Life Style

জীবনে উন্নতি করার সেরা উপায় | কিভাবে জীবনে উন্নতি করা যায়

কিভাবে জীবনের উন্নতি করতে পারবেন ?

আমাদের জীবনে আমরা প্রত্যেকেই চাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উন্নতি করতে। এই উন্নতি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হয়।

তাই বলাই যায় যে আমাদের জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র, প্রতিটি ধাপে লড়াই করে তবেই আমরা একদিন সফল হতে পারি।

এই সফলতার জন্য আমাদের দরকার মানসিক শক্তি বা ইচ্ছা শক্তি।

এই শক্তি আমাদের প্রত্যক্ষ ভাবে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

কিন্তু  সব ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাস একরকম থাকে না। কখনো কখনো আমরা সফলতার কোনো একটি পর্যায়ে এতটাই আত্মহারা হয়ে যাই যে খুব শীঘ্র আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাই আবার কখনো কখনো হতাশা আমাদের ইচ্ছাশক্তির অবনতি ঘটায়।

তাই আমাদের কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত যা আমাদের উন্নতির পথ সুগম এবং উন্নতির লক্ষ্যে অবিচল রাখবে।

Post Contents

জীবনে উন্নতি করার উপায় এবং টিপস গুলো – (সেরা ১০ টি)

এখানে আমরা জীবনে উন্নতি করার সেরা ১০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

নিজের উপর বিশ্বাস রাখা

আমাদের প্রথমেই যে বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখা দরকার সেটি হল আমাদের বিশ্বাস। নিজেদের উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। এই পৃথিবীতে কোন মানুষ সম্পূর্ণ রূপে নিখুঁত নয় বা সবাই সব কাজের উপযোগী নয়।

কিন্তু আত্মবিশ্বাসের দ্বারাই আমরা আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারি এবং নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে পারি।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন দুর্বলতার চিন্তা না করে শক্তি বৃদ্ধির চিন্তাই প্রকৃষ্ট উপায়।

অনেকেই প্রশ্ন করেন দৈহিক শক্তির থেকেও কি আত্মবিশ্বাস অধিক শক্তিশালী ? হ্যাঁ।

এটি সত্য, আত্মবিশ্বাস দৈহিক শক্তির থেকেও বেশি শক্তিশালী।

স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই সেই সম্ভবনা আছে যা আত্মবিশ্বাস দ্বারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

ভয়ঙ্করের মুখোমুখি আমাদের দাঁড়াতে হবে এবং সাহসের সঙ্গে তার সম্মুখীন হতে হবে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির কয়েকটি উপায় হল –

১. আমাদের জীবনে চলার পথে উন্নতির পথে ভয় না পাওয়ার মানসিকতাকে জাগিয়ে তোলা।

২. কোনো কারনে ব্যর্থ হলে হতাশ না হওয়া।

৩. গঠনমূলক চিন্তা করা।

৪. অশুভ চিন্তাকে মন থেকে সম্পূর্ণ দূর করা।

৫. নিজেকে অপরের থেকে ছোট না ভাবা।

মনের একাগ্রতা

আত্মবিশ্বাসের পর আমাদের প্রয়োজন মনের একাগ্রতা। একাগ্রতা জ্ঞানলাভের একমাত্র উপায়।

মনঃসংযম বৃদ্ধি পেলে একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।

শুধু তাই নয়  মন শান্ত হয়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, আয়ত্ত করার ক্ষমতা বাড়ে, স্নায়ু স্নিগ্ধ ও সবল হয়, চিন্তাশক্তি বাড়ে, সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা বাড়ে।

একাগ্রতার প্রয়োজনীয়তা কি ?

আমরা কোনো কাজে যত একাগ্র হব তত কাজটি ভালো ভাবে সম্পন্ন হবে।

তেমনই জীবনে উন্নতির লক্ষ্যে আমরা যত একাগ্র হব উন্নতির পথ তত সহজ হবে।

ধৈর্য্য না হারানো

এখনকার দিনে বেশির ভাগ মানুষই ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে পড়েন।

জীবনে উন্নতি লাভের জন্য আমাদের ধৈর্য্য রাখা আবশ্যিক। চলার পথে বাধা আসবেই। সব বাধা কাটিয়ে আমাদের যেতে হবে।

জীবন হল প্রবহমান নদীর মতো।

বাধা বিপত্তি আমাদের গতিরোধ করতে চাইবে কিন্তু ধৈর্য থাকলে আমরা তা সহজে অতিক্রম করতে পারব।

