বেশিরভাগ ইউজারগন গুগল বা ইয়াহুর ফ্রি মেইল সার্ভিস ইউজ করেই নিজেদের কাজ চালিয়ে নেন, কিন্তু অনেক এমন কাজ রয়েছে যেক্ষেত্রে কাস্টম ডোমেইন ইমেইল অনেক কাজের প্রমাণিত হতে পারে। কাস্টম ডোমেইন ইমেইল অ্যাড্রেস হচ্ছে ইমেইল সার্ভিস প্রভাইডারের ডোমেইন ইউজ না করে আপনার নিজের ডোমেইন দিয়ে ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করা। যেমন আপনি গুগলের জিমেইল থেকে ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে তাদের ডোমেইনে ইমেইল তৈরি করতে পারেন, সেক্ষেত্রে সর্বদা আপনার নামের পরে @gmail.com লেখা থাকে। — কিন্তু ধরুন আপনি নিজের নামে একটি ডোমেইন কিনেছেন আর সেটা ইউজ করে ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করতে চান, সেটা হবে এরকম; hello@tahmidborhan.com!
তো বুঝেই গেছেন, কাস্টম ডোমেইন ইমেইল তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপরে আপনাকে একটি ওয়েব হোস্টিং প্যাকেজ কিনতে হবে যেখানে ইমেইল হোস্ট করার সুবিধা যুক্ত করা রয়েছে। তারপরে বেসিক কিছু কনফিগারেশন এনাবল করলেই আপনার পার্সোনাল ডোমেইন ইমেইল অ্যাড্রেসটি কাজ করতে শুরু করবে। আপনি জি-সুইট ইউজ করেও পার্সোনাল মেইল গুলোকে হোস্ট করতে পারেন, এতে জিমেইলের সেইম ইন্টারফেস ও সুবিধা গুলো পাবেন। তাছাড়া zoho মেইল সার্ভিস ইউজ করে বিনা মূল্যেও নিজের মেইল ইনবক্স হোস্ট করতে পারেন, প্রয়োজনে এদের প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট ও রয়েছে!
তো যারা নিয়মিত ওয়্যারবিডি পাঠ করেন এবং টেকের সাথে মোটামুটি সম্পর্ক যুক্ত, তারা নিশ্চয় এতক্ষণে সম্পূর্ণ ব্যাপারটিই অনুধাবন করে নিয়েছেন। কিন্তু এখানে অনেকেই রয়েছেন যারা একবারেই নতুন, তাদের জন্য এই সম্পূর্ণ সিস্টেম কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করলাম!
ডোমেইনের সাথে ইমেইলের সাথ কি?
প্রথমে আপনার জানা দরকার ডোমেইন আসলে কি জিনিষ! — ইন্টারনেট কে সুসজ্জিত করার জন্য মূলত ডোমেইন নেম ইউজ করা হয়ে থাকে। যদি ডোমেইন নাম না থাকতো তাহলে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে সংখ্যা মনে করে রাখতে হতো যেটাকে আইপি অ্যাড্রেস বলা হয়। ডোমেইনের উদাহরণ সরূপ, যখন আপনি ওয়্যারবিডি ভিজিট করতে চান, আপনার ব্রাউজারে Wirebd.com ডোমেইন নেমটি প্রবেশ করানোর দরকার পরে!
যেভাবে ডোমেইন নেম ইউজ করে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন ঠিক একইভাবে ডোমেইন নেম ইউজ করে ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করা হয়। ইমেইল অ্যাড্রেস এর ক্ষেত্রে ডোমেইন নেম এটা নিশ্চিত করে দেয় যে আপনার পাঠানো মেইলটি যেন সঠিক মেইল সার্ভারে গিয়ে পৌঁছায়। কোন ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে সেটার ডোমেইন নেম খুঁজে পাওয়া খুবই সহজ কাজ। ধরুন; yourname@gmail.com — ইমেইল অ্যাড্রেসে “@” এই চিহ্নের পরের অংশই হচ্ছে ডোমেইন নেম, এক্ষেত্রে ডোমেইন নেমটি হচ্ছে gmail.com। আর @ এর আগের অংশটি হচ্ছে ইউজারনেম!
যদি আপনি গুগলের জিমেইল থেকে ফ্রি মেইল সার্ভিস গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসটি হবে gmail.com এর আওতাভুক্ত। কিন্তু আপনি যদি নিজের ডোমেইন নেমকে ইমেইল অ্যাড্রেস হিসেবে ইউজ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাড্রেসে আপনার ডোমেইন নেম থাকবে, যেমন; myname@mydomain.com — বুঝাতে পারলাম তো?
ইমেইল হোস্টিং সার্ভিস কি?
