্লিয়ার টেকনোলজি:
পারমাণবিক প্রযুক্তি হল এমন এক ধরণের প্রযুক্তি- যা বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে নিউক্লিয়াসের কিছু নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবর্তন এনে তাকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই প্রযুক্তি চরমভাবে ব্যবহার করা হয়।
এই শক্তি অতি দ্রুত ফুটন্ত জলের বাষ্প তৈরি করার জন্য খুবই সেরা একটা উপায়।
যা থেকে টারবাইনগুলোর মাধ্যমে সহজেই ড্রাই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।
এছাড়াও, এই প্রযুক্তির দান হিসেবে ধরা যায়- রেডিওথেরাপি, ডিসপোজেবল পণ্যের জীবাণুমুক্তকরণ, স্মোক ডিটেক্টর, মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত রেডিওআইসোটোপ থার্মাল জেনারেটর ও আরও অন্যান্য।
৪. যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কম্যুনিকেশন টেকনোলজি:
সাম্প্রতিককালে, যোগাযোগ প্রযুক্তি মূলত হল আইটি প্রযুক্তিরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষ মেশিনের মাধ্যমে বার্তা বা তথ্য স্থানান্তর করতে পারে।
তথ্যের এই প্রক্রিয়াকরণ মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে, সমস্যা সমাধান করতে ও মেশিন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
নেটওয়ার্ক-এর উন্নতি, প্রধানত কম্পিউটিং ডিভাইসের সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলেই সম্ভব হয়েছে।
এই যন্ত্রগুলোর মধ্যে বেশ কতগুলো শুধুমাত্র কয়েকটি বিশেষভাবে নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে আর তথ্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে দ্রুত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এটি কোনো ব্যক্তিগত বা পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য বিনিময়, স্থানান্তর ও প্রদান করাকে যথেষ্ট সহজ করে তুলেছে।
এমনকি, এই প্রযুক্তি ই-সম্পদ ও গুণগত পরিষেবাগুলোর মান উন্নয়নেও যথেষ্ট ভালো ব্যবস্থাপনা করেছে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, টেলিটেক্সট, ভিডিওটেক্সট, ইন্টারনেট, ওয়্যারলেস তথ্য স্থানান্তর, ও জিপিএস হল এই প্রযুক্তির চরমতম অবদান।
৫. ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি:
ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি হল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও নীতিগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে ঘটানো বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, সিস্টেমের নকশা, সরঞ্জাম, উৎপাদন, ইনস্টলেশন, পরীক্ষা, পরিষেবা, ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার কৌশলগত উন্নয়ন।
এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিক থেকে শুরু করে আবাসিক ও কারখানা পর্যন্ত সমস্ত শিল্পেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, কম্পিউটার, পাওয়ার সাপ্লাইয়ার, রাডার, মাল্টিমিটার, ইন্টারেক্টিভ সেন্সর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সবই এই প্রযুক্তির দান।
৬. চিকিৎসা প্রযুক্তি বা মেডিক্যাল টেকনোলজি:
বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা রোগ, আঘাত কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধের সমাধান তৈরি করে থাকি।
চিকিৎসা প্রযুক্তি মূলত চিকিৎসার সরঞ্জাম, সিস্টেম, সুবিধা ও চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নজর দিয়ে থাকে।
এই প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত মেডিকেল যন্ত্রপাতির মধ্যে পড়তে পারে কোনো উন্নততর অপারেশনের যন্ত্র, ইমপ্লান্ট, বিকারক বা কোনো সফ্টওয়্যার।
সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে প্রেসার মাপার যন্ত্র, মেডিকেল ইমেজিং প্রযুক্তি যথা- এক্স-রে ও এমআরআই মেশিন পর্যন্ত, সমস্ত চিকিৎসা যন্ত্রপাতিগুলোই রোগ নির্ণয়, পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও রোগের উপশমেও যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে।
এই প্রযুক্তির আরও একটা বড় দান হল 3D প্রিন্টিং।
গত এক দশকে, রোবোটিক্স চিকিৎসাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মেডিকেল রোবটগুলো চিকিৎসকদের নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
অস্ত্রোপচারের সময় এই আধুনিক রোবোটিক অস্ত্রগুলো ডাক্তারদের আরও ভালোভাবে ও দক্ষ পদ্ধতিতে অপারেশন করতে সাহায্য করে।
৭. যান্ত্রিক প্রযুক্তি বা মেকানিক্যাল টেকনোলজি:
যান্ত্রিক প্রযুক্তি, কার্যকরী যান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করতে ও গতি নিয়ন্ত্রণ বা প্রেরণের জন্য যান্ত্রিক অংশ আর উপকরণগুলো একত্রিত করার কৌশল হিসেবে কাজ করে।
যান্ত্রিক রোবট, থ্রিডি প্রিন্টার, পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করে গাড়ি তৈরির করাও এই প্রযুক্তির অন্যতম সেরা অবদান।