যার ধৈর্য্য বেশি তার সফলতা তত বেশি।

প্রাত্যহিক অভ্যাস

অভ্যাস আমাদের নিখুঁত করে তোলে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ডেমোস্থিনিস নামের ভদ্রলোক ছিলেন তোতলা। যখনই তিনি কথা বলতেন কথা আটকে যেত এবং শব্দগুলো স্পষ্ট উচ্চারণ হত না।

কিন্তু তাঁর ইচ্ছে ছিল বাগ্মী হওয়ার।

ডাক্তারের পরামর্শে তিনি জিভের তলায় একটুকরো নুড়ি রেখে বক্তৃতা অভ্যাস করতেন।

অভ্যাস এবং ধৈর্য্য তাঁকে একদিন সফল বাগ্মী করে তুলেছিল।

এক হাজার বার ব্যর্থ হয়েও টমাস আলভা এডিসন থেমে যাননি। যার ফলশ্রুতিতে এক হাজার এক তম বারে তিনি লাইট বাল্ব তৈরিতে সক্ষম হন।

অধ্যাবসায়

উন্নতির লক্ষ্যে আর একটি বিষয় হল অধ্যাবসায়। ইংলিসে একটি প্রবাদ আছে “when you come to the bridge you will cross the bridge.”

অধ্যবসায় হল কোনো কাজে অবিরাম উৎসাহ, নিরবিছিন্ন উদ্যম।

যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য চাই অধ্যবসায়। কথামৃতের একটি গল্পে আছে, এক বনে এক কাঠুরিয়া সারাদিন কাঠ কেটে সেই কাঠ বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করত।

একদিন বনের মধ্যে এক সাধুর সঙ্গে তার আলাপ হল, সাধু তার অবস্থার উন্নতির জন্য তাকে ক্রমশ এগিয়ে যাবার কথা বললেন।

সাধুর পরামর্শে সে গাছ কাটতে কাটতে এগিয়ে যেতে লাগল। এইভাবে সে একদিন চন্দনের জঙ্গল দেখতে পেল।

চন্দন গাছ বিক্রয় করে তাঁর অবস্থার উন্নতি ঘটল, কিন্তু সে থেমে থাকল না।

সাধুর উপদেশ মতো সে এগিয়ে যেতে লাগল। এইভাবে একদিন সে তামার খনি পেল।

আরো এগিয়ে যেতে যেতে সে রূপার খনি, সোনার খনি, হীরের খনি পেল।

যদি সে চন্দনের বনেই থেমে যেত তাহলে সে তামার খনি পেত না।

বা তামার খনিতে আটকে গেলে হীরের খনিতে পেত না।

আমাদের জীবনের উন্নতির মূল মন্ত্র হল এগিয়ে যাওয়া।

এই এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাই অধ্যবসায়। কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে অধ্যবসায় আমাদের সাফল্যে পৌছে দেয়।

জীবনের উৎসাহ

আরও যে বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে তা হল উৎসাহ।

আমাদের মন হল চিরসবুজ। উৎসাহ না থাকলে কাজ করার ইচ্ছে থাকে না।

ছোটোবেলায় আমরা প্রায় প্রত্যেকেই শুনতাম –  “জলে না নামিলে কেহ শেখে না সাঁতার, হাঁটিতে শেখে না কেহ না খেয়ে আছাড়।”

জীবনের চলার পথে আছাড় খাবো, আবার উঠে দাঁড়াবো তবেই তো চলার মজা।

নতুন কিছু করার, অজানাকে জানবার, অচেনাকে চেনবার মূলে হচ্ছে উৎসাহ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৬৫ বছর বয়সে তুলি ধরেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৬০ বছর বয়সে লিখতে আরম্ভ করেন অথচ শৈশব এবং কৈশোরের একটা দীর্ঘ সময় তাঁর লেখনীর যাদুতে আমরা মেতে থাকতাম।

বুড়ো অ্যাংলা, ভূত পরীর দেশে, নালক, ক্ষীরের পুতুল, রাজকাহিনী, আরো কত, ভাবা যায় এই মানুষটি ৬০ বছর বয়সে লিখতে আরম্ভ করেন।

এর মূলেও কিন্তু সেই উৎসাহ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবন ঠাকুরের লেখা পড়ে বলেছিলেন- “এ লেখা নয় এ হল আঁকা”। অবন ঠাকুর গল্প আঁকতেন। তাহলে দেখাই যাচ্ছে জীবনে উন্নতির জন্য চাই উৎসাহ।

উদ্যোগ ও উদ্যম

উৎসাহের সঙ্গে যে দুটো শব্দ উচ্চারিত হয় তারা হল উদ্যোগ এবং উদ্যম।

শুধু উৎসাহ থাকলেই হবে না চাই উদ্যোগ আর উদ্যম।

উৎসাহ পেলাম কিন্তু উদ্যোগ এর অভাবে দেখা গেল  সফলতা এল না।

একটা উদাহরণ দিই। এক পথিক এক পথচারীকে দু তিন বার জিজ্ঞাসা করল মশাই ওই গ্রামটি কত দূরে ? পথচারী ব্যক্তিটি কোনো জবাব দিলেন না।

