যখন আমারা ফোনের ক্যামেরা ফিচার নিয়ে কথা বলতে যাই তখন সর্বপ্রথম কথা আসে মেগাপিক্সেল নিয়ে। আমারা স্বাভাবিক অবস্থায় এটাই ভাবি যে যতো বেশি মেগা-পিক্সেল ততো বেশি ভালো ক্যামেরা। কিন্তু কখনো কি এটা ভেবে দেখেছেন যে এই মেগা-পিক্সেল কি? অথবা এর গুরুত্ব কতটুকু? বেশি মেগা-পিক্সেল মানেই কি সবচেয়ে ভালো ক্যামেরা? আজকের এই পোস্ট এ আমি এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
মেগাপিক্সেল কি?
মেগা-পিক্সেল হলো এক মিলিয়ন পিক্সেল এর সংক্ষিপ্ত নাম। এক মিলিয়ন পিক্সেল মানে ১০ লাখ পিক্সেল। অর্থাৎ ১ মেগা-পিক্সেল ক্যামেরাতে ১০ লাখ পিক্সেল থাকে। এখন প্রশ্ন এই পিক্সেল কি? দেখুন একটি ক্যামেরা সম্পূর্ণ হতে অনেক গুলো যন্ত্রাংশের প্রয়োজন পরে। যেমনঃ লেন্স, সেন্সর, কয়েক প্রকার দর্পণ, গ্লাস ইত্যাদি। ক্যামেরার সবচেয়ে নিচের দিকে থাকে সেন্সর। এখন এই ইমেজ সেন্সরে অনেক ছোট ছোট পিক্সেল অনুভূমিক এবং খাঁড়া ভাবে সাজানো থাকে। ক্যামেরা দিয়ে যখন কোনো ছবি ক্যাপচার করা হয় তখন সেই ছবিটি একটি খণ্ডে না উঠে, লাখ লাখ খণ্ড আকারে উঠে থাকে। এই লাখ লাখ খণ্ড একত্রিত হয়ে একটি পুরো ছবি সম্পূর্ণ করে। আর এই লাখ লাখ খণ্ডের এক একটি হলো একটি করে পিক্সেল। প্রতিটি পিক্সেল নিজে থেকে ছবিটির বিশেষ অংশের তথ্য ধারণ করতে সক্ষম। এক একটি পিক্সেল ছবিটির আলো, কালার, এবং বিশেষ অংশের তথ্য ধারণ করে। এবং ক্যামেরা প্রসেসর সেই ধারণকৃত তথ্যগুলোকে রেনডার করে ছবিতে পরিনত করে, যেটা কিনা ফোনের গ্যালারীতে দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা ১ মেগা-পিক্সেল ক্যামেরার রেজুলেসন কে ১১৫২ x ৮৬৪ দিয়ে মেপে থাকি। অর্থাৎ ১ মেগা-পিক্সেল ক্যামেরার সেন্সরে ১১৫২ পিক্সেল থাকে অনুভূমিক ভাবে এবং ৮৬৪ পিক্সেল থাকে খাঁড়া ভাবে। যখন আপনি সব পিক্সেল গুলোকে গুন করবেন তখন গড়ে ১০ লাখ পিক্সেল হবে। এই জন্যই এই ক্যামেরাকে ১ মেগা-পিক্সেল বলা হয়। অনুরুপ ভাবে ২ মেগা-পিক্সেল ক্যামেরার রেজুলেসন হয় ১৬০০ x ১২০০। অর্থাৎ এখান থেকে ছাফ এটাই বোঝা যাচ্ছে যে ক্যামেরায় যতো বেশি মেগা-পিক্সেল থাকবে ততই এর ইমেজ সেন্সর এর পিক্সেল সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পিক্সেল সংখ্যা বাড়লেই কি ইমেজ এর মান উন্নত হবে?