ইমেইল হোস্টিং সার্ভিস বলতে এমন টাইপের ইন্টারনেট হোস্টিং সার্ভিসকে বুঝানো হয় যেটা স্পেশালভাবে ইমেইল হ্যান্ডেল ও ইমেইল সার্ভার সেল করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে। আজকের দিনে নানান শেয়ারড হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে শুরু করে প্রায় যেকোনো ওয়েব হোস্টিং প্যাকেজের সাথে ইমেইল হোস্টিং যুক্ত করা থাকে। তবে সেক্ষেত্রে কিছু লিমিটেশন থাকে, যেমন- আপনি কতোটুকু ইমেইল হোস্ট করার জন্য স্পেস পাবেন বা কতো গুলো ইউজারনেম তৈরি করতে পারবেন।
আবার ডেডিকেটেড ইমেইল হোস্টিং ও রয়েছে যেখানে হয়তো আপনাকে বেশি সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। কিন্তু সেই সার্ভিস গ্রহনে আপনি কোন ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারবেন না, জাস্ট আপনার ডোমেইন ইমেইল হোস্ট করতে পারবেন। নানান ওয়েব হোস্টিং প্রভাইডার নানান টাইপের ইমেইল হোস্টিং প্রদান করে থাকে। আপনি চাইলে ওয়েব হোস্টিং এক কোম্পানি থেকে এবং ইমেইল হোস্টিং আরেক কোম্পানি থেকে পারচেজ করতে পারেন। পার্সোনাল ইউজের জন্য আমি Zoho মেইল ইউজ করতে রেকোমেন্ড করবো, এতে সকল ফিচার গুলোই মদুদ রয়েছে প্রায়, সাথে ফ্রি ইউজার হিসেবে ২ জিবি স্পেস ও পাবেন!
ডোমেইন ইমেইল কাদের জন্য?
জিমেইল বা ইয়াহুর মতো ইমেইল প্রোভাইডার গুলোর কাছ থেকে ফ্রি ইমেইল অ্যাড্রেস সহজেই পাওয়া যেতে পারে, এতে আপনাকে ডোমেইন নেম কেনা বা ইমেইল হোস্টিং নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সাথে আপনার আইএসপি, স্কুল, কলেজ, অফিস থেকেও ফ্রি ইমেইল অ্যাড্রেস পেয়ে যেতে পারেন, আর বেশিরভাগ ইউজারদের কাস্টম ডোমেইন ইমেইল অ্যাড্রেসের দরকারই পরে না। কিন্তু অনেক কাজে ও অনেক টাইপের ইউজারগন ও রয়েছেন যাদের ডোমেইন মেইল প্রয়োজনীয় হয়!
ধরুন আপনি একটি বিজনেস বা সংস্থা রান করান, আপনার অনেক কর্মচারী রয়েছে, সেক্ষেত্রে সকল কর্মচারীদের ইমেইল অ্যাড্রেস আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের অ্যান্ডারে হলে সেটা মনিটর করতে ও অনেক সুবিধা ও বেশি প্রফেশনাল লুক পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি চাইলে কোম্পানির ওয়েবসাইটের ডোমেইনের নিচে আপনি আরো কাস্টম ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করতে পারেন, যেমন কাস্টমার সাপোর্টের জন্য আলাদা ইমেইল অ্যাড্রেস বা কর্পোরেট সাপোর্টের জন্য আলাদা ইমেইল অ্যাড্রেস। আর সকল ইমেইল অ্যাড্রেস গুলো হবে আপনার নিজস্ব ডোমেইনের নিচে, এটা একে যেমন অনেক প্রফেশনাল দেখায় দ্বিতীয়ত এতে বিশ্বাস ও বারে!
আপনি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন বা আমার মতো ব্লগার, নিজের পার্সোনাল ডোমেইনের অ্যান্ডারে ইমেইল অ্যাড্রেস থাকলে এতে আপনাকে আরো প্রফেশনাল দেখায়, সাথে আপনি প্রথম ঝলকেই হয়তো কাস্টমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। শুধু বিজনেস বা নিজেকে প্রফেশনাল দেখানোর জন্যই নয়, আপনি যদি একটি কমিউনিটি রান করেন সেক্ষেত্রে কাস্টম ডোমেইন মেইল আদর্শ ব্যাপার হতে পারে।
কাস্টম ডোমেইন ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি। আপনি নিজের ডোমেইন কিনলেন তারপরে হাই সিকিউর কোন ইমেইল সার্ভারে আপনার ইনবক্স সেটআপ করলেন। এতে আপনার সকল ইমেইল গুলো বেশি সুরক্ষিত থাকবে। আপনার যদি প্রাইভেসি নিয়ে সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই এমন ডোমেইন প্রভাইডার থেকে ডোমেইন কিনুন যারা ডোমেইনের প্রাইভেসি প্রোটেকশন প্রদান করে।
নতুন করে হয়তো বলার দরকার পরবে না, কাস্টম ইমেইল অ্যাড্রেস সেট করার জন্য প্রথমে একটি ডোমেইন কিনতে হবে তারপরে ওয়েব হোস্টিং যেখানে ইমেইল হোস্টিং যুক্ত রয়েছে বা ডেডিকেটেড ইমেইল হোস্টিং নিতে হবে। তারপরে ডিএনএস সেটিং ঠিক করলেই কাজ শেষ! আপনি যদি চান, এই ব্যাপারে একটি টিউটোরিয়াল নিয়ে আসতে পারি, সেক্ষেত্রে নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারেন।