ক্রিপটোকারেন্সি কি? বৈশিষ্ট্য, প্রকার এবং উদাহরণ
বর্তমান ইন্টারনেট দুনিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোটো নামক ছদ্মনামে এক ব্যক্তি ক্রিপ্টোকারেন্সি নামক ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন করেন। বিটকয়েন ছিল প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি।
সাতোশি নাকামোটো তাঁর গবেষণাপত্র “বিটকয়েন: একটি পিয়ার-টু-পিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম” শিরোনামে নীতিগতভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির রূপরেখা দিয়েছিলেন। নিম্মে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? এর বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল মুদ্রার প্রকার উদাহরণসহ বর্ণনা করা হল
ক্রিপটোকারেন্সি কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) হল এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতেই বিদ্যমান। এটি ব্যবহার করে অনলাইন জগতে সব ধরনের লেনদেন করা সম্ভব।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল মুদ্রা যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং যা ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা সুরক্ষিত। অনেকেই এটিকে ‘ডিজিটাল সোনা’ হিসাবে উল্লেখ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণ হল বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম, কিন্তু বর্তমানে প্রায় ১৯,০০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের পিয়ার টু পিয়ার ব্যবস্থা। অর্থাৎ এতে তৃতীয় পক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কে কার কাছে এই ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় করছে তা অন্য কেউ জানতে পারে না। আবার পরিচয় গোপন রেখেও ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে লেনদেন করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, সাধারণভাবে কারো কাছে টাকা পাঠানোর জন্য আমরা ব্যাংকের সাহায্য নিই অথবা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি) ব্যবহার করি বা অনেক ক্ষেত্রে কুরিয়ার ও পোস্ট অফিসের মধ্য দিয়েও পাঠাই। এসকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য কিছু নির্দিষ্ট চার্জ বা ফি আদায় করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ক্রিপটোকারেন্সিতে যেহেতু তৃতীয় পক্ষের (ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং, কুরিয়ার ও পোস্ট অফিস) কোনও প্রয়োজন হয় না, তাই এর কোন বাড়তি চার্জ নেই। যদিও সর্বনিম্ন ফি প্রদান করতে হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সির মানের উপর সরকার কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অর্থাৎ সরকার চাইলে ইচ্ছেমতো ক্রিপ্টোকারেন্সি বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর সে-দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
পৃথিবীতে হাজারের উপরে ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা হচ্ছে বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, রিপল, মোনেরো, ড্যাশ, বাইটকয়েন, ডোজকয়েন ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে বিটকয়েন সবচেয়ে বিখ্যাত এবং পুরোনো।
ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রকার
বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১২টি ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রার নাম এবং প্রতিটি কয়েনের মূল্য দেওয়া হল।
1. Bitcoin (BTC)
Price: $19.724
2. Ethereum (ETH)
Price: $1,453
3. Tether (USDT)
Price: $1.00
4. USD Coin (USDC)
Price: $1.00
5. BNB (BNB)
Price: $275.27
6. Binance USD (BUSD)
Price: $1.00
7. XRP (XRP)
Price: $0.3322
8. Cardano (ADA)
Price: $0.4619
9. Solana (SOL)
Price: $32.45
10. Dogecoin (DOGE)
Price: $0.05969
11. Polkadot (DOT)
Price: $6.86
12. Polygon (MATIC)
Price: $0.8017
ক্রিপটোকারেন্সির বৈশিষ্ট্য
- বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল মুদ্রা।
- পিয়ার টু পিয়ার ব্যবস্থা।
- লেনদেনের দ্রুততম প্রক্রিয়া।
- স্বতন্ত্র্য মালিকানা অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যবহারকারী তার ডিজিটাল মুদ্রার মালিক।
- একাউন্ট খুলতে নাম, ঠিকানা বা ব্যক্তিগত তথ্যের প্রয়োজন হয় না।
- ব্লকচেইনে জমা থাকা লেনদেনের তথ্য পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে দেখা যায়।
- অর্থ দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।
- সরকার কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
- ডিজিটাল মুদ্রা সংরক্ষণের জন্য কোন সংরক্ষণাগার নেই। তাই ব্যাকআপ না থাকলে কম্পিউটার ক্রাশের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত মুছে যেতে পারে।
- হ্যাকিং ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের হুমকি রয়েছে।
- ডিজিটাল অর্থ চুরির আশংকা থাকে।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলো সাইবার আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।