Technology

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি ? এর সুবিধা ও অসুবিধা এবং গুরুত্ব

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে ? 

বর্তমানের ডিজিটাল জগতে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ছাড়া আমাদের দুনিয়া প্রায় অচল।

আর, এই সমগ্র ইন্টারনেট দুনিয়াই নির্ভর করে রয়েছে ইনফরমেশন বা তথ্য আদানপ্রদানের উপর।

যখন এই ইনফরমেশন বা তথ্য, কোনো বিশেষ টেকনোলজি বা প্রযুক্তির সাহায্যে, বিশ্বব্যাপী মানুষকে কোনোরকম বাধা বা সময়ের গন্ডি ছাড়াই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা বা কম্যুনিকেট করতে দেয়; তখনই সারা বিশ্বটা এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এক অদৃশ্য জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

আমাদের এই আর্টিকেলে আজকে আমরা আলোচনা করবো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে, এর গুরুত্ব, সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। 

চলুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, এই ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্যুনিকেশন টেকনোলজি কি ?

আইসিটি, বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে (বা প্রযুক্তি) একধরণের অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করলে, এর উপাদান হিসেবে ধরা যেতে পারে –  আধুনিক কম্পিউটিং ব্যবস্থাকে।

এই ব্যবস্থাই আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে সক্ষম করে তোলে।

যদিও, ইনফরমেশন ও কম্যুনিকেশন টেকনোলজির কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।

তবে, এই শব্দটির মাধ্যমে সাধারণত নেটওয়ার্কিং উপাদান, সমস্ত ডিভাইস, অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেমগুলিকে বোঝায়।

এই সমস্ত উপাদানগুলোকে একত্রিত করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন- অলাভজনক সংস্থা, ব্যবসা, সরকার ও অপরাধমূলক সংস্থা ইত্যাদি) ডিজিটাল দুনিয়ায় (ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বা কম্যুনিকেট করে থাকে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে ?

সোজা ভাষায় বলতে গেলে, আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হল এমন সমস্ত প্রযুক্তির সমষ্টি; যা মানুষের মধ্যেকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করে তোলে।

অর্থাৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) হল সেই ধরণের প্রযুক্তি; যেই প্রযুক্তি সম্প্রচার মিডিয়া, ইন্টেলিজেন্ট বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, টেলিযোগাযোগ, অডিওভিজ্যুয়াল প্রসেসিং, ট্রান্সমিশন সিস্টেম, নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ ফাংশনগুলোর মতো যোগাযোগ প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যবহার করে, বর্তমানের সমগ্র যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে থাকে।

তবে, এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি হল ইনফরমেশন টেকনোলজি বা আইটি-এর একটি বর্ধিত প্রতিশব্দ।

সুতরাং, বলাই যেতে পারে যে, এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি আরও অনেকখানি বিস্তৃত।

আর, এই আইসিটি প্রযুক্তিটিকে অনেক সময়েই বিভিন্ন প্রযুক্তির সংমিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

সাধারণত, এটির মাধ্যমে একই ট্রান্সমিশন মাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থার কাঠামোর ব্যবস্থাপনা ও সমগ্র তথ্য প্রযুক্তির একত্রীকরণকে বোঝানো হয়ে থাকে।

তাহলে আশা করছি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি বা এর মানে আপনারা সঠিক ভাবে বুঝতেই পেরেছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা:

এই প্রযুক্তির ব্যাপক বিন্যাস মানুষের জীবনকে অনেক সহজ ও দ্রুততর করে তুললেও, এই প্রযুক্তির নানা ধরণের সুবিধা থাকার পাশাপাশি অনেকগুলো অসুবিধাও রয়েছে।

তথ্য ও প্রযুক্তির সুবিধা:

আসুন, তাহলে জানা যাক, এই প্রযুক্তির সুবিধা গুলো সম্পর্কে –

১. যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে:

ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্যুনিকেশন টেকনোলজি বর্তমানে নতুন যোগাযোগ পদ্ধতির পরিসরকে বিস্তৃত করেছে।

যার মাধ্যমে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে ও স্বল্প মূল্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন।

তা টেক্সটিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং হোক বা কিংবা ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মতো প্রযুক্তিই হোক, যা ব্যবহার করে আপনি যেকোনো সময়ে খুবই স্বল্প মূল্যে বিশ্বজুড়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

