যতোদিন যাচ্ছে আমাদের কোয়ালিটির চাহিদা ততো বেড়ে যাচ্ছে সাথে ব্যান্ডউইথ ইউজও বেড়ে যাচ্ছে। এইতো কয়েকদিন আগের কথা, কম্পিউটারে ঠিক মতো স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন (480P) ভিডিও ও কারো কাছে দেখতে পাওয়া যেতো না। কয়েক বছর আগে পিসিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও একেবারে হাতে গোনা ছিল। আজকের দিনে ১০৮০পি রেজুলেশন (ফুল এইচডি) একটি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর ৪কে রেজুলেশন ধীরেধীরে তার নিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু ১০৮০পি কে ৪কে দ্বারা রিপ্লেস করা এতোটা সহজ ব্যাপার নয়, কেনোনা ৪কে ভিডিও স্ট্রিমিং বা ডাউনলোড করার জন্য চাই হাই ব্যান্ডউইথ রেট — যেখানে ফুল এইচডি মুভি ৬-৭ গিগাবাইট সাইজেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়, সেখানে ৪কে মুভির জন্য ৫০-৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয় হয়। মানে আপনার এভারেজ ইন্টারনেট কানেকশনে এরকম ফাইল ডাউনলোড করতে কয়েক জোড়া ঘণ্টা বা পুরো দিন লেগে যেতে পারে। যেখানে গুগল ফাইবার ব্যবহার করে মাত্র কয়েক মিনিটে একটি ৪কে মুভি ডাউনলোড করে নিতে পাড়বেন, এখানেই গুগল ফাইবারের বিশেষত্ব!
গুগল ফাইবার কি?
গুগল ফাইবার হচ্ছে, ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন সার্ভিস প্রভাইডার আর অবশ্যই এটা গুগল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। গুগল ফাইবার অত্যন্ত হাই স্পীড ইন্টারনেট প্রদান করে থাকে, যেটা আজকের স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারনেট স্পীড থেকে প্রায় ৫০-১০০ গুন বেশি ফাস্ট। গুগল ফাইবার ৫ মেগাবিট/সেকেন্ড (5Mbps) ব্যান্ডউইথ স্পীড থেকে ১ গিগাবিট/সেকেন্ড (1Gbps) স্পীড (১,০০০ মেগাবিট/সেকেন্ড (1000Mbps) পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ রেট প্রদান করে থাকে। গুগল ফাইবার সার্ভিসে আপনি টিভি চ্যানেল পর্যন্ত পেয়ে যাবেন, আর এর জন্য কিছু এক্সট্রা ডলার খরচ করতে হয়, তবে ১ গিগাবিট/সেকেন্ডের ইন্টারনেট এদের মূল ফোকাস।
আমাদের দেশের এভারেজ ইন্টারনেট স্পীড খুববেশি হলে ১০ মেগাবিট/সেকেন্ড, ৪জি আসার পরে হয়তো এভারেজ স্পীড একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে অ্যামেরিকাতেও এভারেজ ইন্টারনেট স্পীড ২০-২৫ মেগাবিট/সেকেন্ড। আর ২০-৭০ মেগাবিট/সেকেন্ড কানেকশনকেই হাই স্পীড কানেকশন বলা হয়, যদিও কিছু আইএসপি ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ড ইন্টারনেট কানেকশন প্রদান করে। ১ গিগাবিট/সেকেন্ড কানেকশন অনেকটা স্বপ্নের মতো, যেখানে ১০৮০পি মুভি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ডাউনলোড করা সম্ভব। ৫০-৬০ জিবি ডাটা ডাউনলোড করা মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ব্যাপার।
একেবারে সঠিক ১ গিগাবিট/সেকেন্ড যদিও সম্ভব নয়, কেনোনা তারের মধ্যদিয়ে ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সমিট করার সময় কিছু দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, আর আইএসপি থেকে আপনার লোকেশন, সাথে আপনি কোন সার্ভার থেকে ডাউনলোড করছেন তার ফিজিক্যাল লোকেশন অনুসারে কিছুটা লেটেন্সি থাকবেই। তাছাড়া গুগল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স বা বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভারে কানেকশন লিমিট করা থাকে, এতে সার্ভার একসাথে বেশি ইউজার সাপোর্ট দিতে পারে। মানে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন শুরু গিগাবিট/সেকেন্ড হলে চলবে না, অবশ্যই যে সার্ভার থেকে ডাউনলোড করছেন তার কানেকশনও গিগাবিট হতে হবে, তবেই আসল স্পীড পাওয়া সম্ভব হবে।
