নাসা কি ? (What is NASA in Bengali), নাসার ইতিহাস, নাসা কোথায় অবস্থিত এবং নাসার সাথে জড়িত সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করতে চলেছি। আশা করছি, নাসার (NASA) বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য গুলো আপনারা স্পষ্ট করে বুঝতে পারবেন।
সূর্য-চন্দ্র ও কোটি কোটি নক্ষত্রের টান পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে তুলেছে আর মহাকাশ নিয়ে মানুষের অদম্য কৌতূহল থেকেই তাদের পাড়ি দেওয়া অসীম বিশ্ব-বিশ্বব্রহ্মান্ডের উদ্দেশ্যে।
প্রথম মহাকাশ গবেষণার গোড়াপত্তন সেইদিনই হয়ে গেছিল, যেদিন ১৬০৯ সালে, ইটানলিয়ান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের প্রাথমিক সংস্করণটি ব্যবহার করেছিলেন।
তিনিই পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যিনি টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
তাই, তাঁকেই প্রথম জ্যোতির্বিদ্যার আবিষ্কারক হিসেবে মনে করা হয়।
এরপর, ১৯২০-এর দশকে মহাবিশ্বের ধারণা প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন লেমাইত্রে নামের একজন বেলজিয়ান ধর্মযাজক।
তিনিই প্রথম কিংবদন্তি বিগ-ব্যাং তত্ত্বের পরামর্শদাতা।
এই তত্ত্বে তিনি বলেছিলেন যে মহাবিশ্ব একটি একক আদিম পরমাণু থেকে তৈরী হয়েছে।
তাই, বলা যেতে পারে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার ঘটনা নতুন কিছু নয়।
পরবর্তীতে, অসংখ্য গবেষণার পর সর্বপ্রথম ইউরি গ্যাগারিনের হাত ধরে ১৯৬১ সালে মানবজাতি সফলভাবে মহাকাশযাত্রা করতে সক্ষম হয়েছিল।
মানব ইতিহাসের এই যুগান্তকারী ঘটনার থেকেই শুরু হয়েছিল সর্বসম্মত স্বীকৃতভাবে ও সুনিশ্চিতভাবে মহাকাশ বিদ্যার অধ্যয়ন।
আর, এই মহাকাশ বিদ্যার জগতে সবথেকে উজ্জ্বল ও সর্বজন পরিচিত নাম হল নাসা।
আজকের আমাদের এই আর্টিকলে আলোচনার প্রধান বিষয়ই হল এই নাসা কি ও বাংলায় এর অর্থ কি ?
নাসা কি । নাসা বলতে আমরা কি বুঝি – (What is NASA in Bengali)
নাসা আসলে হল ইংরেজি শব্দ NASA-এর সংক্ষিপ্ত আকার।
এই নাসা শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ হল “National Aeronautics and Space Administration” বা যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় জাতীয় বিমানচালনবিদ্যা এবং মহাকাশ প্রশাসন সংস্থা।
এটি মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রর একটি স্বাধীন মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করার প্রতিষ্ঠান।
এই সংস্থা মহাকাশ ও বিমান চলাচলের বিজ্ঞান নিয়ে নানা ধরণের গবেষণা ও আবিষ্কার করে থাকে।
নাসার কাজ কি ?