পথিক বিরক্ত হয়ে যখন হাঁটা লাগাল তখন পথচারী বললেন ওই গ্রামটি এই দিকে।

পথিক তখন বলল মশাই এর আগে তো কই বললেন না? তখন পথচারী বললেন,  “দেখ তখন তোমার ওই গ্রামে যাবার উৎসাহ ছিল কিন্তু তোমার মধ্যে কোনো উদ্যোগ ছিল না তাই বলিনি।

এখন তোমার মধ্যে উদ্যোগ এসেছে তাই বললাম।” শুধু উৎসাহ নয়। উদ্যোগ ও চাই। উৎসাহের ফলাফল হল উদ্যোগ।

কর্মদক্ষতা

কারোও মধ্যে খুব উৎসাহ আছে, উদ্যোগের অভাবও নেই কিন্তু সে কি সেই কাজের যোগ্য? তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যেকোনো কাজে দক্ষতার একটা আলাদাই গুরুত্ব।

জীবনের লক্ষ্যেও তেমনি আমাদের নিজেদের কাজে দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা না থাকলে সফলতা আসে না।

দক্ষতা আসবে কি করে ?

দক্ষতা আসবে একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমী মনোভাব থেকে।

পরিশ্রমী মনোভাব

সফল হতে গেলে পরিশ্রমী মনোভাব থাকা আবশ্যক। না খেটে সোনা পাওয়া যায় না।

আজকের প্রতিযোগীতার বাজারে পরিশ্রমী মনোভাব আমাদের বিপুল ভাবে সাহায্য করে।

এই পরিশ্রম শুধু শারীরিক নয় বরং শারীরিক এবং মানসিক।

ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন কোনো বিষয় শুধু বুঝলেই চলে না, তার সঙ্গে সঙ্গে অনুশীলন করতে হয় তবেই পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। তেমনই সফল হতে গেলে পরিশ্রম করতে হবে।

সততা ও নিষ্ঠা

আমাদের সবার লক্ষ্য সফলতা। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আমরা সফলতার জন্য কোনো অসাধু পথ যেন অবলম্বন না করি। সৎ আচরণ হল ভদ্রতার লক্ষণ। সৎ আচরণের জন্য চাই সঠিক আদর্শ।

কি উপায়ে আমরা সৎ হতে পারি? আমাদের বাড়ির গুরুজনেরা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষিকারা ছোটোবেলায় আমাদের যে উপদেশ গুলো দিতেন আমাদের জীবনে সেই সব উপদেশ মেনে চলা উচিত।

আমাদের প্রতিটি কাজ সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে করা উচিত। প্রতিটি ছোটো ছোটো ক্ষেত্রে সফলতা আমাদের বড়ো সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ উপায় টি হল সঠিক কার্যক্রম

ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলির দিকে বিশেষ করে খেয়াল রাখা দরকার সেগুলি হল –

১. জীবনের লক্ষ্য স্থির করা।

২. সেই লক্ষ্যে নিজেকে স্থির রাখা, সহজ ভাবে বলতে গেলে প্রত্যয়ী থাকাটা খুব দরকার।

৩. নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকার জন্য নিজেকে উৎসাহ দেওয়া।

৪. নিজেকে বিচার করতে হবে কোনগুলি করণীয় কোনগুলি করণীয় নয়। বিচার করার ক্ষমতা না থাকলে সফলতা আসবে না।

আমরা প্রতেকেই জীবনে সফলতা চাই।

তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে উপরিউল্লিখিত বিষয়গুলির দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের শেষ কথা,,

প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের মনের ভয়, দুর্বলতা আমাদের পিছুটান সৃষ্টি করবে, আমরা হয়তো সবক্ষেত্রে জয়ী না হতেও পারি তখন ভেঙে পড়লে চলবে না।

সফলতার দৌড়ে আগুপিছু থাকবেই। জীবনটা লম্বা সফর তাই হাল ছাড়লে চলবে না।

পিছিয়ে গেলেও অসীম সাহস নিয়ে গাইতে হবে –

“আমি ভয় করব না ভয় করব না।

দুবেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না।

তরীখানী বাইতে গেলে —

মাঝে মাঝে তুফান মেলে—

তাই বলে হাল ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটি করব না”

(কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

তাহলে আশা করছি, জীবনে উন্নতি করার উপায় বা কিভাবে জীবনে উন্নতি করা যায় এই বিষয়টি আপনারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পেরেছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button