প্রধানত, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্টরা প্রোডাক্টের নকশা তৈরী, মেটেরিয়াল বিজ্ঞান ও ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতি থেকে প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট ও প্রোডাকশন মেশিনারি তৈরি করার জন্য এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে থাকেন।
৮. উপকরণ প্রযুক্তি বা মেটেরিয়ালস টেকনোলজি:
উপকরণ প্রযুক্তি হল একটা অপেক্ষাকৃত ব্যাপক কৌশল; যা কাঁচামাল থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় আকার ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্যে উপকরণের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করে থাকে।
যেহেতু, নানান উপকরণের নানান বৈশিষ্ট্য থাকে, তাই একাধিক উপকরণ মিশিয়ে কার্যকরী বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা নতুন অ্যাপ্লিকেশনের জন্ম দিয়ে থাকে।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো মেশিনের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্যে, তার উপকরণগুলোকে অবক্ষয় ও অন্যান্য ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্যে তৈরী করা হয়।
প্রযুক্তির সুবিধা – (Advantages of technology)
প্রযুক্তি ব্যবহারের অসংখ্য সুবিধা রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হল –
১. তথ্যের সহজ অ্যাক্সেস:
ইন্টারনেট প্রযুক্তির দৌলতে আমাদের বিশ্ব এখন ভুবন গ্রামে পরিণত হয়েছে।
এই ইন্টারনেট হল মুক্ত তথ্য অ্যাক্সেসের অন্যতম প্রধান জায়গা।
এর ফলে, বিভিন্ন দেশের মানুষেরা তাদের দেশের বাইরের নানান মানুষের সাথে তথ্য, আচার-ব্যবহার ও সংস্কৃতি বিনা কোনো বাধাতেই ভাগ করে নিতে পারছে।
এর মাধ্যমে, আপনি মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা, খেলাধুলা ও আরও সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জেনে যেতে পারছেন।
অর্থাৎ, বলা যায় যে, প্রযুক্তি আপনাকে উন্মুক্ত তথ্য ভান্ডারের সামনে বসিয়ে দিয়েছে।
২. সময় সাশ্রয়ী:
ম্যানুয়াল কাজের সমস্ত ঝক্কিকেই কমিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি।
কাঁচামালের দামের হিসেব যেখানে আমরা খাতায়-কলমে করতাম, সেই কাজই এখন আমরা করি আমাদের স্মার্টফোনে থাকা ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে।
আগে যেখানে আমরা অনেকক্ষণ সময় নিয়ে রাস্তার লোকদের জিজ্ঞেস করে করে লোকেশনে পৌছাতাম, সেখানে জিপিএস-এর ব্যবহার মুহূর্তের মধ্যে স্ক্রিনে ভাসিয়ে তুলছে আমাদের যাত্রাপথের সঠিক ম্যাপ।
সুতরাং, বলা যায় যে, টেকনোলজি আমাদের নিত্যকার জীবনের বহু সময় ও পরিশ্রম বাঁচাতে সক্ষম।
৩. সহজ যোগাযোগের মাধ্যম:
শিল্প বিপ্লব থেকে দ্রুত যোগাযোগের চাহিদায় টেলিগ্রাফ, টেলিফোনের আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষের জীবনের অন্যতম চাহিদা হয়ে দাঁড়ায় দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি।
আর, ঠিক সেখানেই প্রবেশ করে প্রযুক্তি।
কয়েক শতকের মধ্যেই এই প্রযুক্তি জন্ম দেয় সেলফোন, স্যাটেলাইট, ফাইবার অপটিক্স ও ইন্টারেনট পরিষেবার মতো প্রযুক্তির।
যার সাহায্যে, আমরা সারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজেদের বার্তাকে সরাসরি পৌঁছে দিতে পারছি।
বর্তমানে, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যোগাযোগ হয়ে উঠেছে আরও দ্রুত, আরও সহজ ও আরও সাশ্রয়ী।
৪. গতিশীলতা:
ওলা-উবের বুক করা থেকে শুরু করে এয়ারপ্লেনের মাধ্যমে হাওয়াই সফর করে এদেশ-ওদেশ ঘুরে বেড়ানো হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে কয়েক মুহূর্ত বা দিনের ব্যাপার।
অর্থাৎ, নিমেষের মধ্যে দেশ-কাল সীমানার গন্ডি পেরিয়ে নিরাপদভাবে ওয়ার্ল্ড ট্যুর করা, সমস্তটাই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির চরম উন্নতির কারণেই।
৫. কম খরচ-সাপেক্ষ:
প্রযুক্তির ব্যবহারই হয়ে থাকে আমাদের জীবনকে দ্রুত, সহজ ও কম ব্যয়সাপেক্ষ করে তোলার উদ্দেশ্যেই।
এইসব টেকনোলজি ব্যবহার করে আমরা যেসব আইটেম তৈরি করি কিংবা অতিরিক্ত পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা করি, তা আমাদের যথেষ্ট অর্থ ও সময় সাশ্রয় করে।
কম ব্যয়-সাপেক্ষ অর্থনীতিতে কাজ করার ফলে, যথেষ্ট সাশ্রয়ী মূল্যের প্রোফাইল বজায় রেখেই, সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হচ্ছে।
প্রতিযোগিতার কারণে প্রযুক্তি-প্রদত্ত পণ্য বা পরিষেবার দামও কম রাখা হয়, যাতে সংস্থাগুলো গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্যে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
আমাদের শেষ কথা,,
প্রযুক্তি কাকে বলে (what is technology in Bengali) নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
আশা করছি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার পর, প্রযুক্তির মানে কি বা এর বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান আপনার হয়ে গিয়েছে।
শেষে, আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে কিন্তু অবশই শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।