এই ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হল আমেরিকার সিভিল স্পেস প্রোগ্রাম, যা মহাকাশ অনুসন্ধানে নেতৃত্বদানে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।
পুরো আমেরিকা জুড়ে এই এজেন্সির প্রায় ২০টা কেন্দ্র রয়েছে এবং মহাকাশে এই সংস্থার কেবলমাত্র একটি জাতীয় পরীক্ষাগার রয়েছে।
সংস্থাটির মূল কাজ হল পৃথিবী, তার জলবায়ু, সূর্য, এবং সৌরজগতসহ সুম্পূর্ণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে অধ্যয়ন করা।
বিমানচালনবিদ্যা বা এরোনোটিক্স ছাড়াও এই সংস্থা গবেষণা, অনুসন্ধান, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক চালনা এবং সুপারসনিক ফ্লাইটসহ আকাশবিদ্যার নানান ক্ষেত্রে উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে কাজ চালায়।
পৃথিবীর জনজীবনের উপকার সাধনের জন্যে এই সংস্থা মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশের জন্যে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে, যা ভবিষ্যতে পৃথিবীতে জীবনকে উপকৃত করবে।
বর্তমানে, এই এজেন্সিতে রয়েছে প্রায় ১৮০০০জন বেসামরিক কর্মচারী।
এছাড়াও, মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্যে, জ্ঞান অন্বেষণ ও জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি, নানা ধরণের উপকারী আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে এই নাসা আরও অনেক মার্কিন কন্ট্রাক্টরস, একাডেমিয়া এবং আন্তর্জাতিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের সাথে কাজ করে।
নাসা কবে তৈরী হয় ?
১৯৫৮ সালের ১লা অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অংশ হিসেবে নাসার পথ চলা শুরু হয়েছিল।
বর্তমানে, এই সংস্থা মার্কিন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির দায়িত্বে রয়েছে, যা বিমান বা মহাকাশ গবেষণার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
নাসা কোথায় অবস্থিত ?
সারা আমেরিকাতে প্রায় ২০টি কেন্দ্র থাকলেও, নাসার সদর দপ্তর কিন্তু ওয়াশিংটন, ডিসি-তে অবস্থিত।
নাসার ইতিহাস: (নাসা কেন তৈরী করা হয়েছিল ?)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে অন্যান্য দেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য একটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এই পিছিয়ে থাকার কারণে আমেরিকার প্রযুক্তিগত অসুবিধার পাশাপাশি অর্থনৈতিক এবং সম্ভবত সামরিক দিক থেকেও ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিতে পারতো।
যদিও তারা ১৯০৩ সালে প্রথম বিমান উড়িয়ে থাকলেও, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে মার্কিন বিমান প্রযুক্তি ইউরোপের বিমান প্রযুক্তির চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল।
এই কারণেই, মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রযুক্তিগত গবেষণায় উন্নতি করার জন্য তখনকার সরকার এবং রাষ্ট্রপতি ১৯১৫ সালে একটি নতুন ফেডারেল সংস্থা তৈরি করেন, যা একটি স্বাধীন সরকারী সংস্থা হিসাবে সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট করবে।
এই সংস্থাটির নাম ছিল National Advisory Committee on Aeronautics (NACA) বা নাকা।
নাকা এরপর প্রায় ৪০ বছর ধরে বৈমানিক গবেষণা পরিচালনা করে, যা পরবর্তীকালে নতুন মহাকাশ শিল্পে পরিণত হয়েছিল।
যেটা ২০ শতকের মার্কিন অর্থনীতিকে সফলভাবে পরিচালিত করেছিল।
১৯৫০-এর দশকে, পাইলটরা X-15-এর মতো পরীক্ষামূলক যানবাহন গুলিকে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ও মহাকাশের অনেকটা উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছিল।
