ন্যানো টেকনোলজি | অণু, পরমাণু থেকে কীভাবে নতুন এক দুনিয়া সম্ভব?
ন্যানো সায়েন্স থেকে ন্যানো টেকনোলজি
এমন এক দুনিয়ার কথা স্বপ্নেও অনুমান করা দুষ্কর —যার বৈশিষ্ট্য আমরা কল্পনাও করে দেখি না। মুখ উঠিয়ে আপনার ঘরের চারপাশের দিকে একবার নজর বুলিয়ে নিন, কি দেখতে পাচ্ছেন? আপনার কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল, আপনার বিছানা? এবার নিজের আঁকার ২০ গুন ছোট মনে করুন —এখন কি দেখতে পাবেন? হয়তো এবার মেঝের এক কোনে পড়ে রয়েছেন এবং আপনার টেবিলকে দেখতে একটি দৈত্যাকার বিল্ডিং মনে হবে। কিন্তু এভাবেই আপনাকে যদি ১০০০ মিলিয়ন গুন ছোট করে দেওয়া হয় তবে কি দেখতে পাবেন? আপনার নজরে কি কোন চেয়ার বা টেবিল আসবে? বরং আপনি সেসব জিনিষ দেখতে পাবেন যা দ্বারা আপনার চেয়ার, টেবিল সহ এই বিশ্বের প্রত্যেকটি জিনিষ গঠিত; অণু, পরমাণু, প্রোটিন, কোষ ইত্যাদি। আর আপনার আঁকার যদি ন্যানো স্কেলে নিয়ে আনা হয় তবে এবার কোন অণু বা পরমাণু নয় বরং পরমাণুর চারপাশে ঘুরতে পারবেন কিংবা এর ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথ দেখতে পাবেন। এখন ধরুন আপনি এক অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন একটি বস্তুর অ্যাটমকে (পরমাণু) বা অ্যাটমের গঠনকে অন্য কোন বস্তুর অ্যাটমের গঠনের সাথে পরিবর্তন করিয়ে দিলেন, তাহলে কি ঘটবে? —তাহলে অসাধারণ সব উপকরণের উদ্ভব ঘটবে যা এই দুনিয়াই আগে কখনোই ছিলোনা। আজকের দিনে নতুন রোগের ঔষধ থেকে শুরু করে আপনার কম্পিউটারের সুপার ফাস্ট প্রসেসর এবং অসাধারণ সব উপকরণ তৈরির পেছনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এক প্রযুক্তি কাজে আসছে যা “ন্যানো টেকনোলজি” (Nanotechnology) নামে পরিচিত এবং এটি বর্তমান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সবচাইতে আশ্চর্যকর নিদর্শন। তো চলুন আজ ন্যানো প্রযুক্তির সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক…
কতো বড় এই “ন্যানো”?
