ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কুকিজ (Cookies) কি? | এর উপকারিতা এবং অপকারিতা

তৃতীয়পক্ষ কুকিজ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?

ইন্টারনেট কুকিজ সম্পর্কে আপনারা সকলেই হয়তো কোথাও না কোথাও দেখেছেন। যেকোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারে হয়তো অ্যালাউ কুকিজ বা ডিলিট কুকিজ বা ডিসঅ্যাবল কুকিজ ইত্যাদি অপশন গুলো দেখে থাকবেন। কিন্তু এর মানে টা কি? এটি কীভাবে কাজ করে বা কি এর উপকারিতা বা অপকারিতা তা আজ জানবো এই পোস্টে। বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশের আগে জেনে রাখুন যে এই কুকিজ কিন্তু খাওয়ার কুকিজ নয় 😛


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ইন্টারনেট কুকিজ (Cookies) কি?

চলুন সর্বপ্রথম কথা বলি এই কুকিজ আসলে কি, তা নিয়ে। কুকিজ আসলে কিছু ফাইল, যেগুলো আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারের ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়। এখন এই ফাইল গুলো আসে কোথা হতে, দেখুন যখনই আপনি কোন কুকি এনাবল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন এবং আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে যদি কুকি এনাবল করা থাকে তবে সেই ওয়েবসাইট টি আপনার ব্রাউজার ক্যাশে কুকিজ ড্রপ করে দেয়। কুকিজ সাধারনত আপনার ইন্টারনেট সেবার মানকে উন্নতি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মনে করুন আপনি অ্যামাজন বা ইবেয় এর মতো কোন ই-কমার্স সাইটে গেলেন বা কোন টিকিট বা হোটেল বুকিং এর সাইটে গেলেন তো এইসব সাইট আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে তাদের কুকিজ বসিয়ে দেবে। এখন এই কুকিজ বসানোর পরে আপনি সেই সাইট গুলোতে গিয়ে কি কি প্রোডাক্ট বা প্লেস সার্চ করলেন বা কোন আইটেম বেশি সময় ধরে দেখলেন আর কোন আইটেম কম সময় ধরে, এই সমস্ত ডাটা গুলো আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার কুকিজের মাধ্যমে সেই ওয়েবসাইট টির কাছে লাগাতার পাঠাতে থাকে। যাতে আপনি যদি পরবর্তীতে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন তবে সেই ওয়েবসাইট টি আপনাকে রেকমেন্ড রেজাল্ট দেখাতে পারে। মনে করুন আপনি গতবার অ্যামাজনে একটি ব্র্যান্ডের ঘড়ি সার্চ করেছিলেন এবং কুকিজের মাধ্যমে সেই ডাটা গুলো অ্যামাজনের কাছে চলে গেছে এবার এখন যদি আবার অ্যামাজন ভিসিট করেন তবে আপনাকে আরো ঐরকম ঘড়ি দেখানো হবে আপনাকে একই দাম রেঞ্জের আরো প্রোডাক্ট দেখানো হবে ইত্যাদি।

ইন্টারনেট কুকিজ সাহায্য করে আপনার ভিসিট করা অনুসারে এবং আপনার সেই সাইট টির উপর করা কার্যকলাপের উপরে আপনার জন্য সেবার মান উন্নয়ন করতে। তো এতো অবশ্যই ভালো কথা। আপনি হয়তো প্রথমবারের মতো কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে কিছু সার্চ করেছিলেন বা কিছু সেটিংস তৈরি করেছিলেন তো সে গুলো কুকিজ এর সাহায্যে আপনি দ্বিতীয়বার যখন সেখানে যাবেন তো সব কিছু আগের মতো পেয়ে যাবেন। আবার আপনি হয়তো কোন ওয়েবসাইটে লগইন করে আছেন আপনার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে, আপনার ব্রাউজারে যদি আইডি এবং পাসওয়ার্ড সেভ করা থাকে তাহলে সেটি আলাদা কথা কিন্তু সেই ওয়েবসাইট টি যদি কুকিজ এনাবল হয় তবে আপনি ভুল করে সেই উইন্ডোটি ক্লোজ করে দিলেও কুকির সাহায্যে আপনার আইডি এবং পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবেন।