এরপর, নাকার প্রকৌশলীরা মহাকাশে মানুষকে পাঠানোর কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন।
এর মধ্যেই ১৯৫০-এর দশকের গোড়ায় জিওগ্রাফিকাল বর্ষে (১৯৫৭-১৯৫৮) এই নাকার উপর একটি কৃত্রিম স্যাটেলাইট তৈরির দায়িত্ব পড়ে।
কিন্তু, এই প্রকল্প গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইট স্পুটনিক-এর উৎক্ষেপণে সফল হয়।
তৎকালীন আমেরিকান সরকার এই স্যাটেলাইটের বিষয়ে দ্রুত তৎপরতার সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ঘোষণা করলে, NACA-এর প্রধান হিউজ ড্রাইডেন “এ ন্যাশনাল রিসার্চ প্রোগ্রাম ফর স্পেস টেকনলজি” নামের একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা নেন।
সেখানে বলা হয়েছিল যে, শক্তিশালী গবেষণা কার্যক্রম এবং মহাকাশ বিজয়ের পথে দ্রুত উন্নতিসাধনের জন্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো জাতীয় সিভিলিয়ান সংস্থার অধীনস্থ হওয়া উচিত।
এই পরিকল্পনারই ফলস্বরূপ NACA-এর পরিবর্তে আরও শক্তিশালী মহাকাশ গবেষণা সংস্থা হিসেবে NASA-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৫৮ সালে।
সূচনাকাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মহাকাশ সম্পর্কীয় অনুসন্ধানের দায়িত্ব এই এজেন্সির উপরই বর্তেছে।
নাসার সূচনাকাল:
ওহায়োর কেস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রেসিডেন্ট টি. কিথ গ্লেনান নাসার প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন।
আর, NACA-এর পরিচালক হিউ ড্রাইডেন প্রথম এই এজেন্সির উপ-প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
NACA-এর অভিজ্ঞ রবার্ট গিলরুথ যিনি স্পেস টাস্ক গ্রুপ এবং মার্কারি প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি হিউস্টনে NASA-এর ম্যানড স্পেসক্রাফ্ট সেন্টারের (বর্তমানে জনসন স্পেস সেন্টার) পরিচালক হিসেবে নিজের কাজ চালিয়ে গেছিলেন।
নাসার কিছু অবিস্মরণীয় কাজ:
বিশ্বের প্রথম প্রেরিত স্যাটেলাইটে রাশিয়ার নাম লেখা থাকলেও, মহাকাশ গবেষণার জগতে নিজের নাম এক নম্বর জায়গাতে নিয়ে যেতে নাসা সক্ষম হয়েছে, নিজের একের পর এক সফল মহাকাশ অভিযানের জন্যে।
এই অভিযানগুলোর মধ্যে সেরা কয়েকটি নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হল-
১. আমেরিকার প্রথম সফল স্যাটেলাইট: এক্সপ্লোরার ১:
১৯৫৭ সালে স্পুটনিকের উৎক্ষেপণের পরে নাকার জেট প্রপালশান ল্যাবরেটরি যখন নাসার অধীনে আসে, তখন এই ল্যাবরেটরি মাত্র তিন মাসের মধ্যেই তৈরী করে ফেলে আমেরিকার প্রথম স্যাটেলাইট এক্সপ্লোরার ১।
এই স্যাটেলাইটটি পাঠানো হয়েছিল পৃথিবীর কক্ষপথের কসমিক রশ্মি সম্পর্কে বিজ্ঞনীদের সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্যে।
এই কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আমাদের ধারণা চিরকালের জন্য পাল্টে দিয়েছিল।
এটি মহাকাশের মহাজাগতিক রশ্মির কার্যক্রিয়া সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীদের পাঠায়, সেই ক্রিয়াকলাপের পরিমাণ তাদের প্রত্যাশার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।
সেই থেকে পদার্থবিদ জেমস ভ্যান অ্যালেন অনুমান করেছিলেন যে এক্সপ্লোরার ১-এর থেকে প্রেরিত কসমিক রে একটিভিটি কম হওয়ার পিছনে কোনো অজানা বিকিরণ বেল্টের হাত রয়েছে।
হয়তো, স্যাটেলাইটটি সেই অজানা বিকিরণ বেল্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণেই তা সঠিক মাত্রায় কসমিক রশ্মির মাত্রা মাপতে সক্ষম হয়নি।