এই প্রযুক্তির সাহায্যে খুব সহজেই কোনোরকম সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও টেক্সট-ভিত্তিক কম্পিউটার কমিউনিকেশনের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখা সক্ষম।

২. বিশ্বায়ন:

আইসিটির আগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে হলে দেশে-বিদেশে অনেক মূল্য খরচ করতে সেই স্থানগুলোতে পৌঁছতে হতো।

কিন্তু, এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর ব্যবস্থাটি অনেক সরল ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।

এই আইসিটি কেবলমাত্র দেশ ও জনগণকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে তা নয়, বরং এই প্রযুক্তি বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি স্বাধীন আন্তঃনির্ভর ব্যবস্থায় পরিণত করেছে; যাতে ব্যবসা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমের রাস্তা আরও প্রশস্ত হয়ে ওঠে।

৩. যোগাযোগের খরচ কার্যকরীভাবে কমায়:

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রধান সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই যে, এটি একটি অতিরিক্ত সাশ্রয়ী যোগাযোগ মাধ্যম।

যেকোনো টেলিফোন কলিং, মেসেজিং অনেকটাই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

অন্যদিকে, ইন্টারনেট মাধ্যম অনেকটাই সস্তা ও অনেক বেশি পরিমাণ দূরত্বের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম।

আর, উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ার ফলে, এই প্রযুক্তি মানুষের তথা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে, ব্যবসাগুলো মূল্য বা গুণমানের সাথে আপস না করে, কম খরচেই যোগাযোগের ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।

৪. সারাক্ষণ যোগাযোগ মাধ্যমের উপলব্ধতা:

একটা ফোন কল নির্দিষ্ট সময়ের পর শেষ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু, ইন্টারনেট মাধ্যম ও আইসিটি ব্যবহার করে আপনি কোনো ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বার্তা পাঠালে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যদের কাছে ২৪ ঘন্টা বা সপ্তাহের যেকোনো দিন উপলব্ধ থাকে।

ফলে, এই প্রযুক্তি যেকোনো যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেক বেশি সহজলভ্য করে তুলেছে।

৫. সাংস্কৃতিক ব্যবধান পূরণ:

যেহেতু, এই প্রযুক্তির ব্যবহার সারা বিশ্বকে আমাদের হাতের মুঠোতে এনে দিয়েছে; এই কারণেই আমরা বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের সাথে ভার্চুয়ালভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি।

এর ফলে, আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের সাথে সাংস্কৃতিক ব্যবধানও পূরণ করতে পারছি।

বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে মতামত ও ধারণার আদানপ্রদান সম্ভব হচ্ছে এই আইসিটির সাহায্যেই।

যার কারণে মানুষের মনে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও কুসংস্কারের মাত্রাও অনেকটা কমছে।

৬. আইটি কৌশলগত চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করে:

ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা কিন্তু সমালোচনামূলক চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

যার ফলে, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা খুব কম সময়ের মধ্যেই তথ্যের আদানপ্রদান করতে পারে।

যোগাযোগের চিন্তা না থাকায়, কর্মীরা কাজের উন্নতির জন্য আরও ভালো কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।

তাই, ডেটা কমিউনিকেশনের অন্যতম সুবিধা হল এই যে, এটি আমাদেরকে আরও কার্যকর পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।

এই প্রযুক্তি, আমাদের জ্ঞান আদানপ্রদান ও কৌশলগত চিন্তাভাবনাকে উত্সাহিত করে I

আইসিটি যেকোনো সংস্থাকে উন্নতি করতে সাহায্য করে।

উদাহরণ স্বরূপ, কোম্পানিগুলো সাবস্ক্রিপশন ডাটাবেস ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদানপ্রদান করতে সক্ষম হয়।

যা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোক্তা ও গ্রাহকদের সহজতর অ্যাক্সেস প্রদান করেছে।

এর ফলে, এই কোম্পানিগুলো আরও ভালো ও উদ্ভাবনী পণ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করেছে।

৭. নতুন চাকরির সম্ভাবনা তৈরী করে:

আইসিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই যে, এটি নতুন ও আকর্ষণীয় চাকরির সম্ভাবনা তৈরী করতে পারে।

উন্নত এই প্রযুক্তি কাজকে সহজ যেমন করে তোলে তেমনই মানুষের চাকরির সুযোগও বাড়িয়ে দেয়।

৮. শিক্ষাক্ষেত্রের ব্যাপক প্রসার:

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ইন্টারনেট মাধ্যমের পথ আরও প্রশস্থ করেছে।