কুকিজের খারাপ দিক

এতোক্ষণের আলোচনায় ইন্টারনেট কুকিজ নিয়ে ভালো বিষয় গুলো জানা গেলো এবং আমরা জানলাম যে কীভাবে এই কুকিজ আমাদের ইন্টারনেট সেবার মান উন্নয়ন করে থাকে। কিন্তু কিছু লোক চিন্তা করেন যে কুকিজ তাদের ব্যাক্তিগত ডাটা এবং ইন্টারনেট কার্যকলাপের ডাটা গুলো চুরি করছে। তো চিন্তার কোন কারন নেই এরকম ভয় থাকলে আপনি কুকিজ ডিসঅ্যাবল করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবিক দিক থেকে দেখতে গেলে এই কিছু লোকের ভীতিকর আসঙ্খা একদম ঠিক।

এবং সবচাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো তৃতীয়পক্ষ কুকিজ। বন্ধুরা আপনারা হয়তো লখ্য করে থাকবেন যে অনেক ওয়েবসাইটে অনেক ধরনের অ্যাড চলে থাকে। এদের মধ্যে কিছু পপআপ অ্যাড থাকে যেখানে ক্লিক করা মাত্র ৮-১০ টি ব্রাউজার উইন্ডো স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যায়। এখন ঐ স্বয়ংক্রিয় উইন্ডোতে খোলা ওয়েবসাইট গুলো যদি আপনার ব্রাউজারে কোন তৃতীয়পক্ষ কুকিজ প্লান্ট করে দেয় তবে আপনার সকল অনলাইন নিরাপত্তা ধ্বংস হতে পারে।

দেখুন আপনার ব্রাউজারে যে কুকি গুলো থাকে তা ইনক্রিপটেড অবস্থায় থাকে না। অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকা ইন্টারনেট কুকিজ গুলো সাধারন আকারে থাকে এতে কোন ইনক্রিপশন করা থাকে না [জানুনঃ ইনক্রিপশন কি, এবং কীভাবে কাজ করে?]। যদিও কুকিজে আপনার আইডি পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য বিবরণ সংরক্ষিত থাকেনা কিন্তু আপনার লগইন সেশন সেভ করা থাকে কুকিতে। যদি কোন বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের বিশ্বস্ত কুকিজ হয় তবে সেটি তো ভালো কথা এবং এটি শুধু নির্দিষ্ট কিছু ডাটা আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে সেই ওয়েবসাইট টির কাছে পৌছিয়ে দেয়। কিন্তু তৃতীয়পক্ষ কুকিজ শুধু একটি সাইটের ডাটা নয় বরং আপনার ভিসিট করা সকল ইন্টারনেট ডাটা কোন তৃতীয়পক্ষ ওয়েবসাইটের কাছে পৌঁছে দেয়। তাছাড়াও আপনার সকল অনলাইন লগইন সেশনও চুরি করে নিয়ে যায়। এখন অনলাইন সেশন কি, দেখুন আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে আপনার আইডি এবং পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়ে লগইন করেন তখন সেই ওয়েবসাইট টিতে আপনার একটি লগইন সেশন তৈরি হয়। এবং এই সেশন সেই ওয়েবসাইট টি আপনার ইন্টারনেট কুকিজ টিতে সেভ করে রাখে। যদি কেউ আপনার সেই কুকিটি চুরি করে নিজের ব্রাউজারে বসিয়ে দেয় তবে সেই ওয়েবসাইট টিতে লগইন করার জন্য তার আর কোন আইডি বা পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন পড়বে না। অনেক সময় দেখে থাকবেন যে একবার আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এ লগইন করার পরে যদি লগআউট না করা হয় তবে পরের বার প্রবেশ করলে লগইন করার জন্য আর আইডি এবং পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন পড়ে না। আপনি সেখানে স্বয়ংক্রিয় ভাবে লগইন হয়ে যান। কারন ফেসবুক আপনার লগইন সেশন আপনার ব্রাউজারে অবস্থিত ইন্টারনেট কুকিজে সেভ করে রাখে।

তাছাড়াও কোন লগইন সেশনে আপনি যদি আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, আপনার ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য গুলো প্রবেশ করিয়ে থাকেন তবে সেগুলো তথ্যও তৃতীয়পক্ষ কুকিজ বড়ই আরামে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।

তৃতীয়পক্ষ কুকিজ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?