তাই, বিজ্ঞানীরা পুনরায় আর একটি স্যাটেলাইট পাঠান ও সেই স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্যে দেখা যায় ভ্যান অ্যালেনের অনুমানই সঠিক ছিল।
২. হাবেল স্পেস টেলিস্কোপ:
১৯৯০ সালের আগে গ্রাউন্ড-বেসড লাইট স্যাটেলাইট ছাড়া মহাকাশের ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
এই পৃথিবীর বুকে থাকা টেলিস্কোপ থেকে মহাকাশের স্পষ্ট ছবি পাওয়া সম্ভব ছিল না পৃথিবীর মেঘ, বাষ্প, জল ও নানা মহাজাগতিক রশ্মির কারণে।
তাই মহাকাশের পরিষ্কার ছবি পাওয়ার উদ্দেশ্যে নাসা হাবেল টেলিস্কোপ স্যাটেলাইটটি তৈরী করে।
যা মহাকাশ থেকে সরাসরি পৃথিবীতে মহাবিশ্বের যেকোনো অংশের পরিষ্কার ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
এই টেলিস্কোপটি বানাতে নাসা ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাথে সংযুক্ত হয়।
জনপ্রিয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবেলের নামানুসারে এই টেলিস্কোপের নাম রাখা হয়।
এই টেলিস্কোপটি কোটিরও বেশি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ করেছে এবং ৪০,০০০-টিরও বেশি বিভিন্ন মহাকাশ বস্তুর ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত মহাবিশ্বের পরিষ্কার, মন্ত্রমুগ্ধকর চিত্র প্রদান করে চলেছে এই হাবেল টেলিস্কোপ।
প্রায় ১৫০০০-টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক কাগজপত্র টেলিস্কোপের দেওয়া ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে।
বর্তমানে, নাসা আরও একটি উন্নত টেলিস্কোপ স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে, যা আলোর পরিবর্তে এক্স-রে রশ্মি দিয়ে মহাকাশের রঙিন ও অকল্পনীয় সুন্দর ছবি প্রেরণ করতে সক্ষম।
৩. চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি:
১৯৯৯ সালে নাসা বহু বছর ধরে নির্মিত সবচেয়ে সংবেদনশীল টেলিস্কোপটি চালু করেছিল।
এই টেলিস্কোপটি এমন সব দৃশ্য ক্যাপচার করতে সক্ষম, যেগুলো সাধারণ টেলিস্কোপের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
যেমন – সময়ের ভগ্নাংশে যখন মহাকাশের কণাগুলি একটি ব্ল্যাক হোলে অদৃশ্য হয়ে যায়, চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি সেই ছবিও তুলতে সক্ষম।
একটি এক্স-রে টেলিস্কোপ সাধারণ অপটিক্যাল টেলিস্কোপের থেকে অনেকটাই আলাদা ও শক্তিশালী।
যেহেতু, আলোর পরিবর্তে এক্স-রে অবজারভেটরি উচ্চ-শক্তির কণা ব্যবহার করে, তাই এই টেলিস্কোপ গুলো অন্য যন্ত্রের তুলনায় অনেকটাই সংবেদনশীল ও দ্রুত।
আর, পৃথিবীর চারদিকে নিজস্ব ম্যাগনেটিক শিল্ড থাকার ফলে, মহাবিশ্বের অন্য অংশের এক্স-রে রশ্মি পৃথিবী থেকে লক্ষ্য করা সম্ভব নয়।
তাই, মহাকাশ গবেষণা করতে গেলে বিজ্ঞানীদের একান্তভাবেই চন্দ্রা অবজারভেটরির মতো শক্তিশালী টেলিস্কোপের উপর নির্ভর করতে হয়।
এখনও পর্যন্ত চান্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ, নক্ষত্রের বিস্ফোরণ এবং সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের স্পষ্ট চিত্র প্রেরণ করেছে।
এই ছবিগুলো ডার্ক ম্যাটার বা অন্ধকার পদার্থের রহস্য অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করছে।
আগের দশকের শুরুতে, এই এক্স-রে টেলিস্কোপটি প্লুটো থেকে কম-শক্তির এক্স-রে সনাক্ত করেছে।
৪. কিউরিওসিটি রোভার-মার্স এক্সপ্লোরার:
নাসা ১৯৭০ সাল থেকে মঙ্গল বা লাল রঙের গ্রহ সম্পর্কে গবেষণা করার জন্যে রোবটিক রোভার পাঠানো শুরু করে।
এই সংস্থার প্রথম রোবটিক রোভার ছিল সোজার্নার।