মেগাপিক্সেল এর গুরুত্ব
আপনার ক্যামেরাতে যতো বেশি পিক্সেল থাকবে ততো বেশি বিস্তারিত অংশ আপনার ক্যাপচার করা ইমেজটিতে দেখতে পাবেন। কিন্তু এর মানেই যে সর্বউত্তম ইমেজ কোয়ালিটি আসবে তা কিন্তু নয়। যদি আপনার ক্যামেরার পিক্সেল গুলো আকারে বড় হয়, সেন্সর এর আকার বড় হয় এবং ক্যামেরার লেন্সটি যদি অনেক ভালো কোয়ালিটির হয় তবে আপনার ক্যামেরার মেগাপিক্সেল কম হলেও আপনি ভালো কোয়ালিটির ইমেজ পেতে পারেন। এরমানে ক্যামেরাতে শুধু বেশি মেগাপিক্সেল থাকলেই হবে না। ভালোমানের ইমেজ পাওয়ার জন্য পিক্সেল গুলো আকারে বড় হতে হবে যাতে বেশি আলো এবং তথ্য ধারণ করতে পারে। বড় সেন্সর এবং ভালোমানের লেন্স থাকাটাও আবশ্যক।
চলুন আইফোন ৬ এবং আইফোন ৬ এস এর কথা ভাবা যাক। আইফোন ৬ এর ক্যামেরায় আছে ৮ মেগা-পিক্সেল এবং আইফোন ৬ এস এর ক্যামেরায় আছে ১২ মেগা-পিক্সেল। এখন এদের সেন্সর এর আকার কিন্তু সমান রাখা হয়েছে। যে আয়তন এর ভেতর আগে ৮০ লাখ পিক্সেল ছিল ঠিক একই আয়তনে যদি এখন ১২০ লাখ পিক্সেল থাকে তবে ১২০ লাখ পিক্সেল আটাতে গিয়ে নিশ্চয় এর আকার কমিয়ে ফেলা হয়েছে। যখন ৮০ লাখ পিক্সেল ছিল তখন এর আকার ছিল বড় পরে আইফোন ৬ এস এ পিক্সেল বাড়িয়ে আকার ছোট করে ফেলায় এই দুই ফোনের ক্যামেরার ভেতর তেমন বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা যাবে না। অর্থাৎ বেশি পিক্সেল হওয়ার চেয়ে কম পিক্সেল কিন্তু বড় আকারের হওয়াতেই বেশি ভালোমানের ইমেজ পাওয়া সম্ভব।
চলুন একটি বাস্তব উদাহরন এর মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। মনে করুন একটি চৌবাচ্চাতে ১০ টি বড় আকারের মাছ ছাড়ার মতো জায়গা আছে। এই ১০ টি মাছের একত্রে ওজন ১০ কেজি। এখন সেই একই চৌবাচ্চাতে যদি ২০ টি মাছ ছাড়া হয় তবে নিশ্চয় ছোট আকারের ২০ টি মাছ ছাড়তে হবে। এতে মাছের সংখ্যা বাড়লেও ওজন কিন্তু ১০ কেজিই হবে। ঠিক এভাবেই একই আকারের সেন্সরে পিক্সেল এর সংখ্যা কমানো হোক আর বাড়ানো হোক, ইমেজ কোয়ালিটিতে তেমন একটা পার্থক্য আসবে না।
এই জন্যই লখ্য করে দেখা যায় যে, একটি ১২ মেগা-পিক্সেল এর ডিএসএলআর একটি ২০ মেগা-পিক্সেল এর ফোন ক্যামেরা থেকে বেশি ভালোমানের ইমেজ ক্যাপচার করতে পারে। কারন ডিএসএলআর এর ভেতর অনেক বড় সেন্সর থাকায় এর পিক্সেল এর আকারও অনেক বড় হয়ে থাকে। আর বড় পিক্সেল বেশি আলো, রঙ এবং তথ্য ধারণ করতে সক্ষম।
শেষ কথা
আশা করি এতক্ষণে আপনি মেগাপিক্সেল এর সঠিক গুরুত্ব বুঝে গেছেন। এবং সাথে এটাও জেনেছেন যে বেশি মেগাপিক্সেলে কি সুবিধা এবং কি অসুবিধা, এক একটি পিক্সেল এর আকার বড় হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং আমি পুরোপুরি ভরসা করি আপনি এবার যখন নতুন স্মার্টফোন কিনতে যাবেন তখন এই সকল বিষয়ের উপর বিশেষ ধ্যান রাখবেন। আজকের আলোচনাকে আর খুব বেশি লম্বা করার প্রয়োজন বোধ করলাম না। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আপনার মতামত বা প্রশ্ন গুলো আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।