Android Appsসফটওয়্যার

থার্ড পার্টি অ্যাপ কি? : ন্যাটিভ অ্যাপ ও থার্ড পার্টি অ্যাপের পার্থক্য

থার্ড পার্টি অ্যাপ কি? : ন্যাটিভ অ্যাপ ও থার্ড পার্টি অ্যাপের পার্থক্য

আমরা সবাই প্রায় ” থার্ড পার্টি অ্যাপ ” টার্মটির সাথে পরিচিত। স্মার্টফোন, পিসি বা ল্যাপটপ ইত্যাদি সব ধরনের স্মার্ট ডিভাইস যেগুলোতে অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে সেখানেই এই থার্ড পার্টি অ্যাপ এবং ন্যাটিভ অ্যাপের বিষয়টি চলে আসে। যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশ ভালোভাবেই জানি যে, থার্ড পার্টি অ্যাপ কি এবং ন্যটিভ অ্যাপ কি এবং এই দুটির মধ্যে পার্থক্য কি, তবুও যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালভাবে জানেন না, তাদের জন্য আজকের লেখাটি। আজকে আলোচনা করবো, ন্যাটিভ অ্যাপ কি এবং থার্ড পার্টি অ্যাপ কি, কোণটির সুবিধা-অসুবিধা কি এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্যগুলো কি কি। তো, আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক। প্রথমেই জানা যাক,


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ন্যাটিভ অ্যাপ কি?

ন্যাটিভ অ্যাপগুলো মুলত সেই ধরনের অ্যাপ বা সার্ভিস যেগুলো তাদের অফিশিয়াল ডেভেলপারদের তৈরি করা। যেমন, ধরুন আপনার একটি ওয়েবসাইট বা একটি কোম্পানি রয়েছে। আপনি এখন চাইলেন যে আপনার ওয়েবসাইটটির জন্য বা আপনার কোম্পানির জন্য আপনি একটি স্মার্টফোন অ্যাপ তৈরি করবেন। এখন, আপনি যদি নিজে থেকেই নিজের সিলেক্ট করা ডেভেলপারদের দিয়ে অ্যাপ তৈরি করিয়ে আপনার ওয়েবসাইটটির বা কোম্পানির নামে অফিশিয়ালি পাবলিশ করেন, তাহলে সেটিই হবে আপনার ওয়েবসাইটের বা আপনার কোম্পানির ফার্স্ট পার্টি অ্যাপ বা ন্যাটিভ অ্যাপ। যেহেতু, অ্যাপ তৈরি, অ্যাপ পাবলিশ এই সবধরনের কাজ আপনি নিজের তত্ত্বাবধায়নেই করেছেন এবং আপনার কোম্পানির অফিশিয়াল নাম অনুযায়ী অ্যাপটি পাবলিশ করেছেন।

বিষয়টির উদাহরণ দেওয়া যায়, ফেসবুক দিয়ে। আমরা প্রায় সবাই ফেসবুক অ্যাপ ব্যাবহার করি। আমরা সবাই সবথেকে বেশি যে ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাপ। অফিশিয়াল বলতে, এই অ্যাপটি ফেসবুক কর্পোরেশনের নিজের তৈরি। নিজের তৈরি বলতে ফেসবুক কর্পোরেশনের নিজের অ্যাপ ডেভেলপারদের দ্বারা তৈরি। যেহেতু এই অ্যাপটি ফেসবুক নিজের তত্ত্বাবধায়নে তৈরি করেছে এবং এই অ্যাপটিকেই তাদের নিজেদের অফিশিয়াল অ্যাপ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই এটিই হচ্ছে ফেসবুকের ন্যাটিভ অ্যাপ বা ফার্স্ট পার্টি অ্যাপ। উল্লেখ্য, কোনও অ্যাপের ডেভেলপার ইনফরমেশনে চেক করে যদি দেখেন যে, অ্যাপের নাম অনুযায়ী ওই কোম্পানিটিই এই অ্যাপ ডেভেলপ করেছে, তাহলে সেটিই তার ন্যাটিভ অ্যাপ। যেমন, ফেসবুকের ন্যাটিভ অ্যাপ তৈরি করবে ফেসবুক কর্পোরেশন, তেমনি মাইক্রোসফট সার্ভিসগুলোর জন্য যেসব ন্যাটিভ অ্যাপ রয়েছে, সেগুলো তৈরি করবে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন।

থার্ড পার্টি অ্যাপ কি?