আপনার স্মার্টফোন বা যেকোনো ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি ফটো ক্যাপচার করুন এবং সেটাকে ফটোশপ দিয়ে ওপেন করুন। এবার ফটোটিকে জুম করতে থাকুন, দেখবেন জুম করতে করতে ফটোটি একসময় ঘোলা হয়ে যাবে এবং পরিশেষে শুধু চারকোনা ইটের দেওয়ালের মতো দেখতে পাওয়া যাবে। এই প্রত্যেকটি চারকোনা ব্লক গুলোকে এক একটি পিক্সেল বলা হয়, যা কোন ফটোর বর্ণনা ধারণ করে এবং একত্রে সকল পিক্সেল গুলো মিলে একটি সম্পূর্ণ ফটো তৈরি হয়। ঠিক একই ভাবে আপনার চারপাশের সমস্ত কিছু সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়েছে অতি ক্ষুদ্র উপাদান “পরমাণু” দ্বারা। চেয়ার টেবিল থেকে আরম্ভ করে আপনার শরীর পর্যন্ত পরমাণু নামক অতি ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা গঠিত। প্রত্যেকটি পদার্থের পরমাণুতে তার গুনের এক একটি অংশ বর্ণিত থাকে, যেমনটা কোন ফটোর প্রত্যেকটি পিক্সেলে বিভিন্ন কালার থাকে এবং একত্রে একটি ফটো তৈরি হয়। ন্যানো টেকনোলজির মূল বিষয় বস্তু এর উপরই নির্ভর; তাহলো পদার্থর গঠন এবং এর অণু, পরমাণুর গঠন এবং বৈশিষ্ট্য—এ ব্যাপার নিয়ে আরো পরে আলোচনায় আসবো, এখন ন্যানো এর আঁকার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।
দেখুন আমরা এমন এক পৃথিবীর সাথে পরিচিত যেখানে আমরা মিটার , কিলোমিটার ইত্যাদি পরিমাপের সাথে অভ্যস্ত। এমন কোন জিনিসের আঁকার সম্পর্কে কল্পনা করা সত্যি কষ্টের যেটা এতোটাই ছোট যে চোখে দেখা সম্ভব নয়। তবে ন্যানো অনেক ছোট হলেও এটি কিন্তু একটি সিঙ্গেল অ্যাটমের তুলনায় বড়। একটি অ্যাটমের ব্যাসরেখা প্রায় ০.১ ন্যানো মিটার এবং একটি অ্যাটমের নিউক্লিয়াস (অ্যাটমের ঠিক মাঝখানের একটি ঘন এলাকা যেখানে প্রোটন এবং নিউট্রন থাকে) আরো ছোট আকারের হয়ে থাকে, যেটা প্রায় ০.০০০০১ ন্যানো মিটার। বিজ্ঞান বিভাগের পটু আর গনিতের তুখারেরা এতক্ষণে ন্যানো মিটার এবং এর আঁকার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন, তবে সকলের বোঝার জন্য আরেকটি উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করি। মনে করুন আপনার হাতে একটি অ্যাপেল রয়েছে এবং ধরে নিন এটা ১ ন্যানো মিটার, তাহলে এটি কতো ছোট? ১ মিটারের সাথে ১ ন্যানো মিটারের তুলনা করতে গেলে, আপনার হাতের অ্যাপেলটি যদি এক ন্যানো মিটার হয় তবে এই সমস্ত পৃথিবী হবে এক মিটার, বুঝতে পাড়লেন?
আপনি হয়তো আপনার জীববিজ্ঞান বইয়ের অতি ক্ষুদ্র পরজীবী কীটবিশেষ এর ছবি দেখে আশ্চর্য হয়ে থাকেন, হয়তো ভাবেন এতো ছোট জিনিসের ছবি কীভাবে উঠানো সম্ভব হয়। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ (অতি ক্ষুদ্র বস্তু দেখার যন্ত্র) ব্যবহার করে এই ধরনের ফটোগ্রাফি করা হয়ে থাকে। এই অসাধারণ বিজ্ঞানের যন্ত্রটি এক মিটারের মিলিয়ন গুন ছোট বস্তু দেখতে পারে অর্থাৎ ১ মাইক্রোস্কোপিক মিটার সমান ১ মিটারের ১ মিলিয়ন (১০ লক্ষ) গুন ছোট ভার্সন। কিন্তু ন্যানো মানে হলো ১ মিটারের ১ বিলিয়ন (১,০০০ মিলিয়ন) গুন ছোট। তো ন্যানো মিটার কতটা ক্ষুদ্র হতে পারে কল্পনা করতে পারছেন? আমার তো কল্পনার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। চলুন ন্যানো স্কেলকে আরো গভীর এবং বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য নিচের চার্টটি দেখে নেওয়া যাক।