বর্তমানে, এই আইসিটি সকল ব্যক্তিকে বিশাল তথ্য ভান্ডারের অ্যাক্সেস প্রদান করে।

যার ফলে, পড়ুয়ারা তাদের পছন্দমতো বিষয় সম্পর্কে কেবল পাঠ্য পুস্তক ছাড়াও ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

তাছাড়াও, এখনকার ই-লার্নিং অ্যাপ ও নানান ধরণের এডুকেশনাল ওয়েবসাইট পড়াশোনার জগৎকে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও জ্ঞান আহরণের শ্রেষ্ঠ জায়গাতে রূপান্তরিত করেছে।

আইসিটির মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত ছবিগুলোকে সহজেই শিক্ষাদানে ও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে ব্যবহার করা সম্ভব।

এই ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষকরা সহজে জটিল গঠন ও নির্দেশনা বিদ্যার্থীদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন।

এর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পড়াশোনার বিষয়গুলো বুঝতে পারে।

আইসিটি ব্যবহার করে ইন্টারেক্টিভ ক্লাসরুম তৈরি করে পড়াশোনাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলাও সম্ভব।

তথ্য ও প্রযুক্তির অসুবিধা:

বেশ কিছু সুবিধার পাশাপাশি এই আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধাও।

এইবার, জেনে নেওয়া যাক এর অসুবিধাগুলো সম্পর্কে-

১. শিক্ষার ক্ষেত্রে বাধার অবকাশ:

সবরকমের আর্থিক অবস্থার মানুষের পক্ষে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এই কারণেই, অনেক মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে অবাধে ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না।

তাছাড়াও, ইন্টারনেট মাধ্যমের ভার্চুয়াল পড়াশোনাতে পড়ুয়াদের অমনোযোগী হয়ে যেতেও দেখা যায়।

তাই, বলা যেতে পারে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবসময় এই প্রযুক্তি ফলপ্রদ হয় না।

২. কাজের নিরাপত্তার অভাব:

বর্তমানে বেশিভাগ প্রতিষ্ঠানই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকেই প্রধান কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা করছে।

আর, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, আইসিটি মানুষের চাকরির নিরাপত্তাকে অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন করে তুলেছে।

যেহেতু, প্রযুক্তি দিনের পর দিন উন্নত হয়েই চলেছে; তাই এই প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে সবসময় অধ্যয়ন করে যেতে হবে বা অন্ততপক্ষে তাদের পেশার পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে।

যদি, তারা নিজেদেরকে সময়ের সাথে সাথে আপডেট করতে না পারে, তাহলে তাদের চাকরির নিরাপত্তা চলে যেতে পারে।

৩. সংস্কৃতির আগ্রাসন:

আইসিটি বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ পরিণত করেছে, তা ঠিক।

তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো বড় সংস্কৃতি ছোট ছোট সংস্কৃতিগুলোর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

তাই, এই ক্ষেত্রে আইসিটির মাত্রাতিরিক্ত প্রসারে একটি সংস্কৃতি আরেকটি দুর্বল সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলে যেতে পারে যে, পশ্চিমী দেশের সংস্কৃতি প্রাচ্য দেশগুলোর সংস্কৃতির উপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

৪. গোপনীয়তার নিরাপত্তহীনতা:

যেহেতু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এক বিশাল তথ্য ভান্ডারের রাস্তা উন্মুক্ত করেছে; তাই এখানে তথ্যের নিরাপত্তা খুবই দুর্বল।

যদিও, এই প্রযুক্তি যোগাযোগকে দ্রুত, সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলেছে; তবে মানুষের তথ্যের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছে নানান ধরণের সমস্যা ৷

তা ফোন সিগন্যাল ইন্টারসেপশন হোক কিংবা ই-মেইল হ্যাকিং, সবক্ষেত্রেই মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তাহীনতার কবলে পড়ে যায়।

৫. প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা:

যেহেতু, প্রযুক্তি জীবনকে সহজ করার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে; সেই কারণেই সামান্য অংকের হিসেবে করতেও মানুষ খাতা-কলমের বদলে ক্যাল্কুলেটরের ব্যবহার করছে।

কিংবা, জীবনের নানান নিত্য-নৈমিত্তিক কাজেও তারা এই প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, যেমন- অনলাইন শপিং, অনলাইন গ্রোসারি শপিং ও ইত্যাদি।

যা মানুষকে ক্রমে নিষ্ক্রিয় ও প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলছে।

