Technology

মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় কি?

দার্থ বিজ্ঞান ব্যবহার করে কীভাবে এটি সবকিছু পরিষ্কার করতে সক্ষম?

কোন কিছু পরিষ্কার করার কথা মাথায় আসতে প্রথমেই পানির নাম চলে আসে, আসলে পানি সত্যিই অসাধারণ জিনিষ যেটা নিজে থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে। পানির অণু গুলো বৈদ্যুতিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে থাকে, ফলে যেগুলো কিছুর সাথে ছোট ছোট চম্বুকের মতো লেগে যেতে পারে এবং ময়লা কোণা গুলোকে ভেঙ্গে দেয়। পানিকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়, কেনোনা এটি একসাথে অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে। অনেক সময় দেওয়ালে বা যেকোনো কিছুর উপর ময়লা এতোটা বেশি লেগে যেতে পারে যে পানি একা পরিষ্কারের কাজ করতে পারেনা, সেক্ষেত্রে আমরা ডিটার্জেন্ট বা ঐ টাইপের সাবান জাতীয় কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকি। ব্যাট সাবান বা ডিটার্জেন্টের আলাদা অনেক অসুবিধা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে আর্টিকেলের নিচের অংশে হালকা আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে পানি বা ডিটার্জেন্টের থেকেও ভালো পদ্ধতি রয়েছে, যেটা আরো বেশি দক্ষতার সাথে কোন কিছু পরিষ্কার করতে সক্ষম। আর এই টেকনোলোজির নাম মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় — যেটা কোন কিছু পরিষ্কার করতে আপনার জীবনকে অনেকবেশি সহজ করতে সক্ষম।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কাপড় কীভাবে পানি বা ডিটার্জেন্টের তুলনার বেশি পরিষ্কার করতে সক্ষম হতে পারে? এর পেছনের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি গুলো আসলে কি? — এই আর্টিকেলে আমরা এই প্রশ্ন গুলোরই উত্তর খুঁজে পাওয়া চেষ্টা করবো।


মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড়

ক্লিনিং এর জন্য অবশ্যই পানি সেরা, আর আমার কম্পিউটার স্ক্রীন মোছার আর্টিকেলেও বিষয়টি জোর দিয়ে বলেছি, কোন আলাদা ক্লিনার বা স্প্রের চাইতে ডিস্টিল ওয়াটার ব্যবহার করে মনিটর মোছা অনেক বেশি উপযোগী। তবে এখানে শুধু কম্পিউটার স্ক্রীন নিয়েই কথা বলবো না, পরিষ্কার করা আমাদের প্রতিনিয়ত জব, এই ধুলাবালির পৃথিবীতে যেকোনো জিনিষই ময়লা হয়ে যায়, আর সেটাকে পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়ে উঠে। ডিটার্জেন্ট বা সাবান জাতীয় কেমিক্যাল যদিও অনেক ভালো পরিষ্কারক হিসেবে প্রমানিত, কিন্তু এগুলো মানুষের স্কিনের সাথে এলার্জিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। সাথে পানি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই কেমিক্যাল গুলো, আর অস্বাস্থ্যকারক যে কতোটা সে ব্যাপারে না হয় এখানে আর আলোচনা করলাম না।

 

মনে করুণ, আপনি একটি বড় অপরিস্কার ওয়াল পরিষ্কার করতে চান, সেটা যতোদ্রুত করতে পাড়বেন ততোই ভালো, সেক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন? হ্যাঁ, আপনি টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু এতে সারাজীবন সময় লেগে যেতে পারে, আবার চাইলে বড় আকারের ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু বড় ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করাতে খুব বেশি সুবিধা করতে পাড়বেন না। আবার বিশাল আকারের কাপড় ব্যবহার করতেও সুবিধা করতে পাড়বেন না। কিন্তু মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় ব্যবহার করে অনেক ছোট পরিমাণের কাপড়ে অনেকবেশি ফল অর্জন করা সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় বেটার ক্লিনিং করতে সক্ষম? — এদের নাম থেকেই ধারণা পাওয়া যায়, এই টাইপের কাপড় আসলে মাইক্রো বা অতিক্ষুদ্র ফাইবারের গঠিত হয়ে থাকে, ফলে এই কাপড় কোন ময়লা বা নোংরার অতি ক্ষুদ্র অংশকে আটকিয়ে দিতে পারে, যেগুলোকে সাধারণ কাপড় বা ব্রাশ আটকাতে পারে না। যদি কথা বলা হয় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ স্ক্রীন নিয়ে তো এক্ষেত্রে এগুলোতে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ময়লা কণিকা লেগে থাকতে পারে, সাথে এমন কিছুদিকে স্ক্রীন পরিকার করা যাবে না যাতে স্ক্রীনের উপর বিশাল প্রেসার পড়ে। ব্রাশ বা অন্য কাপড়ের রুক্ষ আঁচর সহজেই স্ক্রীনের ক্ষতি করতে পারে, এই ক্ষেত্রে মাইক্রোফেব্রিক কাপড় অনেক বেটার জব পালন করে থাকে, একে তো ময়লার অত্যন্ত ক্ষুদ্র পার্ট গুলোকে সহজেই ক্যাপচার করতে পারে, দ্বিতীয়ত এর কোমল পরশ মোটেও আপনার স্ক্রীনের কোন ক্ষতি করে না।

