Technology

রাডার কি? এর প্রকার এবং ব্যবহার

রাডার কি

রাডার এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে রেডিও প্রতিধ্বনির মাধ্যমে দূরবর্তী কোন বস্তুর

উপস্থিতি, দূরত্ব ও দিক নির্ণয় করা যায়। RADAR এর পূর্ণরূপ– Radio Detection And Ranging।

রাডার হল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর যা বৃহৎ দূরত্বের বিভিন্ন ধরণের বস্তু সনাক্তকরণ, অনুসরণ বা ট্র্যাকিং এবং আকার জানার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কোন বস্তুর দিকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বা চৌম্বকীয় তরঙ্গ শক্তি প্রেরণ করে, এবং বস্তু থেকে ফিরে আসা প্রতিধ্বনি পর্যবেক্ষণ করে।

রাডারের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বিমান, জাহাজ, মহাকাশযান, স্বয়ংচালিত যানবাহন, জ্যোতির্বিদ্যা সংস্থা, এমনকি পাখি, পোকামাকড় এবং বৃষ্টি। বিভিন্ন বস্তুর উপস্থিতি, অবস্থান এবং বেগ নির্ধারণের পাশাপাশি, রাডার কখনও কখনও তাদের আকার এবং আকৃতিও সনাক্ত করতে পারে। অপটিক্যাল এবং ইনফ্রারেড সেন্সিং ডিভাইস থেকে রাডারকে যেটি আলাদা করে তা হল রাডার প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতিতে দূরবর্তী বস্তু শনাক্ত এবং নির্ভুলতার সাথে এর পরিসীমা বা দূরত্ব নির্ধারণ করতে পারে।

রাডার, একটি সক্রিয় সেন্সিং ডিভাইস যাতে নির্দিষ্ট বস্তু সনাক্ত করার জন্য এর নিজস্ব একটি ট্রান্সমিটার রয়েছে। এটি সাধারণত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের মাইক্রোওয়েভ অঞ্চলে কাজ করে। রাডারের ফ্রিকোয়েন্সিতে হার্টজ (চক্র প্রতি সেকেন্ডে) এককে পরিমাপ করা হয়। এর ফ্রিকোয়েন্সি প্রায় ৪০০ মেগাহার্টজ (MHz) থেকে ৪০ গিগাহার্টজ (GHz) পর্যন্ত প্রসারিত।

রাডার ১৯৩০ এবং ১৯৪০ এর দশকে সামরিক প্রয়োজন দ্রুত বিকাশ লাভ করে। এটি এখনও ব্যাপকভাবে সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, পরিবেশের রিমোট সেন্সিং, বিমান এবং জাহাজ নেভিগেশন, শিল্প অ্যাপ্লিকেশনের জন্য গতি পরিমাপ এবং মহাকাশ নজরদারি, এবং গ্রহ পর্যবেক্ষণে রাডার ব্যবহার হচ্ছে।

রাডার এর কাজ

  • দূর পাল্লায় শত্রু বিমান বা শত্রু জাহাজ খুঁজে বের করতে রাডার ব্যবহার করা হয় ।
  • আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক যুদ্ধান্ত্রের সঠিক নিয়ন্ত্রণে রাডার ব্যবহৃত হয়।
  • মিশাইল ব্যবস্থাকে ব্যবহারের নির্দেশনা ও আদেশ দানে ব্যবহৃত হয় ।
  • বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ।
  • সামুদ্রিক জাহাজ নিয়ন্ত্রণ ও সমুদ্র বন্দরের নিকট জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ।
  • বিমানের উঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ।
  • চাদ ও নিকটবর্তী গ্রহদের নিয়ে গবেষনা।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির পূর্বাভাস।
  • ইলেকট্রনিক চক্ষু বলা হয় রাডারকে।

রাডার কত প্রকার ও কি কি

রাডার প্রযুক্তি বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ, এবং বিভিন্ন বস্তুর সনাক্তের জন্য সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে একটি। এই কারণে, বিভিন্ন ধরনের রাডার সিস্টেম রয়েছে যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। রাডার সিস্টেমগুলো এর ফাংশন এবং উদ্দেশ্যগুলোর উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে। নিম্মে কার্যক্ষমতা ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি রাডারের পরিচয় দেওয়া হল।

১. ইন্সট্রুমেন্টেশন রাডার (Instrumentation radar)

ইন্সট্রুমেন্টেশন রাডার মূলত সরকারী ও বেসরকারী পরীক্ষার রেঞ্জে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান এবং গোলাবারুদ পরীক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি রিয়েল-টাইমে এবং পোস্ট-প্রসেসিং বিশ্লেষণ করে স্থান, অবস্থান এবং সময় সহ বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

২. আবহাওয়া রাডার (Weather radars)

আবহাওয়ার রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে আবহাওয়া সংবেদন এবং সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই রাডার অনুভূমিক বা বৃত্তাকার মেরুকরণের সাথে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। আবহাওয়া রাডারের ফ্রিকোয়েন্সি বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্পের ফলে বৃষ্টিপাতের প্রতিফলন এর উপর নির্ভর করে। কিছু আবহাওয়ার রাডার বৃষ্টিপাতের ধরন সনাক্ত, বাতাসের গতি এবং দ্বৈত মেরুকরণ পরিমাপ করতে ডপলার শিফট ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

৩. ম্যাপিং রাডার (Mapping radar)

ম্যাপিং রাডারগুলো রিমোট সেন্সিং ব্যবহার করে ভূগোল এবং বড় ভৌগলিক অঞ্চল স্ক্যান করতে ব্যবহৃত হয়। 

৪. নেভিগেশনাল রাডার (Navigational radars)

ন্যাভিগেশনাল রাডার সাধারণত সার্চ রাডারের মতই। এগুলো জাহাজ এবং বিভিন্ন দূরত্বের বিমান ডিটেক করতে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন ন্যাভিগেশনাল রাডার রয়েছে, যার মধ্যে সামুদ্রিক রাডার অন্যতম। ন্যাভিগেশনাল রাডার সাধারণত সংঘর্ষ এড়ানো এবং নৌচলাচলের উদ্দেশ্যে জাহাজে বসানো হয়।

৫. বিস্ট্যাটিক রাডার (Bistatic radar)

বিস্ট্যাটিক রাডার একটি ট্রান্সমিটার এবং একটি রিসিভার নিয়ে গঠিত যা প্রত্যাশিত লক্ষ্যের দূরত্বের সমান দূরত্ব দ্বারা পৃথক করা হয়। বেশিরভাগ দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলে বিস্ট্যাটিক রাডার ব্যবহার করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button