প্রকৃতপক্ষে, মানুষের মধ্যে সামাজিকতা ব্যাপারটি কমে যাচ্ছে।

৬. তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার অভাব:

যে কেউ একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে তথ্য আপলোড করতে পারে।

তাই, ইন্টারনেট মাধ্যমে কোনো কিছু থাকার মানেই যে এটি সবসময় নির্ভরযোগ্য হবে, তা কিন্তু নয়৷

উদাহরণস্বরূপ, ওপেন সোর্স এনসাইক্লোপিডিয়া (যেমন- উইকিপিডিয়া) তথ্যের ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত হলেও, এইগুলো একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা বিশ্বস্ত রেফারেন্স হিসাবে গ্রাহ্য করা হয় না।

এছাড়াও, নানা ধরণের ক্ষতিকারক কম্পিউটার ভাইরাস, ট্রোজান, ম্যালওয়্যার, স্প্যাম, ওয়ার্ম, ফিশিং- এই সমস্তই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে ও জীবনকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে।

৭. অভিজ্ঞতার অভাব:

বিশ্বের সব মানুষ এই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এটি ব্যবহার করতে নাও জানতে পারেন।

তাই, এই আইসিটি টুল ব্যবহার করে অভিজ্ঞতার অভাবের অনেক মানুষই সঠিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারেন না।

আবার, এই ধরণের প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো সেট আপ করাও অনেক সময় ঝামেলার হতে পারে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব:

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কম্পিউটিং, ডেটা ম্যানেজমেন্ট, টেলিকমিউনিকেশন ও ইন্টারনেটের সাথে জড়িত সমস্ত প্রযুক্তি ও পরিষেবাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

এই প্রযুক্তি সমষ্টির ব্যবহার, মানুষের জীবনের সমস্ত দিকগুলোকে পরিব্যাপ্ত করেছে।

তাই, এই প্রযুক্তি মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগ, সহায়তা চাওয়া, তথ্যে অ্যাক্সেস প্রদান ও শেখার জন্য নানান ধরণের ভালো, উন্নত ও দ্রুত উপায় প্রদান করে।

সারা বিশ্বজুড়ে এই প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তৃতির একটি বিশাল অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে তথ্য প্রযুক্তির মিশ্রণ আইসিটির বিস্তারকে আরও দ্রুত করেছে।

সাম্প্রতিক বছরে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তির একত্রীকরণ, মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগ ও যোগাযোগ রাখার বিকল্পের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে।

বিভিন্ন খুচরো ও অন্যান্য গ্রাহক-মুখী পরিবেশে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন মাধ্যমে পরিণত করে তুলেছে।

এর ফলেই বর্তমানে ই-কমার্স মানুষের কাছে কেনাকাটার প্রধান উৎস হিসেবে পরিণত হচ্ছে।

শিল্প জগতের ক্ষেত্রে আইসিটি হয়ে উঠেছে একটি অতি দরকারী সহায়তা ব্যবস্থা।

এই প্রযুক্তির সাহায্যে কম্পিউটার-ভিত্তিক নির্ভুল ইঞ্জিনিয়ারিং, ভার্চুয়ালাইজড সিস্টেম ও কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহারের মাধ্যমে নিখুঁত ডিজাইন তৈরী করা সমস্ত শিল্প জগৎকেই যথেষ্ট উন্নত ও দ্রুত করে তুলেছে।

যার ফলে, উত্পাদনও অনেক বেশি শক্তিশালী, কার্যকর এবং দক্ষ হয়ে উঠেছে।

কেবলমাত্র, উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা খাতেও এই আইসিটি যথেষ্ট উন্নতি এনেছে।

যেমন এমন অনেক অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা রোগীর যত্ন, চিকিৎসার খরচ, চিকিৎসা পেশা, জনস্বাস্থ্য ও জীবন বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তির মিলন ঘটিয়ে জনসাধারণের কাছে চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে।

অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে যে, ইনফরমেশন ও কম্যুনিকেশন টেকনোলজি সামগ্রিকভাবে মানবজীবনের গুণগত মানকে ব্যাপকভাবে উন্নত করে তুলেছে বলে এর গুরুত্ব এখন অপরিসীম।

আমাদের শেষ কথা,,

আজকে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে ? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে লিখা আমাদের আর্টিকেলটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

আমাদের আর্টিকেলটি সত্যি ভালো লেগে থাকলে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার অবশই করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button