ন্যানো স্কেল—
- অ্যাটম; ~০.১ ন্যানোমিটার।
- অনুতে পরমাণু; ~০.১৫ ন্যানোমিটার অংশ জুড়ে থাকে।
- ডিএনএ ডাবল-হেলিক্স (ডিএনএ এর অণু); ২ ন্যানোমিটার ব্যাসরেখা বিশিষ্ট।
- আদর্শ প্রোটিন; ~১০ ন্যানোমিটার লম্বা।
- কম্পিউটার ট্র্যানজিস্টর (যা দ্বারা কম্পিউটার প্রসেসর বা মেমোরি তৈরি হয়); ~১০০-২০০ ন্যানোমিটার প্রশস্ত।
- আদর্শ ব্যাকটেরিয়া; ~২০০ ন্যানোমিটার লম্বা।
- মানুষের চুল; ৫০,০০০-১০০,০০০ ন্যানোমিটার ব্যাসরেখা বিশিষ্ট।
- একটি কাগজ; ~১০০,০০০ ন্যানোমিটার পাতলা।
- একটি মেয়ে ১.২ মিটার (৪ ফুট) লম্বা; ~১,২০০ মিলিয়ন ন্যানোমিটার লম্বা।
- একটি ছেলে ২ মিটার (৬.৫ ফুট) লম্বা; ২,০০০ মিলিয়ন ন্যানোমিটার লম্বা।
- এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং; ৩৮১ মিটার (১,২৫০ ফুট) লম্বা; ~৩৮১,০০০ ন্যানোমিটার লম্বা।
ন্যানো সায়েন্স থেকে ন্যানো টেকনোলজি
গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ভিউ এর কথা মনে আছে? যেখানে প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের পৃথিবীকে একটি নীল সবুজের বড় গোলাকার মনে হয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ পৃষ্ঠ জুড়ে সবুজ বৃক্ষ এবং সমুদ্র থাকার ফলে দূর থেকে পৃথিবীকে দেখতে একটি নীল সবুজের বড় গোলাকার মনে হয়। এবার ম্যাপে জুম দিতে আরম্ভ করুন, ধীরেধীরে দেখবেন অনেক দেশ নজরে আসছে তার পরে দেশের শহর গুলো নজরে আসবে তারপরে একটি নির্দিষ্ট শহর স্ক্রীনে ভেসে থাকবে। এবার শহরটির উপর জুম দিতে আরম্ভ করুন, কোন একটি এলাকা চলে আসবে এবং পরিশেষে হয়তো কোন মহল্লা বা কোন বাড়ির উপর এসে জুম শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এটাই কি পৃথিবীর একদম শেষ প্রান্ত, মানে পৃথিবীর সেই ক্ষুদ্রতম উপাদান যা দ্বারা এই গ্রহ তৈরি হয়েছে? অবশ্যই নয়। আমাদের সাধারন দৃষ্টির চেয়ে ছোট আকারের জিনিষ গুলোকে দেখতেই ন্যানো সায়েন্সকে কাজে লাগানো হয়। এখন আবার ফিরে যাওয়া যাক সেই গুগল ম্যাপে যা কোন মহল্লার উপরে এসে শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবার চলুন জুম দেওয়া যাক মহল্লার উপরে হয়তো মহল্লার একটি মাঠ দেখতে পাওয়া যাবে এবং জুম করতে করতে এক সময় একটি ঘাসে এসে থেমে যাবে। এবার ধারণা নিতে আরম্ভ করি ন্যানো সায়েন্স নিয়ে এবং ঘাসটিকে জুম দিতে আরম্ভ করি। ঘাসটিকে জুম দিলে এর মধ্যের উদ্ভিদ কোষ গুলো দেখতে পাওয়া যাবে এবং দেখতে পাওয়া যাবে এটি কীভাবে সূর্যের আলোর সাহায্যে নিজের জন্য খাদ্য তৈরি করছে। এভাবে আরো বিশদ জুম করতে থাকলে দেখতে পাবেন, উদ্ভিদের অণু গুলো কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এবং এক সময় সবকিছু আলাদা ভাবে বিভক্ত হয়ে যাবে। তো এই হলো ন্যানো সায়েন্স, যেটা আমাদের একদম শিকড় থেকে বুঝতে সাহায্য করে যে প্রত্যেকটি পদার্থ কীভাবে তৈরি হয়েছে এবং এদের কোর টা কি।
আর আমরা যখন ন্যানো সায়েন্স সম্পর্কে বুঝতে পারবো তখন এটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কিছু উদ্ভব করতে পারবো আর একেই বলা হবে ন্যানো টেকনোলজি। কারণ সায়েন্স থেকে টেকনোলজি আসে এবং সায়েন্স এর রুল অনুসরন করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ করে তোলায় হলো টেকনোলজির কাজ।
