GoogleTechnology

ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন বা গুগল কীভাবে কাজ করে? বিস্তারিত জানুন

সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে?

অনেক অনেক দিন আগে যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে প্রায়ই দুজন মানুষের মধ্যে ঝগড়া লেগে যেতো, যেমনঃ কে ১৯৮০ সালের সর্বাধিক জনপ্রিয় শিল্পী? কেও বলে অমুক তো আবার কেও বলে তমুক। দুই জনের চুল ছেরাছেরি শেষ হলে কোনো তৃতীয় পক্ষকে জিজ্ঞাসা করা হতো। তৃতীয় পক্ষের উত্তর যদি সন্তোষজনক না হতো তবে বই বের করা হতো খবরের কাগজ দেখা হতো! উফফ… হয়েছে আপনার? বুঝছি তো আমরা! এটাই মনে হচ্ছে তাই না? হাঁ, কিন্তু বর্তমান সময়ে কি মোটেও তা করা হয়? ইন্টারনেট এর জনপ্রিয়তা পাবার পরে মানুষের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর এখন সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে থাকে।

আপনার কোনো তথ্যের দরকার বা কোনো ঠিকানা খুঁজছেন বা ক্রিকেট ম্যাচ শিডিউলটি দরকার তো জাস্ট বিং করে ফেলুন। আর সব হর হর করে আপনার কাছে চলে আসবে। উপস… 😛 বিং বলে ফেলেছি না? আসলে গুগল করে ফেলুন, আর সব তথ্য পেয়ে যাবেন। তো এ তো সহজ কথা, এটা নিয়ে আবার পোস্ট করার কি আছে? হাঁ, মানছি যে এটা খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু আপনি জানেন কি এই ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুলো কীভাবে কাজ করে। সার্চ ইঞ্জিন গুলো এতো বুদ্ধিমান হয় কেমন করে। বা পুরনো দিনের সার্চ ইঞ্জিন গুলো কেমন ছিল? যদি না জানেন তবে নিচে পড়তে শুরু করে দিন, আর যদি মহা পন্ডিত হয়ে থাকেন মানে আগে থেকেই সব জেনে থাকেন তবে??? তবে আর কি, আরো কিছু পোস্ট লিঙ্ক দিলাম তা পড়ে নিন।

সার্চ ইঞ্জিন ইতিহাসঃ

আপনার সার্চ করা ডাটা গুলো আপনার কাছে পৌঁছে দিতে সার্চ ইঞ্জিন কোনো ম্যাজিক ট্রিক অনুসরন করে না। ইন্টারনেট জগতে সকল আধুনিক কম্পিউটার গুলো একে অপরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট জগতে রয়েছে লক্ষ্য লক্ষ্য ওয়েব সাইটস, তো এসব নাম আর সবার কাম তো মনে রাখা সম্ভব নয়। কিছু বুদ্ধিমান মানুষ ভাবলেন যে ইন্টারনেট এর সকল বিষয় গুলো আর সহজ প্রাপ্য করলে কেমন হয়। অর্থাৎ তারা ভাবলেন যে সকল তথ্য গুলো এক যায়গায় নিয়ে এসে মানুষের কাছে পৌঁছে দিলে তা আরো বেশি সহজ হবে। এবং নিমিষেই সকল তথ্য খুজে বের করা সম্ভব হবে। হাঁ, ঠিক এই চিন্তা ধারার উপর ভিত্তি করে ইন্টারনেটকে আরো সহজ করে গড়ে তোলবার জন্য সার্চ ইঞ্জিন এর উদ্ভবন ঘটে।

প্রথম যুগের সার্চ ইঞ্জিন কিন্তু সম্পূর্ণই আলাদা ছিল। তখনকার সার্চ ইঞ্জিন গুলো অনেকটা ওয়েব ডিরেক্টরির মতো ছিল। সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর কতিপয় ওয়েবসাইট এর তালিকা করা ছিল ব্যাস। কিন্তু ইন্টারনেট এর তথ্য ভান্ডার যখন দিনের পরে দিন বাড়তে থাকলো এবং ট্র্যাফিক ও বাড়তে থাকলো তখন এই ধরনের ওয়েব ডিরেক্টরি ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন গুলো টাটা বাই বাই হয়ে গেলো। এখন এমন উপায়ে সার্চ ইঞ্জিন বানানো হলো যাতে সার্চ ইঞ্জিন ইন্টারনেট এ মজুত থাকা সকল ওয়েবসাইটস কে ট্র্যাক করতে পারে। এবং সকল তথ্য গুলো সার্চ ইঞ্জিন নিজেই সংগ্রহ করতে পারে। তো এইভাবে তৈরি হলো আধুনিক ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন।

সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে?

