ক্রেডিট কার্ড হল ছোট আকারের প্লাস্টিক বা মেটালের কার্ড, যা অর্থের লেনদেনকে করে তুলেছে জলের মতো সোজা।
এই প্লাস্টিক বা মেটালের কার্ডগুলো আপনাকে আপনার সঞ্চয়কৃত অর্থের বিনিময়ে পণ্য ও পরিষেবা কেনার অনুমতি দেয়।
যাতে, আপনি সেই টাকাটা প্রতি মাসের শেষে আপনার ক্রেডিটদাতা কোম্পানিকে ফেরত দিতে পারেন ৷
এই কার্ডের সাহায্যে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডদাতার কাছ থেকে অর্থ ধার নিতে পারেন; কিংবা একটি সামান্য পরিমাণ নির্দিষ্ট অংকের অর্থ প্রতি মাসেও দিতে পারেন।
যদি, আপনি সামান্য পরিমাণ অর্থ দিতে থাকেন, তবে কিন্তু আপনার ধার করা অর্থের পরিমাণের উপর ব্যাঙ্কগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সুদ নিতে পারে।
প্রতিটা কার্ডদাতা ব্যাঙ্কের আপনার জন্যে ধার্য একটা ক্রেডিট সীমা থাকে।
আপনি কি নতুন ক্রেডিট কার্ড করতে চাইছেন ?
অথচ, আপনি বুঝতে পারছেন না, যে কোন ধরণের কার্ডটি আপনার জন্যে উপযুক্ত হবে ?
তাহলে, আপনি একদম সঠিক জায়গাতে এসেছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আপনার আলোচনা করতে চলেছি, ক্রেডিট কার্ড এর বিভিন্ন প্রকার গুলো কি কি?-এই বিষয়টি সম্পর্কে।
মূলত, একটা ক্রেডিট কার্ড বাছা কিন্তু বেশ গোলমেলে ব্যাপার হতে পারে।
আর, এই কারণেই আমরা বিভিন্ন কারণ ও চাহিদাগুলো বিবেচনা করে নানান ধরণের ক্রেডিট কার্ডগুলো সম্বন্ধে বিশদে আলোচনা করেছি।
ভারতের ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসিগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুসারে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে।
একই সময়ে, তারা প্রয়োজনে সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও কম বার্ষিক ব্যয়সহ সাধারণ ক্রেডিট কার্ডও দিয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার এর হয় ?
চলুন আর সময় নষ্ট না করে এবার আমরা সরাসরি Types Of Credit Cards এর বিষয়ে জেনেনেই।
১. লো-ইনকাম আর্নারের ক্রেডিট কার্ড:
যেসব মানুষের মাসিক আয় ২৫,০০০ টাকার নিচে তারা সহজেই এই কার্ডের জন্যে আবেদন করতে পারেন।
মূলত, এই কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে বার্ষিক ফী-এর অর্থের পরিমাণ অনেকটা কম থাকে।
কম বার্ষিক ফী হওয়া সত্ত্বেও, এই ধরণের ক্রেডিট কার্ডের যোগ্যতার শর্তাবলীগুলো যথেষ্ট সহজ হয়, আর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই কার্ডগুলো থেকে বেশ ভালো সুবিধাও পাওয়া যায়।
২. ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড:
যদি আপনাকে ঘনঘন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যাত্রা করতে হয়, তাহলে এই ধরণের ক্রেডিট কার্ড রাখা আপনার পক্ষে লাভজনক।
আপনি এই ক্রেডিট কার্ড থেকে এয়ারলাইন টিকিট বুকিংয়ে ছাড় পেতে পারেন।
এছাড়াও, এয়ারলাইন থেকে দেওয়া নানান বিশেষ পরিষেবা ও কম বৈদেশিক অর্থ লেনদেনের ফি, রেন্টাল পরিষেবা ও হোটেল বুকিংও ভালো ছাড় পেতে পারবেন।
এই কার্ডগুলো থেকে আপনি প্রতিটা খরচে ভালো রিওয়ার্ড পাবেন আর এই রিওয়ার্ডগুলো আপনি পরবর্তী বুকিংয়ের সময় ব্যবহার করতেও পারবেন।
আপনি এই কার্ডের সাহায্যে বাসের টিকিট, রেলের টিকিট, গাড়ি বুকিং ও অন্যান্য় ট্রাভেলিংয়ের খাতেও ছাড় পেতে পারেন।
৩. শপিং ক্রেডিট কার্ড:
আপনি কি শপিং-এর পোকা?