এখন চলুন ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে কিছু সাধারন ধারণা নেওয়া যাক—আসলে এটি কি এবং কীভাবে কাজ করে। আমি কোন জটিল আলোচনার মধ্যে পড়তে যাবো না, সাধারন কিছু উদাহরণ দিয়ে সমস্ত ব্যাপারটিকে সংক্ষেপে এবং সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবো। আচ্ছা এখন মনে করুন একটি কাপড়ের কথা এবং ধরুন আমরা ঐ কাপড়টির ন্যানো স্কেল পর্যন্ত ক্ষুদ্রতম স্থানে পৌঁছে গেছি, তাহলে কি দেখতে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সূতার একদম অণু পরমাণুতে পৌঁছে যাবো। সেখানে হয়তো কাপড়ের একটি সুতা থেকে আরেকটি সূতার দূরত্ব এক একটি পুকুরের সমান মনে হতে পারে। এখন ধরুন এমন একটি পদার্থ আছে যা যে কোন তরল পদার্থকে বর্জন করার ক্ষমতা রাখে। তাহলে আমরা যদি ঐ পদার্থের ন্যানো স্কেলে পৌঁছে গিয়ে সেই পদার্থের অ্যাটমিক গঠন জেনে নিতে পারি এবং কাপড়ের অ্যাটমিক গঠন ঠিক ঐ পদার্থটির সাথে পরিবর্তন করতে পারি, তবে কি হবে? তাহলে এমন একটি কাপড়ের তৈরি করা সম্ভব হবে যা পানি সহ যেকোনো তরলকে বর্জন করবে। ধরুন আপনার সাদা শার্টে তরকারির হলুদ ঝোল ভরে গেল! কি বিরক্তিকর ব্যাপার তাই না? কিন্তু ন্যানো টেকনোলজিতে উন্নত করার পরে আপনার শার্টটি তরকারির ঝোলকে বর্জিত করবে, মানে শার্টটি তরকারীতে চুবিয়ে রাখলেও এতে কোন দাগ লাগবে না। আশা করি ন্যানো টেকনোলজির মূল বিষয় বস্ত সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার হয়ে গেছেন।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
ন্যানো টেকনোলজির বেশিরভাগ সুবিধা হয়তো ভবিষ্যতের কয়েক দশকের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে কিন্তু বর্তমানেও এই প্রযুক্তি নানান ভাবে আমাদের পৃথিবীকে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করছে। আপনি হয়তো ভাবছেন ন্যানো টেকনোলজি একে বারে অসাধারণ জিনিষ এবং এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি—কারণ “টেকনোলজি” বলতে আমরা মানুষের তৈরি টেকনিককেই মনে করি। কিন্তু আমাদের জীবন নিজে থেকেই ন্যানো টেকনোলজির এক বিরাট উদাহরণ। আমাদের শরীরে প্রোটিন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, কোষ ইত্যাদি ন্যানো টেকনোলজির সূত্রেই কাজ করে।
ন্যানো ম্যাটেরিয়াল
হতে পারে বর্তমানেই আপনি অলরেডি ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করছেন। হতে পারে আপনি ন্যানোটেকনোলজি প্যান্ট পরিধান করে আছেন কিংবা আপনার শার্টটি ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি। এমনকি হতে পারে আপনার বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ট্র্যাভেলিং বাগটিও ন্যানোটেকনোলজিতে প্রস্তুত। ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি কাপড় গুলোর তন্তু এতোটাই সূক্ষ্ম যে এতে ধুলি বালু কণা আটকে থাকতে পারে না, ফলে কাপড় অনেক কম নোংরা হয়। কিছু ব্র্যান্ডের সানস্ক্রীন ক্রিমে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, এতে ক্রিমটি আপনার স্কিনে লাগানো মাত্র এটি টাইটানিয়াম অক্সাইড অথবা জিঙ্ক অক্সাইডের আস্তরণ ফেলে দেয়, ফলে এটি সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিকে ব্লক করে দেয়। ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি অনেক পেইন্টও এভাবেই কাজ করে, ফলে এটি অধিক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কম ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