সার্চ ইঞ্জিনকে যে তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করে তার নাম হলো বট বা ক্রাউলার বা স্পাইডার। ওয়েবসাইটস এর কনটেন্ট গুলোকে স্পাইডার স্বয়ংক্রিয় ভাবে স্ক্যান করে। যেমনঃ কী-ওয়ার্ডস, টাইটেলস, ইমেজেস, অ্যাক্সেস ফ্রিকুয়েন্সি, রেটিংস, স্পাম কনটেন্ট ইত্যাদি। তারপর এই ডাটা গুলোকে স্পাইডার এক জায়গায় ইনডেক্স করে যাতে সার্চ করে এদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু শুধু ডাটা সংগ্রহ করলেই তো হবে না। সার্চ ইঞ্জিনকে বুদ্ধিমান ও হতে হবে। বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন বিশেষ গানিতিক সুত্র বা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে থাকে।

আধুনিক সার্চ ইঞ্জিন শুধু কী-ওয়ার্ডস নয় বরং সাইটটির কনটেন্ট, রেটিংস এবং সাইটটির বিষয় বস্তুটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তার উপর নির্ভর করে সার্চ ফলাফল দিয়ে থাকে। মনে করুন আপনি গুগল এ গিয়ে সার্চ করলেন “গ্যালাক্সি এস ৭ রিভিউ” এখন দেখুন এই সার্চ এ গুগল তার ইনডেক্স এ ১১,৯০০ টি ফলাফল খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু আমার এই সাইটটি সবার আগে এনে দেবার কারন কি? কারন সার্চ ইঞ্জিন তার উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রথমে কী-ওয়ার্ডটি পর্যবেক্ষণ করেছে তারপর টাইটেল পর্যবেক্ষণ করেছে এবং বিষয় বস্তু পর্যবেক্ষণ করেছে। এবার এই সকল বিষয় গুলো বিবেচনা করে এবং আপনার সার্চ করা কী-ওয়ার্ড এর উপর ভিত্তি করে ১১,৯০০ ফলাফল থেকে এই সাইটটিকে সেরা বলে মনে করেছে। এবং এর ফলাফল আপনার সামনে নিয়ে এসেছে। তাছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে আপনার সার্চ করা কী-ওয়ার্ড এর পাশাপাশি উপযুক্ত কী-ওয়ার্ড এর ফলাফল ও এনে দেয়।

তাহলে কি বুঝলেন? হাঁ, গুগল কিন্তু আপনার মতো চিন্তা করতে পারে। এবং আপনার অনুমান বুঝে ফেলতে পারে। মনে করুন আপনি ‘APPLE’ লিখে সার্চ করলেন। তখন কিন্তু গুগল আপনাকে  সারাসরি অ্যাপেল না খাইয়ে অ্যাপেল কোম্পানির সার্চ ফলাফল এনে দেবে। কারন গুগল জানেন যে আপনি কি ফলাফল আসা করছেন। আবার আপনি যদি ” apples” লিখে সার্চ করেন তবে আপনার সামনে হাজির হয়ে যাবে রসালো রসালো সব অ্যাপেল। এভাবেই আপনার সার্চ কী-ওয়ার্ডস এবং আপনার সার্চ ক্রিয়াকলাপ এর উপর ভিত্তি করে গুগল বা আধুনিক সার্চ ইঞ্জিন গুলো সর্বউত্তম সার্চ ফলাফল প্রদান করে থাকে।

সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে তো এবার হাফেয হয়ে গেলেন তাই না? আরে দাঁড়ান! আরো কিছু বিষয় এখনো বাকি আছে বলতে। সর্বউত্তম সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল তার ব্যবহারকারীরও সকল তথ্য ডাটাবেজ করে রাখে। যাতে সার্চ করার সময় আপনাকে সর্বাধিক সর্বউত্তম সার্চ ফলাফল দিতে পারে। তাছাড়াও গুগল তার ব্যবহারকারী ভেদে এবং সার্চ কী-ওয়ার্ডস এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে। যাতে আপনি তাদের পন্যে আগ্রহী হলে তা সহজেই কিনতে পারেন বা তা সম্পর্কে জানতে পারেন। তাছাড়াও আপনার কাছে আপনার ব্যবহার রুচি অনুসারে বিকল্প সার্চ ফলাফল ও এনে দেওয়া হয়ে থাকে। কেনোনা গুগল জানে যে আপনি কি পছন্দ করেন আর কোনটা পছন্দ করেন না।

উপসংহার

আসা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এবং পরিশেষে আপনারা জানতে পেরেছেন যে সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে এবং সার্চ ইঞ্জিন কতোটা বুদ্ধিমান। সবকিছু তো আর একা একা জানলেই হবে না, আপনার বন্ধুদের ও জানাতে হবে, তাই এই পোস্টটি বেশি বেশি শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে। আমি প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করি, তাই আপনারা এই সাইটটি নিয়মিত ভিসিট করবেন, এবং চাইলে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button