আপনি হয়ত দেখে থাকবেন যে কোনও অ্যাপের নামে প্লে স্টোরে সার্চ করলে সেটির অফিশিয়াল অ্যাপ ছাড়াও আরও অনেক ধরনের অ্যাপ খুঁজে পাওয়া যায় যেগুলো অন্যান্য অ্যাপ ডেভেলপারের তৈরি। যেমন, আপনি যদি টুইটার অ্যাপটির নামে প্লে স্টোরে সার্চ করেন, তাহলে টুইটার কর্পোরেশনের তৈরি টুইটার অ্যাপ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের টুইটার অ্যাপ পাবেন যেগুলো টুইটারের ডেভেলপ করা অ্যাপ নয়, বরং অন্যান্য ডেভেলপারের তৈরি যাদের টুইটারের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই। তারা টুইটারের  এপিআই ব্যবহার করে ওই একই ধরনের অ্যাপ তৈরি করেছে যেগুলোতে অফিশিয়াল টুইটার অ্যাপের তুলনায় অনেক বেশি ফিচার আছে বলে তারা দাবী করে থাকে। এই ধরনের অ্যাপগুলোই হচ্ছে থার্ড পার্টি অ্যাপ। এখানে টুইটারকে আমি শুধুমাত্র একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি। এই বিষয়টি প্রায় সব ধরনের অ্যাপ এর ক্ষেত্রে দেখা যায়। যেমন, আপনি থার্ড পার্টি ডেভেলপারের তৈরি ইন্সটাগ্রাম এবং ফেসবুক অ্যাপও পাবেন যেগুলোতে আরো বেশি ফিচার আছে বলে তারা দাবী করে। আবারও বলছি, এসব অ্যাপ থার্ড পার্টি কারণ, এগুলো ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম নিজে তৈরি করেনি।

আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আমরা জানি এখনকার নতুন অনেক স্মার্টফোনে এফ এম রেডিও অ্যাপ আগে থেকে ইন্সটল করা থাকেনা। তাই রেডিও শুনতে হলে আপনাকে প্লে স্টোরে গিয়ে সার্চ করে একটি রেডিও অ্যাপ ইন্সটল করে রেডিও শুনতে হবে। আপনি প্লে স্টোরে গিয়ে যে অ্যাপটি ডাউনলোড করবেন সেটিই থার্ড পার্টি রেডিও অ্যাপ। অথবা ধরুন, আপনার ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপটি আপনার কাছে ভালো লাগে না। তাই আপনি প্লে স্টোরে সার্চ করে আরেকটি মেসেজিং অ্যাপ ডাউনলোড করলেন যেটিতে আরও বেশি ফিচারস আছে। এই অ্যাপটিই হচ্ছে থার্ড পার্টি অ্যাপ। অর্থাৎ, কোনও কাজের জন্য বা কোনও সার্ভিসের জন্য আগে থেকেই ডেডিকেটেড অফিশিয়াল অ্যাপ থাকার পরেও একই কাজের জন্য থার্ড পার্টি ডেভেলপাররা যেসব অ্যাপ তৈরি করে, সেগুলোই হচ্ছে থার্ড পার্টি অ্যাপ।

সুবিধা-অসুবিধা

হ্যাঁ, ন্যাটিভ অ্যাপ এবং থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো ব্যবহার করার সুবিধা এবং অসুবিধাও রয়েছে। এবার জানা যাক প্রধান সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো কি কি।