কার্বন ন্যানো টিউব হচ্ছে সবচাইতে অসাধারণ ন্যানো ম্যাটেরিয়াল। এর অ্যাটমিক গঠনের ফলে এটিকে অত্যন্ত মজবুত একটি পদার্থতে পরিণত করেছে। একে ফাইবারের আঁকারে যেকোনো লম্বা পরিমাপে বানানো সম্ভব। তাছাড়া সবচাইতে মজবুদ পদার্থ সম্পর্কে আরো জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ন্যানো চিপ
মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্স হলো ন্যানো টেকনোলজির আরেকটি রুপ। সাধারনত মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্সে “মাইক্রো” শব্দটি ব্যবহার করা হয় কারণ এর আঁকার মাইক্রোস্কোপিক স্কেলের হয়ে থাকার কারণে। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা উদ্ভবন করেন যে, একই জায়গার মধ্যে বেশি ট্র্যানজিস্টর আটাতে পারলে কম্পিউটারের সাইজ আরো ছোট এবং বেশি পাওয়ারফুল বানানো সম্ভব। আর এর জন্যই আজকের কম্পিউটার গুলো সাইজে অনেক ছোট, অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সস্তা মুল্যের হয়ে থাকে। বর্তমানে কম্পিউটার প্রসেসর ১০০-২০০ ন্যানোমিটারের ট্র্যানজিস্টর দ্বারা প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং দিনদিন এর সাইজ আরো কমানো হচ্ছে আর এই সবই সম্ভব হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজির ফলে।
শুধু কম্পিউটার প্রসেসর নয়, বরং ফ্ল্যাট স্ক্রীন এচডি টিভি, স্মার্টফোন, আইপড ইত্যাদি সব গুলোতেই ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে চিপ লাগানো থাকে।
ন্যানো মেশিন
ন্যানো টেকনোলজির আরেকটি মজার ব্যাপার হলো এ দ্বারা অত্যন্ত ক্ষুদ্র মেশিন বানানো সম্ভব; যেমন গিয়ার, সুইচ, পাম্প, মেশিন —এবং সম্পূর্ণ আলাদা অ্যাটম থেকে। ন্যানো মেশিন দ্বারা ন্যানো রোবট তৈরি করা সম্ভব যেগুলোকে ন্যানোবট বলা হয়। ন্যানোবটকে আমাদের শরীরের মধ্যে ইনজেক্ট করে দেওয়া সম্ভব যাতে এটি প্রতিকুল পরিবেশে বিপদের সাথে লড়তে পারে।
শেষ কথা
ন্যানো টেকনোলজি ভবিষ্যৎ এ আরো রাজ করবে এই বাক্যে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই প্রযুক্তির সুফলের সাথে সাথে কিছু অসুবিধারও হুমকি রয়েছে। যেমন ন্যানোবট মানব দেহে ইনজেক্ট করার মাধ্যমে ক্যান্সার ঘটাতে পারে। ন্যানো বট অত্যন্ত ছোট হওয়ার কারণে অনেক ডাক্তাররা আসঙ্খা করছেন যে এটি রক্তের সাথে ব্রেনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে ফলে কেউই জানেন না কি ঘটতে পারে এতে। ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে এবং এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার আরো তথ্য জানা থাকলে নিচে কমেন্টে তা আমাদের সাথে শেয়ার করুন। পোস্টটি ভালো লাগলে এবং উপকৃত হলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না।