তবে এখানে শুধু সিঙ্গেল ডাউনলোড করার কথা আসছে না। আপনি কোন কারণে গিগাবিট স্পীডে ফাইল ডাউনলোড না করতে পারলেও একসাথে কিন্তু অনেক কাজ করতে পাড়বেন। যেমন, আপনি ফাইল ডাউনলোড করবেন, একই সময়ে ৪কে মুভি স্ট্রিমিং করতে পাড়বেন, একই সময়ে নেটফ্লিক্স চালাতে পাড়বেন, আবার একই সময়ে মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং ও করতে পাড়বেন, তারপরেও আপনার কিছু ব্যান্ডউইথ স্পীড বেঁচে যাবে।
কেন এটি অসাধারণ
একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে, হয়তো আপনাকে আমার বলার প্রয়োজন নেই, ফাস্ট ইন্টারনেট কেন অসাধারণ। ইন্টারনেটের পরিধি আরো আরো ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নতুন ডিভাইজ যুক্ত হচ্ছে। শুধু স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বা ট্যাবলেট নয়, প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক ধীরেধীরে ইন্টারনেট নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, আর স্মার্ট হোম তৈরি করার জন্য এটা দরকারিও। সেক্ষেত্রে আপনি যতো ডিভাইজ কানেক্টেড করাতে চাইবেন, আপনার ব্যান্ডউইথ স্পীড ততোবেশি প্রয়োজনীয় হবে। গুগল ফাইবারের ফাস্ট ইন্টারনেট, সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের জন্য ভালো, এবং স্পেশালি গুগলের জন্য ভালো। গুগল ফাইবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সার্ভিস গুলো আরো উন্নতভাবে এবং হাই স্পীডে আপনার কাছে পৌছাতে পাড়বে, ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং বলে ব্যাপার থাকবে না।
যদি কথা বলি, আমরা কখনো গুগল ফাইবার ব্যবহার করতে পারবো কিনা, উত্তর আমার সঠিক জানা নেই। কেনোনা গুগল ফাইবার ইউএসএ তেই কেবল কতিপয় শহরে রয়েছে, আর অনেক দুর্বল গতিতে এগোচ্ছে, এতে বলা যাচ্ছে না, আমাদের দেশে কখনো আসবেও কিনা। তবে প্রযুক্তি যতো স্পীড এগোচ্ছে, এতে হয়তো এটা কোন সুদূর ব্যাপার নয়। যাই হোক, গুগল ফাইবার বর্তমানে অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রন করছে, যেটা গুগলেরই একটি কোম্পানি, এবং ২০১৬ সালে গুগল ফাইবার ওয়েবপাস’কে কিনে নেয়। ওয়েবপাস মূলত একটি তারের মাধ্যমে প্রদান করা হাই স্পীড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার। তারের কথা শুনে হয়তো ভ্রূ কুঁচকে গেছে আপনার, কিন্তু এটি অসাধারণ টেকনোলজি ব্যবহার করে কাজ করে। এই সার্ভিস ব্যবহার করে মূলত বড় কর্পোরেট বিল্ডিং গুলোকে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করানো হয়ে থাকে। তবে বিল্ডিং এর ছাঁদে একটি এন্টেনা থাকে, যেটা ওয়্যারলেস ভাবে সিগন্যাল রিসিভ করে, কিন্তু সম্পূর্ণ বিল্ডিং সেই কানেকশন তার দিয়ে কভার করানো থাকে।
ওয়েবপাস মূলত, ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ড থেকে ৫০০ মেগাবিট সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড প্রদান করতে পারে, যেটা গুগল ফাইবার থেকে অর্ধেক স্পীড বা স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারনেট স্পীড থেকে ২০-২৫ গুল বেশি স্পীড। আর এই ওয়েবপাসও কেবল ইউএসএর কতিপয় শহরে রয়েছে।
গিগাবিট ইন্টারনেট আমরা কখন বা কবে ইউজ করতে পারবো সেটা এখানে মূল প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে অনুমান করে দেখুন, গিগাবিট ইন্টারনেটের এক্সপেরিয়েন্স কেমন হতে পারে! আর আমাদের ভবিষ্যৎ ইন্টারনেটের জন্য অবশ্যই এটি প্রয়োজনীয় একটি ফ্যাক্টর, তবে গুগল ফাইবার আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো, “হাইরে, যদি গুগল ফাইবারের গিগাবিট ইন্টারনেট আমার থাকতো!