তাহলে, যত জলদি সম্ভব একটা shopping credit card নিয়ে ফেলুন।
আপনি যত কেনাকাটা করবেন, ততই আপনার কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্টস (reward points) জমা করতে পারবেন।
আর, এই পয়েন্টগুলো থেকে আপনি সহজেই বিভিন্ন ক্যাশব্যাক, ও কেনাকাটাতে ছাড় পেয়ে যেতে পারবেন।
আপনি online বা offline, যেখানে খুশি শপিং করুন, আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করলেই সারা বছর ধরে আপনি নানান ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন।
৪. এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড:
আপনার যদি মাঝেমধ্যেই বিদেশ সফর করতে হয়, তবে একটা এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্যে সুবিধাজনক অপশন হতে পারে।
সাধারণত, এই ধরণের ক্রেডিট কার্ডগুলোর সাথে বিভিন্ন এয়ারলাইন ব্র্যান্ড, যেমন- এয়ার ইন্ডিয়া, বিস্তার ও এতিহাদ এয়ারওয়েস ইত্যাদির সাথে সহ-ব্র্যান্ডিং করা রয়েছে।
যে কারণে, আপনি এই কার্ডগুলোর সাহায্যে এই এয়ারওয়েস গুলোর প্লেনের টিকিট বুক করলে আপনার রিওয়ার্ড পয়েন্টস বাড়ে।
আর, যার জন্যে আপনি এই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোর থেকে শ্রেষ্ঠ পরিষেবা, ভিআইপি পরিষেবা, লাউঞ্জ অ্যাক্সেস পেতে পারেন।
৫. রিওয়ার্ডস ক্রেডিট কার্ড:
কমবেশি সব ক্রেডিট কার্ডই অনলাইন বা অফলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে রিওয়ার্ডস পয়েন্ট দিয়ে থাকে।
তবে, রিওয়ার্ডস কার্ডগুলো বিশেষভাবে তৈরিই করা হয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যয়ের উপর বেশি রিয়ার্ডস পয়েন্ট ও এক্সট্রা পয়েন্ট সংগ্রহ করার জন্যেই।
এই রিওয়ার্ড পয়েন্ট আসলে হল আপনার আপনার ব্যয় করা অর্থের একটা অংশমাত্র।
তবে, আপনি সময়ের সাথে সাথে, এই পয়েন্টের ভিত্তিতে আপনি আপনার প্লেন যাত্রার খরচ, ভাউচার ও নানান খাতে টাকা দেওয়ার জন্যে ব্যবহার বা রিডিম করে নিতে পারেন।
৬. ক্যাশব্যাক ক্রেডিট কার্ড:
এই ধরণের কার্ড ব্যবহার করলে আপনি প্রতিটা লেনদেনে ক্যাশব্যাক পেয়ে যাবেন।
এই ধরণের কার্ডে কার্ডদাতা ব্যাংকগুলো আপনার কার্ডে স্টেটমেন্ট ক্রেডিট দেয়।
অর্থাৎ, এই স্টেটমেন্ট ক্রেডিট আপনার ক্রেডিট ব্যালান্স থেকে কেটে নেওয়া হলেও, এটিকে আপনার মাসিক নুন্যতম প্রদেয় অর্থের মধ্যে ধরা হয় না।
কিছু কার্ড সরাসরি ক্যাশব্যাক দিলেও, অনেক কার্ড আবার রিওয়ার্ড পয়েন্টের আকারে স্টেটমেন্ট ক্রেডিট হিসেবে ক্যাশব্যাক করে থাকে।
৭. ফুয়েল ক্রেডিট কার্ড:
এই ধরণের কার্ড থেকে আপনি আপনার গাড়ির জ্বালানি বাবদ যে খরচা করেন, সেখান থেকে কিছুটা পরিমাণ অর্থের ছাড় পেতে পারেন।
এই ছাড়গুলো আপনি পেতে পারেন ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট ও রিওয়ার্ড পয়েন্টের আকারে।
সাধারণত, ফুয়েল ক্রেডিট কার্ডের সাথে বিভিন্ন ফুয়েল ব্র্যান্ডগুলোর সহ-ব্র্যান্ডিং করা থাকে।
এই কারণেই, এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি জ্বালানি ক্রয়ের উপর ছাড় ও নানান রিওয়ার্ডস পেতে পারেন।
এমনকি, আপনি ভবিষ্যতের কোনো খরচেও এই পেয়েযাওয়া রিওয়ার্ড গুলো রিডিম/ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এন্টারটেইনমেন্ট ক্রেডিট কার্ড:
আপনি কি মুভি বাফ বা কনসার্ট প্রেমী?
তাহলে, এই ধরণের এন্টারটাইমেন্ট কার্ডগুলো আপনার বিনোদনমূলক খরচের জন্যেও আপনাকে রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে থাকে।
পিভিআর হোক কিংবা বুকমাইশো, এই ধরণের ক্রেডিট কার্ডগুলোর সাথে বিভিন্ন entertainment brands সহ-ব্র্যান্ডিং করা থাকে।
এরা, আপনার বিনোদন খাতে করা খরচের বিনিময়ে নানান ধরণের সুবিধা দিয়ে থাকে।
৯. সেক্যুরেড ক্রেডিট কার্ড:
সেক্যুরেড ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে আপনার ফিক্সড ডিপোজিটের আমানতকে সাক্ষী রেখে।
অর্থাৎ, এই কার্ড করার সময় আপনাকে অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ ডিপোজিট করে রাখতে হবে।
আপনার ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়ে থাকলে, এই কার্ডগুলো আপনার স্কোর বাড়াতে সাহায্য করবে।
ফিক্সড ডিপোজিট করা থাকায় এই ধরণের কার্ডগুলো অর্থ প্রদানকারীর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে:
ক্রেডিট কার্ডের জন্যে আবেদন করার আগে আপনার তা কেন প্রয়োজন, উদ্দেশ্য কি, কার্ডের বার্ষিক ফি, আর আপনার আবেদন করার যোগ্যতা– এই সমস্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখে নিলে, আপনি সহজেই আপনার জন্যে আদর্শ ক্রেডিট কার্ডটি বেছে নিতে পারবেন।
আজকে আমাদের ক্রেডিট কার্ডের প্রকার নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।