তবে, বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় ও সফল রোবটিক রোভার হল কিউরিওসিটি।
যেহেতু, এটি নিউক্লিয়ার-পাওয়ার চালিত, তাই এই যন্ত্রটি প্রায় ৯ বছর ধরে মঙ্গলের বুকে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে।
কিউরিওসিটি রোভারের চাকা আছে এবং তারা মাটির উপর ঘুরতে পারদর্শী।
এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়।
এই রোভারটি গ্রহের বিভিন্ন অংশ কী উপাদান দিয়ে তৈরি তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করে।
মঙ্গল গ্রহ প্রচুর বিভিন্ন ধরণের শিলা দিয়ে তৈরি এবং প্রতিটি শিলা রাসায়নিকের মিশ্রণে তৈরি।
এই রোভার গুলো প্রতিটি শিলায় বিভিন্ন রাসায়নিক অধ্যয়ন করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।
এই রাসায়নিক গুলি বিজ্ঞানীদের সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে পারে, যা থেকে তারা বুঝতে পারেন যে কি কারণে সময়ের সাথে সাথে সেই শিলা পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই কিউরিওসিটি রোভার এতটাই স্মার্ট যে এর নিজস্ব টুইটার একাউন্টও রয়েছে।
৫. পার্কার সোলার প্রোব: সূর্যের বায়ুমণ্ডলের চারপাশে ভ্রমণকারী
নাসার পার্কার সোলার প্রোব গত তিন বছর ধরে সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের মধ্য দিয়ে জুম করছে।
এই যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা কি কারণে সোলার উইন্ড বা সৌর বায়ু তৈরি হচ্ছে তা, জানতে চেষ্টা করছেন।
এই সোলার উইন্ড হল চার্জযুক্ত পার্টিকেলস বা অণুকণার ঢেউয়ের মতো, যা সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে অবিরাম প্রবাহিত হয়ে চলেছে এবং যার কারণে পৃথিবী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৬. অ্যাপোলো ১১: চাঁদের মাটিতে পা দেওয়া প্রথম মানুষ:
আজকের দিনে চাঁদে জমি কেনার ঘটনা অনেক শোনা গেলেও, চাঁদে প্রথমবার মানুষকে পৌঁছনোর কৃতিত্ব কিন্তু নাসারই।
এই অ্যাপোলো চন্দ্রযান তৈরী করতে গিয়ে বহুবার ব্যর্থ হওয়ার পর অ্যাপোলো ১১ বয়ে আনে নাসার জন্যে সৌভাগ্য।
এটি ছিল তাদের মহাশ্চরীদের চাঁদে পাঠানোর মিশন।
আর, নাসার সর্বশ্রেষ্ঠ সাফ্যলের মিশন হিসেবে ১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং।
নিত্য-নতুন নানা ধরণের মহাজাগতিক গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকে নাসা।
এরকম অনেক ছোট-বড় আবিষ্কার রয়েছে, যা নিয়ে নাসার অবদান এই পৃথিবীর কাছে অনস্বীকার্য।
নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা:
সম্প্রতি, ২০৩০ সালের মধ্যে নাসা, শুক্র গ্রহের উদ্দেশ্যে দুটো মিশন তৈরী করার পরিকল্পনা করছে।
তারা শুক্র গ্রহের কাছে ফসফাইন নামের এক বায়োসিগ্ন্যাচার গ্যাসের অস্তিত্ত্ব পেয়েছে।
তাই, তারা শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করতে আগ্রহী।
তাদের একটি মিশন হল শুক্রের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করা এবং দ্বিতীয় মিশনটি হল কক্ষপথ থেকে সেই গ্রহের ভূখণ্ড ম্যাপ করা।
এছাড়াও, নাসা ব্ল্যাক হোল, ডার্ক ম্যাটার ও সূর্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা ধরণের পরীক্ষামূলক কাজ চালাচ্ছে।
আমাদের শেষ কথা,,
আমাদের আজকের নাসা নিয়ে রচিত এই আর্টক্যালটি এখানেই শেষ হল।
নাসা কি বা নাসা কাকে বলে এবং নাসার ইতিহাস নিয়ে লিখা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে ভালোলাগলে অবশ্যই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেগুলো নিচে কমেন্টের মাধ্যমে অবশই জানিয়ে দিবেন।