এ থেকে বাঁচার জন্য আপনার অপশন হলো আপনার ওয়েব ব্রাউজারের সেটিংস অপশনে যান এবং সেখানে একটি অপশন আছে “ব্লক অল কুকিজ” সেটি এনাবল করে নিন। এর মানে হলো আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার সকল প্রকারের ওয়েবসাইটকে কুকিজ প্লান্ট করা থেকে বাধা প্রদান করবে, সেটা বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট হোক আর তৃতীয়পক্ষ কোন ইন্টারনেট কুকিজ হোক। যারা ইন্টারনেট এর উপর ভরশা করতে পারেনা না বা যারা সবসময় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এটি তাদের জন্য সর্বউত্তম একটি অপশন হবে।

তাছাড়াও আরেকটি অপশন থাকে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে “ব্লক থার্ড পার্টি কুকিজ”। এর মানে হলো যে কুকিজ গুলো কোন সাধারন ওয়েবসাইট থেকে আসে আপনার সেবার মান উন্নয়ন করানোর জন্য সেগুলো তো ঠিক আছে, কিন্তু যে কুকিজ গুলো তৃতীয়পক্ষ কোন ওয়েবসাইট থেকে আসে বিজ্ঞানপনের মাধ্যমে বা কোন পপআপ অ্যাড এর মাধ্যমে সেগুলোকে ব্লক করে দেয়।

আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে আরেকটি অপশন আছে যেটি চালু করলে আপনার ব্রাউজারে কোন কুকি প্লান্ট হওয়ার আগে আপনার কাছ থেকে বারবার অনুমতি চাওয়া হবে। মনে করুন আপনি যে কোন একটি ব্রাউজারের মাধ্যমে যেকোনো একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেন, সে অবস্থায় আপনার ব্রাউজার আপনাকে জিজ্ঞাস করবে যে ঐ ওয়েবসাইট টির জন্য কি আপনি কুকিজ এনাবল করতে চাচ্ছেন কিনা। যদি ইচ্ছা হয় তো এনাবল করতে পারেন আর যদি ইচ্ছা না করে তবে ইগনর করতে পারেন।

পরিশেষে আরেকটি অপশন হলো অ্যাড ব্লক এক্সটেনশন ব্যবহার করা। এই প্রকারের এক্সটেনশন প্রায় সকল প্রকার ব্রাউজারের জন্য প্রাপ্য। এই এক্সটেনশনটি ব্যাবহারে আপনি বিরক্তিকর পপআপ অ্যাড এবং তৃতীয়পক্ষ কুকিজ থেকে বাঁচতে পারেন। এবং আপনার ব্রাউজারে ওয়েব পেজ অনেক ফাস্ট লোড হবে। কিন্তু আরেকটি কথা, অ্যাড ব্লক এক্সটেনশন ব্যবহার করা মানে কিন্তু ইন্টারনেট কনটেন্ট ম্যাকারদের সাহায্য করবেন না বলে ঠিক করে ফেলা। যারা তাদের ব্লগে বা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে উপার্জন করেন তাদের জন্য আপনার এই অ্যাড ব্লক এক্সটেনশন ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই আমার মতে যে ওয়েবসাইট গুলো বিরক্তি অ্যাড বা অধিক পপআপ অ্যাড ব্যবহার করে সেগুলোকে ব্লক রেখে আপনার বিশ্বস্ত এবং পছন্দের ওয়েবসাইট গুলোকে হোয়াইট লিস্ট করে রাখা উচিৎ। এতে আপনার সাথে সাথে কনটেন্ট ম্যাকাররাও কিছু উপকৃত হতে পারবেন।

শেষ কথা

আশা করি ইন্টারনেট কুকিজ কি, কীভাবে কাজ করে এবং এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণে আপনি সবকিছু জেনে গেছেন। কোন বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে কুকিজ আসছে তো ভালো কথা কিন্তু ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট বা পপআপ অ্যাড থেকে আসা কুকিজ ব্লক করায় আপনার নিরাপত্তার জন্য সঠিক বাবস্থা হবে। কেনোনা আপনি একদমই জানেন না যে তৃতীয়পক্ষ কুকি গুলো আপনার কোন তথ্য গুলো কীভাবে চুরি করে নিয়ে যাবে। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন। এবং আপনার কোন অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকলে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button