মাইক্রোফাইবার কাপড়ের গঠন

পূর্বেই বলেছি, এই কাপড়ে মাইক্রো বা অত্যন্ত ক্ষুদ্র আকারের ফাইবার ব্যবহার করা হয়, যাতে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ময়লা কণিকা এতে ফেঁসে যেতে পারে এবং পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। সাধারণ মাইক্রোফেব্রিক কাপড় গুলোতে যে ফাইবার ব্যবহার করা হয় তা মানুষের চুলের তুলনায় ১০-১৫ ভাগ সময় বেশি পাতলা হয়ে থাকে — মানে প্রত্যেকটি মাইক্রোফাইবার মোটামুটি ৩-৫ মাইক্রোমিটার বিশিষ্ট হয়ে থাকে। মানে এটি মোজার ফাইবার থেকে ৫০গুন পাতলা হয়। সাথে লোহিত রক্ত কণিকা থেকেও পাতলা হয়ে থাকে, যেটা কেবল ১০-৩০ মাইক্রন আকারের হতে পারে। এই ফাইবার গুলো অনেক ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও ছোট বা সমান হয়ে থাকে, সাধারণত ব্যাকটেরিয়া গুলো ১-৫ মাইক্রন বিশিষ্ট হয়ে থাকে, তবে এটি ভাইরাস থেকে বড় হয়, কেনোনা অনেক ভাইরাসের সাইজ কেবল ০.৫ মাইক্রন।

 

যদিও মাইক্রোফাইবার কাপড় তার ফাইবারের চেয়ে ছোট আকারের কিছু পরিষ্কার করতে পারে না, কিন্তু তারপরেও যেহেতু এটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া সাইজের হয়ে থাকে, তাই সহজেই ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মুছে ফেলতে পারে। এই জন্য এই টাইপের কাপড়কে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল কাপড় বলা হয়ে থাকে। অনেক কোম্পানির মডার্ন মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় এ ব্যবহৃত ফাইবার মানুষের চুলের ২০০ ভাগের ১ ভাগ পাতলা হয়ে থাকে, মানে মুটামুটি ০.৩৩ মাইক্রনের মতো। এই টাইপের কাপড় গুলো মোটামুটি ৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং অনেক টাইপের ভাইরাসের উপর কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম। মাইক্রোফেব্রিক কাপড়ের পরিষ্কার করার গুন ছাড়াও আরো অনেক গুন রয়েছে, তাই হসপিটালে এই জাতীয় কাপড়ের অনেক ব্যবহার দেখতে পাওয়া পায়।


এখন অনেকেই হয়তো বলবেন, যদি মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং কাপড় এতোবেশি উপকারি হয়ে থাকে, তাহলে কেন বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি? — দেখুন, পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য কেমিক্যাল কোম্পানি রয়েছে যারা তাদের ক্লিনিং কেমিক্যাল মার্কেটিং করাতে লাখো কোটি খরচ করে চলেছে, আর সেগুলোকে মানুষ বহু দশক থেকে ব্যবহার ও করে আসছে। আমাদের দেশে ক্লিনিং এর জন্য মাইক্রোফেব্রিক এতোটা জনপ্রিয়তা না পেলেও ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রতে এর বিস্তর ব্যবহার রয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটি কিন্তু মাইক্রো টেকনোলজি, আবার ন্যানো টেকনোলজি এর সাথে যেন তুলনা করবেন না। আর এটি কোন ম্যাজিক নয়, এটা ব্যাস বিজ্ঞান এর আরেকটি উপহার!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button