ন্যাটিভ অ্যাপের সুবিধা-অসুবিধা

ন্যাটিভ অ্যাপ গুলো যেহেতু সরাসরি ওই সার্ভিসটির অরিজিনাল মালিকের দ্বারা বা সরাসরি ওই কোম্পানির তত্ত্বাবধায়নে তৈরি করা হয়ে থাকে, তাই এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ। কোম্পানিটি যদি ট্রাস্টেড হয় এবং অ্যাপটি যদি অফিশিয়াল হয় তবে এই অ্যাপটি আপনি নিশ্চিন্তে ব্যাবহার করতে পারবেন। আর, ন্যাটিভ অ্যাপগুলো থার্ড পার্টি অ্যাপের তুলনায় অনেক বেশি অপটিমাইজড হয় এবং নিয়মিত আপডেট করা হয়। তাই, যে সার্ভিসের জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করা হচ্ছে, ওই সার্ভিসে কোনও প্রকার চেঞ্জ করা হলে তা খুব দ্রুত অফিশিয়াল অ্যাপে আপডেট হয়ে যায়। ন্যাটিভ অ্যাপের তেমন বড় কোনও অসুবিধা নেই, তবে অনেকসময় দেখা যায় যে ন্যাটিভ অ্যাপ অনেকের ভালো লাগেনা, কারণ তা বোরিং বা ফিচারফুল নয়। এটিই থার্ড পার্টি অ্যাপ তৈরি হওয়ার একটি বড় কারণ।

থার্ড পার্টি অ্যাপের সুবিধা-অসুবিধা

থার্ড পার্টি অ্যাপগুলোর অসুবিধা তো আছেই, তবে কিছু সুবিধাও আছে। অসুবিধার কথা বলতে হলে, থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো যেহেতু সরাসরি ওই কোম্পানির দ্বারা তৈরি হয়না, তাই এটি ব্যবহার করা খুব বেশি নিরাপদ নয়। যদি ট্রাস্টেড ডেভেলপারের তৈরি থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার না করেন, তাহলে তা আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার অ্যাটাক পর্যন্ত করতে পারে এবং আপনার পারসোনাল ডাটা চুরি করতে পারে। এছাড়া থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো অফিশিয়াল অ্যাপের মত অপটিমাইজড হয়না এবং অনেক থার্ড পার্টি অ্যাপ অ্যাড ব্যাবহার করে সম্পূর্ণ ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে নষ্ট করে দেয়। এছাড়া, কোনও সার্ভিসের জন্য এমন কোনও থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যাবহার করা যাকে ওই কোম্পানিটি সমর্থন করেনা, তা আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য খারাপ হতে পারে। যেমন, স্ন্যাপচ্যাটের বারণ করা সত্তেও উইন্ডোজ ফোনে স্ন্যাপচ্যাটের  থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যাবহার করার কারণে, স্ন্যাপচ্যাট অনেক ইউজারের অ্যাকাউন্ট ব্যান করে দিয়েছে। তবুও ট্রাস্টেড থার্ড পার্টি ডেভেলপারের তৈরি অ্যাপ ব্যাবহার করার কিছু সুবিধাও আছে। যেমন, কিছু এক্সট্রা ফিচার পাওয়া। যেমন, থিম চেঞ্জ করা, অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন ইনফো অ্যাক্সেস করা এবং এই ধরনের আরও অনেক ফিচার যেগুলো ন্যাটিভ অ্যাপে সম্ভব না। কিন্তু খুব বেশি দরকার না হলে, থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যাবহার না করাই ভালো।


সহজ ভাষায় বলতে হলে,

কোনও সার্ভিস ইউজ করার জন্য ওই  কোম্পানির অফিশিয়াল ডেভেলপারদের তৈরি কোম্পানির নিজের ব্র্যান্ডেড অ্যাপগুলোই হচ্ছে ন্যাটিভ অ্যাপ বা ফার্স্ট পার্টি অ্যাপ।

আর, কোনও কাজের জন্য বা কোনও সার্ভিসের জন্য আগে থেকেই ডেডিকেটেড অফিশিয়াল অ্যাপ থাকার পরেও একই কাজের জন্য থার্ড পার্টি ডেভেলপাররা যেসব অ্যাপ তৈরি করে, সেগুলোই হচ্ছে থার্ড পার্টি অ্যাপ।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো প্রশ্ন  মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button